1১971 |||] |: 2] সক ১০৮০১১১২৩১৬ ১ € 1 91715 1, 48 ॥ রি ৮২ ০ ৮ 15 7) ই [0 লি স্রী পন গঠি নু ্। রা 2 444 ক জাযাাকণে ণুঙ্দার ভিটে প্রকাশক £ এন, মুখার্জী প্রাণিপিকা ৬এ স্রামাচরণ দে স্ট্রীট _কলিকাতা-৯২ প্রথম প্রকাশ, আবণ, ১৩৬৩ ি808898:518 নি মূল্য সাড়ে তিন টাকা মাক প্রচ্ছদপট £ মৈজ্রেম্রী দেবী 1 5 টা কিতা এত ১18 08100 ২০,১১০ ০৯) ক্রভদ্রার ভিটে তু ন্‌ জলছাস। গ্রান্টি পোকা! ডাকটিকিট খোকা ল্য অসভ্ঠাত্তবাজস রিলিফ তদবোন্িক্স প্র ্ ॥ | রর 5 চলে তু শন! ' 4 91101 7500 জে শ্র এ. নও 8:25 দ॥ ) টি ৫1 ৭৭) ৮১ ' নি ॥ 1 ঘ রা ৭ ॥ ॥ ১/:১ 3, ৮1 $5381,1 নিন ০০৮০৮% সুভদ্রার ভিটে সলতে পুড়ে পুড়ে আপনা থেকেই প্রদীপ নিভে যায়। উমাশংকর ততোক্ষণ চুপচাপ সেই বেদীর সামনেই বসে থাকে। দীপের আলোকে তাকে যারই চোখে পড়ে তারই মনে হয় উমাশংকর.কোন দেবীর বাণীর জন্তে অপেক্ষমাণ যেন। সত্যি তাই। বাষটি বছর কেটে গেছে গোবিন্দশরণের এমনি ভাবে । তার দেহাবসানের পর জ্ঞাতি ভাইয়ের ছেলে উমাশংকরের ওপর পড়েছে সে দায়ন্ব। পল্মার ভাঙনে গোবিন্দশরণের বৃদ্ধ পিত। এসেছিলেন এই গায়ে । এসেছিলেন উদ্বান্ত হয়ে আরো কয়েক ঘর জ্ঞাতি কুট্ম্ব নিয়ে পিতৃপুরুষের ভিটেমাটি ছেড়ে। কিন্তু সে শোক তাকে সন্য করতে হয়নি বেশিদিন। আরো কিছুদিন বাঁচলে গভীরতর অপমান ও আঘাতে মর্মীহত হতে হতো তাকে । বৃদ্ধ তা থেকে নিষ্কৃতি পেয়ে বেঁচে গেছেন । পিতার মৃত্যুর পর গ্রোবিন্দশরণের ওপরই, ভার পড়ে রাজপুরোহিতের কাজকর্ম করার। বাবার সঙ্গে ঘুরে ঘৃরে পূজার্চনার কাজ মোটামুটি বেশ শিখেও নিয়েছিলেন গোবিন্দশরণ । কাজেই বিশেষ কোন অন্থবিধায় পড়তে হয়নি তাকে । কিন্তু বিপদ হলে! তার মুভদ্রাকে নিয়ে। সকালবেল! রাজবাড়িতে পূজোয় চলে যাবার পর স্ৃভদ্রা একা একা ভয় পান। কিন্তু এর কী প্রতিকার করতে পারেন গোবিন্দশরণ? পিতার মৃত্যুদিন পর্যন্ত তাকে তার ছয় বছরের বিবাহিত জীবনে এক মুহুর্তের জন্যেও ভাবতে হয়নি নুভদ্রার কোন বিষয় নিয়ে। কাজেই তার অনভাস্ত মন কোন সমাধান-পথই খুঁজে পায় না। আমায় না হয় কিছুদিনের জন্যে বাবার কাছেই রেখে এসো । এখানকার লোকজনদের খুব ভালে লাগছে ন৷ আমার ।-__একদিন রাত্রিতে ন্ুভদ্রা চুপি চুপি বলেন গোবিন্দশরণকে | কেন, কি হয়েছে বলতো । না, তেমন কিছুই হয়নি । তবে আজ ক'দিন ধরে জমিদারের লোক নানা অছিলায় যখন তখন এসে বিরক্ত করে। যে সময়ে তোমার বাড়িতে থাকার কথা নয় সে সময়ে এসে তোমার খোঁজ করার অর্ণ হয় কোন ভাইতো কেমন কেমন মনে হয় যেন আমার । আরে দূর পাগলি! রাজ-পুরোহিতের বাড়ি, খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে এ বাড়ির আশে পাশে এগুতে সাহস পেতে পারে কেউ? কার ঘাড়ে ক'টা মুড আছে, শুনি !__বীরত্বপূর্ণ উক্তিতে গোবিন্মশরণ ভয় কাটিয়ে দিতে চায় স্থভদ্রার ৷ কিন্তু তাতে বিশেষ কোন ফল হয় না। তা হলেও এতো সাহসের কীই ব৷ দরকার । মায়ের কাছে ন৷ হয় কিছুদিন কাটিয়েই আসি। অনেককাল তো আর বাপের,বাড়ি যাইনি। কাজেই তোমার আপত্তি করারও কোন কারণ থাকতে পারে না। সে অন্ত কথা । তাষাবে। আর এও স্বীকার না করে উপায় নেই যে, আমাদের কমলপুরের মানুষদের সঙ্গে এই সোনারগায়ের মানুষদের যেন আকাশ-পাতাল তফাৎ। ছোটবেলা! থেকে দেখেছি, সেখানে প্রত্যেকেই প্রত্যেকের আত্মীয় আপনজন ৷ :বাব৷ তিন মাইল পথ হেঁটে রোজ চলে আসতেন এ গায়ে রাজবাড়িতে মহাদেবীর পূজো করতে । কিন্ত প্রতিবেশীরাই তো আমাদের সারাদিন দেখাশুনে! খোঁজখবর করতেন । স্৫কহ॥তার মানুষদের মধ্যে সে ভাব সত্যি দেখা যায় না। র্‌ কি করেই বা সেভাব দেখা যাবে? এখানে সবাই তো জমিদারকে আর ভার সাংগোপাংগদের খুশি করার চেষ্টায়ই মস্ত। একজনের বিপদে আর একজন এসে তার পাশে ঈাড়াবে দে আশা এখানকার লোকদের কাছে না করাই ভালো ।-__সুভদ্রা আরে! পরিক্ষার করে বুঝিয়ে বলেন গোবিন্দশরণকে ৷ বেশ, তা হলে তুমি কবে যেতে চাও শ্রীধরপুর, বলো । আমাকে তো আবার সেভাবে তৈরি হতে হবে তার জন্যে ৷ অন্তত ছ'তিন দিনের মতো মহাদেবী মন্দিরের জন্তে একজন পূজারীর ব্যবস্থাও করে দিয়ে যেতে হবে। তা না হলে ম্যানেজার ছুটিই বা মঞ্চুর করবেন কেন ? যতে৷ শীগগির যাওয়া! যায় ততোই ভালো । আমার আর একদিনও থাকতে ইচ্ছে করছে না এখানে । আচ্ছা, তুমিও কিছু বেশি দিনের ছুটি নিয়ে চলো না! যে পুজারীকে ঠিক করবে তাকে অন্তত মাস ছুয়েকের ভার দিয়ে গেলেই তো সব ল্যাঠা চুকে যায়। তোমার শরীরটাও তে! ভালে! যাচ্ছে না কিছু দিন ধরে। আচ্ছা, ত1 দেখা যাঝ্েখন ।--উত্তর দেন গোবিন্ৰ | রাজপুরোহিত গোবিন্দশরণ কিছুদিনের জন্যে সন্ত্রীক বাইরে চলে যাচ্ছেন । কথাটা রটে যায় সারা গায়ে । রাজা যোগেন্্রকিশোরের কানেও পোৌছয় গোবিন্দমশরশের এ সিদ্ধান্তের কথা । ম্যানেজারকে ডেকে পাঠান যোগেক্র- কিশোর । গোবিন্দের ছুটির আবেদন মঞ্জুরের নিরেশ হয় মানেজারের ওপর । তা ছাড়া একট! বিশেষ ইংগিতও বুঝে নিতে হয় ম্যানেজারকে জমিদারের কাছ থেকে । সোনারগায়ের জমিদার যোগেন্দ্রকিশোর । পেতৃক রাজা উপাধি একশে। বছর আগের । ইংরেজ-পদলেহনের , তি স্শাস্রক্রমিক পুরস্কার । প্রঞ্জাগীড়ন এদের অস্থিমজ্জায় সংক্দীমিত হয়ে চলেছে বংশপরম্পরায় । ম্যানেজার হাসিমুখেই ছু'মাসের ছুটি মঞ্জুর করেন। ছুটি পেয়ে আনন্দে অধীর হযে ওঠেন গোবিন্মশরণ। তীর স্থভদ্রার কথা তিনি রাখতে পেরেছেন, এই তার আনন্দের আফল কারণ। দু'মাসের ছুটির মানে ছু'মাসের আয় থেকে বঞ্চিত থাকা । গোবিন্দের তা অজানা নয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও গোবিন্দ খুশি । ছু'জনার সংসার, কতোই বা আর অথের প্রয়োজন ? জীবনে অর্থের চেয়ে আনন্দের প্রয়োজন তো কম নয় । গোবিন্দশরণ কি করে এ ছুটিটা ভোগ করবেন তাঁর একট! ছক কেটে ফেলেছেন রাভারাতি । প্রানটা স্ুভদ্রাকেও বলেছেন । তবে নিত্য চার ঘণ্টা করে শাস্সাধায়নের ব্যবস্থাট। তিনি সমর্থন করতে পারেন নি। চার ঘণ্টা করে শান্ত্রপাঠ করতে গেলে আর বিশ্রাম হনে কি করে, তাই এ ব্যবস্থার প্রতিবাদ করেছেন সুভদ্র! ৷ রাজা সাহেব কোলকাতা রওয়ানা হয়ে গেছেন ইতিমধ্যে কি একটা জরুরী কাজে | সোনারগী কেমন যেন ঝিমিয়ে পড়েছে তার অনুপস্থিতির সঙ্গে সঙ্গে । প্রতিবারই তেমনি হয়ে থাকে ।' তবে এবার যেন একটু বেশি নীরব নিবুম। কেন? গোবিন্দশরণ আর হ্ুভদ্রাও পরদিন চলে যাবেন বলে? দূর, তা কি হয়? সোনারগীয়ের মানুষের কাছে গোবিন্দশরণ আর সুভদ্রার কী এমন গুরুত্ব ? জ্যৈষ্টের দারুণ গ্রীপ্স। বেলা ১১টার পর আর লৌকজনের মুখ বড়ো একট! দেখা যায় ন| পথে ঘাটে। সকলেই যে যার ঘরে আটক । সেই মাঝ ছুপুরে গোবিন্দশরণের ঘরের দোরে এসে কে ডাকেঃ সি মা ঠাকরুণ! নতুন কস্বর শুনে স্থভদ্রে দেবী আরো বেশি করে ভয় পেয়ে যান। প্রথম ডাকে উত্তর দিতে সাহসই পান না মোটে। মা ঠাকরুণ ! কে?-_-অনেক সাহসে বূক বেঁধে প্রশ্ন করেন সুভদ্রা । এই যে আমি মাইজি! ঠাকুরকর্তা খবর পাঠিয়েছেন, আজ বাড়ি ফিরতে তার একটু বেশি রাত হবে- আপনি যেন চিন্ত! না করেন। গোবিন্দমশরণ নিজে লোক পাঠিয়েছেন শুনে নির্ভয়ে ঘরের দরজ। খুলে দেন স্থুভদ্র। বিস্তারিতভাবে সব খবর শোনবার জন্তে ! কিন্তু কী সবনাশ, দরজা খোলামাত্র পাঁচ ছয়জন লোক ঘরে ঢুকে মুখ-হাত-পা বেঁধে ফেলে ন্ুভদ্রার মুহূর্তের মধ্যে । মদন সদরের বিভীবণ মৃত্তি দেখেই জবাব বদ্ধ হয়ে গিয়েছিল স্ুুভদ্রার। মদন আর তার লোকজনের! যখন তাকে ঘাড়ে করে নিয়ে ম্যানেজারের বজরায় তুলে দিয়ে আসে পন্মার ঘাটে, তখনো তার জ্ঞান ফেরেনি । ছু'দিন বাদে কোলকাতায় রাজ! সাহেবের বাড়িতে ষ্খন তাকে নিয়ে তোলা হলো তখনো তিনি একরূপ অবসন্ন । | স্থভদ্রাকে সুস্থ করে তোলার জন্যে রাজ সাহেবের চেষ্টার অস্ত নেই । আদরের মাত্রাধিক্যে অসুস্থ সুভদ্র/ আরে যেন হাপিয়ে ওঠেন । সেই ক্লান্তি নিয়েও বার বার রাজা সাহেবের কবল থেকে আত্মরক্ষা করে চলেছেন স্থভদ্রা। লালসার তীব্র দাহনে দগ্ধ যোগেন্দ্রকিশোর অস্থির মৃন্ততায় কাগুজ্ঞান হারিয়ে ফেলেন একেবারে ! জোর করে আলিংগনপাশে তিনি আবদ্ধ করেন স্থভদ্রাকে । ছুবল স্তুভদ্রার প্রাণপণ প্রয়াস ব্যর্থ হয় রাজা সাহেবের দৃঢ় হাতের ঝেষ্টনী থেকে নিজেকে ৫ ছিনিয়ে নেবার। কিন্তু কামার্ত জমিদার মুহূর্তের মধ্যেই টের পান, যে দেহের ওপর তার জবরদস্তি চলেছে সে দেহ উত্তাপহীন, অসাড়, প্রাণহীন_ তার চাওয়া সুভদ্রা নেই সেখানে । যোগেন্দ্রকিশোরের হস্তচ্যুত স্থৃভদ্রার অসাড় দেহ লুটিয়ে পড়ে মার্বেল পাথরের শ্রীতল মেঝের ওপর । সেই নিরুত্বাপ দেহের শীতলতায় দারুণ গ্রীষ্মের দিনেও রাজ! সাহেবের কোলকাতা ভবনে যেন তুষার শৈত্য নেমে আসে। সে শীতের ঠাণ্ডায় রাজা সাহেবের অস্থিমজ্জীও কেপে ওঠে ক্ষণিকের জন্যে। কিন্তু তারপরেই আবার সব ঠিক। মদন ! হুজুর !-_বিরাট লাঠি হাতে সর্দার এসে সেলাম ঠৌকে। সব ব্যবস্থা করে ফেল সরকারবাবৃকে ডেকে নিয়ে । যে আজ্ঞে!_-আর একবার সেলাম জানিয়ে বিদায় নেয় মদন সদ্ণার । তারপরের ইতিহাস সংক্ষিপ্ত । মদন সর্গার আর তার দলবল অগ্রিম পুরস্কারের পরেও আরো বেশ কিছু পুরস্কার পেয়ে সোনিগায়ে ফিরে আসে। ম্যানেজার ছাড়া আর কেউ জানে না৷ তাদের এই আসা যাওয়ার কথা । সার! গীয়ের মানুষ তখন নুভদ্রার সন্ধানে ব্যস্ত। ম্যানেজার সেই জন্ধান- কার্ষের মূল কর্তা। মদন সদ্ণারের দলবলও সেই ধোজাখু'জিতে যোগ দেয়। শুভেচ্ছা ও সহানুভূতির কোন অভাব নেই কোন দিকে। কিন্তু কে দেবে সুভদ্রার সন্ধান ? গোবিন্মশরণ সব আশা-ভরস1 ছেড়ে দেন। কিন্তু সকাল সন্ধ্যায় তিনি যেন প্রতিদিন শুনতে পান তার বাড়িতে স্থুভদ্রার চলাফেরার শব । বজ! সাতে ফিরে এসেছেন। স্ুভদ্রার কাহিনী শুনে ভিনি দে পাঠিয়েছেন গোবিন্মশরণকে | তার যেন সবই শখ 1 স্থভদ্রার মতো একটি তরুণীকেই নাকি তিনি একদিন দেখেছেন কোলকাতার রাজপথে কোন এক ধনী-সম্তানের সঙ্গে ৷ রাজ! সাহেবের কথায় নিবাক হয়ে যান গোবিন্দশরণ | কোন কথাই ফোটে না ভার মুখে। কী উত্তর দেবেন তিনি? তবে কি স্তুভদ্র! পলাতকা ? না, কিছুতেই তা হতে পারে না। গোবিন্মশরণকে কিছুতেই বিশ্বাস করানো সম্ভব নয় সে কথা। মধ্যাহ্নের নীরবতায় পাতলা বাতামে গোবিন্দের কানে প্রতিদিনই ভেসে আসে স্ুভদ্রার কণ্ঠন্বর । রাজা সাহেবের মিথ্যাভাষণের প্রতিবাদে সুভদ্রা অতি সংগোপনে তাকে যেন রোজই এসে জানায়, আমি পলাতকা নই, আমি তোমারই” । তার শোবার ঘরের পাশে শেফালি গাছের তলায় সুভদ্রার নামে একটি তুলসী বেদী তৈরি করে নেন গোবিন্দশরণ । দিনের সমস্ত অবসর সময় তিনি কাটিয়ে দেন সেই বেদীমূলে । সন্ধ্যার প্রর্দীপ জ্বালিয়ে বসে থাকেন তিনি সেখানে যতোক্ষণ না সে প্রদীপ জ্বলে জ্বলে নিভে যায়। গোবিন্দশরণ বলেন, জীবন-মরণের উধ্বর্বেষে প্রেম সেই প্রেমের মৃত্যু নেই__সে প্রেমেরই নিত্য পূজারী তিনি । গোবিন্দমশরণও পুথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। কিন্তু স্থভদ্রার বেদীতে এখনও প্রদীপ জ্বলে । সে প্রদীপ জ্বালবার ভার পড়েছে জ্ঞাতি ভাইয়ের ছেলে উমাশংকরের ওপর । সে বেদী সোনার গায়ের মানুষের কাছে দেবী-পীঠ । স্ুুভদ্রার কণ্ঠস্বর আজও নাকি অনেকে শুনতে পায়। স্ুভদ্রার ভিটেতে আজও তাই লোকের ভিড় জমে । গেম ০সতু কোন্‌ মায়াবী যেন অনৃষ্তঠলোক থেকে স্ুচীতীক্ষ ভীরক্ষেপে ভীম্মের নতুন শরশয্যা রচনা করছে! ্‌ পরনে দামী বিলিতি ওস্টেড স্যুট। তার ওপর পুরু চেষ্টারফিল্ড। মাথায়. ফেণ্টের টুপি আর পায়ে গরম পশমী মোজ।। কিন্তু তাতেও কি রক্ষা .আছে? প্রচণ্ড শীতে শরীরের ভেতর হাড়গুলো যেন ঠোকাঠকি করতে সুরু করে দেয় নিজেদের মধ্যে । | কোথেকে এলো বরফের মতে! ঠাণ্ডা এমনি কন্কনে হাওয়া? আগের দিন পর্যন্ত শীতের এতোট! তীব্রতা ছিল ন| ৷ অথচ আজ বাইরে পা! বাড়াতেই প্রাণাস্ত-প্রায়। ফার্টডেল হোটেল থেকে বেরিয়ে ট্যাক্সিতে উঠতে যেতেই ভয় ধরে যায় ত্বর্ণকমলের মনে । শেষ পর্মস্ত না জানি ফিরেই আসতে হয় অর্ধেক পথ থেকে 1-_এই বলে রবিঠাকুরের এক টুকরো! কবিতা আউড়ে ফেলে ন্বর্ণকমল্‌ ঃ “তোমার অঞ্চল তলে লুপ্ত হোক যত ক্ষতি লাভ ।, আরে দূর পাগল ! ঠিক দেখবে সন্ধ্যার মধ্যেই তোমায় বহাল তবিয়তে হোটেলে এনে পৌছে দেবে ।--অনংগ অভয় দেয় বন্ধুকে | কিন্ত যাই বলো! ভাই, চের! দেখবার সখ হয়েছে বলেতে। আর জমে বরফ হয়ে যাবার ইচ্ছে নেই । কী আশ্চর্য, কিচ্ছ ভয় নেই তোমার । সব দায়িত্ব আমি নিচ্ছি। আর যদি চাও, একট! রিষ্ষ-ইন্সিওরেন্সও করে নিতে পারো ।- ঠাট্টা করে বলে অনংগ। ৮৮ পোষাক-পরিদ্্দাদ। অথচ কী স্থতীব্র শীত! আশ্চর্য লাগে কোন্‌ প্র । পুরু কুয়াশ।র পর্দা যখন আচ্ছন্ন করে রাখে দৃষ্টি কিংবা আকাশ জুড়ে চলে মেঘের জটলা, তখন শীতের কানামাছি খেলার পাল! এখানে । এলো কি না এলো । পাহাড়ী বুনো মেয়ের মতোই খেয়ালী পাহাড়ী শিলঙ.-এর এলো-মেলো শীত | | শীতের হাওয়ায় লাগল নাচন আমলকির এই ডালে ডালে ।: _-রবি ঠাকুরের গান নুরু করে দেয় ন্বর্ণকমল, ড্রাইভার গাঁড়িতে স্টার্ট দেবার সঙ্গে সঙ্গে একেবারেই কবি বনে' গেলে দেখছি !-_-শিলঙ-্এ আসা অবধিই ন্বর্ণকমলের কেমন একটা আনমনা ভাব লক্ষ্য করছে অনংগ। স্থানমাহাত্্যই হয়তো হবে। বছর তিনেক আগেও কোলকাতায় ব্র্ণকমলের সঙ্গে তার দেখ! হয়েছে । তখনো কিন্ত তাকে এমনি কথায় কথায় বা উঠতে বসতে কবিতা আওড়াতে শোন যায়নি । আরে ভাই জীবনটাই তো গান। গানের স্থর আর কবিতার ছন্দকেই যদি বিদায় দিয়ে দিই তাহলে কোন্‌ পাথেয় নিয়েই বা আর চলবে। জীবন-পথে ?_এ উত্তরের পর আর এ প্রসংগ নিয়ে আলোচনা করতে চায় না অনংগ। স্কুল-জীবনের সহপাঠী স্বর্তমল আর অনংগ। কিন্ত প্রথম জীবনের সেই অস্তরংগতাকে চল্লিশোত্তর বয়েস পর্যস্ত টেনে নিয়ে আসা ছ'জনের আন্তরিকতাই প্রমাণ করে। গৌহারটি কটন কলেন্জে পড়া শেষ করে অনংগ শিলড- সেক্রেটারিয়েটে কাজ করছে সে আজ অনেক বছরের কথা । স্বর্ণকমল কোলকাত| বিশ্ববিচ্ালয়ে পড়তে পড়তে ঝাঁপিয়ে ক পড়েছে দেশের মুক্তি-সংগ্রামে। বিয়াল্লিশের বহি লে-ুড়ে সে যখন বেরিয়ে এলো জেল থেকে, তখন সে আখৈ টিজ্জবল আরো দীপ্ত__বাস্তবিকই স্বকিমল । এতো দূরত্ব আর এতে পার্থক্য সত্বেও অনংগের সঙ্গে তার সেই ছোটবেলার বন্ধুত্বকে সে কখনো ভোলেনি, অনংগও ভুলতে দেয়নি । শিলঙ-এর প্রাকাতিক রা মু্ধ হলেও অনংগ যে কল-কারখানা ও জনকোলাহলময় কোলকাতাকে ভূলে গেছে তা মোটেই নয়। কৈশোরের স্বপ্নপুরীকে প্রায়ই মনে পড়ে তার। তাই বছর ছু'বছর পর পর সুযোগ পেলেই সে ছুটে আসে কোলকাতায় । কিশোর জীবনের সহযোগীদের খুজে খুজে বার করে সে। নিমন্ত্রণ করে যায় তাদের প্রকতির লীলানিকেতন শিলঙ. দেখে আসার জন্যে । ব্বর্ণকমল শিলঙ-এ এসেছে তিন. বছর আগের তেমনি এক আমন্ত্রণ রক্ষা করতেই। সে বেড়াতে এসেছে মাত্র এক সপ্তাহের জন্যে । এমনি অল্প সময় হাতে নিয়েই সে ঘুরে দুরে বেড়ায়। অনেক দেশ-বিদেশে যেতে হবে যে তাকে! একই জায়গায় বেশিদিন থাকতে গেলে সময়ে কুলোবে কেন ? খু'জে বার করতেই হবে যে উমসিলাদিকে ! অনংগের আমন্ত্রণ গ্রহণ করলেও, তার আতিথ্য গ্রহণে কিন্তু ত্র্ঁকমল কিছুতেই রাজি হয়নি । শিলড. শহরের অতিথি হবে সেঃ কোন আত্মীয় বা বন্ধুর নয়-_একথা সে আগেই চিঠিতে জানিয়ে দিয়েছে অনংগকে। স্বর্ণকমলের ফার্টডেল হোটেলে ওঠার কারণও তাই । শিলঙ, থেকে চেরাপুজি । ত্রিশ-বত্রিশ মাইলের মতো পথ। গাড়ি এগিয়ে চলে ছুই বন্ধুকে নিয়ে। বদ্ধ গাড়ি, কিন্ত তবুও কোথা দিয়ে যেন প্রবল প্রচগুতায় শীতের শরজাল এসে বিদ্ধ করে স্বর্ণকমলকে । বরফ জমে গেছে যেন তার সব ১৩ পোষাক-পরিচ্ছদে ৷ তা! হলেও যেতেই হবে। কোথায় কোন্‌ পাহাড়ের গহবরে লুকিয়ে আছেন উসিলাদি কে জানে ! | শহরের বুক চিরে এগোয় ট্যাক্সি! বাড়িতে কি একটা কথা বলে আসতে ভূল হয়ে গেছে অনংগের ৷ তাই লাবান হয়ে যেতে হয় তাদের । লাবান পেরিয়ে পথ ঘুরে ঘুরে বেশ একটা নিরিবিলি জায়গায় এসে পড়ে গাড়ি। চমকে ওঠে ্বণকিমল । “একটু থামো+ বলে থামিয়ে দেয় ড্রাইভারকে । কী হলো! আবার ? না, কিছু নয়। রবি ঠাকুরের শেষের কবিতার শিলঙ.-এর ছবি দেখছি এখানে । একেবারে হুবন্থু মিলে যাচ্ছে । ও তাই নাকি! হ্যা শুনেছি, রবীন্দ্রনাথ যখন শিলঙকএ ছিলেন তখন তিনি এদিকটায় রোজই বেড়াতে আসতেন ।__ অনংগের মুখ থেকে এ কথা শোনার পর ত্বর্ণকমল আর একবার বেশ ভালো করে চারদিকে তার চোখ ঘুরিয়ে নেয়। গাড়ি আবার চল্তে সুরু করে। পাহাড়কাটা আশাকা- বাকা পথ। দশ হাত আগে-পিছেও অনেক সময় বোঝবার উপায় থাকে না প্‌্থের গতি কোন্মুখো । কখনো কোন্‌, অতলে যেন নেমে যায় গাড়ি, আবার কখনো! বা উঠে যায় স্থউচ্চে! এই অবিরাম অজানা চলায় বেশ আনন্দ লাগে ক্বর্ণকমলের | সময় সময় আবার ভয়ও লাগে । ছ'ধারে দূরে-কাছে সব লাল-শাদা বাংলো প্যাটার্ণের বাড়ি। পাক! দালান নয়, কাচা। ভূমিকম্পের দেশ। পাকা বাড়ি তুলতে বড়ো বেশি ভরসা পায় না কেউ। তা"হলেও বাংলে! বাড়িগুলো দেখতে ভারি সুন্দর । চলার পথ থেকে কখনো অনেক উঁচুতে, আবার কখনো বা! অনেক ৬৯ নীচুতে। এই পাহাড়ী পরিবেশের জন্যেই হয়তো এতো সন্দর দেখায় বাড়িগুলো। স্বর্ণকমল মনের সঙ্গে কথা বলতে নুরু করে । কেজানে এরই কোন একটা বাড়িতে উ্সিলাদি এসে নতুন করে সংসার পেতেছেন কিনা! যদি এসেই থাকেন তাকে তো দোষ দেবার নেই কিছু শিলঙ-এর লাল-শাদা বাড়ি আর চোখে পড়ে না। শহর এলাকা শেষ হয়ে যায়। খুব তাড়াতাড়িই যেন শেষ হয়ে যায়। তখনো পাহাড়ের গায়ে গায়ে পাইনের অজত্্রতা । মনের তে ন্িগ্ধ হাতের প্রলেপ লাগায় তারা । শিলঙ-রাণীর সখীকুল হবে হয়তো । তাই বুঝি শিলউ.-অঠিথির দিকে এতোটা প্রিয় দৃট্টি! উসিলাদি ওদেরই মধ্যে একজন হয়ে যাননি তো আবার! শিলঙ-রাণীর সখী! কিন্ত তারাও হঠাৎ বিমুখ হয়ে যায় যেন । আরো কিছু পথ এগিয়ে যেতেই তাদের আর চোখে পড়ে না। সখীকুল দূরে থাকতে পারে কখনো ? শিলড.-রাণীকেই তারা ঘিরে আছে । একটানা গাড়ি চলায় ঘুম এসে বাঁয় অনংগের। সে ঘুমোয়। বেশ নিবিড়ভাবেই ঘুমোয়। ছোট ছোট অনেক আ্োতধারার সাক্ষাৎ মেলে পথে ৷ শিলঙ - শহরেও এমনি অআ্োতক্ষিনী অনেক দেখেছে স্বর্ণকমল। মন চায় না নদী বলতে । তবু এদের সব ক'টিই নাকি এক একটি পাহাড়ী নদী। স্থানীয় নাম ছড়ড়া। প্রত্যেকটিই ভারি লাজ্ুক। পালিয়ে পালিয়ে চলে কেবল। উম্নিলাদির মতোই অনেকট1। মনের খুব কাছে এসেও পরক্ষণেই উধাও! একটা হঠাৎ আলোড়নের বুদ্ধ যেন। শুধু পাহাড় আর প্রান্তর। শ্রীহট্রের দূরবিস্তৃত সমতল ভূমি চোখে পড়ে বহুদূর থেকে । কী মনোরম সে দৃশ্য! উ্দিলাদি ওখানেই চলে যাননি তো ! ৯৭ কোথ। যে উধাও হলো” _- রবীন্দ্রনাথের আর একখানা গান ধরে ব্র্ণকমল । রবীন্দ্-সঙ্গীতের নুকোম্ল স্পর্শ লাগে অনংগের চোখের পাতায় । ভার ঘুম ভেঙে যায়। তুমি ষে এতো! ভালো গান জানো তা কিন্তু জানা ছিলো না আমার ।-__গান থামতেই অনংগ বলে । : তাতো ভোমার জানার কথাও নয় ভাই। এই ধরো বছর আড়াই হলো আমি গান নিঘ্বে মেতে আছি। দ্বুরে ঘ্বুরে বেড়াই, গান করি আর বই পড়ি। ঘুরে ঘুরে বেড়াও মানে ! কেন, তোমার সেই কাত্রাসগড় কয়লাখনির ম্যানেজার কী হলে), যেখানে আমায় নিয়ে গেছলে একদিনের জন্যে ? দূর, কিসের আবার ম্ণানেজারি? কার জন্তেই বা ওসব ঝামেলা পোয়াবো ! জেল থেকে ফিরে আসার পর বাবা তার এক খনির মালিক বন্ধুকে ধরে আমায় ফাদে ফেলার ব্যবস্থ| করলেন । একটা বড়ো চাকরিতে বসিয়ে দিলেন । সত্যি সত্যি একটু আটকেও গিয়েছিলুম আমি। তবে সবাই মিলে এমন একটা অবস্থার স্যরি করলে যে, আমায় সব ছেড়ে-ছুড়ে দিয়ে চলে আসতে হলো । একি বলছে তুমি ব্র্ণকমল ? এতে আশ্চর্য হবার মোটেই কিছু নেই। এই বেশ আছি। বছর কয়েক চাকরি করে যা জমিয়েছিলাম, আর চা-বাগানের শেয়ার থেকে যে টাকাটা আসে, তা দিয়ে বাকি জীবনট! ঘুরেফিরে নিশ্চয়ই কাটিয়ে দিতে পারবো ।__খুব ভরসার সঙ্গেই একথাগুলো বলে যায় ত্বর্কমল। কিন্তু তার এই বলার মধো এমন একটা বেদনার সুর ধ্বনিত হয়ে ওঠে যা অনংগের মনকে দোল! দেয় ক্ষণিকের জন্তে ৷ ১৩ কী এমন ঘটতে পারে এ কয় বছরের মধ্যে যাঁতে এমন বিবাগী হতে হয়েছে ব্বর্ণকমলকে £_আপন মনেই প্রশ্ন করে গ। ভেবে পায় না কিছু। দেখতে দেখতে চেরায় এসে থামে গাড়ি। এ কালের শিলঙ থেকে ধিগত শতাবীর শিলঙ-এ, এসে নামে অনংগ তার বন্ধু স্বর্ণকমলকে নিয়ে। একদ! খাসি-জয়স্তিয়া পার্বত্য অঞ্চলের শাসনকেন্দ্র, জমজমাট শহর । এখন একটি নীরব শান্ত পল্লী চেরাপুঞ্জি । রামকষ্চ মিশনের স্বামীজী এসে অভ্যর্থনা জানান অনংগদের । ওরা মিশনেরই অতিথি হয়ে এসেছে সেদিনের জন্যে । পাবত্য এলাকার লোকদের মধ্যে শিক্ষা-বিস্তারে, রোগ-চিকিৎসায় এবং বেকার সমস্ত! সমাধানে মিশনের উদ্যোগে যে ব্যাপক প্রয়াস চলেছে, তার কথা শুনে এবং তার প্রত্যক্ষ পরিচয় পেয়ে খুবই খুশি হয় স্বর্ণকমল | স্বামীজীদের লোক-সেবায় বিদেশী মিশনারীদের প্রভাব যে অনেকট। হাস পেয়েছে, তারও প্রমাণ পেতে দেরি হয় না মোটেই । খাসিয়া ছেলেমেয়ের! দলে দলে আশ্রমে আসে। সন্গ্যাসীদের কাউকে দেখলেই প্রণাম জানায় বিনভ্রভাবে এবং পরামর্শ নেয় বার যেমন দরকার । মানুষের সেবায় এই জন্গ্যাসীদের মতো আত্মোৎসর্গেই বোধ হয় সত্যিকারের শাস্তি !_-হঠাৎ কেমন একটা চিস্তার ঢেউ আসে স্ব্ণকমলের মনে । অতিথিদের চেরাপুঞ্জি দেখাতে নিয়ে যান স্থামীজী। গাড়িতে মাইল ছুই পথ যেতেই মৌস্‌মি গ্রাম। পৃথিবীর অস্ঠতম শ্রেষ্ঠ জলপ্রপাত এ গায়ে। নাম মৌসমি ফলস্‌। মৌসমি কলস্এর ঠিক মুখোমুখি যেয়ে দাড়ায় গাড়ি। এসো... ...সে।......সো......বলে কে যেন ডাকে। উদ্দিলাদির গলার মতোই যেন!_ চমকে ওঠে ব্বকিমল । ৯১৪ একটান! সে শব্দ শুনে অনেকেরই অবাক হবার কথা। একেবারে নতুন যার! তাদের পক্ষে তো৷ বটেই । ওপরে খরখরে রোদ। আর দুই পাহাড়ের মাঝখানে কুয়াশার পুরু আস্তরণ! বিরাট বিস্তীর্ণ সে গহ্যরের দিকে দৃষ্টিক্ষেপের জোটি নেই। অথচ তিনজনই সে দিকে তাকিয়ে । মুক্ত হও হে সুন্দরী । ছিন্ন কর রডীন কুয়াশা 1 _নেহাৎ অভ্যাসবশেই রবি ঠাকুরের এক লাইন কবিতা আবার আউড়ে ফেলে ব্বর্ণকমল । আশ্চর্য! হঠাৎ কিভাবে কী হয়ে গেল কিছুই বোঝবার উপায় নেই । রবি ঠাকুরের কবিতায় স্বর্ণকমলের আবেদন পেশ করার সঙ্গে সঙ্গেই কোথায় যেন চলে গেল সেই কুয়াশার পর্দা! কুয়াশা কেটে যেতেই চোখে পড়ে উপ্টোদিকের পাহাড়ের গ! গড়িয়ে পড়ছে সুদীর্ঘ এক রূপালী জলরেখা । আরো কয়টি ক্ষীণাংগীকেও দেখ যায় তার আশেপাশে । তারই সহচরী হবে হয়তো ৷ অপূর্ব সে দৃশ্ঠ ! ব্বর্ণকমল অভিভূত হয়ে যায় দেখে । কার উদ্দেশ্তে এই পাহাড়ী কন্তার নিরুদ্দেশ যাত্রা? সে কি পাবে তার কাজিক্ষিতকে খুজে ? চাওয়া আর পাওয়ার মধ্যে যে অনেক বাধা! সেই বাধা অপসারণের প্রয়াসই বুঝি চলেছে অবিরাম গতিতে !-_ মৌসমি জলপ্রপাত দেখে এমনি সব কথা ঘুরপাক খেতে থাকে ন্বর্ণকমলের মনে । কেমন একটা অদ্ভুত রকমের আকর্ষণ বোধ করে সে। এ রূপালী জলরেখার সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে যেতে ইচ্ছা হয় তার। কিন্তু পা হা'টোকে এতো! ভারি ভারি মনে হয় কেন? পাহাড় চাপা পড়েছে যেন! স্বপ্সে যেমন পা চলে না ঠিক তেমনি । সেকিন্বপ্ন দেখছে তাহলে? আশ্চর্য বোধ করে স্ব্ণকমল ৷ সর্বত্রই বাধা ! ৯৫ অনংগকে ভাকেন স্বামীজী। চমক ভাঙে স্ব্কমলের | নোকালিকাই প্রপাত, ডেভিড স্কষটের স্মৃতিফলক, সেন্ট ডন বস্ষোর গী্জ| প্রভৃতি এক এক করে দেখে আলে তারা । ঝুপ-ঝুপ্‌ করে কোথা থেকে হঠাৎ বৃষ্টি নামে। কী অবস্থাই যে হতে! গাড়িতে না থাকলে! খুব ধারেকাছে বাড়িঘরও নেই । স্বামীজী কিন্তু খুব ভাগ্যবান বলে সার্টিফিকেট দেন ব্র্ণকমলকে । এক চান্স-এ মৌসমি প্রপাত দেখে যাওয়া কারুত্ন ভাগ্যেই বড়ো একটা জোটে না। আলো'-ছায়৷ আর রৌদ্র-বৃপ্রির এমন খেল। দেখার স্থযোগ কদাচিৎ মেলে । চেরাতে প্রায় সারাক্ণই বৃষ্টি নয় কুয়াশা । এখানে সূর্ধতাপ থেকে আত্মরক্ষার জন্তে কেউ ছাতা ব্যবহার করে না, ছাতা ব্যবহার করে বৃষ্টি থেকে মাথা কাঁচাবার জন্তে। অথচ সেই বৃষ্টি বা কুয়াশার জন্তে কোন অন্তবিধাই তো ভুগতে হলো না! এ বৃ্টি কিছুই নয়। স্বর্কমলও বেশ খানিকট। আত্মতৃপ্তি বোধ করে স্বামীজীর কথায়। সে ভাগ্যবান! চারদিকের এই শ্মাশান-শুন্ততার মধ্যে বৃপ্টির এই ব্যথাভর! কান্নার স্ুরটুকুই বা মন্দ কি! কিন্তু সে বৃষ্টিই বা কতোক্ষণ ! হঠাৎ থেমে যায়। কে যেন মহাসমারোহ করে আসতে আসতে মুখ ফিরিয়ে চলে গেল! নিশ্চয়ই আবার আসবে । চিরকিশোর চেরাকে চিরকালই তো এমনি করে মাতিয়ে রেখেছে বৰা ! ফুলে ফুলময় চারদিক। বৃষ্টিকণার স্পর্শ-স্থখে লুটোপুটি খায় যতে। পাহাড়ী ফুলেরা । হাসবে না ওরা? নিশ্চয়ই হাসবে। লা কাছে পেলে ব্র্ণকমলেরও এমনি হাসি 1! ১৬ মোটামুটি সবই দেখা হয়ে যায় ঘণ্টা ছু'য়ের মধ্যে। স্বামীজী এবার অনংগদের নিয়ে যান শ্রীরামকৃষ্ণের ভক্ত এক খাসিয়া পরিবারে । কুবলাই !-_-গৃহকত্র্ণ আলমানোরা হাতজোড় করে নমস্কার জানান । আন্তরিক অভ্যর্থনায় ঘরে নিয়ে যান সকলকে । চেরাপুঞ্জির আর সব বাড়ির মতোই পাথরের তৈরী ঘর। ওপরে ঢালাই টিনের চাল। ঘরের ভেতরটা! পরিচ্ছন্মতায় মনোমুগ্ধকর | শ্রীরামকৃষ্ণের ফটোর একধারে ধূপকাঠি পুড়ছে এক গোছা । সামনে পাথরের থালায় ঠাকুরের ভোগ এবং আর একধারে একখানা বূপোর রেকাবীতে নানা রকমের পাহাড়ী ফুল। খাসিয়! পরিবার হলেও এ যেন সম্পূর্ণ বাঙালী পরিবেশ । হ্র্ণকমল আরো! খুশি হয় স্বামীজীর মুখে শুনে যে, চেরায় এমনি অনেকগুলে! খাসিয়া পরিবার মিশনের বিশেষ অনুরক্ত হয়ে পড়েছে গত কয়েক বছরের মধ্যে । সরকারী সহযোগিতা পেলে বৈদেশিক মিশনারীদের প্রভাব থেকে এদের সম্পূর্ণভাবে মুক্ত করে আন! খুব শক্ত নয়, একথাও বলেন স্বামীজী ৷ গৃহকত্রীর ডাকে চা আর নাখন-রুটির সাজানো" প্লেট নিয়ে আসে ছু'টি মেয়ে। একটির বয়েস পনেরো-ষোল আর একটির বছর উনিশ । ভারি সুন্দর মেয়ে ছুটি । বাইরের উঠোনের গাছ-পাকা কমলালেবুর মতোই গায়ের রঙ অনেকটা । উমিলাদির রঙ-এর সঙ্গেও তুলনা কর! চলে । মনে মনে ভাবে স্বর্ণকমল । অসময়ে এতো খাবারের ব্যবস্থ! ? আপনার আয়োজল এ যাত্রায় আর কাজে লাগানো যাবে না দেখছি ।-_স্বার্মীজীকে লক্ষ্য করে বলে অনংগ । ৯৭ প্রথর দৃষ্টি আলমানোরার | বাংল! কথা বুঝতে না পারলেও, গৃহকত্রীর বিশেষ লক্ষ্য ছিল অতিথিদের কথাবার্তা ও মুখভঙ্গির ওপর | সন্দেহ হতেই জিজ্ঞেস করেন, বা লাই অর্থাৎ কী হয়েছে ? খাবার আয়োজন বড্ড বেশি হয়েছে, স্বামীজী একথা বলতেই আলমানোরা লজ্জায় মরে 'যান যেন। নিজেরই মুখ চাপা দেন নিজের ছৃ'হাতে । পরক্ষণেই বলেন, তিনি বুড়ো মানুষ, তিনি আর কী করবেন, তবে তার পুরুষ ঘরে থাকলে তাদের ঠিকমতো আদর-আপ্যায়ন হতো । এরই একটু পরে কী ধেন ইংগিত করেন গৃহকত্রী । আর মেয়ে ছু'টি সঙ্গে সঙ্গেই এক প্লেট করে কলা আর কমলালেবু নিয়ে আসে পেছনের ঘর থেকে । আদর-আপ্যায়ন এতেও যদি সম্পূর্ণ না হয়ে থাকে, আর পুরুষ ঘরে থাকলে যদি আরো! আপ্যায়নের ব্যবস্থা হতো! তাহলে কী বিপদেই নাজানি পড়তে হতো! !-__নেপথ্যে মন্তব্য করে ্বর্ণকমল। মেয়ে ছুটি কে_ জানতে চায় অনংগ | ত্বামীজী উত্তর দেবার আগেই আলমানোর! প্রশ্ন করে বসেন স্বামীজীকে__বা লাই অর্থাৎ কী ব্যাপার ? জিজ্ঞাসা জেনে নিয়ে হেসে উত্তর দেন-_কান্তাই । এ ছণটি যে তারই মেয়ে গৃহকত্রাঁ তাই জানিয়ে দেন এই সংক্ষিপ্ত উত্তরে । সেন মাফি হাইং 1-অতিথিদের বাড়ি কোথায় জানবার আগ্রহ প্রকাশ করেন আলমানোর | স্বামীজী জানান যে, কোলকাতা থেকে এসেছেন ওরা । আর অমনি মাথা মাটিতে ছু"ইয়ে প্রণাম করেন গৃহকত্রী । খাস ঠাকুরের দেশের লোক, তাই এ অতিথির! যে বিশেষ পুজ্য ! ডখ] ড1 উখাও বাম জা ।_ বাঙালী মানুষ, মাছ-মাংস দিয়ে চারটে করে ভাত খেয়ে যাবার প্রস্তাব আসে তাই ৯৮ আলমানোরার দিক থেকে । কিন্তু স্বামীজী এক কথায়ই বাতিল করে দেন সে প্রস্তাব। তার আয়োজন যে ব্যর্থ হয়ে ধায় তা না হলে! মাই এসে পড়েন এর মধ্যে। আলমানোরার নতুন স্বামী মাহুই । রোপওয়েতে কাজ করেন। বছর সাতেক আগে বিয়ে হয়েছে তাদের। এ ছুই মেয়েকে রেখে আলমানোরার প্রথম স্বামী মার! যাবার পর মাহুইকে জোয়ান ও কর্মঠ দেখে দ্বিতীয় স্বামী হিসেবে গ্রহণ করেছেন আলমানোরা । মাহুই অনেক ছোট আলমানোরার থেকে । অন্তত উনিশ বছরের ছোট। তবু যেতিনি তাকে স্বামিত্বে বরণ করেছেন সে শুধু প্রথাগত কোন বাধা নেই বলেই নয়, সংসারের প্রয়োজন আছে বলেও। জোয়ান পুরুষ না হলে কে দেখবে আলমানোরার সম্পত্তি, কে দায়িত্ব নেবে তার ছুই টুকটুকে কন্তার ! মাছুইকে দেখে আর তার পরিচয় পেয়ে প্রথমটায় অবাক হয়ে গিয়েছিল অনংগ এবং স্বর্কিমল ছু'জনেই । কিন্তু ছ'জনের চিন্তাধার। ছু'রকম পথ ধরে চলে । ংগের মনে জাগে অস্বাভাবিকতার বিস্ময় । কিন্ত হ্র্ণকমলের মনে বিরাট জিজ্ঞাসা । বৃদ্ধা আলমানোরার সম্পত্তি ও সংসার দেখার প্রয়োজনের চাইতেও একটি নিঃসংগ জীবনকে দেখার প্রয়োজন কি বেশি ছিলো না? বিয়ের এক বছর পার হতে না হতেই আগষ্ট বিপ্লবে আত্মান্তি দেন নির্মলদা । স্বামীহারা উমিলাদি অকাল- বৈধব্যের ভয়াবহ নিঃসংগত| থেকে মুক্তি পাবার জন্যে নির্মলদার কোন প্রিয় সহকর্মীকে যদি বাকি জীবনের সহযাত্রীরূপে কামন! করে থাকেন, কী দোষ হয়েছিল তাতে? পরিবার-পরিজনদের বিরুদ্ধতায় ব্যর্থ হয়ে গেল ছ"টি জীবন! কার কী লাভ হয়েছে জি তাতে? উন্সিলাদির বয়েস হদি কিছু বেশিই হয়ে থাকে তার কাংক্ষিতের চেয়ে, তাতে কঠোর আপত্তি বা বিরূপ সমালোচনা যে কেন হবে, তা ভেবেই পায় না স্বণকিমল । আলমানোরার সমস্ত দায়িত্ব নিয়ে মাহুই নর পায়ে, সে কি তাহলে উন্নিলাদিকে নিয়ে আরো বেশি স্তুহী হতে পারতো না !__-ভাবতে ভাবতে তরংগন্ষুন্ধ হয়ে ওঠে ব্ণ্কিমলের মন । অনংগ ও স্বামীজী আর আলমানোর! ও মাহুইর কথাবার্তায় কানই দিতে পারে ন| সে কিছুক্ষণের জগতে । আবার হঠাৎ কুয়াশাচ্ছন্ন হয়ে যায় চারদিক। শুধু কুয়াশাই নয়, ঝির্ঝির করে পড়তে থাকে অতি সঙ্গম সব জলকণা। বাইরের কোন কিছুই আর দৃ্টিপথে পড়ে না। ঘরের ভেতরেও আর কারুর মুখের দিকে চেয়ে কথা বলার উপায় নেই। কথা শুনে ঠাহর করে নিতে হয় বক্তাকে। হ্র্ণকমলের চোখ ঝাপসা হয়ে গিয়েছিল কুয়াশা আসবার আগেই । তারও আগে থেকেই সে শুনতে পাচ্ছিল ন। কিছু। তবে উস্সিলাদির কথাই যদি না! শোনা গেল, তা"হলে কীই বা আর শোনার থাকতে পারে তার কাছে? আর উগ্িলাদিকেই যদি দেখা ন! যায়, তাহলে এমনি কুয়াশ! চিরস্থায়ী হলেই বা তার কী ক্ষতি! একবার যেন ঠিক এমনিধারাই মনে হচ্ছিল স্বর্ণকমলের | বিকেলে ফিরে যাবার পথে ্বর্ণকমলকে রোপওয়ে দেখিয়ে নেওয়া হবে, স্থির করেছে অনংগ। তাই হয়। স্বামীজীও সঙ্গে যান সে অবধি। চেরা-ছাতক রোপওয়ে । চেরাপুঞজির নীরব নিস্তব্ধ প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে এ ছাড়া অন্য যে কোন শিল্পোদ্যমই 'বে-মানান ৮৬, ধলে মনে হতো । এই রজ্ফুপথে মালপত্র আনা-নেওয়া চল্ছে সমতলের সঙ্গে ১৯৩০ সাল থেকে । দেশ ভাগ হয়েছে। কিন্ত বিচ্ছিন্ন সমতলভূমির সঙ্গে সেই যোগবন্ধন আজও রক্ষা করে চল্ছে এই চেরা-ছাতক রোপওয়ে। বহুদূর বিস্তীর্ণ বিরাট বিচ্ছিন্ন সেই সমতলের কতো কাছে ছোট্ট এই চেরাপুজি! এতে। কাছে শুধু এই সেতু-সংযোগের জন্যেই তো । কাজেই যতো দূরেই থাকুন উিলাদি, বর্ণকমলের সংগেই ব! তার প্রাণের যোগ অক্ষ থাকবে না কেন ? রোপওয়ের সামনে উন্ুক্ত আকাশের নীচে অবারিত প্রান্তরে দাড়িয়ে শুধু এই একটি কথাই ভাবে ত্বর্ণকমল | ২৯ জলছায়! ছু'চোখের পাতা বেয়ে টপ. টপ, করে ছৃ'ফৌটা জল পড়ে চন্দ্রার। আবার একটু হাসিও ফুটে ওঠে ঠোঁটের কোণে। চিঠিখানা পড়! শেষ করে বালিসের তলায় রেখে দেয় চন্দ্রা । পরক্ষণেই আবার চিঠিখানা তুলে এনে পড়তে নুরু করে। আবার অশ্রু-হাসির খেল! চলে তার চোখেমুখে । এ অশ্রু আনন্দের । এ অশ্রু শুভ সংবাদে সুখ-চঞ্চল মনের নীরব প্রকাশ । কিন্ত এ হাপি? এহাসিতে কেমন যেন একট! বেদনা-মিশ্রিত চিস্তীর চিহও সুস্পষ্ট । হঠাৎ দিল্লী থেকে চিঠি এসেছে শুভেন্দুর । রাজধানী দিল্লী। কবে এবং কোথা থেকে যে শুভেন্দু রাজধানীতে গিয়েছে তার কিছুই জানে না চন্দ্রা । পাটনা থেকে তার শেষ চিঠি পাওয়া গিয়েছিল । সে চিঠিতেই সে জানিয়েছিল, সেখানে স্থায়ী কোন কাজের ব্যবস্থ! করে উঠতে না পারলে সে একবার কানপুর ও লখনৌর দিকে যাবে ভাবছে । এ রকম বিপদে প্রয়োজনবোধে চন্দ্রাও কাজে নামতে পারে, এ অন্ুমতিও শুভেন্দুর সে পত্রেই পাওয়৷ গিয়েছিল । অনেক চেষ্টার পর দিল্লীতে শুভেন্দুর একটা পাকা কাজ জুটেছে কোন এক খবরের কাগজের অফিসে । প্রচফ রীডারের কাজ। কিন্তু এ যে কী কাজ তার কিছুই জানা নেই চন্দ্রার । তবে চার পাঁচ বছর ব্যাংকে সহকারী ক্যাশিয়ারের কাজ করার পর হঠাৎ খবরের কাগজের আফিসে শুভেন্দু যে কী করে কাজ নি চালাবে এবং পাকা হলেও এ চাকরি যে কতোদিন সে রাখতে পারবে তা ভেবে ঠিক করতে পারে না চন্দ্রা । মাইনের কথাও কিছুই লেখেনি শুভেন্দু । হয়তো লেখবার মতো নয়, তাই লেখেনি। তবে চন্দত্রাকে যখন চাকরি নিতে বারণ করেছে আগের অনুমতি বাতিল করে দিয়ে তখন ধরে নেওয়া যেতে পারে, পুরে! সংসারের খরচ তার উপার্জনেই চলে যাবে । শুভেন্দু একথাও লিখেছে, চন্দ্রা যদি তার বাচ্চা ছেলেটাকে মানুষ করে তুলতে পারে আর বুড়ো শ্বশুরকে তার সেব! যত্বে সন্তুষ্ট রাখতে পারে তা হলেই সে যথেষ্ট খুশি হবে। শুভেন্দুর এই আকন্মিক চিঠিতে একই সঙ্গে আনন্দ ও অন্বম্তি বোধ করারই কথা চক্দ্রার পক্ষে। তার অনুমতি নিয়েই তো চন্দ্রা গত ছ'মান ধরে অক্লান্ত পরিশ্রমে টাইপ- রাইটিং ও সর্টহ্যাণ্ড শিখে নিয়েছে তার দাদার বন্ধু অশেষ- কুমারের সাহায্যে । চন্দ্রার জন্তে একট! ভালো কাজের ব্যবস্থাও করে ফেলেছে অশেষকুমার | আসছে সপ্তাহেই তার ইন্টারত্যু ৷ অবশ্ঠ সে ইন্টারভ্যু নামে মাত্র। সে কথা অশেষকুমার চন্দ্রাকে আগে থেকেই জানিয়ে রেখেছে। কাজেই কাজটা তার নিশ্চিত এবং সে-ও প্রস্তুত হয়েই আছে তা গ্রহণ করার জন্যে । কিন্তু এখন কি কর! যায়? শুভেন্দুর চাকরি হয়েছে, এতো৷ বড়ো একটা আনন্দের খবরের সঙ্গে সঙ্গে আবার একটা নিষেধাজ্ঞার সংবাদ কেন, চন্দ্রা তা বুঝে উঠতে পারে না। কি করে এখন চন্দ্রা তার অশেষদাকে বলবে যে, চাকরি সে করবে না। এতোদিন ধরে এতো হাং্গাম! হুজ্ছুভের পর ৮৯০. একটা কাজ জুটিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করতে গেলে মুখ থাকে কখনো ? ভারি চিন্তায় পড়ে যায় চন্দ্রা। অশেষকুমারের সঙ্গে দেখা হলে কী ঘে সে বলবে তাকে ভেবেই পায় না। তাই বার বার সে খুলে খুলে দেখে শুভেন্দুর চিঠিখানা৷ ৷ না, এখন কিছুই বলা হবে না অশেষদাকে । মনে মনে ঠিক করে ফেলে চন্দ্রা। প্রুফ রীডারের চাকরির দৌড় কতোটা তা একবার দেখেই নেওয়! যাক না! তা ছাড় যে রকম বে-হিসেবি খরচে লোক শুভেন্দুঃ তার ওপর খুব বেশি ভরসা করাও ঠিক নয়। চন্দ্রা তাই আগে থেকেই পাওয়া! কাজটাকে হাত-ছাড়া করতে নারাজ । শুভেন্দুর চিঠির কথা চন্দ্রা স্রেফ চেপে যায় অশেষকুমারের কাছে। ইন্টারভ্যু সত্যি যে নামে মাত্র তাতে কোন সন্দেহই নেই। একটি মাত্র কথাতেই যে একটা চাকরি হয়ে যেতে পারে তা তার জান। ছিল না । ম্যানেজিং ডাইরেক্টর একবার মাত্র শুধু চাইলেন চন্দ্রার দিকে আর নামট। জিগ্যেস করলেন, তারপরই বলে দিলেন পরদিন থেকে অফিস করতে । টাইপ-রাইটিং বা সর্টহ্যাণ্ডের কোন পরীক্ষাই হলো না। অথচ সে কাজই নাকি করতে হবে তাকে চন্দ্রা আশ্চর্য হয়ে যায়। একট! সার কোম্পানীর অফিস । সিক্ধী সারের কারখানার এজেন্সী নিয়ে বেশ ফেঁপে উঠেছে এই লিমিটেড কোম্পানী। একজন মাড়োয়ারী অংশীদার থাকলেও অপরেশ সরকার তার ম্যানেজিং ডাইরেক্টর এবং কোম্পানীকে বাড়িয়ে তোলার মূলেও রয়েছে বিশেষভাবে ভারই খাটা-খাট্ুনি। ৪ খুবই সৌধিন লোক সরকার । চাকরি-প্রার্থী অশেষকুমারের ছিম্ছাম্‌ চেহারা আর তার চৌকধ কথাবার্তায় সরকার বুঝে নিয়েছিলেন যে, তাকে দিয়ে অনেক কাজ পাওয়া যাবে । গত সাত আট মাসের মধ্যে সত্যি সত্যি খুব সম্তোবজনক কাজও দিয়েছে অশেষকুমার । কাজেই আরে! ভারি ভারি কাজের ভার তার ওপর চাপিয়ে দিতে এখন আর দ্বিধা করেন না সরকার । অশেষকুমারও বেশ বুঝতে পারে যে, মালিক খুবই খুশি আছেন তার কাজে এবং তার উন্নতির পথও শীগ্গিরই খুলে যাবে যদি আর কিছুকাল কর্তার হুকুম ঠিক ঠিক মতো তামিল করে যেতে পারে। সে চেষ্টায় কোন ফাকিও নেই অশেষকুমারের । কোম্পানীর হয়ে দিনরাত তার এদিক ওদিক এর কাছে তার কাছে দৌড়োদৌড়ির অস্ত নেই। সারে ভেজাল অর্থাৎ প্রচুর পরিমাণে মাটি মেশানোর অভিযোগ থেকে “দরকার ফার্টিলাই- জার? যে অব্যাহতি পেয়েছে সে কি সম্ভব হতো অশেষকুমারের ধরাধরি ছাড়া ? পুলিশের কর্তা ব্যক্তিদের থেকে স্ুক্চ করে কার সঙ্গে পরিচয় মেই অশেষকুমারের ? তাইতো সরকার ধরেই নিয়েছেন, সব কাজই পাওয়া যাবে তার কাছ থেকে । চত্্রা ঠিক টাইমেই অফিসে ধায়। প্রথম প্রথম কয়েকদিন অশেষকুমারই তাকে নিয়ে গেছে আফিসে। এখন সে নিজেই যায় । প্রথম মাসের মাইনে একশো কুড়ি টাকা পেয়েছে চন্দ্র! ৷ শুভেন্ছুও পাঠিয়েছে একশো টাকা । বেশ স্বাচ্ছন্দ্য এসেছে সংসারে । চন্দ্রা জানায় নি এখনে! শুভেন্দুকে তার কাজের কথ। । ভাবছে জানাবে বলে। ৫ চন্দ্রা তার নিঃসস্তান বিধবা বড়দিকে কাছে এনে নিয়েছে । আফিসের সময়টা বড়দিই সংসার আগলান। খোকনকে দেখার জন্যে একজন লোক না হলে চলে? এতে অবশ্যি ছু'পক্ষেরই সুবিধে হয়েছে ইতিমধ্যে শুভেন্দুর আর একখানা চিঠি আসে তাতেও আনন্দের খবর । প্রেস কমিশনের সুপারিশে তাদের নাকি আরও একশো টাকা আয় বাড়বে, এই আশার কথা জানিয়েছে শুভেন্দু । তখন আরে! কিছু বেশি টাকা সে চন্দ্রাকে পাঠাতে পারবে বলে লিখেছে। তখনো পর্যস্ত প্রেস কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশ হয়নি । খবরের কাগজের খবরের ওপর ভরস|] করেই অতি উল্লাসে শুভেন্দু এই আশার কথা জানিয়েছিল চন্দ্রাকে ! কিন্তু এও তে হতে পারে, চন্দ্রা যাতে কোন চাকরির দিকে ঝুঁকে না পড়ে সে জন্যেই শুভেন্দু তাকে আরো টাকার লোভ দেখিয়েছে । চন্দ্রা কিন্তু মনে মনে সে ভাবেই ব্যাখ্যা করে এই চিঠির । কিছুদিন ধরে অশেষকুমারের কথাবার্তায় কেমন যেন একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করছে চন্দ্রা। এরই মধ্যে ছ'তিন দিন অশেষকুমার তাকে বলেছে সরকারের কথামতো চলতে। কিন্তু সে তো কোন কথাই অমান্য করেনি সরকারের। একদিন সে তাই জিগ্যেসই করে ফেলে £ আচ্ছা অশেষদা, আমায় তুমি একথ বলছে। কেন ধার বার ? তার মানে তো আমি কিছু বুঝতে পাচ্ছি না। এর মানে তে! অতি স্পষ্ট চন্দ্র । তোমার ভালোর জন্যেই বলছি। মালিকের মন রক্ষা করে চললে তোমারই আখের ভালো হবে। তোমার কাজে খুবই খুশি আছেন সরকার । তাই আসছে মাস থেকেই তিনি তোমাকে একটা ১৬১, স্পেশাল এলাউয়েব্প দেবৈন বলে ভাবছেন। সে কথাটা তার কাছ থেকে শুনতে পেয়েই আমি তোমাকে সব সময় তার কথামতে। চল্তে বলছিলাম । অফিসের কাজে সরকারের কথা মতো আমি চলিনি এমন ঘটনা তো! কখনো ঘটেনি । কাজেই তোমার একথ! উঠতেই পারে না অশেষদা ! ন৷ চন্দ্রা, সেদিন তুমি সরকারের মনে একটু ব্যথাই দিয়েছ। তোমাকে নেহাৎ ভালোবাসেন বলেই তিনি সেদিন মেট্রো ম্যাটিনি শোতে তোমায় নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন । আর তোমাকে নিয়ে যাবেন বলেই আমাকেও বলে রেখেছিলেন আগে থেকেই । আমি সরকার সাহেবের কাজ করি, আমার কাজকেই তিনি ভালোবাসতে পারেন । কিস্তু তিনি আমাকে ভালোবাসেন আর তার জন্তে আমাকে নিয়ে তিনি সিনেমায় যেতে চাইবেন, এ যে কি করে তুমি ভাবতে পারে! অশেষদা, তাও আমি বুঝে উঠতে পাচ্ছি না। তোমাকে আমি আমাদের শুভাকাজ্ষমী বলেই মনে করতাম । কিন্তু নিহত সে কি চন্দ্রা, তুমি আমায় এমনি করে ভূল বুঝতে বসেছ ?-_. অশেষকুমারের শুধু গলাই কেঁপে ওঠে না এ কথাট্ুকু বলতে, চন্দ্রার কড়া! জবাবে ও কঠোর চাউনিতে শিউরে ওঠে তার সারা শরীর । ভুল বোঝাবুঝি নয় অশেষদা! তুমি আমাদের অনেক সাহায্য করেছ এ কমাস ধরে, একটা কাজও জুটিয়ে দিয়েছ তুমিই । তার জন্তে আমি সত্যি সত্যিই কৃতজ্ঞ তোমার কাছে। কিন্তু সে কৃতজ্ঞতার খণশোধ হবে তোমার অপমানের মধ্যে দিয়ে--সে আমি হতে দিতে পারি না। সে আবার কি কথা ? ৭ সরকারের কথায় আমি যদি সেদিন তার সঙ্গে সিনেমায় যেতাম আর তাতে যদি আমাকে কোনরকম অপমানী হতে হতো কিংবা ধরো যদ্দি মিথ্যে করেই আমার বিরুদ্ধে কোন, কলংক রটনা হতো তার জের কি তোমায় টানতে হতো না অশেষদা, মে অপমান কি তোমাকে স্পর্শ করতো না? নিশ্চয়। আমাকেও তার জের টানতে হতো বৈকি ! কিন্ত চন্দ্রা, সত্যি বলছি আমি ভালো মনেই এবং তোমার ভালো! চিন্তা করেই সরকারের কথামতো চল্তে তোমায় উপর্দেশ দিয়েছিলাম । তা, তুমি যদি আমার কথাকে সংগত বলে মনে না কর তা হলে আমার কথা নেবে না, তাতে আর কি আছে ?_নিজের মনের কথাকে সম্পূর্ণ গোপন করে সমস্ত ব্যাপারটাকেই বেশ কেমন এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করে অশেষকুমার । আর একথা শেষ করার সঙ্গে সঙ্গেই সে উঠেও পড়ে চলে যাবার জন্টে ! রাগ করে চলে যাচ্ছ কেন অশেবদা, চা হচ্ছে যে !-চন্দ্রা বাধ! দেয় অশেষকুমারকে | না, সন্ধ্যে হয়ে এলো । একটা জরুরী কাজও আছে হাতে । আজ যাই, চা-টা বরং পাওনাই রইলো ।__এই বলে তার মনের ভাবটাকে চাপা দিতে চায় অশেষকুমার | না, তা হবে না। ছু'মিনিটের মধ্যেই চা দিচ্ছি। তা ছাড়া একটা কাজের কথাও আছে তোমার সঙ্গে । বেশ, বলে৷ কি কথা । আচ্ছা অশেষদা, আমি এক সপ্তাহের ছুটি পেতে পারি ? তাতে৷ সরকার সাহেবের মজ্জি। তা তুমি ছুটি নিশ্চয়ই পাবে। তোমার কাজে এতো খুশি সাহেব, তোমার দরখাস্ত মঞ্জুর না হয়ে পারে কখনো ? চু অশেষকুমারের এ জবাবের মধ্যেও কেমন একটা ইংগিত অনুভব করে চন্দ্রা । তবে এর উত্তরে সে আর বলে না কিছু। চুপ করে রান্না ঘরে চলে যায়। চা তৈরী করে নিয়ে আসে। অশেষকুমারকে চা দিয়ে এক রকম চুপ করেই তার সামনে দাড়িয়ে থাকে । ছুটি পাবে এ নিশ্চয়তা পাওয়ায় চক্র আনন্দিতই হয়ে থাকবে । হয়তো আগের বাদান্থবাদের তিক্ততাঁও অনেকটা সে ভূলে গিয়ে থাকবে । চা খেতে খেতে এমনি ধারায় ভাবতে থাকে অশেষকুমার | চন্দ্র, যাই তা তলে । তুমি ছুটির দরখান্তটা দিয়ে দিও । আমার সঙ্গে সরকার দাহেবের আজই দেখা হবে । আমিও বলে রাখবখন তাকে। আচ্ছা !_ চন্দ্রা নিবিকার চিত্তে বিদায় দেয় তার অশেবদাকে ৷ পরদিন চন্দ্রা অফিসে যায় অন্যান্ত দিন অপেক্ষা একটু আগেই । সরকার সাহেব তখনো অফিসে আসেননি । চক্দ্রাও তেমনি অবস্থাই মনে মনে চেয়েছিল । একখানি চিঠি সরকার সাহেবের টেবিলের ওপর চাপা দিয়ে রেখে চন্দ্রা সেই যে বাড়ি ফিরে আসে, আর যায়নি অফিসমুখো । এদিকে প্রেস কসিশনের রিপোর্ট বেরিয়ে গেছে কাগজে কাগজে ৷ সাংবাদিকদের মধ্যে এ নিয়ে মোটামুটি একটা উল্লাসের ভাব দেখা গেলেও গরীব প্রুফ রীডার অর্থাৎ ভ্রম- সংশোধক মহলে কিন্তু গভীর মনোবেদনা ও নৈরাশ্ের স্থষ্টি করে এ রিপোর্ট । তাদের সন্বন্ধে তেমন কোন উল্লেখই নেই রিপোর্টে । | ২৯ প্রেস কমিশনের সুপারিশ নিয়ে আলোচনায় দিল্লী সরগরম | এক দিকে মালিকদের এবং আর এক দিকে সাংবাদিক কমীর্দের বৈঠক বসছে পর পর । এই সাংবাদিক কমীর্দের আলোচনায় যোগ দেবার জন্যে কোলকাতা থেকে এসেছেন কয়েকজন প্রতিনিধি । ছু'জন উঠেছেন নয়াদিল্লীর কালীবাড়িতে । কালীবাড়ি দিল্লীতে বাঙালীদের একমাজ্র মিলনকেন্জ্র । কোলাহল-বিরল পরিবেশে এ বাড়িতে বেশ ভালই লাগছে নন্দছুলাল ও সমীরণের । তবে কতোটুকু সময়ই বা আর তারা এখানে থাকবার অবকাশ পান? প্রেস কমিশনের সুপারিশ আলোচনার কাজ যদিও ব! শেষ হলো তো নেমস্তম্ের ধাক্কায় অস্থির একেবারে । এমন কি পাশের বিড়লা নন্দিরট! পর্যস্ত একবার ঘ্বুরে ফিরে দেখার সময় করা যায়নি গত চার দিনের মধ্যে! বিড়লা মন্দিরেরই আর এক পাশে মহাসভা ভবনটাও দেখার মতো । সমীরণ নতুন এসেছেন দিল্লীতে । কিন্তু নতুন এলেও এরই মধ্যে ফাকে ফাকে তিনি রাজধানীর প্রায় যাবতীয় দ্রষ্টব্যই দেখে নিয়েছেন এ কয়দিনের মধ্যে । লালকেল্লা, কুতুবমিনার, ফিরোজ শা কোটলা, হুমায়ূনের স্মৃতিসৌধ, রাজঘাট এসব কিছুই আর প্রায় বাকি নেই, বাকি শুধু অতি কাছের এই বিড়ল৷ মন্দির আর মহাসভা ভবন । সেদিন সন্ধ্যায়ই এ ছুটো দ্রষ্টব্য দেখা শেষ করে দেখার পাল! মিটিয়ে ফেলবেন স্থির করেছেন সমীরণ । সেদিনই আর সব কাজ সেরে এসে সন্ধ্যায় বিড়ল। মন্দিরে বেড়াতে যেয়ে বিস্মিত বোধ করেন সমীরণ এই মন্দির নির্মাণে ব্যয়িত অর্থের পরিমাণ ভেবে । কিন্তু নির্মাণকর্তার নাম মনে আসতেই বিস্ময়ের ঘোর কেটে যায় তার। বিড়লার কাছে এ ব্যয় আর কতোটুকু ! আচ্ছা, শুভেন্দুর মতে! মনে হচ্ছে না? কিন্তু শুভেন্দু হলে তার সঙ্গে এ অবাঙালী মেয়েটি এসে জুটবে কোখেকে ? আর তাছাড়া সে তো পাটনায় কাজ করছে শুনেছিলাম । রাজঘাট থেকে ফেরবার পথে পরশু দিনও যেন এরাই চোখে পড়েছিল । সন্ধ্যার আবছা! জীধারে তারুণ্যের একটু বাড়াবাড়ি পরিচয় দিয়েই চলছিল তারা । কিন্তু শুভেন্দুর কথা মনে হয়নি তখন । আর হঠাৎ দিল্লীতেই বা তার আবির্ভাব ঘটবে কেন? সেদিনও তো কোলকাতায় চন্দ্রার সঙ্গে বাসে দেখা হলো, কই সে তো বল্লে না কিছু !-_বিড়লা মন্দির থেকে বেরিয়ে আসার মুখে মন্দিরগামী এক জোড়া হাস্ডোচ্ছল তরুণ-তরুণীকে দেখে কেমন যেন ভাবিত হয়ে পড়েন সমীরণ সেন । বেশ তো দেখাই যাকৃনা, আরে! একদ্রিন তো৷ থাকাই হবে দিল্লীতে । সমীরণ ব্যাপারটাকে ভালে। করে যাচাই করেই দেখতে চান । পরদিন একটু বেশি রাতেই বিড়ল! মন্দিরে বেড়াতে আসেন সমীরণ সেন। সতর্ক দৃষ্টিতে লক্ষ্য করেন প্রত্যেকটি মানুষের আসা যাওয়া । পূর্ব সন্ধ্যায় যে হলঘরে বসে মীরার একখানি অপূর্ব ভজনগান তিনি শুনছিলেন মন্ত্রমুগ্ধের মতো, সেখান থেকেই তুলসীদাসের রামায়ণ পাঠের ধ্বনি ভেসে আসছিল সেদিন। একই জায়গায় ধীড়িয়ে তিনি অনেকক্ষণ ধরে শুনছিলেন সেই রামায়ণ গান । কিন্তু হঠাৎ তার তন্ময়তা ভেঙে যায় £ হ্যা। শুভেন্দুই তো৷ বটে !__এই কথা বলেই ছ'পা এগিয়ে এসে শুভেন্দুকে অবাক করে দেন সমীরণ। কে, সমীরণদা যে 1 আপনি এখানে হঠাৎ কী ব্যাপার ! তুমি এখানে কদিন, তাই আগে বলো শুনি। কীকর আজকাল ? এখানে একটা খবরের কাগজের অফিসে কাজ নিয়েছি ৩৯ সমীরণদা । তাপ্রায় দু'মাস হলো আছি রাজধানীতে । কিন্তু একি আর আমাদের মতো লোকের থাকার জায়গা? আগে শুনেছিলাম প্রেস কমিশনের সুপারিশে কিছু সুবিধা পাওয়া যাবে। কিন্ত এখন তে। দেখছি প্রুফ রীভারর। বাদ পড়ে গেছে তা থেকে । ব্যস্, সব আশা নিমূল! অথচ শুনেছি অনেকে বড়ো বড়ো কাগজের সম্পাদকও হয়ে গ্রেছেন প্রুফ রীডার হিসেবে সংবাদিকতায় হাতে খড়ি দিয়ে । ও, তুমি প্রুফ রীডারি করছো বুঝি । কিন্ত একাজের জঙন্তে তোমার কোলকাতা ছেড়ে দিল্লী আসার কী এমন দরকার ছিল শুনি। তুমি বলছো, চাকরি করছো । কিন্তু ওদিকে তো দেখছি, চক্দ্রীকে অফিসের কাজে নামতে হয়েছে। চন্দ্রার অশেধদা তাকে অফিসে নিয়ে বায়, নিয়ে আসে সে খবর তুমি রাখো কিছু ? চন্দ্রা অফিসে যায়? - শুভেন্দু যেন চমকে ওঠে চন্দ্রার চাকরির কথা শুনে । বারে, যাবে না! সবশুদ্ধ, না খেয়ে মরবে তারা৷? একি কথা বলছো তুমি শুভেন্দু? তুমি রাজধানীতে ক্ষুত্তি লুটবে আর ওর! সব শুকিয়ে থাকবে কোলকাতায়, তাই বলতে চাও তুমি ? তা কেন হবে সমীরণদা ! আমি তো! প্রথম মাসের মাইনে পেয়েই একশোটাক৷ পাঠিয়ে দিয়েছি চন্দ্রাকে । বাস্‌, তাতেই হয়ে গেল! ছু'মাস পাটনায় প্রুফ রীভারি করে যা পেয়েছি তা থেকে কিছুই পাঠাবার উপায় ছিল না। জানি সে সময়টা ওদের খুবই কষ্টে কেটেছে । তবে! খিদের কষ্ট কতোকাল সইতে পারে মানুষ ? তাইতো চন্দ্রা নিজে কোন একটা কাজে নামতে চাইলে তাকে অনুমতিও দিয়েছিলাম । কিন্তু এখানে এসে আমার ৩ এ কাজটা জুটে যাবার পর আমি তাকে নিষেধ করেই চিঠি দিয়েছি কোন চাকরি নিতে । কিন্ত তার আগেই তো সে কাজ নিয়ে বসে আছে। সংসারের খাটাখাটুনির পর আফিসের পরিশ্রম তার সইবে কেন, বিশেষ করে তা ভেবেই আমি তাকে বারণ করেছিলাম। আমার বারণ সব্বেত কাজে যায় চন্দ্রা! অশেষদাই তার বেশি হলো ? হবেই বা না কেন? এ মেয়েটিই বা তোমার কাছে বেশি হলে! কি করে চন্দ্রার চেয়ে? কে এই মেয়েটি শুনি ।__ সমীরণের এই আকম্মিক কঠোর প্রশ্নে মুহুর্তের মধ্যে একট! কালোছায়ার আবরণে ছেয়ে যায় শুভেন্দুর সারা মুখখানি । এর কথা বলছেন সমীরণদা, এ আমারই এক সহকর্মী বন্ধুর বোন। এদের বাড়িতেই আমি একমাস হলো পেয়িং গেষ্ট হয়ে আছি। সিক্ধী হলেও আমাকে এর! একেবারে নিজেদের লোক করে নিয়েছে । সমস্ত সংকোচ ও লজ্জাকে চেপে রেখে অতি কষ্টে বেশ সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে একটা উত্তর দেয় বটে শুভেন্দু, কিন্তু এর ষোল আনাটাই যে ফাঁকি এ কথা বুঝতে বাকি থাকে না সমীরণের | কিন্তু ভায়া, হোষ্টের ঘরের তরুণী মেয়েকে নিয়ে পেয়িং গেষ্টের এতো রাত অবধি বাইরে বাইরে কি রোজ রোজ ঘোরাফেরাটা! ভালো দেখায়? আচ্ছা, পরশু সন্ধ্যায় রাজঘাটের সামনে তোমাদের মতোই ছুজনকে দেখেছিলাম মনে হচ্ছে। তখন খেয়াল হয় নি। কিন্তু এখন ভাবছি তোমরাই। সত্যি কি তাই? হবে হয়তো। পরশু গিয়েছিলাম আমর! রাজঘাটে বেড়াতে ।--মাথা নীচু করে সসংকোচে জবাব দেয় শুভেন্দু রাজধানীতে লাজলজ্জার বালাই নেই বুঝি! একেবারে প্রকাশ্য রাস্তায় তীর্থপথে বন্ধুর বোনকে নিয়ে'”"'। যাক্‌গে, ৩ তবে চন্দ্র বেচারাকে একেবারে ভূলে যেও না” যেন।-- সমীরণের কঠরোধ হয়ে আসে যেন আর বেশি কথা বল্তে। তিনি হন্‌ হন্‌ করে বেরিয়ে যান বিড়লা মন্দির থেকে এবং মনে মনে এও ঠিক করে ফেলেন যে, কোলকাতায় ফিরেই চন্্রাকেও এ ব্যাপারে একটু সতর্ক করে দেবেন । সমীরণের সঙ্গে এমনি আকনম্মিকভাবে দেখা হয়ে যাবে এ কখনো কল্পনা করতে পারে নি শুভেন্দু । কী ভীষণ লজ্জার কথা ! বিশেষ করে সুন্দরী সঙ্গে থাকাতেই সে অত্যন্ত বিব্রত বোধ করেছে । তাছাড়া পরশুর ব্যাপারটাও সমীরণের চোখে পড়েছে। রাজঘাটের সামনে সেদিন মে একটু বাড়াবাড়িই করে ফেলেছিল । রাজঘাট থেকে বেড়িয়ে ফেরবার পথে সামনের ফুলওয়ালার কাছ থেকে একগোছা ফুল কিনে বুকে করে নিয়ে চলছিল সুন্দরী । ফুলে ফুলময় সুন্দরীর বুকের দিকে চেয়ে অধীর হয়ে উঠেছিল শুভেন্দু। সেই ফুলদলে দোল খেতে উন্মুখ হয়ে উঠলো তার মন। মুহুর্তের উন্মাদনায় ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সে ন্থন্দরীর বুকে। শুভেন্দু কী করে জানবে লে মুহূর্তে সেখানে উপস্থিত থাকবে তার সমীরণদা ও শুভেন্তুর দাদ! ছিলেন সমীরণের অস্তরংগ বন্ধু। গাঁয়ের স্কুলে পড়ার সময় বাইরের লোকের! কখনো সমীরণকে অন্ত বাড়ির ছেলে বলে মনে করতে পারতো না। কুষ্টিয়া থেকে কোলকাতায় এসেও তারা একই পাড়ার অধিবাসী । তহবিল তছরুপের মিথ্যে অভিযোগে শুভেন্দুর বাযংকের চাকরিটা চলে যাবার পর প্রথম সহাম্নভূতি ও সাহায্য এসেছিল সমীরণের কাছ থেকেই । এ ব্যাপারে শুভেন্দুর জন্যে দৌড়োদৌড়িও সমীরণ কম করেন নি। তবে টাকা ৩০৪ পয়স। দিয়ে বেশিদিন সাহায্য করার সামর্থ্য তারই বা কতোটুকু! সে ব্যাপারে অশেষকুমারের সাহাষ্যই যে প্রধান সম্বল হয়ে দীড়িয়েছিল তাদের কাছে, সে বিষয়ে কোন সন্দেহই নই । সমীরণের কাছে চন্দ্রার চাকরির কথা, বিশেষ করে অশেষকুমারের সঙ্গে তার অফিসে যাওয়া আসার কথা শুনে শুভেন্দ্ুর মনে বেশ একটু খটকা লেগে যায় । সেদিন সারা রাত ধরে সে চক্দ্রার কথাই চিস্ত করে, আর চন্দ্রার চিন্তার পাশাপাশি হুন্নরীর ছবিও যেন তার চোখের সামনে ভেসে ভেসে ওঠে । সত্যি, সুন্দরীর সঙ্গে এতোট। গভীর ভাবে মেলামেশা করা ঠিক হয় নি। কে জানে, সুন্দরীর সঙ্গে এই মেলামেশার খবর কোনরকমে শুন্তে পেয়েই চন্দ্রা তার অশেষদার প্রতি এতোখানি আসক্ত হয়ে পড়েছে কিনা । সুন্দরীর হাত থেকে ছাড়! পাওয়া খুবই মুক্ষিল, তবু সেখান থেকে মুক্ত হয়ে আসতেই হবে তাকে । তা না হলে অশেষকুমারের হাত থেকে চজ্দ্রাকেও মুক্ত করা যাবে না। এমনি সব চিন্ত। কেবলি কিল্বিল্‌ করতে থাকে শুভেন্দুর মাথায় । ও সমীরণদ। যদি কোলকাতায় ফিরেই সব কথা বলে দেয় চন্দ্রাকে, তাহলে কী ভাববে সে? কবে যে সমীরণদ1 কোলকাতা রওনা হবেন তাও তো৷ জিগ্যেম করা হয়নি তাকে ।-__শুভেন্দু যে এ অবস্থায় কী করবে তা ভেবে পায় না। তাই সে উত্তেজিত হয়ে ওঠে মনে মনে। না, আর চিন্তা নয়। পরদিনই শুভেন্দু তার অন্ধ ও গীড়িত পিতাকে দেখবার অজুহাতে পাতদ্দিনের ছুটি নিয়ে কোলকাতা যাত্রা করে। কোলকাতার বাড়িতে পৌছেই চন্দ্রাকে তার প্রথম প্রশ্ন £ ৫ কি, আফিসের কাজকর্ম চল্ছে কেমন চন্দ্রাদেবী ? চন্ত্রার বুঝতে বাকি থাকে না শুভেন্দ্র তার এ প্রশ্থের মধ্যে দিয়ে কি ইংগিত করতে চায়। মুখের কথায় উত্তর না দিয়ে শুধু একখান! চিঠি এগিয়ে দেয় শুভেন্দুর হাতে । মাত্র ছুঘণ্টা আগে পাওয়া সেই চিঠিখানা | গভীর আগ্রহ নিয়ে শুভেন্দু খাম থেকে খুলে পড়তে সুরু করে চিঠিখানি । অশেষকুমার লিখেছে-_ চক্দ্রা, তুমি আমাকে ন| জানিয়েই পদত্যাগ করেছ, তাতে ছুঃখ নেই। কিন্তু সেদিন সরকার সাহেবের আমন্ত্রণ নিতান্ত অভদ্রভাবে প্রত্যাখ্যান করে এবং তারপর তোমাদের বাড়িতে আমাকে যথেচ্ছভাবে অপমান করে তুমি যে অবস্থার স্যষ্টি করেছ, তারপর তোমাদের সঙ্গে আমার আর কোনরকম সম্পর্ক রাখ! চলে না। তোমার পদত্যাগপত্র সরকার সাহেব সানন্দেই গ্রহণ করেছেন। এই সঙ্গে তার পত্র এবং কোম্পানী থেকে তোমার প্রাপ্য অর্থ পাঠিয়ে দেওয়! হলো । তোমার ভালোমন্দ তুমিই বুঝবে । আমার দায় এখানেই শেষ । ইতি, অশেষকুমার চিঠিখান! পড়ে উচ্ছ'সিত হয়ে ওঠে শুভেন্দু । তার প্রতি চন্দ্রার অনুরাগের পরিমাপ করতে পারে না সে। চন্দ্রাকে গভীর উত্তপ্ত আলিংগনে বেঁধে নিতে গিয়ে কেমন যেন কেঁপে কেঁপে ওঠে শুভেন্দু । সুন্দরীর কথা মনে পড়তেই লজ্জায় ঘ্বণায় বিষিয়ে ওঠে তার সারা দেহ। নে মন থেকে ঝেড়ে ফেলে সুন্দরীর চিন্ত! । তার মনের ওপর সাময়িক ভাবে একটা মোহ বিস্তার করেছিল সুন্দরী, তার নবযৌবনের তরংগে ভাসিয়ে নিতে ৩৬ চেয়েছিল তাকে। কিন্ত প্রথম ' তরংগাধাতেই সে নিরাপদ তীরে এসে ছিটকে পড়েছে। চন্দ্রা শুভেন্দ্ুকে কাছে টেনে নিয়ে শাস্ত করতে চায় তার উত্তেজনাকে । কিন্তু তার অস্তরের কথা কি করে জানবে সে! কয়েক দিন পর সমীরণ আগ্রা এলাহাবাদ বেনারস হয়ে কোলকাতায় ফিরে এসে যখন চন্দ্রাদের খোজ করতে এলেন, তখন দেখেন সেখানে শুভেন্দুও উপস্থিত । ৩৭ গ্রন্থি সন্ধ্যার আকাশে তার! বিকৃমিক্‌। শীস্ত নদীর জলে তারই ছায়।। অনেক আশ'র আলো! ঝল্মল্‌ যেন । তার জন্তে তুমি ভেবো না বিনতা ।--গংগার ঘ।টে বেড়াতে বেড়াতে বৌদি আশ্বাস দেন তার ননদকে। বয়সের পার্থক্য অনেক বেশি হলেও ভাব কিন্ত খুবই গভীর বৌদি-ননদিনীর মধ্যে । তাই ওদের একজনের কোন কথাই আর একজনের অজানা থাকে না। তা ছাড়া একই পার্টির কর্মী ওরা । পুরবীদি পার্টর নেত্রীস্থানীয়া । তারই রেক্রুট বিনতা। কিন্তু তবু কেন জানি পুরোপুরি নির্ভর করতে পারছে না বিনতা তার বৌদির কথার ওপর | বিনতা যে আশংকা করছে | একেবারে অমূলকও নয়। তার বৌদি পার্টির পুরবীদি। পার্টর লোকের! তার কথামতো চলে তিনি তার নেত্রী বলে। কিন্ত সংসারের ব্যাপারে দাদার কথাই তো চরম কথা, বৌদির কথা সেখানে নাও থাকতে পারে । তবে বৌদির কথাই যে বেশি থাকে এও অবশ্য বিনতা লক্ষ্য করে আসছে । তাইতো সে তার মনের কথা খুলে বলেছে বৌদিকে এবং তার কাছে জানিয়েছে তার আবেদন । কাল একটুও ঘুমুতে পারি নি বৌদি! আজও হয়তো! তেমনি ভাবে ন। ঘ্ুমিয়েই রাত কাটবে ।-_ছুশ্চিন্তার গভীরতা প্রকাশ পায় বিনতার কথায় । বেশ আজই তোমার দাদার সঙ্গে এ নিয়ে আলাপ করবে! । 2৮ তুমি নিশ্চিন্ত থাকতে পারো । শুধু শুধু কেন এজন্ে মাথা খারাপ করছে৷ বিনতা .! দেখো ভূলে যেও না আবার । তোমার তো আবার সাত রকমের ঝামেলা ।--বিনতা অনেকটা আশ্বস্ত হয়েই বলে । হা] ভালো কথা, আসছে কাল আবার মহিলা সংস্কৃতি পরিষদের মাসিক অনুষ্ঠান। তোমার আর বীথিকার গান গাইবার কথা । সন্ধ্যা করবে আবৃত্তি। চলো ফেরার পথে বীথিকাকে একবার ভালো করে বলেই যাই। সে আবার ভুল না করে বসে! খুব অসম্ভবও নয়। এরই মধ্যে কেমন যেন হয়ে গেছে বীথিকা। ছু মাসের মধ্যে তার সঙ্গে তো দেখাই হয় নি বিয়ের পর পরিষদের কট! মিটি-এই বা সে আসতে পেরেছে? -"সংসার পেতে বসবার পর বীথিকার মধ্যে যে বেশ একটা পরিবর্তন দেখা দিয়েছে তাই স্ুক্সরভাবে প্রকাশ করে বিনতা । তা প্রথম প্রথম এরকম একটু আধটু হয়েই থাকে । এ থেকে প্রমাণ হয় না যে, বীথিকার আর কোন আকর্ষণই নেই আমাদের পরিষদের ওপর । তা ছাড়া হঠাৎ কাজের চাপও তো পড়ে ঘেতে পারে, ভুল-ঢুকও হতে পারে। সে তো সকলের বেলাতেই হতে পারে ।-_সঙ্গে সঙ্গে জবাব দেয় বিনতা। ৷ বীথিকার পক্ষ নিয়েই যে কথা বলবেন বৌদি সে তার জানাই ছিল। আর বীথিকার ওপর পরিষদ-সভানেত্রীর পাশিয়ালিটি যে আজকের নয়, অনেক দিনের, সে কথ! পার্টির কেই বানা জানে? তা নইলে প্রতাপ রায়ের মতো ছেলের সঙ্গে ওর বিয়ে হতে পারতো কখনো? সেযা হয় হোকগে। যে হাতছাড়! হয়ে গেছে তাকে নিয়ে তার চিন্তা ৩৪ করে লাভ নেই । সন্দীপন আবার ফক্কে না যায় তাই এখন দেখা দরকার । বিনতার যা কিছু চিন্তা তা নিন নিয়ে। প্রতাপের সঙ্গে তারই প্রথম খুব ভাব জমে ওঠে । গানে অবশ্থি বীথিকার নাম বেশি তার চেয়ে। কিন্তু দেখতে? বুকে পিঠে কোন তফাৎ ছিল ওর? ক'খানা হাড় দিয়ে তৈরি মানুষ! তবে প্রতাপ যদি আর সব কিছু বাদ দিয়ে শুধু গানের দিকেই বেশি ঝুকে থাকতো! তা হলে আর কিছু বলার ছিল না। কিন্তু ব্যাপারটা তো শুধু তাই নয়। সভানেত্রী যা চেয়েছিলেন, তাই. হয়েছে। সত্যি অদ্ভুত শক্তি তার বৌদির। গত কয়েক বছর ধরেই লক্ষ্য করে আসছে বিনতা। তাঁকেও তো পূরবীই পার্টিতে এনেছেন । তা নাহলে এমনি করে বাইরে ঘোরাফেরা করার স্থযোগ পেতো কোনদিন সে জীবনে! তার দাদা আনন্দকুমার শিক্ষা-দীক্ষায় যতোই উন্নত হোন না কেন, তার মনোভাবকে ঠিক আধুনিক বলা চলে না। ভাগ পূরবী বৌদি এসেছিলেন তাদের ঘরে, তা না হলে কী অবস্থাটাই না জানি হতো ! পূরবীদি, এখানে কী করছেন দাড়িয়ে দাড়িয়ে £_হ্ঠাৎ সন্দীপনের ডাক শুনে চমকে ওঠেন পূরবী । বিনতাও । আপনি ? ওপার থেকে এইতো সবে এলাম ৷ বালী আর বেলুড়ের মাঝামাঝি জায়গায় একটা নাইট স্কুল ষ্টার্ট করার সব ব্যবস্থা আজ ঠিক হলো। তাই নাকি ? হ্যা আসছে সপ্তাহ থেকেই স্কুল বসবে । আমাদের পার্টির কান্জ খুব ভালোই চলবে এখান থেকে আশা করি । ৪০ খুব ভালে কথা, খুব ভালো! কথা ৷ দেশের বাস্তব অবস্থার দিকে যদি সাধারণ মানুষের দৃষ্টি ফেরাতে হয় তা হলে আমাদের আরে! জোরের সঙ্গে কাজ না চালালে চলবে না । এই দেখুন না, একদিকে কীর্তনের আসর, আর একদিকে ভাগবত-পাঠের বৈঠক কেমন জমে উঠেছে। লক্ষ্য করছেন তো, শুধু বুড়ো-বুড়ীরাই নয়, অল্পবয়সী সব ছেলেমেয়েরাঁও এদিকে কেমন ঝুঁকে পড়ছে! সন্দীপনকে আংগুল দিয়ে দেখিয়ে দেন পুরবীর্দি । কিন্তু আপনারাও তো খুব মন দিয়েই কীর্তন গান শুনছিলেন মনে হচ্ছিল ।- সন্দীপন বিনতার দিকে তাকান এই বলে। না, আমি গান-টান কিছু শুনছিলাম না।_-_বিনতা ছোট উত্তর দেয় ! নিশ্চয়ই না, বিনতা। নিজের কথাই শুধু ভাবছিল । আর আপনি ?--বৌদির কথায় একটু লজ্জা পেয়ে কোন রকম চিন্তা ভাবনা না করেই একট! পাণ্টা প্রশ্ন করে বসে বিনতা। ভক্তির ভান ও ভগ্ডামি থেকে এসব ছেলেল্লেয়েদের মুক্ত করে কী করে বৃহত্তর মানবতার সেবায় এদের নিয়োগ করা যায় আমি সে কথাই ভাবছিলাম ।--পুরবী উত্তর দেন । কিন্তু এ খুব সহজ কাজ নয় পুরবীদি। এদেশের মানুষের মনের গভীরে, তার রক্তে রক্তে শিরায় শিরায় ভক্তির বীজ। তাকে উপড়ে ফেলার চেষ্টা ব্যর্থ হবে বলেই আমার মনে হয়। তার চেয়ে অনেক কাল ধরে যে কথকতা, যাত্রা, কীর্তন প্রভৃতি প্রচারের মাধ্যম হিসেবে আমাদের দেশে চালু রয়েছে সেগুলোকে আমরা যদি কাজে লাগাই তাতে ভালো ধই মন্দ হবেনা। ৪১ সম্দীপনের কথাগুলো বেশ মনে লাগে পূরবীদির । বিনতার তো! লাগেই ৷ কিন্ত এই কাজে লাগাবার উপায় নিয়েই তো প্রশ্ন। গংগার ঘাটে পায়চারি করতে করতেই সে প্রশ্নটা তোলেন পূরবীদি ৷ ফেন, এখন তো কাল্চারাল ফ্রণ্টেই আমাদের আসল কাজ । নানা রকম সাস্কতির অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আমরা যতে। সহজে সাধারণ মানুষের মধ্যে আমাদের কথা প্রচার করতে পারবো আর কোনভাবেই তা সম্ভব হবে না। আর এসব অনুষ্ঠানে বাউল, তরজা, কবিগানের মতো! লোক-সংগীত ও লোকন্থৃত্যাদি যতো! বেশি থাকবে ততো বেশি লোককে আমরা আকর্ণ করতে পারবো । কী বলেন পুরবীদি ?-জিগোস করেন সন্দীপন । ঠিক কথা । আর শুন্ুন। কীর্তনই হোক আর ভাগবত-পাঠই হোক, আমর! যদি এগলোকেও আমাদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ইন্টে ডিউস করে নি তাতে আপত্তিরই বাকি কারণ থাকতে পারে? আসল কথা হলো! ইন্টারপ্রিটেশন নিয়ে। সেতো আমাদের হাতে । কী বলেন? নিশ্চয়ই ।--পুরবীদি আপ্রিশিয়েট করেন সন্দীপনের কথা । চলুন, যাওয়া যাক এবার । আমাদের বাড়ি হয়ে চা খেয়ে যাবেন ।--সন্দীপনকে চায়ের আমন্ত্রণ করায় বিনতা মনে মনে খুব খুশি হয় বৌদির ওপর । বৌদি, বীথিকাদের বাড়ি আজ আর নাই বা গেলে !--এখানে ওখানে গিয়ে সময় আর নষ্ট করতে চাপ ন! বিনতা । কী যে পাগলী মেয়ে সন্দীপনবাবূকে পেয়ে আর তর সইছে না ষেন। এ আবার কী বলছেন পূরবীদি ? ৪ * তাঁ নয় তো কি। বিনতা ভাবছে, বীথিকাদের বাড়ি গেলে আপনার সঙ্গে ওর গল্প করার মময় অনেকখানি নষ্ট হয়ে যাবে। আর জানেন না তো! শ্রীমতী যে কী হুশ্চিস্তায় পড়েছে ! ওর দাদ! এবার বোনের বিয়ের জন্তে উঠে পড়ে লেগে গেছেন । উপধুক্ত পাত্রেরও নাকি সন্ধান স্থরু হয়ে গেছে। কিন্ত শ্রীতীর মন যে কাকে উপযুক্ত পাত্র বলে বেছে নিয়েছে ওর দাদ! না জানলেও আপনি তো নিশ্চয়ই জানেন। না, সে আবার কে? কেন, শ্রীযুক্ত সন্দীপনচন্দ্র চন্দ। তাকে চেনেন না আপনি !-__এই বলে হেসে ফেলেন পুরবী চ্যাটাজি। বিনতাও মুখ ফিরিয়ে নিয়ে মুচকি হাসে । এঁ দেখছেন পূরবীদিং কেমন একমনে নৌকোর মাঝি-মাল্লার! পর্যস্ত কীর্তন গান শুনছে ।_কথার মোড় ঘুরিয়ে এক সারি খড়বোধাই নৌকোর দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সন্দীপন । প্রায়ই এমনি সারি সারি খড়ের নৌকো! ভিড় করে থাকে বাগবাজারের ঘাটে । সন্ধ্যার সময় মাঝি-মাল্লারা নৌকোবোঝাই খড়ের গাদার ওপর বেশ আটসাট হয়ে বসে বিশ্রাম করে, তামাক খায় আর এমনি গান-বাজন। শোনে । কঁচত্ন-জাতীয় গাঁনে তে৷ এর একেবারে মেতে যায়। সন্দীপনের কথায় পুরবী ঘাড় ফিরিয়ে চেয়ে দেখেন মাঝিদের দিকে । মাঝিরা কেউ হুণকে! টানছে । কেউ বাঁ বিড়ি । এক একটা করে লগ্ন জ্বলছে এক এক নৌকোয় তাদের সামনে । কীতনের স্থরে আর কীর্তনের কথায় তার! যে কেমন মেতে উঠেছে তা তাদের মুখভঙ্গিতেই ধরা পড়ে এ লষ্ঠনের ক্ষীণ আলোয় । ততক্ষণে গংগার ঘাট থেকে ওরা বাগবাজার স্ত্রীটে এসে পড়েছেন। পথে যেন আর পা ফেলার জায়গা! নেই। এমনি ৪৩ ভিড়। কালী, শীতলা, শনি প্রস্ৃতি নানা ঠাকুর-দেবতার মৃত্তি নিয়ে বসেছে এক একজন পূজারী । আর সে সব মুত্তির সামনে জমেছে অসহায় মানুষের ভিড় । কিন্তু অসহায়তার এই যে আতি আর আকৃতি তার কি কোন প্রতিকার সম্ভব এ ধরণের কর্মহীন নিরর্থক প্রার্থনায়? আর পুজার নামে এই দোকানদারিই বা কতো কাল চলবে ? পূরবী বিরক্তি প্রকাশ করেন পথ এগোতে এগোতে আর এসব প্রশ্ন করেন কখনো আপন মনে কখনো বা প্রকান্যে সন্দীপনকে ৷ ভক্তির দেশ এই ভারতবধ থেকে একদিনে এসব কুসংস্কার দূর কর! যাবে না, পুরবীদি! এর জন্যে চাই ব্যাপক শিক্ষার প্রসার, চাই প্রচুর পরিশ্রম, পরিকল্পনা আর অর্থ। এদের ওপর বিরক্ত হয়ে কি লাভ1?_-সন্দীপন উত্তর দেন । এমনি সব আলোচনা করতে করতে বাগবাজার গ্রীট ধরে এগিয়ে চলেন ও"র! তিন জন। এ যে অবাক কাণ্ড! বাীথিকা আর প্রতাপ নয় ?দূর থেকে এক শাখারির দোকানের সামনে এক দম্পতিকে লক্ষ্য করে বিনতাকে জিগ্যেস করেন পূরবী । হ্যা, তাইতো ! এতে অবাক হবার কী আছে পূরবীদি ? একটু আছে বৈকি? সমস্ত রকমের সংস্কারের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে দেখেছি যে বীথিকাকে আর প্রভাপকে, তার৷ কিনা নিজে থেকেই সংস্কারের বলি হয়ে উঠলো ! ততক্ষণে নতুন একজোড়া শ' খা পরা হয়ে গেছে বীথিকার । প্রতাপ ছটো টাকা বের করে দেয় মনিব্যাগ থেকে তাও চোখে পড়ে । ৪6 কিরে বীথিকা, শীীখা পরা হয়ে গেল 1--পিঠে আকন্মিক মিষ্টি চাপড় আর পূরবীদির কণ্ঠস্বর চমকে দেয় বাথিকাকে। হা, নইলে শাশুড়ীর তাড়নায় বাড়িতে টেকা দায়।--টিপ করে পুরবীদিকে একটা প্রণাম করে বলে বীথিকা। প্রতাপ হান্ডজোড় করেই সবাইকে নমস্কার জানায় । ও তাই নাকি! খুর জোর সংসার করছিস্‌ তুই তা হলে । ত। বেশ । কিন্ত কালকের ফাংশনের কথা যেন ভূলে যেয়ো না। চিঠি পেয়েছ তো ? হ্যা, পেয়েছি । তোমার কিন্তু কয়েকখানা গানই গাইতে হবে । বিনতাও গাইবে । ভালোভাবে তৈরি হয়ে নিও। প্রতাপও যাবে, বুঝলে ? আচ্ছা । নিশ্চিন্ত হয়ে যাচ্ছি তা হলে । তোমাদের বাড়ির দিকেই আমরা যাচ্ছিলাম তোমাকে মনে করিয়ে দেবার জন্যে কালকের অনুষ্ঠানের কথা । পথে দেখা হয়ে ভালোই হলো ।-_এই বলে পূরবী বাড়ির দিকে এগিয়ে চলেন সদলে আর , বীথিকার এগোয় গংগার দিকে । ওর! একটু দেরি করেই বেড়াতে বেরিয়েছে । পথে শাখা! কিনতেও বেশ খানিকটা সময় কেটে গেল। হাতে নতুন শাখা, কপালে এই বড়ে৷ সি"দূরের ফৌটা, বীথিকাকে বেশ মানিয়েছে কিন্তু বৌদি !__বিনতা হঠাৎ একটা মন্তব্য করে ফেলে । পূরবী একটু মুচকি হাসেন সন্দীপনের দিকে চেয়ে । গায়ে গভরে আজকাল বীথিকার যেন একটু মাংসও দেখা দিয়েছে। তাই না বৌদি? ৪€ তা তোমারও হবে। আর কটা দিন একটু সবুর করে! । -_সবন্দীপনকে শুনিয়ে শুনিয়েই জবাব দেন পূরবী | তারপর কথায় কথায় ওুঁরা যখন বাড়িতে ফিরে আসেন তখন রাত আটট! দশ ! ম্যামবাজার ট্রাম ভিপোর উপ্টোদিকের গলিতে পুরবীদের ভাড়া বাড়ি। নীচের তলার দেড়খানা ঘরের ভাড়াটে শুরা । ভাড়! চল্লিশ টাকা । দেড়খানা ঘর বল্লে চটে যান ভবানন্দ বাঁড়ুয্যে। তিনি বাড়িওয়াল! | থাকেন ওপরতলায়। তিনি বলেন, দেড়খান। ঘর বল্লে চলবে কেন, সঙ্গে এক চিল্তে রানাঘর রয়েছে, সি'ড়ির তলায় ঘুটে কয়লার জায়গ। দেওয়া হয়েছে, তার কোন দাম নেই বুঝি ? ভাড়াটের! সাধ্য কথ! বলে না, এই ভবানন্দর অভিযোগ | কিন্ত অভিযোগ যাই থাক্‌, এ নিয়ে আনন্দকুমারের সঙ্গে কখনে! কোন বিরোধ হয় নি বাড়িওয়ালার । আনন্দকুমার নিধিরোধ মানুষ । অধ্যাপক । একটা ইভনিং কলেজে অধ্যাপনা আর গোটা ছই ট্যুইশানি করে বাইরের কোন ঝামেলায় জড়াবার মতো সময়ও আর থাকে না তার। একটি মাত্র ছেলে । বছর সাত আট তার বয়েস। কাশিয়াং স্কুলে বোডিং-এ রেখে পড়াতে তার পেছনেই প্রায় শ দেড়েক টাকা খরচ। তবু ভালো, ছেলেটা মানুষ হবে। সেজন্যে প্রাণপাত পরিশ্রম করেন আনন্দকুমার আর কোন দিকে লক্ষ্য না করে। এই একটি ছেলেই যাতে ভালোভাবে মানুষ হয়ে উঠতে পারে পূরবী আর দ্বিতীয় সন্তান চান নি সেজন্যে । আর হয়ও নি। খুবই সাবধান খরা । ৪% কলেজ থেকে ফিরতে ফিরতে রাত প্রায় এগারোটা হয়ে যায় আনন্দকুমারের | এক একদিন তার চেয়েও দেরি হয় পুরবীর। বিনতাও থাকে তার বৌদিরই সঙ্গে সঙ্গে। বাড়ি পাহারায় থাকে কমলা ঝি। সেদিন কিন্তু আনন্দকুমার একটু আগেই এসে পড়েন । সবেমাত্র আড্ডা ভেঙেছে বাড়ির। বিদায় নেবার উদ্ভোগ করছেন সন্দীপন । গল্পে গল্লে গরম হয়ে উঠেছে যেন বাড়ির আবহাওয়া । বসন ।--সন্দীপনকে উঠতে দেখে অভ্যর্থনা জানান সন্ভ আগত গৃহকর্ত। । তিনি তো আর জানেন না কতোক্ষণ সন্দীপন বসে আছেন এখানে । সঙ্গে সঙ্গেই অবশ্য চোখে পড়ে চায়ের কাপ আর খাবারের ডিস। অমলেটের টুকরোর ওপর মাছি উড়ছে ভন্‌ ভন্‌ করে। দাদার পায়ের শব্দ পেয়ে বিনত! হাতের পাখাটা খাটের উপর রাখতেই মাছির ঝাঁক এসে মহোৎসব সুরু করে দিয়েছে প্লেটের ওপর । না আমি যাই এখন, অনেক রাত হয়ে গেছে। নমস্কার | -এই বলে সন্দীপন বিদায় নেন আনন্দকুমারের কাছ থেকে । গেটের আলোট! হঠাৎ নষ্ট হয়ে গেছে সন্দীপনদা । একটু দাড়ান, আমি যেয়ে দরজাটা খুলে দিয়ে আসছি ।--বিনতা তাড়াতাড়ি এগিয়ে ধায় এই বলে । না না, আমি নিজেই ঠিক চলে যেতে পারবো । তোমার আবার কষ্ট করতে হবে না এই নিয়ে ।--বল্তে বল্‌্তে অন্ধকার পথেই পা বাড়ান সন্দীপন। কিন্ত অন্ধকারে তার নিজের চোখের আলোতেই যেন ধরা পড়ে, বিনতা এক ছুটে দরজার পাশে যেয়ে দাড়িয়েছে ততক্ষণে । কালকে আমাদের অনুষ্ঠানে নিশ্চয় আসবেন কিন্ত ৪৭ সন্দীপনদ| !__-গেটের দরজাট। খুলে দিতে দিতে সন্দীপনকে ব্যক্তিাতভাবে আমন্ত্রণ জানাতে ভূল করে না বিনতা। সে নিজেন্ড যে গান গাইবে তাঁও স্মরণ করিয়ে দেয়। নিশ্চয় আসবো 1-_এই বলে বিনতাকে ছোট্ট একটু আদর করে বেরিয়ে যান সন্দীপন । কী মধুর স্পর্শ! সে আদরে বিছ্/ৎ খেলে যায় বিনতার সারা দেহে । মনেও। গলি তখন নিস্তব্ধ । রাজপথ জনবিরল । গেট বন্ধ করে দিয়ে ঘরে ঢুকে দাদাকে যেন অন্য দিনের চেয়ে একটু বেশিই গম্ভীর দেখতে পায় বিনতা| | দাদ।, তুমি খাবে এখন ? দাও ।--ছোট্রট জবাব । | ডাল্‌, ডিমের বড়! আর ভাত। এই তো খাওয়া । মাসের মাঝামাঝি এসে গেলে এর চেয়ে বেশি কিছু আর বড়ো একটা জোটেও ন1। , তবে সেসব নিয়ে আনন্দকুমার মাথা ঘামান ন কোনদিন । কিন্তু ঠাদার কথা শুনে শুনে তার মাথা গরম হয়ে ওঠে সময় সময়। সেদিনও ঠিক তাই হয়েছে । ছেলের খরচটা পাঠিয়ে দিয়ে বাকি সব টাকাই তো আনন্দ- কুমার দিয়ে দেন পূরবীর হাতে । সংসার যে ভাবে চলে চলুক তাতে তার কোন আপত্তিই নেই। এ ফণ্ডে, সে ফণ্ডে কোথায় কতে। টাকা যাচ্ছে ন৷ যাচ্ছে তার কোন হিসেবই তিনি কোন- দিন জানতে চান নি। তারপরেও যদি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্তে তার কাছে ভিন্ন করে আবার টাকা চাওয়া হয় তাহলে গুরুগম্ভতীর হয়ে বসে থাক .ছাড়। আর কীই বা করবেন আনন্দকুমার? আর যাই হোক ঝগড়া-বাঁটি কর! যে তার কাজ নয়, এ সবারই জান! । আর সামান্তই টাকা আছে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তা ৪৮ থেকে কিছুটা খরচ হয়ে যাবেই । ..বাঁকি টাকায় মাষের শেষ কটা দিন চালানো অসম্ভব, এটুকুই গৃহঞর্তাকে জানাতে চেয়েছিলেন পুরবী । আরো অল্প কিছু টাকা তারই চেয়েছিলেন তার কাছে। তাতেই ঘে ঘরের আবহাওয়়াটা কিছু উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে তা বৃধতে আর বাকি থাকে না বিনতার । আরো কয়েকদিন পরের কথা । মাস শেষ হত আর মা ছুটে! দিন বাকি। যথারীতি অনেক রাত্রিতে সেদিনও ক্লাস্ত হয়েই ফেঝ়েন আনন্দকুমার। সামান্ত বিশ্রামের পর আহারে "রসে বেশ কেমন যেন অবাক লাগে তার। কী ব্যাপার, আঙ্জা এতো আয়োজন ? বেশতো খেয়েই নাও না, পরেই না হয় .শুরবে চিংড়ি মাছের কালিয়ার*্বাটিটা সামনে এগিয়ে দিয়ে পূরবী হাঁসতে হাসতে বলেন আনন্দকুমারকে | আর কিছুর জন্যে নয়, আমি ,আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছি ঘরে খন * এতো অভাব চল্ছ্ে/০সই মাসের শেষে কী করে তুমি এই বিরাট ব্যবস্থা করলে? কোথায় পেলে এতো টাকা ? বারে, বিন্তার আজ বিয়ে হয়ে গেল যে! একটু আনন্দ” করবো না বুঝি ! আনন্দে আপত্তি নেই মোটেই, কিন্তু এ ধরশৈর আনন্দ করতে যে রীতিমতে! মালমশলার দরকার, পূরবী ! নাই বা থাকলে টাকা-পয়সা, তা বলে বিয়ে-বাড়িতে একটু বিশেষ আয়োজন হবে না খাওয়াদাওয়ার ! তোমার ভগ্মীপতি সন্দীপনচন্দ্রই আজকের এসব খরচপত্র করেছেন । পূরবীর এ ঘোষণায় কিছুক্ষণের জন্যে যেন তাজ্জব হয়ে থাকেন আনন্দকুমার | ৪% খণওয়। আনন্দকুম সন্দী ্ সপ ঃ | | শর দেখেন কুমারের আরো ূ ২ হে এ লা পিল আজ বেশ লাগছে কি রি স্ক দেখতে ] £৩ পোকা হঠাৎ এত্রাজের সুর ক্ষীণ হয়ে আসে । তারপর কখন যে দে তার কোল থেকে এক্রাজটিকে নামিয়ে রেখে উঠে দীড়িয়েছে, শুরলার তা মোটে খেয়ালই নেই। অথচ হুর-সাধনায় বসে কয়েক মুহুর্তের মধ্যেই সে একেবারে তন্ময় হয়ে ওঠে । আজও ঠিক তেমনি অবস্থাই হয়েছিল । কিন্তু হঠাৎ কেমন একটা বেদনা-কাতর কণস্বর সকরুণ ভাবে এসে আঘাত করে শুরার হৃদয়তন্ত্রীতে | সংগীত-তন্ময়তায় আর ডুবে থাক! সম্ভব হয় না তার পক্ষে । দীড়িয়ে উঠে খোলা জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতেই যে দৃশ্য তার চোখে পড়ে তাতে সমগ্র মেয়ে জাতটার ওপরই কেমন যেন একটা বিতৃষ্তার ভাব এসে যায় তার মনে। বিষিয়ে ওঠে তার সার! অস্তর | নিঃ্য মানুষের এমন সকাতর প্রার্থনায় একটুও কেঁদে উঠলে। ন! মায়ের মন ? আর যে পারি না মা! দে মা ছুগগ্ডার পয়সা । এই তে! শেষবারের মতো চাওয়া ! একজন নিঃস্ব মানুষের এই আবেদনে এতোটা বিরক্ত হবার কী আছে ধারণাই করতে পারে না শুরা । তা ছাড়া যেই হোক না কেন, কোন প্রার্থীর মুখের ওপর এমনিভাবে একটিও কথ] না বলে দরজ। বন্ধ করে দেওয়াটা! যে একটা অভাবনীয় ব্যাপার ! আগাধ সম্পত্তির মালিক হলেই কি মানুষকে এমনি করে অপমান করার অধিকার জন্মায়? ও বেচারা তো শুধুমাত্র ৪৯ প্রার্থন! জানিয়েছিল । কিছু দেওয়া না দেওয়া তো নিজের ইচ্ছে। কিন্তু এটা কি করলেন তপতীবাবুর স্ত্রী? বারান্দায় ইজিচেয়ারে বসে বই পড়তে পড়তে হঠাৎ একেবারে ছুটে গিয়ে ধপাস্‌ করে কবাট বন্ধ করে দেবার মতো কী এমন ঘটলো তা কিছু ভেবেই পায় না শুরা । কয়েক মুহুর্ত স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে থাকে সে। তারপর তীব্র বেগে নীচে নেমে আসে দোতলা থেকে । একটা টাকা গুজে দেয় অসহায় লোকটির হাতে একেবারে রাস্তায় নেমে এসে । রাজরাজেশ্বরী হও মা !-_আনন্দের আতিশয্যে ছুচোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে লোকটির। সারা অস্তর দিয়ে সে আশীর্বাদ করে শুক্লাকে । কি নাম তোমার ৭ জিগ্যেস করে শুরু ৷ সাধুচরণ । _ কোথা থেকে এসেছ তুমি ? চরবেতিয়া ! এমনি সব প্রশ্মের উত্তরে সাধুচরণের পুরোপুরি পরিচয় গ্রহ করে নেয় শুরু । উড়িস্থা-প্রত্যাগত একজন উদ্বান্ত সে। ক্রমাগত অর্ধাহার অনাহারে নানা রোগে ভুগে ভূগে তার স্ত্রীর মৃত্যু ঘটলেও সাধুচরণ উড়িস্যার অরণ্য শিবির ত্যাগ করে আসে নি। কিন্ত তার একমাত্র সন্তানের স্মৃতিকে যে সে মূহুর্তের জন্তেও ভুলতে পারে না । তার স্মৃতির ছায়া চরবেতিয়ার সর্বত্র । তাই সাত বছরের ছেলে সাপের কামড়ে মরবার পর সাধুচরণের পক্ষে আর সেখানে টিকে থাকা সম্ভব হয় নি। অসহ্য যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে উঠেছিল সে। সব কিছু বেচে দিয়ে সেখান থেকে দে তাই এই মহানগরীর মাটিতে ফিরে এসেছে । কিন্তু উড়িস্যার অরখ্য- হিংঅতার চেয়ে এখানকার আবহাওয়াও তো কম নিষ্রুণ নয় | ২ তপতীবাবুর স্ত্রীর ব্যবহারের কথা মনে পড়তেই শিউরে ওঠে শুরা । তার চেয়ে নোয়াখালির বাজারে তার গুদাম লুঠের সময় যদি সাধুচরণের মৃত্যু ঘটতো হত্যাকারীদের হাতে, তাতেও তো তাকে এতো গ্লানি এতো অবমাননা সহ্য করতে হতো না। শুক্লা চঞ্চল হয়ে ওঠে ভাবতে ভাবতে । হরবল পায়ে সাধুচরণ এগিয়ে চলে শুক্লাকে আশীবাদ করতে করতে, কিন্তু হতোক্ষণই তাকে দেখা যায় শুরা ততোক্ষণ চেয়েই থাকে তার দিকে । তারপরে ওপরে উঠে আসে ধীরে ধীরে। তখনো ব্যাডমিন্টন খেলা পুরোদমেই চলেছে । সন্ধ্যা অবধি রোজই চলে এমনি ধরণের খেলা_ ব্যাডমিন্টন অথবা টেনিস। এর প্রধান উদ্যোক্তা অশোককুমার আর তার বন্ধ অমরনাথ। অশোক শুকলারই বাপ-মা-মরা মামাত ভাই, তারই সঙ্গে তার বাপ-মার কাছে ছোটবেল! থেকে বড়ো হয়ে উঠেছে সে। সেই অধিকারেই অশোকের বন্ধু অমরনাথেরও অবাধ আনাগোন। শুক্লাদের বাড়িতে | শুক্লার মাকে অমরনাথও ডাকে পিসিমা বলে অশোকেরই মতো । অশোক এম. এ. পাশ করে চাকরির তদ্ির করে চলেছে বছরখানেক ধরে। অমরনাথের পড়ার পিপাসা এখনো যেন মেটে নি। সে আইন পড়ছে ল কলেজে । কিন্তু আইন পড়লেও আইন ব্যবসায় যে তাকে দিয়ে চলবে না, এ কথা সে আগে থেকেই বলে রেখেছে । তার বাবা তার উত্তরে বলেছেন, বেশতো, নাইবা করলে ওকালতি, হাকিম হতে হলেও তো চাই আইনের বিছ্ে। তাই আইনটা সে পড়েই নিচ্ছে। তা ছাড়া শুরলাকে খুশি করতে হলে বিছ্ের শেষ শিখরে ৩ ঘে উঠতেই হবে। শুধু টাকায় ওর মন পাওয়া সম্ভব নয়। তা হলে তো তপতীবাবুর ছেলেই ওর আদর্শ হতো, কিন্ত শুরা তো তার দিকে একবার ফিরেও তাকায় না। ইন্দ্র রায় রোডের নতুন দোতল! বাড়ির দক্ষিণের গা ঘেঁষে বেশ খানিকটা ফাঁক! জায়গা । বিকেল বেল! টেনিন ব্যাডমিন্টন খেলার পাকা আড্ডা । প্রায় আট দশ কাঠা জমি। শাসমল সাহেবের ইচ্ছে ছিল বাড়ি করার আগে পাশের এ জমিটুকুও তিনি কিনে নিয়ে আনন্দ নিকেতনে”র জলুস আর একটু বৃদ্ধি করেন। কিন্তু তা আর হয়ে ওঠেনি। জমির মালিক প্রতিবেশী তপতী বাবু। তার হাকের সঙ্গে তাল রাখতে না পেরে শেষ পর্যস্ত সেই আশায় জলাঞ্জলি দিয়েই তিনি এ বাড়িখান! তৈরি করিয়েছেন । খুব বেশি বড়ে! না৷ হলেও “আনন্দ নিকেতন” যে এ তল্লাটের একখান! সেরা বাড়ি একথা সবাই একবাক্যে স্বীকার করবে । মাত্র তিন কাঠার ওপর হলেও মনে হয় যেন তার চেয়ে অনেক বেশি জমি নিষে তৈরি হয়েছে এ বাড়ি। ডিজাইনের অভিনবত্বেও “আনন্দ নিকেতন” দৃষ্টি আকর্ধণ করে প্রত্যেক আগন্তকেরু, প্রত্যেক পথচারীর । আর তা হবেই বানা কেন? এতোকালের পুরনো কণ্টক্ীর শাসমল সাহেব, প্রাসাদপুরীর আধুনিক অনেক প্রাসাদই যে তার স্থপ্টি। তিনি নিজ বাসভবন নির্মাণে তার অভিজ্ঞতার আর কল্পনার সবটুকু রূপ-রস যে আরোপ করবেন তাতে আর আশ্চর্য কি? তার ওপর তার শিল্পী-কন্া। শুক্লার মনের মহিমা-চিহও এ বাড়ির সবত্রই চোখে পড়ে। শুরাই শাসমল সাহেবের একমাত্র সম্তান। ছোটবেলা থেকেই যেমনি তার গানের নেশা, তেমনি চিত্র ও মৃতি শিল্পের প্রতি আকর্ণ। আর্ট স্কুল থেকে পাশ করার পর গত হুবছর €8 ধরে আর্টের সাধনায়ই তার দিন কাটে। কিন্তু কোলকাতায় মে ষেন এক এক সময় হাফিয়ে ওঠে । তার বাবার মতেই সে এতোকাল মত দিয়েছে, কোলকাতায় যখন মন টেকে না তখন এখানে বাড়ি করে কি হবে । কিন্তু শাসমল-গিম্নীর মত ঠিক তার উপ্টে। মন টেকা না টেকার কথা নয়, কোলকাতার বাইরে কোথায় পাবে কালিঘাট আর কোথায় পাবে কালীগংগা ? এ যুক্তিকে কোন রকমে খগ্ুন করা সম্ভব নয় বলেই শেষ পযন্ত বাপ আর মেয়েকে সায় দিতে হয়েছে এ বাড়ি তুলতে । তা হলেও পুরী, দাজিলিঙ, ও শিলঙ-এর বাড়িতে তারা এখনও বছরে ছু'একবার ঘুরে ফিরে আসে । তবে ইদানিং কিছুকাল ধরে স্তর্লার মনটা যেন খুব সায় দিতে চায় না কোলকাতার বাইরে যেতে। অমরনাথকে সংগী পেলে হয়তে। মনে কোন আপত্তি দেখা দিত না। কিন্তৃদে তো আর মুখ খুলে বলা চলে না। ত৷ ছাড়া কলেজের ছেলে, বল্লেই যে পড়াশুনে। ফেলে তাদের সঙ্গে যেতে পারবে তারই বা কি ঠিক আছে। তার বাবাও তো আপত্তি করতে পারেন৷ পুরী, শিলঙ. ব! দাঞ্জিলিঙ-এ তাই নির্দিষ্ট সময়ে শুর্লাকে শেষ পর্যস্ত যেতেই হয় বাপ-মার সঙ্গে । সত্যি অমরনাঁথকে খুবই ভালো লাগে শুর্লার। এমন পৌরুষ- দীপ্ত চেহারা, সুগঠিত দেহ এবং কথ বলার এমন সহজ অথচ সবল ভঙ্গি বড়ো একটা চোখে পড়ে না তার । অমরনাথ তাকে যে ভালোবাসে শুর্/ তা জানে, কিন্ত সে ভালবাসায় যে কোন তোষামুদি বা ন্যাকামি নেই তাও সে লক্ষ্য করেছে। শুক্লার সব গানকেই অমরনাথ “আহা মরি ! বলে প্রশংসা করে না, তার আকা! সব ছবি বা তার গড়। সব মুত্তিকেই সে চমৎকার বলে বাহবা দেয় না- সত্যিকারের ৫€ ১ চু চে একে 7২ ৮ রি আন ০৮ আভা 5৮৯ ক্ইহিএবিইতীন সমালোচকের দৃষ্টি নিয়েই সে তার সমস্ত শিল্পের দোষ-ক্রটি ভালোমন্দ বিচার করে মতামত দেয়। বিশেষ করে সেই জন্যেই গভীর একটা শ্রদ্ধাবোধ জেগেছে শুক্লার মনে অমরনাথের জন্যে। কিন্ত আজ তার হঠাৎ এতোটা আনমনা হয়ে পড়ার কারণ কি? খেল! শেষ করে এসে অশোক আর অমরনাথ শুরলাকে নিয়ে এক সঙ্গে বসে ওভালটিন আর খাবার খায় এ তো প্রতিদিনকার বাঁধ! সান্ধ্য রুটিন । কখনো তো শুক্লাকে ডেকে আনতে হয় না। সময় মতো সে নিজেই এসে সব কিছু সাজিয়ে রাখে খাবার টেবিলে। আজ তাকে যে শুধু ডেকেই আনতে হলে! তা নয়, এসেও সে কেমন নির্বাক নিস্পন্দ ! কী হয়েছে তোমার শুক্লা? শরীরটা খুব খারাপ লাগছে বুঝি !_জিগ্যেস করে অমরনাথ । না, তেমন কিছু নয় । নিশ্যয়ই তোমার অস্তুখ করেছে, নয়তো মন খারাপ হয়েছে কোন কারণে । তুমি চাপতে চাইছো ।-_শুক্লার উত্তরে খুশি হতে না পেরে অশোক আসল কথাটা বার করার চেষ্টা করে এই বলে। . না, না, ওসব কিছুই নয়। তবে বলোই না কি হয়েছে। আর যদি শরীর খারাপ লাগে তো৷ চলো ময়দান থেকে একটু হাওয়া খেয়ে আসা যাক । এর আগে অনেকদিন শুরা বিনা ওজর আপত্তিতে অশোক ও অমরনাথের সঙ্গে বেড়াতে বেরিয়ে গেছে । অমরনাথের গাড়িতেই আবার ফিরে এসেছে । শাসমল সাহেব বা তার স্ত্রীর তরফ থেকেও কোনদিন কোন রকম বাধা আসে নি। কিন্তু আজ শুরার মন অমরনাথের অন্থুরোধেও কিছুতেই বাইরে যেতে চাইছে না । অমরনাথের সঙ্গে বসে গাড়ি দৌড়োতে ৫৬ গিয়ে হোচট খেয়ে পাছে তার কল্পনার ছবি ভেঙে চুরমার হয়ে যায় এই ভয়। না অমরনাথদা, আজ নয়, কদিন পরে' আমরা কজন মিলে বেশ একটা লঙ ড্রাইভ দিয়ে আসবো । কেমন? বেশ, তাই হবে। খাবারট। খেয়ে নাও না, একেবারে হাত তুলেই যে বসে রইলে। আজ আর কিছুই খেতে ইচ্ছে করছে না আমার । তাহলে নিশ্চয়ই তোমার শারীরিক কোন গোলমাল হয়ে থাকবে। সেষাই হোক না কেন, ওভালটিনটা অস্তত খেয়ে নিতে পারো, তাতে ভয়ের কিছু নেই। অশোকের কথায় ওভালটিনের কাপটা তুলে নেয় শুক্লা। সেদিনের মতো! সান্ধ্য আসর ভেঙে যায়। যাবার আগে অমরনাথ হঠাৎ বলে ওঠে, আজ তো তোমার এক্রাজের মিঠে আওয়াজও একটু শোন গেল না,স্ুক্লা ! তারগুলো ছি'ড়ে গেছে এস্রাজের।-শুক্লার উত্তরে ছেড়া তারের এত্রাজের মতোই নীরব হয়ে যায় সবাই। কয়েকদিন আর আসে নি অমরনাথ। তাকে বাদ দিয়েই খেল চলেছে। শ্রর্লার মা জিগ্যেস করেছেন অমরনাথের কথা, কিন্ত শুরা নয়। অশোকের কাছে একটু অস্বাভাবিকই মনে হয়েছে ব্যাপারট! । কিরে, অমরনাথকে কদিন না দেখতে পেয়ে একেবারে ক্ষেপে আছিস্‌ মনে হচ্ছে।_ শুক্লার স্টডিওতে ঢুকে হঠাৎ প্রশ্ন করে অশোক । এসব বাজে বকো ন|! অশোকদা, দেখছে না কাজ করছি।-_একাগ্রতাকে ব্যাহত হতে না দিয়ে মৃত্তি গড়তে গড়তেই উত্তর দেয় শিল্পী। ৫৭ ওরে বাপস্‌!-স্ট,ডিও থেকে অশোক বেরিয়ে আসতে পথ পায় না যেন। আর্টফার্টের কোন ধার ধারে না সে। হ্থ্যা, খেলা-ধূলোর কথা বলো' তামাম ছুনিয়ার খেলার ইতিহাস সে আবৃত্তি করে যাবে। সে বলে, অলসতারই একটা ভদ্র নাম হলো আর্ট-ওসবের মধ্যে নেই আমি। ভালো কথা । কিন্তু অমরনাথের খবরটা তো নেওয়া দরকার । খুব বেশি দূর-পথের ব্যাপারও নয়। অশোক তাই সদানন্দ রোড থেকে খোজ নিয়ে এসে জানায় তার পিসিমাকে । তিনদিনের জন্তে হঠাৎ একটা জরুরী কাজে তার বাবা বাইরে পাঠিয়েছেন অমরনাথকে, সেদিনই তার ফিরে আসার কথা । অমরনাথ ফিরে এসেছে । খেলাটা আবার বেশ জমে ওঠে । অমরনাথের অভাবে সত্যি কেমন যেন ঝিমিয়ে পড়েছিল খেলার আড্ডাটা । অশোকের জুটি সেদিন একেবারে ৩০ গেমেই হেরে যায় অমরনাথের জুটির কাছে। বাইরে থেকে রি-ফ্রেস্ড, হয়ে এসে কী ছর্দাস্তই না খেল্লে দেদিন অমরনাথ ! শুক্রাদের বাড়িতে ওভালটিনের আসরে বসেও সে আলোচনা যেন আর শেষ হতে চায় না। সে আলোচনায় শুরার কোন অংশ নেওয়া তো দূরের কথা, নীরব শ্রোতা হিসেবেও সেখানে বেশিক্ষণ সে থাকতে পারে নি। খাওয়া শেষ করেই শুক্লা আসর থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেছে তার স্টডিওতে। কী ব্যাপার বল তে? কোন কিছু নিয়ে মতাস্তর হয়েছে নাকি তোমাদের মধ্যে? ন। ভাই, তেমন তো কখনও কিছু . হয়েছে বলে মনে ৫৮ পড়ছে না।--অমরনাথের এ উত্তরে অশোক আরো আশ্চর্য হয়ে বায় । গান-বাজন। হঠাৎ বন্ধ করে দিলি কেন রে শুরা, মায়ের এ প্রশ্নের উত্তরে সে জানিয়েছে যে, গান তার থেমে গেছে_ মৃত্তিগড়ার কাজই এখন তার বেশি ভালো লাগে। অশোকের কাছ থেকে এ কথাটা শুনে হেসে ফেলে অমরনাথ । একেবারেই পাগলি হয়ে গেছে দেখছি শুর্লা। তাতো হতেই হবে ভাই, তোমাদের এ আর্টের পোকা মাথায় ঢুকলে মাথাটা কি আর বেশিদিন ঠিক থাকতে পারে? ওসব আমি কিছু বুঝিনে ভাই। তুমি যাও, গিয়ে দেখে এসো কী সব কাগু-কারখানা চলছে শুক্লাদেবীর স্টডিওতে। আমি যাই দেখি, ততোক্ষণ একটু বেড়িয়ে আসি ।-_-এই বলে উঠে পড়ে অশোক। এই যে শুরলাদেবী, এষে একেবারে ভাবাবেশ মনে হচ্চে !-_-অমরনাথের এ ডাক শ্ুক্রার কানেই ৫পীছয় না। শুরলার মনের কল্পনা যথার্থই রূপ পেয়েছে তার নিজ হাতে গড় মৃতিতে। সেদিন সাধুচরপকে সে যেমনটি দেখেছিল ঠিক তেমনি অসহায়তার ভাবই ফুটে উঠেছে এ মৃতির চোখে মুখে। তার শিল্পসাধনা সার্থক! কিন্ত সাধুচরণের কী অপরাধ, কেন তার এতো অসহায়তা ! এ অবস্থা তো তারও হতে পারতো, হতে পারতো তপতীবাবুর স্রীরও ! ছুঃথী মানুষের প্রতি তবু মানুষের এমনি অবজ্ঞা কেন 1__-সাধুচরণের মাটির মূতির দিকে চেয়ে চেয়ে শুরা এমনি সব কথাই একান্ত নিরালায় একমনে ভেবে চলেছিল । ৫ শহরের কোন হল্লা, কোন হট্টগোলই তার মনকে টলাতে পারছিল না । ঘেউ-ঘেউ-ঘেউ, ঘেউ-ঘেউ-ঘেউ-ঘেউ ।__হঠাৎ তপতীবাবুদের দোতালার বারান্দা থেকে শেকল-বাঁধা শিকারী গ্রে হাউগ কুকুরটা তার অবিরাম কর্কশ চিৎকারে সার! পাড়াটাকেই যেন মুখর করে তোলে । কিন্তু তাতেও নিশ্চল নিষ্পন্দ শুরা শুক্লা, শুর্লী, শুরা !-_অমরনাথ আর সময করতে পারে না নীরবত!, তার ডাকের নিরুত্তরতা । অসহনীয় আবেগে সে তাই ছুটে গিয়ে শুকরলার ছুহাত ধরে এমনি ঝাঁকুনি দেয় তাকে যে, চমকে উঠেও সে কোন উত্তর খুজে পায় না সহস| । অমরনাথের দিকে শুরু। চেয়েই থাকে অবাক বিস্ময়ে কয়েক মূহুর্ত ধরে। তপতীবাবুদের কুকুরটা তখনও ডেকেই চলেছে । এতোক্ষণে শুরু শুনতে পায় সে ডাক। কে, তুমি হঠাৎ 1_-সবিস্ময়ে জিগ্যেস করে শুক্লা। তোমার কি হয়েছে, তাই পরিষ্কারভাবে জানতে এসেছি। আর কিছু হয়।-উত্তর দেয় অমরনাথ । কিছুই হয় নি। মানুষের প্রতি মানুষের ঘ্বণা, অবিশ্বাস আর হৃদয়হীনতার কথাই এক] এক! বসে ভাবছিলাম । এঁ শুনলে না ও বাড়ির গ্রে হাউগুটার বীভৎস চিৎকার, কী নারকীয় হুমকী! তপতীবাবুদের বিপুল সম্পত্তির ওপর কারুর লোভদৃ্ি পড়লে আর উপায় নেই, তাকে ঈীতে- নখে একেবারে টুকরো। টুকরে! করে ফেল! হবে। এমন কি ওদের কাছে কোন করুণ! ভিক্ষে করাও চলবে না। বলতে পারো কেন এমন হয়? না, ওসব ভাব্বাব সময় নেই আমার । শত৩ সে কী, লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি ছর্গত লাঞ্ছিত মানুষের কথা ভাববার সময় নেই তোমার? তুমি ভাববে না তাদের কথা, তাদের ছর্দশার প্রতিকারের কথা ! কেন ভাববো, তাদের ছুর্গতির দায়িত্ব তো! আমার নয়, শুরা ! | আলবৎ তোমার । তোমার-আমার এবং আমাদের মতো আর সকলের। তা না হলে আমারই দেশের মানুষের অবস্থা এরকম হতে পারে কখনও ? মনুষ্যত্বের মহিম। থেকে কে বঞ্চিত করেছে একে, এর মতো হাজার হাজার দেশবাসীকে ? _মাটির মূত্তি দেখিয়ে নুকঠোর প্রশ্ন করে শুক্লা । অমরনাথের মাথার মধ্যে যেন দপ করে আগুন জ্বলে ওঠে এই জিজ্ঞাসায়। একট! অধীর উন্মস্ততায় ছুটে গিয়ে সে এক ধাকায় ফেলে দেয় মাটির মৃতিটাকে। তুমি কি এদের কথাই বলবে শুরা! আমার জন্তে কি একটুও স্থান নেই তোমার মনে? তবে কি সব মিথ্যে? উত্তেজনায় কাপতে কাপতে অধিকতর উত্তেজিত কণ্ঠে বলে ওঠে অমরনাথ। এ কি করলে অমরনাথদ|! সাধুচরণের মুত্তির সঙ্গে সঙ্গে তুমি যে আমার কল্পিত তোমার স্বপ্নময় মৃতিকেও চুরমার করে ফেললে! আপন সিংহাসনকে তুমি নিজ হাতে নিশ্চিহ্ন করে নিলে আমার মন থেকে! একজন দরদী মানুষ হিসেবেই তোমাকে আমার মনের কাছে নিবিড় করে পেতে চেয়েছিলাম অমরনাথদ ! কিন্তৃ'-/-_ঘরময় ছড়ানো মাটির পুতুলের ভাঙা টুকরোগুলোর দিকে চেয়ে বলে চলেছিল শুরা । কিন্তু অমরনাথ আর স্থির থাকতে পারে না সেখানে । ছিটকে বেরিয়ে যায় স্টূডিও ঘর থেকে । ৬৯ “আনন্দ নিকেতন” থেকেও কখন যে অমরনাথ চলে যায় তা কেউ টেরও পায় না। হঠাৎ তপতীবাবুর ভ্ত্রীর ছবিটা ভেসে ওঠে শুক্লার চোখের সামনে । সাধুচরণের মুখের ওপর কীভাবে সে সজোরে দোর বন্ধ করে দিলে! পক্ষাঘাতগ্রস্ত সমাজদেহে এক একটি ছুষ্ট ক্ষত এরা, এক একটি কলংক চিহ্ন। সমাজ-ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ছাড়া কী করে আর রক্ষা পাওয়া যাবে এ পচন থেকে! শুরার শিল্পী মন বিষিয়ে ওঠে ভেবে ভেবে। সে রাত্রিতে আর খাওয়া দাওয়া! হয় ন! তার, ঘ্বুমও নয়। সকাল বেলা উঠেই শুক্লা তার শোবার ঘরের বারান্দায় এসে দীড়ায়। সাজানে! টবের ফুলগুলোর দিকে চেয়ে তার মনের গ্লানি কেটে যায় অনেকখানি । প্রফুল্পতা ফিরে আসতে থাকে ধীরে ধীরে। কিন্ত একি, অমন স্থুন্দর ডালিয়৷ ফুলটির পাপড়িগুলোকে এমনি করে*ফেটে ফেলেছে পৌকায় ? কাছে গিয়ে শুরা আদর করে ফুলটিকে। কিন্তু সারা টবটাই যে পোকায় ভি! টবটা আর না পাণ্টালেই নয় ! ৎ ডাকটিকিট অন্ধকারে যেন দপ্‌ করে জ্বলে ওঠে উপানন্দর চোখ ছটো। | কল্যাণী নিজের মুখে বলেছে একথা !_ বিস্ময় প্রকাশ করেন উপানন্দ। তা বললেই বা দোষের কী? বয়েসের মেয়ে। তার একট! সাধ ইচ্ছে হতে নেই বুঝি !_ মৃন্সয়ী উত্তর দেয়। না, সে কথা বলছি না। কল্যাণীকেই বা দোষ দিচ্ছি কোথায়, নিজেই বরং নিজের দোষ স্বীকার করে নিচ্ছি। তা না করে উপায়ই বাকী! ঘরে সোমত্ত মেয়ে রেখে তুমি দেশ-দেশাস্তর ঘুরে বেড়াবে । তারপর কোন একটা অঘটন ঘটে গেলে তার দায়িত্ব এসে পড়বে সব আমার ঘাড়ে, সেটি হবে না। এ আমি আগে থেকেই বলে রাখছি ।- মেয়ের বিয়ের সমস্ত নিয়ে রাত্রির নিরালায় সামান্য একটু কথা কাটাকাটি হয় স্থামীন্ত্রীর মধ্যে । একটা বড়ো সওদাগরী অফিসের রিটায়ার্ড বড়োবাবু উপানন্দ বাগচী । অবসর নেবার সময় বেশ কিছু টাকা তিনি পেয়েছিলেন প্রভিডেন্ট ফাণ্ড থেকে । ত্রিশ বছর কাজের হিসেবে পনেরো মাসের মাইনেও তাকে দেওয়া হয়েছিল গ্রযাচইটি বাবদ । মস্ত দায় দায়িত্ব পালন করে মোটামুটি- ভাবে স্থখে শান্তিতে বাকি জীবনটা এই টাকায় ফাটিয়ে যাওয়া খুব কঠিন হতো না। কিন্ত সওদাগরী অফিসের এতোদিনের অভিজ্ঞতাই শেষ পর্যস্ত বিপদ বাধালো । ৩ অর্থ খাটালেই অর্থ । বড়ো একটা বুটিশ ফার্মে বাগচী মশাই শুধু এই দেখেছেন ত্রিশ বছর ধরে। অর্থ খাটাতে যেয়ে যে কতে! অনর্থ ঘটতে পারে সে ধারণ! তার কোনদিন হতে! না যদি না মাড়োয়ারী বন্ধুর সঙ্গে তিনি তার প্রায় সমুদয় টাক! নিয়ে ব্যবসায়ে নামতেন। যাকগে, জেলহাঞ্জত যে ঘ্বরে আসতে হয় নি তাই যথেষ্ট । যে লাইনের ব্যবসায়ে তাকে নিয়ে চলেছিলেন তার পার্টনার তাতে যে কোন সময়ই হাতকড়া পড়তে পারতো । সব ছেড়েছুড়ে দিয়ে তা থেকে যে তিনি নিষ্কৃতি পেয়েছেন সে জন্তে তার অনৃষ্টকে ধন্যবাদ দেন বাগচী । তা হলেও সন্তান শোকের চেয়ে বড়ো কম নয় টাকার শোক । সেশোক ভূলে থাকার জন্তে উপানন্দর সে কী কম চেষ্টা ! হারানো টাকার প্রসংগটা যাতে কখনো কোন ব্যাপারে না ওঠে সেদিকে সৃন্ময়ীরও সতর্ক দৃষ্টি । ব্যবসায়ে এতে। বড়ে। একট! মার খাবার পর বাড়িতে একটা সহজ আবহাওয়া না! রাখলে কখন কী হয়ে যাবে কে বলতে পারে? , মৃন্বয়ী তাই স্বামীর মতেই মত. দিয়ে আসছেন এদ্দিন ধরে। উপানন্দ এই যে অধেণকে পৃথিবী ঘুরে এলেন শাস্তি সম্মেলন উপলক্ষ করে এও সম্ভব হয়েছে মৃন্ময়ীরই জন্যে । ডাকটিকিট সংগ্রহের একটা সখ ছিল উপানন্দর ছোটবেলা! থেকেই । সওদাগরী অফিসে চাকরি করার সময় অনেক টিকিটই বাগচী সংগ্রহ করেছেন । বিলিতি ফার্ম । দেশবিদেশ থেকে ৪ নানা দামের নানা রকমের ডাকটিকিট মারা চিঠি এপেছে বড়োবাবুর . দপ্তরে । বড়োবাবু নিজ হাতেই খুলতেন সে সব চিঠি আর খাম থেকে অতি যত্বে কেটে কেটে রাখতেন যতো রকমের ডাক টিকিট। তখনো পর্যস্ত একে সখই বলা যেতো । ইংরেজিতে যাকে বলে হবি'। কিন্তু হাঞ্জার পনেরো! বিশ টাক! ব্যবসায়ে ওড়াবার পর এই টিকিট সংগ্রহের ব্যাপারট। যা দাড়িয়েছে তাকে আর হবি” বলা চলে না। সেই থেকে এ একট! রীতিমতো বাতিক । যাক একট! কিছু নিয়ে তো থাকতে হবে ভদ্দরলোককে ! মুন্ময়ী তাই চুপ করেই থাকেন, এ নিয়ে কখনো তেমন আর কিছু বলেন না। কিন্তু সব হারিয়েও সখের মাত্র! যদি অত্যধিক বেড়ে ওঠে আর সেই সখ বজায় রাখতে যদি ঘর থেকে টাক! বার করতে হয় তখন নিতান্ত শাস্ত গৃহিণীরও মেজাজ ঠিক রাখা কঠিন হয়ে পড়ে বৈকি! এই ডাকটিকিট কেনার ব্যাপার নিয়েই একদিন হঠাৎ মৃন্ময়ীর মেজাজ এমনি বিগড়ে গেল যার জন্তে পরে তাকে আফশোষ করতে হয়েছে দীর্ঘকাল ধরে। শুধু, কি তাই, নিজের গয়ন| বিক্রি করে স্বামীর দেশ পর্যটনের টাকা যুগিয়ে দিয়ে তবে তার শাস্তি । স্বামী নিগ্রহের প্রায়শ্চিত্ত আর কি! চাকরি থেকে অবলর নিয়ে টুকটাক কখন কোথা থেকে ডাকটিকিট সংগ্রহ করতেন বা কিনে আনতেন উপানন্দ তার বড়ো একট। খোঁজখবর রাখতেন না মুন্ময়ী। তবে সেদিনের এতো বড়ো! ব্যাপারটা! আর চোখে না পড়ে যায় কখনো ? হঠাৎ আবার কোন্‌ অমূল্য সম্পদ নিয়ে এলে বস্তা ৫ ভত্তি করে ?_-উপানন্দর কথামতে! পুরানো! কাগজওয়ালা বারান্দার এককোণে বস্তাটা নাষিয়ে রাখত্বেই গিন্নী ছুটে এসে প্রশ্ন করেন। মেজাজটা আগে থেকেই তিরিক্ষি হয়েছিল মেয়ের বিয়ের চিস্তায়। এ তুমি চট করে বুঝবে না গিন্নী। পরে তোমায় সব বুঝিয়ে বলবো । এখন চাবিটা দাও দেখি একবার ।-_ কর্তা শাস্তভাবেই জবাব দেন। চাবি আবার কেন? ৯ এর দামটা মিটিয়ে দিতে হবে না বুঝি ! কতে। ?1--বিরক্তির কাজ মেশানে! প্রশ্ন । এগারো! টাক৷। এগারো! টাকা! তুমি কতো টাকা আমায় এনে দাও, শুনি। আর কতো টাকাই বা তুমি আমার কাছে জমা রেখেছো, বলো দেখি ।-মৃন্ময়ী একটু উত্তেজিতভাবেই জিগ্যেস করেন । উপানন্দর মাথার মধ্যে কেমন যেন একটা বিদ্যুৎ খেলে যায় মুন্ময়ীর কথায়। সত্যি কথাই তো, তিনি তো কিছুই আর এনে দেন. না স্ত্রীর হাতে। একমাত্র দোতলার একশ" টাক! বাড়ি-ভাড়াটাই সম্বল। তা দিয়ে ছেলেমেয়ে ছজনের কলেজের খরচ চালিয়ে চারজনের সংসার চালানো, সে যে কী করে সম্ভব হচ্ছে তাইতো বুঝে ওঠা ছুক্ষর। কিন্তু তা হলেও লোকটাকে টাকা তো দিতেই হুবে। ভাড়ার টাকাট। হয়তো এখনো নিঃশেষ হয়নি একেবারে । সেই ভরসাতেই আর একবার সবিনয় প্রার্থনা জানান উপানন্দ । দেখোন! একবার গিন্ী, ভাড়ার টাকা থেকে এখনে! কিছু আছে কিনা । দর করে জিনিষগুলো নিয়ে এলাম, আবার কিরিয়ে দেবো লোকটাকে ? ১০ তুমি নিজেই গিয়ে দেখো কী আছে না আছে! আমায়, আর জ্বালিও ন।--এই বলে শাড়ির আচল থেকে চাবির তোড়াটা খুলে ছুড়ে ফেলে দেন মুন্ময়ী। তারপর ছুটে গিয়ে সেই যে রান্নাঘরে টোকেন আর কোন কথার মধ্যেই আসেন না। উপানন্দ কোন রকমে তুলে নেন চাবির তোড়াটা | ঘরে যেয়ে গৃহিণীর ক্যাশবাক্সটি খুলে ক্যাশের অবস্থা হয! দেখেন তাতে মুষড়ে পড়তে হয় তাকে। মাত্র নটি টাক! আর কিছু খুচরো রয়েছে বাক্সে। কী হবে এখন? বিষম ভাবনায় পড়ে যান উপানন্দ। এদিকে কাগজওয়ালা ভাবছে, এ তো বেশ ভালে! ঝঞ্চাটেই পড়া গেলে দেখছি ! কয়েকটা টাক! বেশি দর পেয়ে বেচারা রাজি হয়ে এসেছে বটে, কিন্তু শেষ পর্যস্ত কতোগুলো ফালতু কথা” কাটাকাটি শুনে আর সময় নষ্ট করে হয়তো তাকে ফিরেই যেতে হবে। বাবুজী !_অধীর হয়ে উঠে উপানন্দকে ডাকে কাগজওয়াল! । সত্যি কথাই তো, সে বেচারা আর কতোক্ষণ ফাড়িয়ে থাকবে ! উপানন্দ চমকে ওঠেন সে ডাক শুনে। যতি পড়ে ভার ভাবনায়। এ ন'টা টাকা তুলে নিয়েই তিনি বেরিয়ে আসেন বাইরে । পুরো দামটা কিন্তু ভাই দিতে পারছি না তোমার 1__ ন'ট। টাকা হাতে দিয়ে কেমন একটু কীচুমাচু হয়েই যেন উপানন্দ বলেন কাগজ ওয়ালাকে। পাছে জিনিষটা হাতছাড়া হয়ে যায় এই ভয় । ঠিক আছে বাবুজী! আর এক দফে পুষিয়ে দেবেন। একটি একটি করে গুণে নখানা একটাকার নোট একত্রে ডগ ীজ করে টণ্যাকে গুজে নিয়ে বেশ চিারিনীনিকন নুরেই জবাব দেয় কাগজওয়াল! । এমনি ক্ষেত্রে মুরুব্বয়ানার ভাব একটু আনারই কথা । মনে মনে সে বেশ ভালো করেই হিসেব করে দেখছে যে, নীট অন্তত ছটো টাকা যে লাভ হয়েছে সে বিষয়ে কোন সন্দেহই নেই। পুরানো কাগজের দোকানে সে বড়ো জোর সাত টাকা পেতো, তার বেশি কিছুতেই নয়। এ অবস্থায় ন'টা টাকা পেয়ে খুশি হয়ে সে না হয় উপানন্দ বাগচীকে বাকি ছটো৷ টাক! ছেড়েই দিল। তার মহত্বই প্রকাশ পাবে। আর তাই বুঝে সে যদি সে স্থযোগই নিয়ে থাকে তাহলে তাকে অস্বাভাবিকও বলা চলে না। সেলাম £কে বিদায় নেয় কাগজওয়ালা । আর যাবার সময় সে মনে মনে ভাষে, এমন বেয়াকুব মানুষ তো সে জীবনে দেখে নি কখনো । খদ্দের যে বিক্রেতাকে যেচে বেশি দেয়, এ বোধহয় বেচাকেনার ইতিহাসে এই প্রথম । উপানন্দর ভাবনা কিন্তু অন্ত রকমের । কাগজওয়ালাকে বিদায় দিয়ে বারান্দায় পুরানো ইজি চেয়ারটায় *ধপাস করে বনে পড়েন উপানন্দ। আর সেই থেকে সেখানে বসে একমনে শুধুই ভাবছেন। মাথায় হাত দিয়ে গভীর ভাবে ভাবছেন, সোহনলালের কথায় অতোগুলো। টাকাকে যদি তিনি তচনচ করে না ফেলতেন তাহলে আজ কি তাকে এমনি অপমান সইতে হতো সৃন্বায়ীর কাছে? ত্রিশ বছর ধরে অক্লাস্ত পরিশ্রমের পরেও আৃষ্টে শাস্তি নেই তার! ভাবতে ভাবতে অস্থির হয়ে পড়েন উপানন্দ । কী, এমনি করে শুয়ে থাকলেই চলবে নাকি? যুঠো ভে তো ঘরের টাকা কষ্টা দিয়ে দিলে কী সব ছাইন্গাশ ৮ কিনে এনে। কাল থেকে শুন-ভাত আসবে কোথেকে, সে কথা ভেবেছে কিছু1_ৃত্যয়ী রান্নার কাজ শেষ করে এসে আচলে হাত মুছতে মুছতে জিগ্যেস করেন উপানন্দকে । কিন্ত কে শোনে কার কথা? অজ্ঞানের মতো হয়ে পড়েছেন উপানন্দ। শীতের দিনেও কেমন ঘাম দিয়েছে সার! শরীরে ! তার দিকে চোখ পড়তেই চিৎকার করে ওঠেন মৃন্ময়ী । কল্যাণী ! ও কল্যাণী ! মা!__মায়ের আতংকিত কণ্ঠের ডাক শুনে হাতের নভেলটাকে টেবিলে ফেলে রেখে ছুটে আসে কল্যাণী । বাবার চোখে মুখে মাকে জল ছিটোতে দেখে এক দৌড়ে পাখাখান! নিয়ে এসে মাথায় বাতাস করতে আরম্ভ করে। ভাক-চিৎকারে ওপরতলার ভাড়াটেরাও নেমে আসেন ছুটোছুটি করে। আশপাশের লোকজনেরাও । কিছুক্ষণের মধ্যেই অবশ্য জ্ঞান ফিরে আসে উপানন্দর | ডাক্তার আর ডাকতে হয় না, উদ্ভোগেই কাজ হাসিল। সংসারের জন্যে অত্যধিক ছুশ্চিস্তাই যে বাগচী মশাইর এক্ন্‌প অস্থির হয়ে পড়ার কারণ, পাঁচজনের ঈমালোচনায় এটা যথারীতি স্থির হয়ে যায়। তবে ওপরতলার বুড়িম! বলেন, এ অবস্থায় একটু মকরধ্বঞ্জ পড়লে ফলটা ভালো হবে। তাই তিনি নিজেই উদ্যোগ করে সে ব্যবস্থাট! নিজ হাতেই করে দেন। আমলে রোগট। 'উপানন্দর হাই ব্লাড প্রেসার । কয়েকদিন আগে হঠাৎ একবার মাথাটা ঘুরে গিয়েছিল তার। পঞ্চানন ডাক্তারের চেম্বারে বসে বনে গল্প করতে করতেই ঘটনাটা ঘটে। পরীক্ষাটাও তাই সঙ্গে সঙ্গেই হয়ে যায়। প্রেসার নেবার পরেই ভাক্তারের কপালের রেখাগুলো এমন স্পষ্ট ৬৪ হয়ে ওঠে যে, উপানন্দ ভড়কে যান তা দেখে । তবে ডাক্তার তাঁকে অভয় দিয়েই বলেছিলেন, “দাদা, একটু সাবধানে চলাফের] করতে হবে। আর খাওয়! দাওয়া একেবারে কণ্টেল! আমি একট। ওষুধও দিয়ে দেবে! । ভয় নেই কিছু। ভাক্তার ওষুধ দেন নি, দিয়েছিলেন প্রেসকৃপশন ৷ কাজেই ওষুধ আর আসে নি। আর ভোজন ব্যাপারে কীইবা আর কণ্টেোল করার আছে? তাই বাড়িতে এ ব্যাপারট! একদম চেপেই গিয়েছিলেন উপানন্দ। পঞ্চানন ডাক্তার অবশ্য পরে আরো ছু একবার তুলে- ছিলেন কথাটা । কিন্তু উপানন্দ তেমন আমোল দেন নি বলে তিনিও আর মাথা ঘামান নি। তবে বলে দিয়েছিলেন উপানন্দকে যে, সাতান্ন বছর বয়সে ২৩০ সিস্টোলিক আর ১১০ ডায়স্টলিক চাপ উপেক্ষা করার ব্যাপার নয়, সাবধান হওয়া উচিত | কিন্তু কে শোনে কার কথা ! তারই ফলে ঘটে এই দ্বিতীয় বারের ঘটনা । একটু সতর্ক থাকলে কখনো এমনি হতে! না, পঞ্চানন ডাক্তার জোর গলায়ই বলেন সে কথা। বিকেলের দিকে খবর পেয়েই ভাক্তার ছুটে এসেছিলেন উপানন্দকে দেখতে । সেই প্রথম তার কাছ থেকে বাড়ির লোকের। জানতে পারে, কর্তার হাই ব্লাড প্রেসার । হবে না, সারাদিন ভাকটিকিট, ডাকটিকিট করে যে রকম হর্ভাবনা ভদ্রলোকের !_-চলে যাবার সময় এ মস্তব্যই করেছিলেন পঞ্চানন ডাক্তার । সেই থেকে মৃন্ময়ী আর কিছুই বলেন না কর্তাকে। নেই নেই করেও যা কিছু আছে, সংসারে যা কিছু হয়েছে-_ এই ঘরবাড়ি গহনা-পত্র সবই তো এই একটি লোকেরই পরিশ্রমের ফল। সোজা মানুষ৷ বন্ধুবান্ধবদের বিশ্বাস করে ৭৩ কতোগুলো টীকা হয়তো নষ্ট করছেন। তা? সেও তো তারই টাকা ৷ টাকাঞ্চলো থাকলে সংসারের অবশ্য আর কোন ভাবনাই থাকতো! না। কিন্তু হারানো টাকার জন্তে ৬র শোকটাই তে বেশি সবার চেয়ে ! কাজেই সেই কাটা ঘায়ে মুনের ছিটে না দেওয়াই ভালো । মুন্ময়ী এলব সাতর্পাচ চিস্তা করেই উপানন্দর সব কথ! সব কাজেই সায় দিয়ে আসছেন সেই থেকে। টাকা, টাক আর টাক! এই টাকার জন্তেই যতো অশাস্তি। কি পারিবারিক, কি জাগতিক সমস্ত অশাস্তির মূলেই এই টাকা । পৃথিবী থেকে যুদ্ধ বিগ্রহের উত্তেজন। ও অশান্তি দূর করতে হলে মানুষের মন থেকে এই অর্থলোভকে প্রথম দূর কর। দরকার । কিন্তু মে কী বড়ো সহজ ব্যাপার! সহজ না হলেও এ চেষ্টা করতেই হবে। তাইতো৷ উপানন্দ কিছুকাল থেকে শাস্তি আন্দোলনের মস্ত বড়ো একজন সমর্থক হয়ে উঠেছেন। ল্লভায় সভায় শুধু শ্রোতা হিসেবে নয়, বক্তা হিসেবেও জায়গায় জায়গায় এখন দেখতে পাওয়া যায় তাকে । একদিন হঠাৎ রটে গেল, পশ্চিম বাঙলা থেকে এবার বিশ্বশান্তি লশ্মেলনে ফিনল্যাণ্ডের হেলসিংকিতে ধার! প্রতিনিধি যাচ্ছেন তাদের মধ্যে উপানন্দ বাগচী মশাইও একজন । সহজে কেউ বিশ্বাস করতে চায় ন| এ রটনা । কোথায় টাকা পাবেন তিনি? তা ছাড়া সংসারে একা পুরুষ মানুষ৷ কার ওপর ভার দিয়ে যাবেন স্ত্রী-পুত্র-কন্তার ? গুজবে কান দেওয়া ঠিক নয়, গুজবের কথা উড়িয়ে ৭১ দেওয়াই ভালো-_-সবই ঠিক কথা । কিন্তু বা রটে, তার কিছুটা বটে, এ প্রবাদ একেবারে অমূলক নয়। গিশ্নী জানো, আজ যদি হাজার ছুই টাকাও আমার হাতে থাকতো তাহলে পৃথিবীর অনেকগুলো দেশ পরপর ঘুরে আদতে পারতাম । সত্যি ?-গিল্নী বিস্মিত হয়ে প্রশ্ন করেন। বিশ পঁচিশ হাজার টাকায় যা সম্ভব হয় না, হহাজার টাকাতেই আমার তা হয়ে যেতে|! কিস্তু লোভী বন্ধুর পাল্লায় পড়ে সবই খুইয়ে বসেছি, তা আর হবে কী করে 1 একদিন চুপি চুপি ম্ৃম্ময়ীর সঙ্গে এমনি কথাবার্তা চলে উপানন্দর ৷ স্বামীর কথায় গভীর ছুঃখ পান মুন্য়ী। কিন্ত তিনি কী উত্তরই বা দিতে পারেন চটু করে! খানিকক্ষণ বাদে একটি দীর্ঘ নিঃশ্বাসের সঙ্গে যে কথাটুকু বেরিয়ে আসে তার মুখ থেকে তাতে আশ্বাসের স্থুর আছে বটে, কিন্তু আসন্স স্থযোগ গ্রহণের কোন সম্ভাবনাই খুজে পাওয়। যায় না। তা ভগন্লান দিন দিলে আবার তোমার ন্ুযৌগ আসবে । ছেলে বড়ো হচ্চে, লেখাপড়া শিখছে, হু'তিন বছর বাদে চাকরি বাকরি করবে । বাপকে দিতে পারবে না ছৃহাজার টাকা 1-সৃন্ময়ীর আশার কথায় একটু শুধু হাসেন উপানন্দ। এ হাসি যে ব্যথার হাসি, নৈরাশ্তঠের বিদ্রপের প্রতি উপেক্ষার প্রকাশ, তা বুঝতে বাকি থাকে না মুন্ময়ীর | এর ফলে আবার কী ছাড়াবে কে জানে? গভীরতর চিন্তায় ব্যাকুল হয়ে ওঠেন বাগচী-গৃহিণী । ওগে! শুনছো, আজ শুনে এলাম হাজার টাকার মতো হলেই বেশ একটা লম্বা টুর দিয়ে আদা চলে। বাকি ন্‌ টাকাটা শাস্তি সম্মেলনের তরফ থেকেই চালিয়ে নেওয়া হবে ।--কয়েকদিন বাদে আবার এক সময় মৃন্ময়ীকে ডেকে বলেন উপানন্দ । বেশতো, এতোই যখন ইচ্ছে ঘুরেই এসো না। কোথায় পাব টাক? যতো সামান্তই হোক না কেন আজ আর আমায় কে ধার দেবে? তা না হয় আমিই দেবো । তবু তুমি সখ মিটিয়ে একবার স্বরে এসো । শরীরটাও ভালো হবে তাতে। সখ তো শুধু এক রকমের নয় গিম্নী, ছরকমের। এ সম্মেলনে যেতে পারলে একই সঙ্গে সেই ছরকমের সখই মিটবে । সে আবার কী রকম?_গিন্লীর মনে কেমন একটা সন্দেহের কামড় লাগে। এই বুড়ো বয়সে আবার মেম সাহেবদের দিকে মন ঝুঁকলে। নাকি ! বেটাছেলেদের ব্যাপার কিছুই তো বলা যায় না, ঠিক এমনি ভাবখান|। কেন, দেশ ভ্রমণের সঙ্গে সঙ্গে ডাক টিকিট সংগ্রহের কাজটাও অনেকদূর এগোবে। কিন্তু তুমি টাকা পাবে কোথেকে, আমি সে কথাই ভাবছি।-_হুশ্চিস্তার কথাটা প্রকাশ করে ফেলেন উপানন্দ। ঃ ও এই !__গিন্নী যেন হাফ ছেড়ে বাঁচেন। সে নিয়ে আর ভাবাভাবির দরকার নেই । আমি সব ঠিক করে ফেলেছি। হাতে শুধু ছুগাছ করে চুড়ি রেখে আমার সব গয়ন। বিক্রি করে দিয়েও আমি তোমায় টাকার জোগাড় করে দেবো 1 মুন্ময়ীর এ কথায় আনন্দে আর স্থির থাকতে পারেন ন। উপানন্দ। কিন্তু তবু তার বিস্ময় কাটতে চায় না৷ সহজে । একালেও এমন পতিভক্তি? দেখেশুনে একটু তাজ্জব বনে যেতে হয় বৈ কি! শেষ পর্যস্ত তাই হয়। স্ত্রীর গহনা বিক্রির টাক! শড নিয়েই শাস্তিপথিক হন উপানন্দ। যাত্রার আগে স্ত্রীকে বলেন, অনেক কাল আগে এক জ্যোতিষী বলেছিলেন, আমার হাতে নাকি বিদেশযাত্রার োগ আছে। আমি তার কথ! হেসেই উড়িয়ে দিয়েছিলেম । এখন দেখছি, তাই ঠিক হয়ে গেল! ঝড়ে বক মরে, ফকিরের কেরামত বাঁড়ে। তা ঠিক হয়ে গেল কার জন্তে শুনি, জ্যোতিষী বলেছিলেন বলে না আমি টাকা যোগাড় করে দিলুম বলে ।-_কর্তাকে সগৌরবে প্রশ্ন করেন মৃন্ময়ী । আরে দূর কোথাকার কে জ্যোতিষী! তার কথায় কী আসে যায়? তোমার মতে। স্ত্রী ন! থাকলে কী দেশভ্রমণ ভাগ্যে ঘটে কখনো ? তবে সুযোগটা দিয়েছেন শাস্তি সম্মেলনের উদ্যোক্তার।, এটা তোমায় মানতেই হবে ।- পরিহাস প্রসংগে আসল কথাটাও স্ত্রীকে জানিয়ে দিতে ভূল করেন না উপানন্দ । যাবার সময় বাগচী মশাই একথাটাও জানিয়ে যান যে, সম্ভব হলে অর্থাৎ অর্থে আর স্বাস্থ্যে কুলোলে তিনি একেবারে ন্ওয়ারশর ধুব উৎসবটাও দেখে আসবেন এবং এ দলের সঙ্গেই দেশে ফিরবেন। দেড় মাসের ওপরে আর হামাস, এইতো ! তার আর কীইবা এমন তাড়া আছে? তাড়া আর তেমন নেই কিছু। তবে মেয়েটা তে! রয়েছে ঘাড়ের ওপর !_-এই চিস্তার কথাটা একবার স্মরণ করিয়ে দেন মৃুম্ময়ী। একেবারে ভোলানাথ হলে চলবে কেন সংসারী মানুষের । দেশ-বিদেশের ডাকটিকিট সংগ্রহের কঝৌঁকে আবার না পেয়ে বসে। মৃশ্ময়ীর এও এক বিষম ভয় । না, না ও সবের কিছু ভয় নেই বৌদি। আমরা যখন ৭8 সঙ্গে যাচ্ছি, দাদাকে ঠিক ফিরিয়ে এনে দেবো 1-_-অভয় দেন উপানন্দর একজন সংগী | কিন্তু সত্যি সত্যি শাস্তি সম্মেলনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ফিরে আসেন না উপানন্দ। বাড়িতে মহা ছুশ্চিন্তা ত৷ নিয়ে। হেলসিংকিতে শাস্তি সম্মেলন শেষ করে চেকোশ্লোভাকিয়া হয়ে রাশিয়া সফরের পর মস্কোতেই তিনি রয়ে গেলেন। ওয়ারশতে যুব উৎসব দেখে তিনি দেশে ফিরবেন । শাস্তি সম্মেলনের প্রতিনিধিরা কেউ কেউ এসে মাঝে মাঝে প্রবোধ দিয়ে যান স্ৃন্ময়ীকে। ইতিমধ্যে চিঠিও আসে ওয়ারশ থেকে৷ পৃথিবীর বিরাটতম উৎসব বসেছে পোল্যাণ্ডের রাজধানীতে । একুশ দিন ব্যাী এই উৎসব শেষ করে উপানন্দ আর সব ভারতীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে মক্কো ফিরে আসবেন । তারপরে পিকিং হয়ে একেবারে দেশে । নির্ধারিত কর্মসূচীর ব্যতিক্রম হয় না এবার ৷ নির্দিষ্ট দিনেই উপানন্দ সদলবলে কোলকাতায় ফিরে আসেন। তারপর থেকে শুধু গল্প আর গল্প। শান্তি সম্মেলনের গল্প, যুব উৎসবের গল্প আর নানা দেশের নানা রকমের গল্প । বিচিত্র সব অভিজ্ঞতার গল্প ফুরোতে চায় না উপানন্দর | ইবনবাতৃতাকেও হার মানালেন দেখছি উপানন্দবাবু!__ প্রতিবেশী এক ইতিহাসের অধ্যাপক একদিন মন্তব্য করেন বাগচী মশাইর গল্প শুনে । ইবনবাতুতার গল্পটি কি বলুন তে শুনি।__তিনি ধাকে হার মানালেন তার কথা না শুনে মনে শাস্তি হতে পারে কখনো । উপানন্দ তাই শুনতে চান ভার কাহিনী । ৭৫ ন! বাগচী মশাই, আপনার সঙ্গে ইবনবাতুতার ফোন দিক থেকেই কোন রকম তুলনা হতে পারে না। তিনি দেশভ্রমণে বেরিয়েছিলেন যৌবনে, মাত্র একুশ বছর বয়সে। সে ছ'শ' বছরেরও আগের কথা । জলপথে আর স্থলপথে দীর্ঘ চব্বিশ বছর ধরে ক্রমাগত ঘ্বুরেছিললেন তিনি | তাগ্জিয়ারের এই তরুণ পর্যটক সাতাত্তোর হাজার মাইল পথ অতিক্রম করে যখন দিল্লীতে এসে পৌছলেন" তখন দিল্লীর সম্রাট সুলতান মহম্মদ বিন তুঘলক। সম্রাট তাকে সম্মানিত করলেন প্রধান বিচারপতির পদে অভিষিক্ত করে। কিন্তু এই বৃদ্ধ বয়সে আপনি চার মাসের মধ্যে যেভাবে প্রথিবীর অধেক পর্যটন করে এলেন তার জন্যে কী পুরস্কার আপনি আশা করতে পারেন আমাদের দেশের স্বাধীন সরকারের কাছ থেকে? কোন পুরস্কারের প্রত্যাশী তো নই আমি, প্রফেসর রায় । যে বিচিত্র অভিজ্ঞতা আমি লাভ করে এসেছি পশ্চিমের নানা দেশ থেকে তার কথাই সকলকে বলে যাব। পৃথিবীর সব সাধারণ মানুষই শাস্তি চায়, হিংসা-দ্বেষ থেকে মুক্তি চায়। তার জন্তে যে 'সব ব্যবস্থার প্রয়োজন তারই তো মহড়। চল্ছে আজ দিকে দিকে । কী আর বলবো প্রফেসর রায়, মানুষের ছুঃখের দিনের অবসান হয়ে আসছে, এ বিশ্বাস আমার যেন: বদ্ধমূল হয়ে গেছে ।-_এই বলে উপানন্দ যেন একটা বন্তৃতা আরম্ভ করে দেন রীতিমতো । কিন্তু অধ্যাপক মশাই বিদায় নেন তার কলেজের সময় হয়ে গিয়েছে বলে। তবে শিকারের বড়ো! একটা অভাব হয় না। পঞ্চানন ডাক্তারকে পথে পেয়েই মক্ষো-পিকিং ট্রেন জানির অপূর্ব অভিজ্ঞতার বর্ণনা আরম্ভ করে দেন উপানন্দ। ণঙ ট্রান্সসাইবেরিয়ান রেলপথে এগারে। দিনের এই দীর্ঘতম ট্রেন জানিতে বিন্দুমাত্র অন্থুবিধে কাউকে ভুগতে হয় নি, আর এখানে রাণাঘাট থেকে কোলকাতা আসতে কী হয়রানি! আমাদের দেশে কবে যে এসব পাওয়া যাবে, উপানন্দ তাই ভাবেন এবং প্রশ্নও করে বসেন পঞ্চানন ডাক্তারকে । কিন্ত রোগী দেখার তাড়ায় ডাক্তারও চলে যান। সবাই কাজে কর্মে ব্যস্ত । কাজেই উপানন্দর অনেক গল্পই আর বল! হয় না। সেজন্যে উপানন্দর মনে কি কম হুঃখ! কিন্ত মৃন্ময়ী তার কী প্রতিকার করতে পারেন? বামীর গল্প অবশ্য তিনি বসে বসে শুনতে পারেন। কিন্তু শুধু গল্প করলে আর গল্প শুনলেই তো চলবে না । মেয়েটা যে ঘাড়ের উপর একেবারে পাহাড়-চাপা হয়ে আছে । | সে কথাটাই সেদিন রাত্রিতে মৃন্ময়ী কথায় কথায় স্মরণ করিয়ে দিচ্ছিলেন স্বামীকে! দেশ-বিদেশের ডাকটিকিটের গল্প বলায় বাধা পড়েছিল তাতে । কল্যাণীর বিয়ের জন্যে তার বাপ-মাকে মোটেই ভাবতে হবে না, একথ| ঘে কল্যাণী নিজের মুখে বলতে পারে তা বিশ্বাসই করতে চান না উপানন্দ । | এ নিশ্চয়ই অভিমানের কথ।। সত্যি সত্যি মেয়ের বিয়ের ব্যাপার নিয়ে কোন চেষ্টাই তো এ পর্যস্ত করা হয়নি। এক এক করে ওর কলেজের বন্ধুদের সবারই তে! প্রায় বিয়েখা হয়ে গেল। কল্যাণীর মনে অভিমান হওয়া তে অন্যায় কিছু নয়। নিজেকেই মনে মনে দোষী সাব্যস্ত করেন উপানন্ৰ । ৭৭ সুম্ময়ী আন্ডে আস্তে সপ্জয় মুখার্জির কথা তোলেন। এই ছেলেটিকেই পছন্দ কল]াণীর । ছেলেটিরও পছন্দ কল্যাণীকে । বেশ তো, ক্ষতি কি? লেখাপড়৷, রুজি রোজগারে যদি ছেলেটি ভালো হয়ে থাকে তাহলে আর আপত্তি করার কী আছে?__উপানন্দ উত্তর দেন । আমাদের দিক থেকে আবার আপত্তির কী থাকতে পারে, আপত্তি এসেছে ছেলের বাপের দিক থেকে । তার যে অনেক দাবী। তাছাড়া আমাদের অবস্থার কথা কার বা না জানা। এমন গরীব ঘরের মেয়েকে কোন্‌ বাপ-মাই বা সাধ করে ছেলের বৌ করে নিতে চায় ?_হুন্ময়ী আসল সমস্তাট! তুলে ধরেন স্বামীর সামনে । ও এই কথা! তা কল্যাণীর কপালে থাকলে ওর স্থখশাস্তির পথে আমাদের অভাব অনটন বাধা হবে না কখনে। ।-_ কেমন যেন অধৃষ্টবাদীর স্থর বেজে ওঠে উপানন্দর কথায় । মৃন্ময়ীর কাছে সব কথ! শুনে কল্যাণীর বিয়ের সমস্যাই তোলপাড় সুরু করে উপানন্দর মনে । শুয়ে শুয়ে ভাবতে ভাবতে হঠাৎ ষ্কার মনে পড়ে যার, ডাকটিকিট অকৃশনের একটা বিজ্ঞাপন তিনি দেখে গিয়েছিলেন শাস্তি সম্মেলনে হেলসিংকি যাবার আগে। পরদিন ঘুম থেকে উঠে আর কথা নেই। একটা খবরের কাগজের আফিসে গিয়ে উপস্থিত উপানন্দ। চার মাস আগের কাগজের ফাইল দেখে তিনি ঠিক বার করে নেন সেই অকৃশনের তারিখ। আরে! কিছুদিন সময় আছে হাতে। উপানন্দর আনন্দ আর ধরে না। ঠিক ঠিক কেল্লা ফতে হয়ে যাবে। তার কাছে যে সব জিনিষ আছে আর কেউ পারবে সে সব যোগাড় করতে ? ৮ গালগল্প সম বন্ধ হয়ে গেছে উপানন্দয় । মস্থো-পিকিং হেলসিংকি-ওয়ারশ কোন কিছুই যেন আর তার মনে নেই। আহার নিদ্রার কথাও যেন ভূল হয়ে গেছে । শুধু ডাকটিকিট আর ডাকটিকিট ! বাস্তবিকই রাস্তা থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে পুরানে! কাগজওয়ালার কাছ থেকে নস্টাকায় যে সংগ্রহ তিনি উদ্ধার করেছিলেন তার কি তুলনা হয় কোন? সে সংগ্রহ হাত- ছাড়া করতে কি পারবেন তিনি ? ভাবতে ভাবতে বুক ফেটে যেন কান্না আসে উপানন্দর। কিন্ত যতোই কষ্ট হোক এর মায়! ছাড়তেই হবে তাকে । একমাত্র কন্ঠা কল্যাণীর অভিমানও বাগচী মশাইকে কম আহত করে নি! যে কোন রকম ছুঃখ সময করতে তিনি প্রস্তত কল্যাণীকে সুখী করার জঙ্তে ৷ মনকে ঠিক করে ফেলেন উপানন্দ। ইগ্ডয়া টিকিটের পুরো সেটটাই তিনি নীলামে দিয়ে দেবেন। তার মধ্যে রাজবাড়ির কাগজপত্র থেকে পাওয়া টিকিটগুলো৷ সত্যি সত্যি ছুলভ। সিপাহী বিদ্রোহেরও আগেকার সে সব টিকিট । , কতগুলো পুরানো খাম আর পোস্টকার্ডের ওপর অদ্ভুত রকমের ঠিকান! পড়ে হেসে ফেলেছিলেন উপানন্দ। সত্যি সত্যি হাসিরই ব্যাপার । কুঁড়িয়েই আন! হোক আর কেনাই হোক, কোলকাতার আশপাশের গ্রামাঞ্চল থেকে সংগৃহীত এসব পুরানো চিঠি । এসব চিঠির ঠিকানায় শুধু গ্রামের নাম আর ডাকঘরের নাম দিয়েই ক্ষান্ত হয় নি পত্রলেখকেরা, প্রাপককে খুঁজে পেতে যাতে হয়রানি না হতে হয় ডাক- পিয়মকে তার জন্গে প্রাপকের আংগিক পরিচয়ও তার। দিয়েছে সঙ্গে সঙ্গে । 4 ৭৯ মহামহিম শ্রীধুক্ত হরিদাস চক্রবর্তী ( অন্ধ ) কিংবা খোঁড়া শ্রীমান্‌ মহম্মদ ইয়াসিন, পত্রের ঠিকানায় এমনি সব পরিচস্ন দেখে কার ন! হাসি পায়। সেকালে এভাবেই ঠিকানা লিখতে হতো চিঠিপত্রে। অনেক সময় ছবিও একে দেওয়া হতো । পিয়নদের সুবিধা হতো! তাতে । লেখাপড়া তো বড়ো! জানতো না তার।। এসব জিনিষ কি আর পাওয়! যাবে কোনদিন ? ভাগ্য, পুরানে! কাগজওয়াল। রাজবাড়ির গুদাম সাফকরা কাগজপত্র বস্তা ভন্তি করে নিয়ে চল্ছিল তার সামনে দিয়ে। তাইতো এই ছক্প্রাপ্য ডাকটিকিটগুলো কোন রকমে রক্ষা পেয়ে গেছে। তা নইলে এগুলোর গতি যে কী হতো কে বলতে পারে ! উপানন্দ ভালো! করেই জানেন, নীলামে তার ইগ্ডিয়! সেটের ডাক উঠবে অনেক। অকৃশনের সময় সত্যি তাই হয়। দেখতে দেখতে এগারে! হাজার টাক! দর উঠে যায়। এতোট। কিন্তু উপানন্দও আশ! করেন নি। ন-টাক! খরচ করে এগার হাজার টাক! লাভ, একি বড়ো৷ কম অভাবনীয় ব্যাপার! কিন্তু তবু এ অকৃশন, লটারি। কে জানে এ দেশের লোকের সুখহুখ আর কতোকাল এরকম ভাগ্যের খেল। হয়ে থাকবে ? কল্যাণীর বিয়ের সমন্তা, মৃন্ময়ীর গহনার দায়, সবই মিটে যায় হমাসের মধ্যে । কিন্তু তবু কেন শাস্তি নেই উপানন্দর মনে? সেই আগের মতোই তো দেশ-বিদেশের ডাকটিকিট নিয়ে তিনি মেতে আছেন কিন্তু তবুও যেন কেমন একটা ছাড়া-ছাড়া জিয়মাণ ভাব । ০ তার সেই অপূর্ব সংগ্রহের কথা ভুলতে পারেন না উপানন্দ। কন্যা বিদীয় আর ত্বার ডাকটিকিটের ইগডিয়া সেট বিক্রির ব্যথা ছটোই যেন ঘুরে ফিরে বার বার এসে আক্রমণ করে ষ্ার মনকে । কল্যাণী আসবে । যখন ইচ্ছে তখনই তাকে হয়তো কাছে পেতে পারবেন উপানন্দ। কিন্ত সেই ইগ্ডিয়া সেটটাকে তো তিনি আর কোন দিন ফিরে পাবেন না। ৮১ ধোয়া গুলী স্থতোর লেবেলের মতোই টকটকে লাল চোখ টো । হঠাৎ নজর পড়তেই থমকে দাড়ায় শংকর । অনর্গল ইংরেজি কবিতা আবৃত্তি করে চলেছেন লোকটি । শংকর অবাক হয়ে প্রাড়িয়ে দাড়িয়ে শোনে । হয় পীড় মাতাল, আর নয়তো বদ্ধ পাগল !--এই ধারণ! হয় শংকরের আর দশজনেরই মতো । তবে লোকটির যে বেশ ভালো লেখাপড়া রয়েছে সে বিষয়ে কোন সন্দেহই নেই। গভীর আগ্রহ নিয়ে শংকর এগিয়ে যায় লোকটির সামনে। আর সঙ্গে সঙ্গেই আবৃত্তিও বন্ধ হয়ে যায়। জাস্ট এ মিনিট !_এই বলে একটু থেমেই ভদ্রলোক চটপট একটা বিড়ি ধরিয়ে নেন এবং আবার আবৃত্তি সুরু করে দেন। এবার আবৃত্তি করেন ব্রাউনিঙ-এর “দি লাস্ট রাইড টুগেদার” কবিতাটি । অনুপম! ইংরেজির ছাত্র শংকর মুগ্ধ হয়ে যায় এই আবৃত্তি শুনে। বিস্তারিত জানার ইচ্ছে হয় তার লোকটির সম্বন্ধে । কিন্তু কাকে জিগ্যেস করবে সে? কাকে আবার কী জিগ্যেস করে মুশকিলে পড়বে, সেও এক ভয়। একেবারে নতুন লোক যে তারা বেলগেছে পাড়ায় । হঠাৎ বৃদ্তি নামে । আকাশ-ভাঙা বৃষ্টি। মেঘ ডেকে ওঠে মাঝে মাঝে কড়কড় শবে । ৮২ শংকর দৌড়ে গিয়ে ওঠে পাশের এক দোকানে । ভদ্রলোক কিন্তু সেই একই জায়গায় দাড়িয়ে থাকেন। বেলগেছের মোড়ে একটা বড়ো বাড়ির দোতলার বারান্দার নীচে দাড়ানোয় মাথাটা! তার কোন রকমে বৃ্ি থেকে রক্ষা পাচ্ছে বটে, কিন্তু ক্রমাগত বৃষ্টির ঝাপটায় জামা কাপড় তার ভিজে একাকার । কিন্তু কোন ভ্রক্ষেপই নেই যেন সে দিকে। শংকর অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। বৃষ্টি শীগগির থামবে, এমন কোন লক্ষণই নেই। বাইবেলের “নোয়ার গল্প মনে পড়ে যায় তার। স্বয়ং ভগবান বুঝি আবার নতুন করে এক জলপ্লাবন পাঠালেন এই পৃথিবীতে । এই কোলকাতা শহরটাকে ডুবিয়ে দেবারই বুঝি তাঁর মতলব! সত্যি সত্যিই রাজপথে হাটুজল জমে যায় দেখতে দেখতে । অবিরাম বারিবর্ধণে স্তব্ধ নগরী । ট্রাম বাস অচল। শংকর অনন্যোপায়। তাই দৌকানীর সঙ্গেই আলাপ জুড়ে দেয়। কিছুক্ষণ কথাবার্তায়ই বুঝতে পারে সে যে, পাড়ার গেজেট এই দৌকানী। পাড়ার প্রায় সব খবরই তার নখদপ্পণে । তাই স্বাভাবিক। চৌরাস্তার মোড়ে একটি যাত্র বড়ো মুদির দোকান। আশপাশের প্রায় সবাইকেই আসতে হয় তার কাছে। কাজেই সকলের প্রায় সব কথাই তার জানা থাকার কথ! । দোকান ভক্তি লোক। দোকানীই ডেকে ডেকে এনেছে সকলকে ৷ বৃদ্ধি নামতেই ছুটোছুটি পড়ে গিয়েছিল কিনা ! “আপনাদের সকলের চরণে আশ্রয় পেয়েই চরণ বৈরাগী বেঁচে আছে। আর তার দোকান থাকতে আপনার! বাইরে দাড়িয়ে জলে ভিজবেন, সে কি হয় কখনো? আনুন ৮৩ সবাই, ভেতরে আম্ুন1”--এই বলে দোকানী অভ্যর্থনা জানিয়েছে সকলকে । ভারি রসিক লোক চরণ বৈরাগী । কথায় কথায় বৈষ্বী বিনয়ে নিজেকে চরণদাস বলে পরিচয় দিয়ে সকলের সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে চলেছে সে। বয়সে প্রৌট। মাথার চুলে পাক ধরেছে। মাঝখানে একটি বৃত্বাকার চকুচকে টাক। সবাই খুশিই হয় তার কথাবার্তীয়। এ সব দেখে শুনে শংকর ভরসা পায় কতকটা। চরণকে জিগ্যেস করলেই বোধ হয় এঁ ভদ্রলোক সম্বন্ধে মোটামুটি জান! যাবে! সেই ভরসাতেই শংকর জিগ্যেস করে দোকানীকে এবং সে নিরাশও হয় না মোটেই। বর্ষণমুখর সকাল। রবীন্দ্রনাথের “একটি আবাটে গল্পের, মতোই উপাদেয় লাগে চরণ বৈরাগীর বলা গল্প। সবাই উত্কর্ণ হয়ে শোনে । চরণ বলে চলে-_ বেশ ভালে! ঘরেরই ছেলে এঁ ভদ্রলোক । ওর বাবা যখন ঢাকায় বদলি হয়ে যান ডেপুটি ম্যাজিস্রেটে হিসেবে উনি তখন বি-এ ক্লাসের ছাত্র। বাপ কোলকাতাতেই ছেলেকে রাখা স্থির করেন। তাঁকে হোষ্টেলে ভন্তি করিয়ে দিয়ে যান। লেখাপড়ায় তুখোড় ছেলে। অধ্যাপকদের সবারই প্রিয় । কাজেই নির্ভাবনায়ই বাপ কোলকাতায় রেখে গেলেন ছেলেকে । কিস্ত ভাবনার খবর বাপের কাছে পৌছুতে খুব বেশি সময় লাগলো না । ঘে ছেলে বিরাট ভবিষ্যতের জঙ্গে নিজেকে তৈরি করে চলছিলেন, ধার স্বপ্ন ছিল বিরাট কিছু একটা হবার, সেই ছেলে যে কী করে বখাটে ও আড্ডাবাজ একদল ছেলের সঙ্গে ভিড়ে পড়লেন, ভা কেউ বলতে পারে না। শুধু যে লেখাপড়াতেই ৮৪ ভালো ছিলেন ভদ্রলোক তা নয়, স্বভাব চরিত্রের দিক থেকেও আত্মীয় স্বজন সবাই নাকি ওকে দেবতুল্য বলে মনে করতো । এমন ছেলে কলেজ কামাই করে সিনেম৷ দেখায় মেতে উঠলেন। বড়ো বড়ো রেস্তোরশায় যেয়ে বন্ধুদের সঙ্গে টাকা ওড়াতে সুরু করলেন জলের মতো । ট্যাক্সি ভাড়। করে শহরের কুখ্যাত অঞ্চলগুলোতেও যাতায়াত চলতে থাকে। আহা হা! মা-বাপের টাকা এমনি ভাবে উড়িয়েছে? খুব সহানুভূতির সুরে প্রশ্ন করেন এক বৃদ্ধ। হ্যা, তাইতো! শুনেছি । তারপর কী হলে। বলুন।--আর একজন অস্থির আগ্রহে প্রশ্ন করে চরনদাসকে। এমনও নাকি অনেক দিন গেছে শুনেছি, যখন উনি রাত্রিবেল! হোষ্টেলেই ফেরেন নি। হোষ্টেলের সুপারিপ্টেণ্ডেন্ট অপেক্ষা করে করে দরজ| বন্ধ করে দেবার নিদেশ দিতেন দারোয়ানকে। কলেজের শাসনে কোনই ফল হয় না। প্রিন্সিপ্যালের কাছে এমন খবরও আসে যে, পার্ক সার্কাস পাড়ায় ওঁকে নাকি একটা গ্্যাংলো-ইগ্ডিয়ান মেয়ের সঙ্গে ঘ্বুরে বেড়াতে দেখা যায় প্রায়ই । ব্যস্১ একেবারে ষোলকলা পূর্ণ তা হলে! আরে একবার অধঃপতনের পথে পা বাড়ালে তাকে আর ফিরিয়ে আনা কি সহজ ব্যাপার! বৃদ্ধ আবার এক মস্তব্য করেন। আপনি থামুন না একটু, ওকেই বলতে দিন। আসল ব্যাপারটা শোনা যাক, কী করে ও বেচারার এ হাল হলো ।--চরণের কথার মাঝখানে কথ! বলায় শংকর বিরক্ত হয়ে ওঠে। ৮৫ বেশ ভাই, বেশ, আমি থেমেই যাচ্ছি + বৃদ্ধ চুপ করে যান। চরণ আবার বলতে সুরু করে । ছেলেটিকে কিছুতেই বাগে আনতে না পেরে প্রিন্সিপ্যাল চিঠি লিখে বিস্তারিত জানিয়ে দেন তার বাপকে। বাপের মাথায় তো বজ্রপাত একেবারে ! ঢাকায় নিজের কাছে তিনি নিয়ে গেলেন ছেলেকে । তাকে ভন্তি করিয়ে দিলেন সেখানকার কলেজে । তাতে ফল হলে কিছু ?_ আর এক ভদ্রলোক প্রশ্ন করেন । ফল যা শেষ পর্যস্ত হয়েছে তাতো দেখতেই পাচ্ছেন । তবে ছেলেকে ভালো পথে নেবার জন্তে চেষ্টার চূড়াস্ত করেছেন বাপ। কোলকাতা থেকে ছেলেকে ঢাকায় নিয়ে যাবার কিছু দিনের মধোই বেধে গেল দ্বিতীয় মহাুদ্ধ । আর দেখতে দেখতে কোলকাতায় জাপানী বোমারও যে কী আতংক দেখা দিল তা আর বলার নয়। কাতারে কাতারে লোক সব কোলকাতা ছেড়ে পালাতে সরু করলে এদিক ওদিক। এই শহর একেবারে ফাকা হয়ে যাবার উপক্রম আর কি! এরই মধ্যে কোলকাতা থেকে এক চিঠি পেয়ে অবাক হয়ে গেলেন ভদ্রলোকের বাবা । চিঠি লিখেছেন রেংগুন-প্রবাসী তার এক পুরানে। বন্ধু। সবাই যখন কোলকাতা ছেড়ে পালাতে ব্যস্ত, সে সময় তিনি রেংগুন থেকে সপরিবারে প্রাণ নিষে, কোলকাতায় ফিরতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছেন। “কিস্ত এই খালি শহরে কী করে থাকবেন তিনি? তাই” পরামর্শ চেয়ে চিঠি লিখেছেন ঢাকায় তার বন্ধুর কাছে? . কিস্তু এ ব্যাপারের সঙ্গে এ ভদ্রলোকের কী সম্পর্ক? --স্চর়খদাসের এক খদ্দের জানতে চায়। ৮ সম্পর্ক আছে বৈ কি। এঁর বাবা ভার বন্ধুকে চিঠি লিখে জানালেন ঢাকায় যেয়ে নতুন করে ওকালতি সুরু করতে । রেংগুনের একজন প্রবীণ ও শ্রেষ্ঠ আইনজীবীর পক্ষে ঢাকায় যেয়ে পসার করতে খুব বেশি বেগ পেতে হবে না, এই তার মত। বন্ধুর পরামর্শ গ্রহণ করেন তিনি । ঢাকায় যেয়ে আইন ব্যবসা আরম্ভ করেন। বুড়িগংগ।র তীরে নবাগত উকীলের বাড়িতে ক্রমশই মন্কেলের ভিড় বেড়ে চলে। আইন আদালতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মহলে পুলকেশ পাকড়াশি পরিচিত হয়ে যান অল্পদিনের মধ্যেই । এরই মধ্যে একদিন ডেপুটি বন্ধু সতীশ রায় তার মনের কথাটা খুলে বলে ফেল্লেন পাকড়াশিকে। তার ভারি ভালে লেগেছে মধুচ্ছন্দাকে। তার এবং তীর স্ত্রীর ছুজনেরই খুব ইচ্ছে ছন্দাকে বৌ করে নেন ঘরে। তা ছাড় বন্ধুত্বকে আত্মীয়তার বন্ধনে পাক! করে নিতে চান তিনি। এতে আর আপত্তি করার কী থাকতে পারে £ সতীশ রায় ষেচে নিতে চান তার মেয়েকে ছেলের বৌ করে, সে তে৷ সুখের কথা। পাকড়াশি এক কথাতেই রাজি। ডেপুটির ছেলে প্রমীল সেবারেই বি-এ গ্লাশ করেন ঢাকা থেকে! কিন্তু পাশ করেন অতি সাধারণভাবে । তা হবে না তো আর কীহবে? যত ভালো মাথাই হোক ন! কেন, বদখেয়ালগুলো তো আর মাথা থেকে পুরোপুরি যায় নি। যুদ্ধের ডামা-ডোল আর কলেজ অদলবদলের জন্যেই পরীক্ষার ফল খারাপ হয়েছে বলে চালু করে দেন সতীশ রায়। বিয়ে হয়ে যায় মধুচ্ছন্দার সঙ্গে প্রমীলের ৷ হৃপক্ষই মনে করলেন রায়-পাকড়াশি পরিবারের বন্ধুত এবার থেকে একেবারে পাকা | ছুপক্ষই খুশি । ৮৭ আচ্ছা, সতীশ রায় একজন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হয়ে নিজের বন্ধু-কন্যার সর্বনাশ করলেন এ ভাবে ? কী করে তিনি সর্বনাশ করলেন বন্ধুকম্যার? ছেলের মাথা খারাপ হয়ে গেলেও ছেলের বৌকে তিনি মোটেই বঞ্চিত করেন নি। বরং তার জন্তেই তিনি সব কিছু; এমন কি অনাথ দেব লেনের বাড়িখানা পর্যস্ত লিখে পড়ে দিয়ে গেছেন বৌমার নামে। নিজের সম্পত্তির কিছু অংশ একমাত্র মেয়েকে দেবার কথাও তিনি একবার ভাবেন নি। আরে ছেড়ে দাও ভাই চরপদাস, তুমি বুড়োদার কথায় আর কান দিও না। কী করে এই বেচারা এমন পাগল হয়ে গেল তাই বেশ বিস্তারিতভাবে বল দেখি, শুনি 1 আর একজন বয়স্ক লোকের এই কথায় বৃদ্ধ ভদ্রলোক একটু যেন অপমানই বোধ করেন। আচ্ছা, এবার চলাই যাক তা হলে। তোমরাই শোন বসে বসে ।_-এই বলে বৃদ্ধ বেরিয়ে পড়েন দোকান থেকে । বৃ্ি তখন বিমিয়ে এসেছে । বাঁচা গেল! বুড়ো মানুষ কিছু বলাও চলে না । অথচ বার বার লী রকম ইন্টারফিয়ার করছিলেন !_বৃদ্ধ চলে যাবার পর মস্তব্য করে শংকর। ওদিকে নাটকীয় ভংগীতে কী যেন বলে চলেছেন প্রমীল রায়। বৃষ্টির জোর কমে যাওয়ায় শোনা যাচ্ছে কিছু কিছু £ লাইফ, ইজ বাট এ ওয়াকিং স্টাডো"'-"*'একটু মন দিয়ে শুনলে মাঝে মাঝে বেশ পরিষ্কার শুনতে পাওয়। হায়। শেক্স্পিয়ারের ম্যাকবেথ যেন সত্যি সত্যি অভিনয় করছেন, এমনি আবৃত্তি প্রমীল রায়ের! শংকর অভিভূত হয়ে শোনে। কিন্ত পরক্ষণেই অভিনয় ৮৮ বন্ধ হয়ে যায়। নতুন করে একটা বিড়ি ধরাতে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন অভিনেতা । একটু দম নিয়ে নিচ্ছেন হয়তো । .. চরপণদাসকে আবার গল্প বলা সরু করতে হয় শংকরের তাগিদে । বিবাহিত জীবনের ন্ুরূতে একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেল ভদ্রলোকের ৷ স্ত্রীকে খুশি করার জন্যে বড়ো বড়ো চাকরির উমেদারি করতেও তাকে দেখা গেল। কিন্তু চাকরি আর হয়ে ওঠে না। কেউ কোন ছোট কাজের প্রস্তাব করলে তিনি কথাই বলেন না। অথচ বড়ো কাজের আশায় বারে বারে কোলকাতায় যেয়ে ঘুরে ফিরে আসেন। অনেক টাকাও নষ্ট হয় তাতে । বাপ সন্দেহ করেন। আবার সেই এ্যাংলো-ইগ্ডয়ান মেয়েটা.হাত করে ফেলে নি তো ছেলেকে ! তা না হলে এতোগুলেো৷ করে টাকা খরচ হবার কী কারণ থাকতে পারে? রিটায়ার্ড ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেট মহা দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। কিন্তু এ নিয়ে বাড়িতে কোন কথা বলারও উপায় নেই। পাছে তার বৌমা মনে ব্যথা পান, এই ভয়। অখচ বৌমারও মনে যে সন্দেহ উকি ঝাঁকি না মারছে তা নয়। তবে নানা ব্যাপারে মাঝে মাঝে বিরক্তি প্রকাশ করলেও সে চেপে রাখে মনের সে সন্দেহ। কিন্তু ভদ্রলোকের বুঝতে বিলম্ব হয় না যে, তার স্ত্রীও তাকে সন্দেহ করতে সুরু করেছেন। চিস্তা তার বেড়ে চলে। এর মধ্যে এক আনন্দের ঘটনাও ঘটে। একটি পুত্রলাভ ঘটে ভদ্রলোকের । শ্বশুরবাড়িতে ছেলের মুখ দেখতে গেলে চারদিক থেকে চাপ পড়ে ভদ্রলোকের ওপর কিছু খরচপত্র করার জন্যে । কিছু নয়, বেশ খরচপত্র করেন তিনি সেখানে এবং সবার গীড়াপীড়িতে শ্বশুরালয়েই থেকে যেতে হয় তাকে সে ৮৬ রাতের জন্যে বিপদ ঘটলো সেখানে থেকে যাখয়ার ফলেই সে কী কথ? শ্বশুরবাড়িতে থাকায় আবার বিপদ ঘটে কী করে? _রিস্মিত হরে জিগ্যেস করে শংকর । বিপদ কী করে ঘটলো সে কথাই বলছি, এই বলে আবার আরম্ভ করে চরণদাস। পুত্রলাভের আনন্দৌৎসবের ঘটাটা বোধ হয় একটু বেশিই করে ফেলেছিলেন ভদ্রলোক । তাতে শ্বশুরবাড়ির আর সবাই খুশি হলেও শ্বশুর-কম্যা নিজে কিন্তু খুব সন্তুষ্ট হতে পারেন নি। স্ত্রী স্পষ্টই নাকি তাকে বলেছেন, বেকার হয়েও এ ধরণের খরচপত্র করে অন্তের কাছে বাহবা পাওয়া যেতে পারে, কিন্তু এতে আত্মসম্মানের কোন পরিচয় নেই। বাপের টাকায় বাহাছরি করাও কোন শিক্ষিত মানুষের কাজ নয়। স্ত্রীর এ কথায় প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছেন ভদ্রলোক এবং এ নিয়ে একটু কথ! কাটাকাটিও হয়েছে হুজনের মধ্যে। রাত ভোর হবার আগেই ভদ্রলোক সেই ষে বেরিয়ে এসেছেন শ্বশুরবাড়ি থেকে আর সে পথে নাকি এগোন নি কোন দিন। ওঃ, “তার জেরই বুবি চল্ছে আজ অবধি। ভারি সে্টিমেপ্টাল তে৷ ভদ্রলোক ! স্ত্রীর কথায় কেউ যে এমনি পাগল হয়ে যেতে পারে ভাবতেই পারে না শংকর আনন্দ উৎসবের দিনে স্ত্রীর কাছ থেকে ওরকম কথা শুনলে যে কোন লোকেরই শকৃড্‌ হবার কথা । নিজের চারিত্রিক অধঃপতনের জন্তে বেচারা হয়তো এমনিতেই মনমরা হয়ে পড়েছিলেন। তার ওপর বেকার জীবনের লাঞ্ছনা ও অপমান । এসব সাত পাঁচ চিস্তা করতে করতেই ভদ্রলোকের মাথাটা হয়তো খারাপ হয়ে গিয়ে থাকবে ।-_ আর একজন বলেন এ কথ!। দত - ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেট সতীশ রায় রিটায়ার করেও বছর হুই ছিলেন ঢাকায়। যুদ্ধ শেষ হবার পর কোলকাতায় বাড়ি করে তিনি চলে আসেন বেলগেছেতে । ছেলের জন্তে অশান্তির শেষ ছিল না রায় মশাইয়ের । বনু খরচ-পত্র করেও কোনই ফল পাননি। চরম অশান্তি নিয়েই তিনি মারা গেছেন বছর ছুই আগে ।__চরণদাস তার গল্প শেষ করে এই বলে। বৃ্টি ভালো করে থামতে না থামতেই দোকানে খদ্দেরদেরও ভিড় জমে উঠেছে ততক্ষণে । এদিকে শংকর ফিরে যেতে যেতে শুনতে পায় প্রমীল রায় তখনও বেশ জোরে জোরেই আবৃত্তি করে চলছেন £ উইমেন আর এঞ্জেলস্‌ উইংস্****. মেন প্রাইজ দি থিঙ. আনগেইনড. মোর দ্যান ইট ইজ । তারপর আবার বলেন £$ অলমোষ্ট এভ.রিবডি ইজ আন্এম্প্রয়েড টুডে। ডোন্ট ওরি । বেকার জীবনের ব্যথা যে কী শংকর তা ভালো করেই জানে। আজে! যে তার একটা ইণ্টারভ্যু রয়েছে বেল! ছটোয়। আর সবগুলোর মতোই এরও যে কী ফল হবে সে বিষয়েও সে এক রকম নিঃসন্দেহ। কাজেই প্রমীল রায়ের অবস্থাটাই বার বার ভেসে ওঠে তার মনে। ৪১ মূল্য বাতাসে তখন ভীষণ ঝড়। মহা সমন্যায় পড়ে যান কেদার সামস্ত। কী করে যে বাড়ি ফিরবেন শুধু সে চিস্তাই নয়, কখন কার সঙ্গে আবার এই বে-পাড়ায় হঠাৎ দেখা হয়ে যায় সেই ছৃশ্চিস্ত। ! জানালার একটি পাট সামান্য একটু ফাক করে বাইরের অবস্থাটা একটু বুঝে নেবার চেষ্টা করেন সামস্ত। কিন্ত আকাশে বিছ্যতের সে কী দারুণ আস্ফালন! বুটি তো আছেই । নিরুপায় হয়ে তাই বসে পড়তে হয় তাকে । মামলার ব্যাপারে বাড়িটা যতোটুকু দেখেশুনে নেওয়া দরকার তাতো অনেক আগেই শেষ করে ফেলা হয়েছে। কিন্ত সাবিত্রীর মা নাছোড়বান্দা, কিছু না খাইয়ে ছাড়বে না। সেই ভোজন-পর্ব সমাধা করতে যেয়েই এই বিপদ। খেতে বসে সামন্ত কেবলি ভাবছিলেন সাবিত্রীর মায়ের কথা । সাধারণ বেশে লালপেড়ে গরদের শাড়ি পরে গীতা পাঠ! পুজোর আসনেই নাকি প্রায় সর্বক্ষণ বসে থাকে আজকাল । দোতলা থেকে নীচে নামার সাধ্য নেই। তাই ওপরে যেয়েই তার সঙ্গে দেখ করতে হয়েছে সামস্তকে। একে বয়েসও হয়েছে অনেক, তার ওপর আবার নিষ্নাংগ অবশ । এ অবস্থায় দোতলা-একতলা করা সম্ভবও নয়। আর সর্বাগ যে অবশ হয়ে যায়নি তাই রক্ষে। ও দেহের ওপর দিয়ে কতো রকমের ঝড় গিয়েছে সারা জীবন ধরে! এখন পুজোআর্চায় দিন কাটিয়ে যদি কিছু পাপ কাটে ! [০ সে যাহয় হবে। কিন্তু চায়ের কাপ শেষ না হতেই অকম্মাৎ কোথা থেকে যে এই ঝড়ের আবির্ভাব ঘটলো তাই ভেবে পান না সামস্ত। এরকম মুক্ষিলে এর আগে আর কোনদিন পড়েছেন বলেও তিনি মনে করতে পারেন না। তবু ভালো সাবিত্রী ওপরে চলে গেছে ঘরদোর গোছাতে বা অন্ত কোন কাজে । বাইরের কেউ হঠাৎ এসে পড়লে আর সাবিত্রীর সঙ্গে এক একা তাকে গল্প করতে দেখলে কী ধারণা হতে পারে যে কোন লোকের তা ভাবতেও যেন আতকে ওঠেন সামস্ত। তবে এই দারুণ দুর্যোগে কেউ হয়তো আর এ সময়ে আসবে না বা আসতে সাহস করবে না, এই বলে মনকে খানিকটা আশ্বস্ত করে নিয়েছেন তিনি। এই প্রসংগে তার কবিবন্ধু সনাতন চক্রবর্তীর কিছুদিন আগেকার একটি স্মরণীয় বাণীও হঠাৎ মনে পড়ে যায় সামস্তর ৷ চক্রবর্তী বলেছিলেন, “এমনি স্থনামের পুজি করে বসে আছ ভায়া যে, এখন যদি তুমি একদম বকেও যাও তবু কেউ তা বিশ্বাস করবে না। আর আমার এমন পোড়া কপাল, আমি দেবতা সাক্ষী করে চৌদ্দ পুরুষের নামে দিব্যি দিয়েও যদি পঞ্চ “ম'-কার ত্যাগের প্রতিজ্ঞ করি তা হলেও আমার মাতাল আর ছুশ্চরিত্র নাম ঘচবে না” চারিত্রিক স্থনাম রক্ষায় কেদার সামস্তর অত্যধিক সতর্কতা ও সর্বক্ষণ সাবধানতার জন্যে ঠাট্টা করেই সেদিন এ কথাটা কথায় কথায় বলেছিলেন সনাতন চক্রবর্তী । কিন্তু চারিত্রিক স্থনাম রক্ষায় এতো! সতর্কতা সত্বেও সামস্তকে যে অন্ত কোন্‌ আকর্ষণ এই কুখ্যাত অঞ্চনে টেনে নিয়ে আসতে পারে তা কিন্তু তার বন্ধু মহলেও অজ্ঞাত । ৯৩ টাকা পয়সা বা অন্ত কোন লোভ দেখিয়েও সামস্তকে কেউ কোনদিন এ সব এলাকায় আনবার চেষ্টা করে নি। কাজেই আজ যে তিনি নিছক ব্যবসার খাতিরেই এখানে এসে আহার বিহার ও গালগল্প সুরু করে দিয়েছেন একথা কে সহজে বিশ্বাস করবে? তাছাড়া পয়সার লোভে তাকে এ পাড়ায় আসতে হয়েছে বলেই যে এই রাত্রিতে এতোক্ষণ ধরে এখানে থাকতে হবে, একথাটা ভাবতেই ভারি বিশ্রী লাগছে তার! এর আগের মামলাটাও সাবিত্রীর হয়ে লড়েছিলেন কেদার সামস্ত। সে মামলায় জিতেওছিলেন। নতুন গয়না তৈরির টাকা দেওয়া না দেওয়া! নিয়ে ঝগড়া বেধে গিয়েছিল স্তাকরার সঙ্গে। সাবিত্রী বলছে একশ টাকা সে আগাম দিয়েছে । কিন্তু স্তাকরা বলছে কোনও আগামই দেওয়া হয় নি। বাদান্ুুবাদের স্থুরু হয়েছিল এই নিয়ে । সে ব্যাপারটাকে কোর্ট পর্যস্ত গড়াতে দেবার ইচ্ছে ছিল না সাবিত্রীর । সাবিত্রী নিজেই বলেছে এ কথা কেদার সামস্তকে । একশ টাকা কী এমন একটা ব্যাপার যার জন্তে মামলা মোকদ্দম! করে সময় ও ্থাস্থা নষ্ট করতে হবে? এই ছিল সাবিত্রীর মনের কথা। কিন্তু স্তাকর! তর্কবিতর্কে মাথা গরম করে এমন ছ একটা অশ্লীল কথা বলে ফেলেছিল এবং সাবিত্রীর চরিত্রের ওপর ইংগিত করেছিল যা আর সহ্য করা সম্ভব হয় নি সাবিত্রীর পক্ষে । স্তাকরাকে সায়েস্তা করার জন্যে তাই ভীষণ জেদ চেপে গিয়েছিল তার। কেদার সামস্তকে দিয়ে একটা পেটি কেস ঠুকে দিয়ে সেবার সে বুঝিয়ে দিয়েছিল স্তাকরাকে যে তার ক্ষমতা কতো । সেই পেটি কেসের ব্যাপার নিয়েই সাবিত্রীর সঙ্গে সামস্তর প্রথম পরিচয় । ক অন্নীল কথায় অরুচি ও চরিত্রের ওপর ইংগিত করায় বিরক্তি, একজন গণিকার পক্ষে এ যে কী করে সম্ভব হতে পারে সামস্ত সেদিন অনেক ভেবেও এর কোন কুল কিনারা করতে পারেন নি। বরং মনে মনে হাসিই পেয়েছিল সাবিত্রীর জেদ দেখে । সামান্ত একশ টাকার জন্তে যে মানুষ স্ত্রীলোকের সম্মান রেখে কথা বলেনা তাকে ভালোভাবে শিক্ষা দিয়ে দেওয়া দরকার । একজন পতিতার মুখে এরূপ নীতিকথ! অস্বাভাবিক শোনায় বৈকি! তবে পতিতা হলেও নাম যে তার সাবিত্রী। নামের সঙ্গে কথার সংগতি একটু থাকবে না? আর বাইরে সতীত্বের একটা বোরখ! রেখে চলতে পারলে যদি তাতে লাভের আশা বেশি থাকে তাহলে সে স্থুযোগটাই ব1 সাবিত্রী কাজে লাগাবে না কেন? তবে এটা কিন্তু বেশ লক্ষ্য করার বিষয়! সাবিত্রীর বৈঠকখানায় বসেই সাবিত্রী সম্বন্ধে ভাবতে থাকেন কেদার সামস্ত। দেখতেও যেমন, চীল-চলনে এবং কথাবাত্তায়ও ভারি ভদ্র কিন্ত সাবিত্রী । কোর্টে হাকিমও সাবিতীকে প্রথমটায় বিশ্বাস করতে চান নি গণিক। বলে। খুব উচুদরের ভদ্রঘরের মেয়ে বলেই মনে হয়েছিল তাকে । হাকিম তাই তার উকীলকে বিস্মিত হয়েই জিগ্যেস করেছিলেন সাবিত্রী সম্বন্ধে । উকীল কেদার সামস্ত নিরুপাঁয়। সাবিত্রীর সত্য পরিচয়ই দিতে হয়েছিল তাকে! গশিকা-কম্ঠার পক্ষে তার জন্মগত বৃত্তি এড়িয়ে চল! যে বড়ো সহজ ব্যাপার নয়, সে কথাটাই বলেছিলেন সামস্ত। তাতে ফল খারাপ হয় নি। বরং ভালোই হয়েছিল একদিক থেকে । হাকিমের সহানুভূতি পুরোপুরি সাবিত্রীর নর দিকেই এসে গিয়েছিল । রায়ও হয়েছিল তার পক্ষেই । তার ফলেই তো এবারকার মামলাও 'সামস্তকেই হাতে নিতে হয়েছে! লোকনিন্দার ভয়ে এড়িয়ে যাবারই চেষ্টা করেছিলেন সামস্ত। কিন্তু সাবিত্রীর গীড়াগীড়িতে আর তা সম্ভব হয় নি। তবে মামল হাতে নিলেও মন থেকে ভয় কাটে নি। বড্ড ছোঁয়াচে জাত যে ওরা! তার ওপর আবার রামবাগানে পাবিভ্রীদের বাড়িতে এসেই উঠতে হয়েছে একেবারে ! ভয় থাকবে না তো কী! বৃদ্ি থেমে গেছে, উকীলবাবু! বৈঠকখানায় ঢুকে সামস্তকে বলে সাবিত্রী । মেহগনি কাঠের শেলফ থেকে একখানা বই টেনে নিয়ে দেখছিলেন সামস্ত। তন্ময় হয়ে দেখছিলেন । সমস্ত ভয়- ডরের কথা যেন তুলেই গিয়েছিলেন কিছুক্ষণের জন্য! বঙ্কিমচন্দ্র রবীন্দ্রনাথ ও শরৎচন্দ্রের প্রায় সমস্ত বইই ভারি সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা হয়েছে শেলফে । এমন কি স্বামী বিবেকানন্দর বইও ছু-চারখানা । ইংরেজী বইও যে নেই, তাও :নয়। কিন্ত কেন? এ বাড়িতে আবার বই পড়তে কে আসবে? সাবিত্রীরই পড়ার অভ্যাস আছে নাকি ? পর পর অনেকগুলো জিজ্ঞাসাই উকি মারে সামস্তের মনে। ঠিক তেমনি সময়েই সাবিত্রী এসে এক ডাকে চমক ভেংগে দেয় সামস্তর | এই যে, তুমি ভাকছো ! হ্যা, বুদ্ি তো থেমেই গেছে দেখছি । এবার ধীরে ধীরে কেটে পড়া যাক তা হলে। আবার কখন ঝড় বাদল! নেমে আসবে বলা যায় না তো কিছু। এ দেখ, আকাশের মেঘ এখনো কাটে নি।-সামস্তর কথায় ডি সাবিত্রী আকাশের ০০০০০ ঠিকই বলেছেন উকীলবাবু। সামস্ত মশাই, আপনাকে এভাবে যেতে দেওয়া হবে না । আর একটু বন্থুন, দেওকীপ্রসাদজীর গাড়ি এক্ষুনি এসে পড়বে । 'সে গাঁড়িতেই আপনাকে পাঠিয়ে দেওয়া যাঁবে। আর যদি খুব তাড়া থাকে আপনার, তা হলে একটা ছাতা নিগ়্ে যান অস্তত | না, না, আমাকে এখুনি যেতে হবে । আর একটুও দেরি করা চলবে না। বাড়িভে হয়তো! কতো! মক্েল এনে বসে আছে, গিয়ে দেখবো । দাও, একট! ছাতাই আনিয়ে দাও, এখনে ঝির্‌ ঝির্‌ করে বৃষ্টি পড়ছে দেখছি ।-_-জানালার বাইরে 3! হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বৃষ্টির অবস্থাটা অনুভব করে নেন সামস্ত। এই ভজা, উকীলবাবুর জন্যে একট! ছাতা নিয়ে আয় তো তাড়াতাড়ি ।_বাইরে থেকে এক ঠোঙা ভাজাভুজি কিনে নিয়ে এসে দোতলার দিকে দৌড়ে উঠতে যাচ্ছিল এক- হাত-কাট! ভজা চাকর । তাকে দেখতে পেয়ে সঙ্গে সঙ্গেই আদেশ করে সাবিত্রী । কিন্ত যাই বলেন উকীলবাবুঃ আমার মনে হয়ু গাড়িটাড়ি কিছুই পাওয়া যাবে না এখন । আর একটু দেরি করে গেলেই পারতেন। দেওকীপ্রসাদজী এই এলেন বলে। রাত দশটা বাজতেই তিনি এসে পড়েন ।--দাবিত্রী আবার আটকাতে চায় সামস্তকে । কিন্ত সামন্ত তে! দেওকীপ্রপাদের নাম শুনেই আতকে ওচঠন। তত্ব এক বড়! মকেলও তো আছে ঠিক এই নামের । যদি সেই লোকই হয়ে বসে তা হলে উপান্ন! কে তোমার এই দেওকীপ্রসাদজী, বল তে ।--সামস্ত জিগ্যেম করেন । | ৯৭ আরে আপনি দেওকীপ্রসাদজীর নাম শোনেননি উকীল বাবু! যুদ্ধের বাজারে স্ত্র/াপ আইরণের কারবারে বন্থৎ টাকার মালিক হয়েছেন ঘিনি। বেলুড়ে বিরাট তার কারখান।। আমার যে তিনি বাঁধা খদ্দের | ব্যাস, আর শোনার দরকার নেই কিছু। ঠিকই সেই লোক। তারই মক্কেল। কিন্তু ভার যে এবিঘ্ে আছে, এ পাড়ায় আনাগোনা আছে, তা তো জানা ছিল না সামস্তর ! যাকৃগে, মানে মানে সরে পড়াই ভালো । দেখা হয়ে গেলে সে আবার তাকে তার প্রতিদ্বন্থী না ভেবে বসে!- সামস্ত যখন এ ধারায় ভেবে চলেছেন ঠিক সেই সময়ই ভজা একটি ছাতা নিয়ে এসে তার সামনে হাজির। বেশ এবার যাই তা হলে ।__সামস্ত উঠে পড়েন। এই যে আপনার যাবার ভাড়াটা !-_সাবিত্রী তার মুঠে। খুলে দশ টাকার একটি নোট এগিয়ে দেয় উকীলবাবুর হাতে । তারপরেই জিগ্যেস করে, আচ্ছ! আপনি কী ভাবছিলেন যেন? না, তেমন কিছুই নয়। এ বইগুলো দেখে তোমার পড়াশুনোর দিকে খুব ঝোঁক আছে বলে মনে হলো ।-_ দেওকীপ্রসাদজীর প্রসংগটা আর না তুলে কথাটা ঘুরিয়ে নেন সামস্ত। ৃ হয, উকীলবাবু ! ছোট বেলা থেকেই বই পড়তে আমার খুব ভালো লাগে। মা আমায় কলেজ অবধি লেখাপড়াও করিয়েছিলেন । বি-এ পাশ করবো, খুবই ইচ্ছে ছিল আমার । কিন্ত বলেই থেমে যায় সাবিত্রী। তার চোখ ছল্‌ ছল্‌ করে ওঠে। বৃন্তিগত ব্যবসাই যে বাধা হয়ে ধাড়িয়েছে সাবিত্রীর শিক্ষার পথে, এ কথাটা ধরে নেন সামস্ত। 0 সাবিত্রী তবু বলে, মা-ই আমায় উৎসাহ দিয়েছিলেন লেখাপড়া শিখতে । আই-এ পাশ করার পর তারই উতসাছে বি-এ ক্লাশে ভতিও হয়েছিলাম । কিন্তু কিছুদিন যেতেই লক্ষ্য করলাম, ক্লাসে যেন সবাই আমায় এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে । আমার সন্দেহ হলো, আমার পরিচয়টা হয়তো জানাজানি হয়ে গিয়ে থাকবে, তাই এ অবস্থা । মনে খুব দাগা পেয়েছিলাম সে সময় । তবু সে ব্যথাকে বুকে নিয়েই ক্লাস করে চলছিলাম। মাঝে মাঝে মনে হতো, সহপাঠিনীদের মধ্যে অনেকেই তো আই-এ ক্লাসে আমার সঙ্গে পড়েছে। তাদের সবার কাছ থেকেই তো বন্ধুর মতো ব্যবহার আমি পেতাম। সে ব্যবহার আর তাদের কাছ থেকে পাওয়! যায় না কেন, প্রথম প্রথম তা দেখে আমি বিশ্মিত হতাম। কিন্তু পরে আমি নিজের যুক্তি দিয়েই সব দিক বিচার করে এর কারণ বার করে নিয়েছি । বি-এ ক্লাসের সব ছাত্র-ছাত্রী সবাই মোটামুটি বেশ বয়স্কা। আমার পরিচয়টা জানাজানি হবার পর আমার সঙ্গে মেলা- মেশায় তাদের মনে একটা সামাজিক ভয় দেখা দেওয়া হ্বাভাবিক। তাদের অভিভাবকদের দিক থেকেও বাধা- নিষেধ এসে থাকতে পারে । এমন কি কলেজ কর্তৃপক্ষ বা অধ্যাপকদের তরফ থেকে আমার সম্পর্কে ছাত্রীদের প্রতি সতর্ক ও সাবধান হবার উপদেশ বা নির্দেশে আসাও অসম্ভব কিছু নয়। এই ধরুন না কেন, আপনার মতো একজন প্রবীণ ও বিজ্ঞ লোককেও যখন একটা মামলার কাজে এ বাড়িতে আনতে এতো। অনুরোধ উপরোধের প্রয়োজন হয়েছে তখন ভত্রঘরের বয়স্ক মেয়ের আমার সহপাঠিনী হলেও সমাজের ভয়ে আমাকে যে এড়িয়ে চলবার চেষ্ট। করবে তাতে আর আশ্চর্য কি! টির আরে, এর মধ্যে আবার আমায় টেনে আনছো কেন তুমি?__ উকীলবাবূ একটু হকচকিয়ে ওঠেন নিজেন প্রনংগ এসে পড়ায় । না, না, সেজন্যে আপনাকে কিছুই বলছি না আমি। সবাইকে বাদ দিয়ে তো আর আপনি নন। সমাজের দশজনের একজন আপনি । কাজেই আমাদের এ অবস্থার জন্যে ছ চারজনকে দায়ী করে কোন লাভ নেই, দায়ী সকলে । এমন কি আমার মাও। কারণ শেষ পর্যন্ত মা-র কথাতেই আমাকে কলেজ ছাডতে হয়েছে । ও, পড়াশুনো একেবারেই ছেড়ে দিয়েছ তা হলে ?-_উকবীল বাবুর জিজ্ঞাসায় আক্ষেপের সুর । হ্যা, তা ছাড়! আর উপায় কী? মা-র উপার্জনের বয়েস গিয়েছে বলে তিনি যেদিন আমায় অর্থোপায়ের পথে টানলেন সেদিনই আমার মনে হয়েছিল যে, এ পরিবেশ থেকে পরিত্রাণের পথ খুঁজে বার করা বড়ো সহজ নয়। ওসব কথা থাক এখন। কার দায়িত্ব কি, ছু-চার কথার আলোচনায় তা মীমাংসা হবার নয়। আমার ভারি সখ, রবীন্দ্রনাথের একটা গান বা কবিতা যা তোমার ইচ্ছে আমায় একটু ব্যাখ্যা ,করে শোনাও। তুমি কেমন পড়াশুনো কর তারও একটা পরীক্ষা হয়ে যাবে, আমারও একটু রবীন্দ্র-কাব্য শোনা হবে ।-এই বলে টি-পয়ের ওপর থেকে গীতাঞ্জলিখান তুলে নিয়ে সামস্ত এগিয়ে দেন সাবিত্রীর হাতে। সেল্ফ থেকে এনে কুশন চেয়ারে বসে বসে আগে থেকেই তিনি নাড়াচাড়া করছিলেন এ বইখানা । আমার মাথ| নত করে দাও হে তোমার চরণ-ধুলার তলে ।-_ সাবিত্রী গীতাঞ্জলি থেকে রবীন্দ্রনাথের এই গানটি আবৃতি ও ব্যাখ্যা করে শোনায় উকীলবাবুকে | রঃ এ ৯*০ ১৬ তোমার এ ব্যাখ্যা শুনে আমার শুধু এ কথাই বলতে ইচ্ছে হয় সাবিত্রী, রবীন্দ্রকাব্যের এমন অনুভূতি রয়েছে যার মধ্যে, তার জন্যে তো এ পথ নিদিষ্ট হতে পারে না, তার জীবন-পথ যে সম্পুর্ণ ভিন্ন! সাবিত্রী স্তব্ধ হয়ে যায় সামস্তর কথা শুনে। মুখ ফুটে কথা বেরোয় না খানিকক্ষণ । আচ্ছা, এবার যাই তা হলে। এ মামলায়ও নির্ধাত জিত তোমাদের । এই বলে ছাতাটা খুলে নিয়ে সিড়ি বেয়ে নেমে পড়েন সামস্ত। তাই যেন হয় উকীলবাবু। নমস্কার !-_হাত জোড় করে নমস্কার জানিয়ে সামস্তকে বিদায় দেয় সাবিত্রী ৷ সত্যি সত্যি তাই হয়। সাবিত্রীদেরই জিত হয় মামলায় । বাড়ি পার্টিশানের মামলা । সাবিত্রীর মাসি হেরে যায়। মা ও মাসির মধ্যে ঝগড়। বেধেছিল একখানা ঘর নিয়ে। মামলা! না করে তার মীমাংস| সম্ভব ছিল না । সাবিত্রীর ঠাকুরমার আমলের বাড়ি। সাবিত্রীর মা ও মাসি এক সঙ্গেই জাত ব্যবসা চালিয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। কিন্তু মাসির মেয়ে ছটি ব্যবসায়ে নামার পর থেকে ঝগড়া-ঝাঁটি প্রায় লেগেই ছিল ছু দলের মধ্যে । এদিকে সাবিত্রীর মার শরীরের অবস্থা যা দাড়িয়েছে তাতে হঠাৎ তার কিছু একটা হয়ে যাওয়া মোটেই বিচিত্র নয়। তা হলে মেয়েটা বিপদে পড়বে, মাসির সঙ্গে বোঝা- পড়ায় জুৎ করে উঠতে পারবে না, এই মনে করেই আদা- লতের আশ্রয় নিয়ে অস্তত বাঁড়িটার ব্যাপারে একটা ফয়সালা করে ঘায় সাবিত্রীর মা। | বাড়তি ঘরটা মোক্ষদা সুন্দরী অর্থাৎ সাবিত্রীর মার ৯০৯ ভাগেই পড়েছে। কারণ মোক্ষদা হুন্দরী তার ছোট বোন সারদা সুন্দরীর অনেক আগেই ব্যবসায়ে নেমেছে এবং সারদা ব্যবসা আরম্ভ করার আগেই এ বাড়ি তৈরির কাজও শেষ হয়েছে। সামন্ত প্রমাণ করেছেন যে, এ বাড়ি তৈরি করতে মোক্ষদাকে অনেক টাকা দিতে হয়েছে। কারণ মোক্ষদার মা তখন বৃদ্ধা, আয় তখন তার নেই বললেই চলে, আর মোক্ষদার আয় দিন দিন বেড়েই চলেছে । অথচ সারদার উপার্জনের বয়েসই হয়নি তখনো পর্যস্ত। কাজেই বাড়তি ঘরটা সারদার ভাগে কোন রকমেই পড়তে পারে না এবং এঁ বাড়তি ঘর ছাড়া যদি আর একখানা ঘরও মোক্ষদাকে দেওয়া হয় তাহলেও তা অন্যায় হয় না। সামস্তর এই ক্ষুরধার যুক্তিকে মেনে নিয়েই হাকিম রায় দিয়েছেন মোক্ষদার পক্ষে । এ মামলার পর অনেকদিন কেটে যায়। সাবিত্রীদের আর কোন খোঁজ খবরই রাখেন না সামস্ত। নিজের বয়েস হয়েছে । কাজ-কর্মে ভাটা পড়ে এসেছে । হঠাৎ একদিন সকালবেল! একখানা নেমন্তন্ন চিঠি হাতে নিয়ে সাবিত্রী নিজেই এসে হাজির সামস্তর বৈঠকখানায় । সামস্তকে একেবারে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে সাবিত্রী । কীব্যাপার, কিসের এ নেমস্তন্ন ?--সাবিত্রী আবার ঘর- সংসার পেতে বলতে যাচ্ছে কিনা, তেমনি একটা সন্দেহ দেখা দিচ্ছিল সামস্তর মনে ন্মস্তমের রকম দেখে । না, ব্যাপারটা কিছুই নয়। আপনার কথাই ঠিক উকীলবাবু! আমার মা-ঠাকুমার পথ আমার পথ নয়। আমার জীবন-পথের সন্ধাদ আমি পেয়েছি । ১৩৭ এসব কী বলছো সাবিত্রী!_ খুশিতে বিস্ময়ে যেন ভেঙে পড়েন সামস্ত। তাড়াতাড়ি চিঠিটা খুলে দেখেন, তিন লক্ষ টাকা! ব্যয়ে পতিতা, লাঞ্ছিতা ও সমাজ-পরিত্যক্তাদের শিক্ষাদানের জন্যে “মোক্ষদা বিগ্যাভবন, প্রতিষ্ঠায় উদ্ভোগী হয়েছে সাবিত্রী । তার মা-র ওতার নিজের সমস্ত সম্পত্তি সে উৎসর্গ করেছে এই মহৎ কাজে! আর এ প্রতিষ্ঠানের চলতি খরচ বহনে প্রতিশ্রত হয়েছেন দেওকীপ্রসাদজী । এ জন্যে পীচ লক্ষ টাকার একটি ভাণ্ডার তিনি প্রতিষ্ঠা করবেন। এতো! বিরাট ব্যাপার সহজে যেন বিশ্বাস হতে চায় ন। সামত্তর । দেওকীপ্রসাদকে তুমি কিভাবে যে এতোটা হাত করলে তাই আমি কেবল ভাবছি মা! তার হাত থেকে বড়ো সহজে তে। টাক গলে না !__এই বলে আরো কথা বার করবার চেষ্টা করেন সামস্ত । সাবিত্রী বলে চলে সেই বর্ষণমুখর সন্ধ্যার শেধাংশের কাহিনী ঃ সেদিন আপনি আমাদের বাড়ি থেকে চলে আসার আট দশ মিনিট পরেই দেওকীপ্রসাদজীর গাড়ি এসে উপস্থিত । এঁ কয়েক মিনিটের মধ্যেই আমার জীবনের শতিও এক রকম স্থির হয়ে গেছে। অন্ঠান্ত দিনের মতো সাদর অভ্যর্থন! না পেয়ে দেওকীপ্রসাদজীর মনের অবস্থা যে মে সময় কী দাড়িয়েছিল তা আমি ঠিক ঠিক বলতে না পারলেও এ আমি লক্ষ্য করেছিলাম যে, কেমন একটা আতংক ও হতাশায় তিনি যেন বিষুঢ হয়ে পড়েছিলেন । আমার দেহ স্পর্শ করার সাহস আর হয়নি তীর সেদিন থেকে । তবু তিনি এসেছেন । আমায় না দেখলে সব কিছুই নাকি ব্যর্থ বলে মনে হয় তার কাছে। তাই আমায় দেখবার স্থযোগ থেকে আমি কোনদিন বঞ্চিত করিনি তাকে। ৯ সাবিত্রী একটু থামে । তারপর আবার বলতে শুরু করে £ মা ভাবতেন আমার বাঁধা ব্যবসা ঠিকই চলেছে। কিন্তু দেহ ব্যবসার আকর্ণ থেকে আমি মুক্ত হয়েছি সেই বর্ষণমুখর সন্ধ্যা থেকেই। আপনার ছুটি কথাই আমায় সত্যিকারের জীবন-পথের সন্ধান দিয়েছে । তাই আপনাকেই প্রথম আমার প্রণাম জানাতে এসেছি আমার জীবনের আকাংক্ষিত কাজ আরম্ত করার আগে। আপনার আশীর্বাদ ও সহযোগিতা থেকে যেন কখনো বঞ্চিত না হই উকীল বাবু! আরে কী পাগলের মতো বলছো সাবিত্রী! এমন কাজে শুধু আমার কেন সবার কাছ থেকেই তুমি সমর্থন পাবে! তাই ষেন হয় উকীলবাবু ! নিশ্চয় হবে। ত হলেও আপনার সমর্থনই আমি প্রথম আশ] করছি। তার জন্তে একটুও ভাবতে হবেনা তোমায় সাবিত্রী! এষে কতো বড়ো মহৎ কাজে হাত দিয়েছ, তা নিজেই হয়তো তুমি বুঝতে পারছ না। এমনি কাজই তো আমি আশা করছিলাম তোমার, মতো! মেয়ের কাছ থেকে । সেদিন তুমি রবীন্দ্রনাথের একটি গানের "যে; ব্যাখা! আমায় শুনিয়েছিলে আজও আমি তা ভুলতে পারিনি । হ্যা যে কথাটা আমি জানতে চেয়েছিলাম, দেওকীপ্রসাদের কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা আদায়ের প্রতিশ্রতি তুমি কী করে আদায় করলে সেট! সত্যি একটা জানার মতো ব্যাপার বটে !-_এভাবে আবার সেই পুরোপণে! প্রসংগ তোলেন সামস্ত। ই্যা, আমারও বলতে গিয়ে সে কথাটাই বলা হয়নি৷ ইতিমধ্যে মাও মারা গেলেন। আর আমিও দেখলাম আমার পুর্ণ মুক্তির সময় আসম্ন। একদিন হুযোগ- বুঝে আমি বলেই ফেললাম দেওকীপ্রসাদজীকে যে, আমায় ৯৭৪ দেখবার জন্যে তাঁর যে তৃষ্চা সে তৃষ্কা মেটাতে হলে তার উপযুক্ত মূল্য দিতে হবে তাকে। মুখের ওপর বলতে পারলে তাকে এমনি কথা 1 সবিন্ময়ে প্রশ্ন করেন উকীলবাবু ৷ তার উত্তরে কী বল্লেন দেওকী প্রসাদজী, তাও জানতে চান তিনি । কতো মূলা দিতে হবে, সে প্রশ্ন দেওকীপ্রমাদ জিগোস করলেন আমাকে । উচ্চ শিক্ষা লাভে বার্থ হয়ে জীবনে আমি যে বাথ! পেয়েছি এবং সে অবস্থার প্রতিকারের জন্তে আমি যে পরিকল্পনা করেছি তার সব কথাই আমি তখন খুলে বলি তাকে । তিনিও আমায় পূর্ণ সমর্থনের আশ্বাস দেন সঙ্গে সঙ্গে ৷ কিন্তু শুধু আশ্বীসের ওপর নির্ভর করলে ঠকতে হতে পারে সাবিত্রী ।--দানস্ত তার অভিজ্ঞতা থেকে সাবধান বাণী উচ্চারণ করেন এই বলে। শুধু আশ্বাসের ওপর আমি নির্ভর করে নেই উকীলবাবু ! দলিলপত্র সব তৈরি । আসছে বুধবার বিষ্ভাভবনের উদ্বোধন সভাতেই দেওকীপ্রসাদজী তার পাঁচ লক্ষ টাক! দানের কথা ঘোষণা করবেন । তিনিই তো আমাদের বি্ভাভবন*্পরিচালক সভার নভাপতি। এবার তাহলে দেখছি, দেওকীপ্রসাদের একটু নাম যশের দিকেও লোভ গিয়েছে । তা কতোটা ঠিক জানিনে। তবে আমায় না দেখে নাকি তার পক্ষে বেঁচে থাকাই অসম্ভব । বেঁচে থাকার জন্যে মাত্র পাচ লক্ষ টাক! দর্শনী, ওর কাছে ত| আর এমন কী বেশি, বলুন ! মোটেই নয়! মোটেই নয়! এমন একটা বড়ো কাজে. হাত দিয়েছঃ যতো প্রয়োরঞ্জষ আর যতে। পারো আদায় ১৬৫ করে নাও দেওকীগ্রসাদের কাছ থেকে। অন্তত কিছু টাকা উার সং কাজে ব্যয় হোক!-_সামস্ত শুভেচ্ছা জানায় এই বলে। সাবিত্রীও তার প্রণামের সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতার প্রার্থনা জানিয়ে বিদায় নেয় উকীলবাবুর বৈঠকখানা থেকে অজ্ঞাতবাস স্বর্কার বেণী দত্ত অবস্থাপন্ন না হলেও অভাবে পড়ে নি কোনদিন । সোনারূপোর দৌকান বেণীর বাড়ির সঙ্গেই । বাপ- ঠাকুদা যেমন ঘরে বসে বসে ব্যবসা চালিয়ে গেছেন, বেণী দত্তরও ঠিক তেমনি ভাবেই চলছিল । কিন্ত হঠাৎ থোক টাকার লোভটাই সব কিছু বানচাল করে দিলে। নতুন রাস্তা বার কর! হবে শহরে। প্রশস্ত রাজপথের ছক কাটা হয়েছে। বেশী দত্বর দোকানঘরও পড়ে যায় সেই প্রস্তাবিত রাস্তার ওপর । যথাসময়ে উচ্ছেদের নোটিশ আসে। অবশ্য তার সঙ্গে ক্ষতিপূরণেরও আশ্বাস থাকে । স্ত্রী যশোদার সঙ্গে ঘন ঘন পরামর্শ করে বেণী । এক সঙ্গে চার হাজার টাক! পাওয়া গেলে অন্তত বড়ো একটা সমহ্যার সমাধান হয়ে যায়। মেয়েটা ডাগর হয়েছে । ওকে নিয়ে মহা হুশ্চিস্তা বাপ- মায়ের । | ছেলেছোকরাদের যে নজর পড়েছে স্মতির ওপর কদিনই যশোদা বলেছে দে কথা বেণীকে। এ অবস্থায় মেয়েটাকে যতো শীগ গির পরের ঘরে তুলে দেওয়া যায় ততোই ভালো । সমস্তা হলো! একটি ন্ব্কার সুপান্র খুঞ্জে বার করা। টাকা হাতে থাকলে স্থপাত্র পাওয়াও খুব কঠিন হবে না। এইভাবে চিস্তা করে স্থামীন্ত্রী ঠিক করে ফেলে যে, ১০৭. চার হাজার টাক! ক্ষতিপূরণ নিয়ে দোকানঘর ও বসতঘর ছই-ই তার। ছেড়ে দেবে। দোকানঘবর ছাড়তেই হবে। তার জন্টে ধার্য করা হয়েছে দেড় হাজার টাক ক্ষতিপূরণ । আর বসতঘর ছাড়লে আরো আড়াই হাজার টাকা বেশি পাওয়! যাবে, তবে সেটা ছাড় না ছাড়া বেশী দত্তর ইচ্ছাধীন। কারণ রাস্তার প্রয়োজনে শুধুমাত্র “যশোদা জুয়েলারি দোকানটা তুলে দিলেই চলে, দোকানের পিছনের বসত বাড়ি ভাঙার দরকার করে না। তবে দোকানের মালিকের যদি তাতে সুবিধা হয়, তা হলে ইম্প্রুভমেণ্ট ট্রাষ্ট তাতে রাজি বলেই বেণী দত্তকে হরকমের প্রস্তাবই দেওয়া হয়েছিল । কিন্তু দেড়হাজার টাকায় কি হবে? আগে কোথাও যেয়ে একটা দোকানঘর এবং তার সঙ্গে মাথ! গৌজবার মতো একটা ডেরা বাঁধতে হবে তো! তারপর মেয়ের বিষ়ে। কাজেই অন্ততপক্ষে চার হাজার টাকাই চাই। এইভাবে নান! দিক বিচার বিবেচনা করে বেণী দত্ত তার দোকানঘর আর পৈতৃক বাড়ি ছুই-ই ছেড়ে দেয় চার হাজার টাকার বিনিময়ে | বর্ধমান জেলার পাঁশকুড়া গ্রাম । যশোদার বাপের বাড়ি সে গ্রামে। কোলকাতা ছেড়ে বেণী সপরিবারে পাঁশকুড়ায় যেয়েই প্রথমে ওঠে । কিন্তু সেখানে বেশিদিন থাকা দত্তর মোটেই ইচ্ছে নয়। তার আত্মসম্মীনে বাধে শ্বশুরবাড়িতে বেশীদিন থাকতে । অবশ্য বেণীর . শ্বশুরবাড়ির লোকেরাই উঠেপড়ে লেগে যায় পাঁশকুড়ায় বেণীর বাড়িঘর তৈরি করার ব্যাপারে । তাদের উদ্ভোগেই গ্রাম্য জমিদারের কাছ থেকে নামমাত্র ৯০৮৮ খাজনায় জামানত বাসের জমি ও বিঘা দশেক ধানী জমির ব্যবস্থা হয়ে ধায় বেশীর জন্টে । ছ খানা ঘরের ছোট্ট বাড়ি ছাড়াও বাজারে একখানা দোকানঘরও তুলে নেয় বেণী দন্ত। তা না হলে চলবেই বা কেন? বসে বসে খেলে চার হাজার টাকা তো হাওয়ার মতে। উড়ে যাবে। পাশকুড়ায় এসেও দিন মোটামুটি একরকম কেটে যায়। তবে দোকান থেকে তেমন কোন আয় না হওয়ায় ঘষ্ের টাকা ভেঙেই সংসারের অনেক খরচ চালাতে হয়। নিজেদের জমির ধানে বছরে কোনরকমে ছ মাসের ব্যবস্থা হয়ে যায় বটে, কিন্তু বাকি ছ মাসের খোরাকি? আর সব জিনিষপত্তরও তে! বাজার থেকে ন| কিনলে চলে না । এভাবে হাতের টাক! ক্রমশই নিঃশেষ হয়ে আসে আর বেণা দত্তর হা-হুতাশও বেড়েই চলে । তামাপিতলের বাসনওয়াল! বাড়ির পিছনের রাস্ত৷ দিয়ে বাসন বাজিয়ে বাজিয়ে হেঁকে ধায়__থথাঁলা, বাটি, গ্লাস চাই-_-ঘটি কলসী, ডেকৃচি চাই ! হঠাৎ যশোদার সখ যায় একটা বাটি কিন্টতে। সে ডেকে আনে বাসনওয়ালাকে ৷ দরদন্তুর করে । এক টাক! ছু আনায় একটি সুন্দর বাটি পছন্দও করে ফেলে। ওগো শুনছো, তোমার জন্টে একটা বাটি কিনেছি । বাটি? আমার জন্তে বাটি! কেন কী হলো হঠাৎ 1 গৃহিণীর কথায় যেন চমকে ওঠে বেণী দত্ত । পুরুষ মানুষকে খাবারের পাতে কি আর সব জিনিষ দেওয়! ায়? তাতে খুবই অন্থবিধে হয় খেতে। তাই একট! মাছের ঝোলের বাটি ফিনলাম | দাম তো মাত্র এক টাকা ছ আনা । দাওন! দামটা, বাসনওয়ালাকে চুকিয়ে দিয়ে আলি । উৎৰ কী বল্ে। মাছের ঝোলের বাটি কিনেছ আমার জন্যে! এই বুড়ো বয়সে আমাকে খুশি করবার জন্ক্ে অন্ভুত সখ তো দেখছি ভোমার! সখের আবার কী দেখলে এতে ! আইবুড়ো মেয়েটা ঘরের মধ্যে ঢেঙা হয়ে উঠলে! চোখের সামনে, আর তুমি বাসনপত্র . কিনছো, এ সখ নয় তো কী? লজ্জা করে না তোমার কথ! বলতে 1--বেশী দত্তর ধমক খেয়ে যশোদা থতমত খেয়ে যায় প্রথমটায়, কিন্তু পরক্ষণেই গর্জে ওঠে_ লজ্জা কিসের, মেয়ে ডাগর হয়েছে সেকি আমার দোষ, না তোমার ? পাত্বর খুঁজে বার করবে তুমি, না সেও আমাকেই করতে হবে? আজ প্রায় তিন চার বছর হয়ে গেল পাঁশকুড়ায় এসেছ, বসে বসে তামাক টানা আর কেত্তন কর! ছাড়া আর কোন্‌ কাজটা করছো, শুনি ! খুব হয়েছে । থামো এখন। যা ইচ্ছে করে! গে, যাও। বেণীর চড়া স্বর নেমে আসে গিন্নীর কড়া কথায়। যশোদা কিন্ত থামে না তবু । বরং সপ্তমে উঠে যায় তার পর। « + থামবো কেন থামবো ? একট! দোকানঘর তুলে রেখেছো বাজারে । সেটাকে লোক-দেখানে। ব্যাপার ছাড়া আর কীইব। বলা যায়? মাসে ক'টা পয়স! এসেছে তোমার দোকান থেকে ? এখন মেয়ে বড়ে। হয়েছে বলে দোষ হলো আমার, লজ্জা হবে আমার, তাই না 1--বাঘিনীর মতো চোখ ছুটোকে বড়ে বড়ে। করে হাত নেড়ে নেড়ে এতোগুলে! ঝাজালে৷ কথা বেণী দত্বকে শুনিয়ে দিয়ে বাটিট। হাতে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে যায় যশোদা। বাসনওয়ালাকে মিষ্টি কথায় বাটিটা ফেরৎ দিয়ে ঘয়ে এসেই শুয়ে পড়ে আর রাগে গজরাতে খাকে । ৩১৭ ইদানীং বেণী দত্তর সক্ষে যশোদার এমনি ধরণের কথা কাটাকাটি প্রায়ই লেগে আছে। বুড়ো বয়সে একটা ছেলে হওয়ায় ঘশোদা আরো বিপাকে পড়েছে। কোন ঝগড়া-ঝাটির সুরুতেই এ কথাটা সে শুনিয়ে দেয় বেণীকে। এই শিশুটার দায়িত্ব ঘাড়ে না পড়লে সে নাকি ছ চোখ যেদিকে যায় সেদিকেই চলে যেতে! । এসব কথা শুনে শুনে কান ঝালাপাল। হয়ে গেছে বেণীর। বেণী তাই এখন আর বেশি সময় বাড়িতে থাকে না। দোকানেই কাটায় দিনের বারো আনা । ছেলে রতনকেও আজকাল দোকানে নিয়ে যায়। ভার বয়স এখন প্রায় বছর আটেক। সুমতির বিয়ের জন্যে এবার বেশ উঠেপড়েই লেগে যায় বেশী। সে আশা করেছিল, মামারাই উদ্ভোগী হয়ে মেয়েটার বিয়ের ব্যবস্থাদি করে দেবে। তার! এ-্গায়ের পুরোনো লোক, তাদের সমাজ রয়েছে আশপাশের গাঁয়ে, সকলেই তাদের জানাশুনো । কাজেই সে রকম আশ। করা বেশীর পক্ষে অন্বাভাবিকও কিছু নয়। মেয়ের বিয়ের জন্যে তাড়াহুড়ে। করার কারণ৪& আছে। হাতের টাকা! পয়সা প্রায় শেষ হয়ে এসেছে এ কয় বছরে । এখনো হাজারধানেক টাক! সম্বল আছে । তারও কিছু বেশিই আছে হয়তো । এ টাকাগুলে! থাকতে থাকতেই মেয়েটাকে কারুর হাতে গছিয়ে দিতে ন! পারলে আর উপায় নেই। ভাগ্যি নেহাতই ভালে। মেয়েটার ! আকশ্মিকভাবেই একটা ছেলের খোঁজ পেয়ে যায় বেণী। গুসকর! বাজারের পুরোনো দোকানদার দীনবন্ধু দাসও জাতিতে সোনার বেণে। তার বড়ো ছেলে একটা পাশ ৯১৯ দিয়ে কোরকাতায় নামকরা কোন একটা সওদাগ্সি অক্ষিসে চাকরি করে। কথায় কথায় দীনবন্ধর সুখ থেকেই চি ট্রেন এই খবর | তাই শুনে বেণীই তার মেয়ের সঙ্গে দীনবদ্ধুর ছেলের সম্বন্ধের প্রস্তাব করে বসে। মেয়েটি সুন্দরী হলে এ প্রস্তাবে তার আপত্তি নেই কোন, এ কথা জানায় দীনবন্ধু । মেয়ে দেখার পর্ব শেষ হয়ে যায় নির্দিষ্ট দিনে । সম্বন্ধও একরকম স্থির হয়ে যায় উভয় পক্ষের সম্মতিতে । কিন্তু দেনাপাওনার বিষয় নিয়ে একটু গোলমাল দেখা দেয়। তবে বেশীর ধরাধরিতে শেষ পর্ষস্ত কাজে বাধা হয় না কোন । দীনবন্ধুর ছেলে সুরথের সঙ্গে সুমতির বিষে হয়ে যায়। বেশী দত্তকে কেবল এই কথ! দিতে হয় যে, পরবতাঁ তিন বতসরের মধ্যেই এক এক করে চুক্তির সকল সর্তই সে পালন করবে । কথায়ই বলে, হাজার কথা না পুরলে বিয়ে হয় না। বেণী তা হাড়ে হাড়েই বুঝে নিয়েছে মেয়ে বিয়ে দিতে গিয়ে । মেয়ের বাপ বলে প্রায় সব কথাই সে মেনে নিয়েছে । অনেক সময় সাধোর সীম! ছাড়িয়ে গিয়েও অনেক ব্যাপারে রাজি হয়েছে । ছেলেটা বড়ো হয়ে উঠছে, ভগবান নিশ্চয়ই মুখ তুলে চাইবেন, এই ভরস| ৷ কিন্তু মানুষ ভাবে এক হয় আরেক । স্মৃতির বিয়ের পর ক্রমান্বয়ে ছবছর ধরে দামোদরের সে কী বন্যা! বর্ধমানের গ্রামাঞ্চলে সে বন্তা যে ভুভিক্ষ স্থর্ি করে দিয়ে গেছে তাতে চুক্তি পূরণ কর! তে। দূরের কথা, বেশীর মতো লোকের পক্ষে প্রাণ নিয়ে বেঁচে থাকাই দায় । ৃ ৯৯ " হুখানার মধ্যে একখানা ঘর বেশী প্রথম বন্যার বছরেই বিক্রি করে দিয়েছে । সেই টাকা আর দোকানের দামাস্থ আয় দিয়ে আরে! একটা বছর কোন রকমে কেটে যায়। কিন্ত এবার আর সংসার চালাবার কোন পথই খু'জে পায় না বেশী । দীনবন্ধুর মুদদী দোকান । নিত্যকার প্রয়োজনীয় জিনিষ মজুত থাকে তার দোকানে । তার দোকানে কেনাবেচা চলেই, সেখানে খদ্দেরেব অভাব হয় না। কিন্তু আকালের দিনে মানুষ পেটের চিস্ত! করবে, না গহনার কথা ভাববে ? গত কয়েক বছরের চেষ্টায় বেণী ছু চারজন ভারি রকমের খদেরের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিয়েছিল। কিন্ত তারা এখন আর ভুলেও তার গহনার দোকানের চৌকাঠ পর্বস্ত মাড়ায় না। এ অবস্থায় আর বাজারে ঘর রেখে খাজনার দায় বাড়িয়েই বা কী লাভ? বেণী তাই দোকানঘ্রখানাও ছেড়ে দেওয়াই বাঞ্ছনীয় বলে মনে করে। . এ দিকে হঠাৎ এমন আর এক কাণ্ড ঘটে বসেম্মার ফলে দৌকান নিয়ে মাথা ঘামানো ব্ণৌর পক্ষে আর সম্ভবই হয় না। বেণীর দশ বছরের ছেলে রতন আজ প্রায় একমাস ধরে নিখেজ। বিকেল বেলা আর সব ছেলেদের সঙ্গে সেই যে খেলতে গেল আর ফিরেই এলো না সেই রতন। খবরের কাগজে নিরুদ্দেশের বিজ্ঞাপন দিয়েও কোনই ফল হলো! না । থানা-পুলিশ কিছুই বাকি রাখেনি বেশী । জমিদার বাড়ির সেজ খোকাবাবুকে ধরে কোলকাতায় বেতাঁরেও রতনের নিরুদ্দেশের খবরটা প্রচার করা হয়েছে। কিন্ত সবই নিক্ষল। কোথাও কোন. হদিসই পাওয়া! গেল ন! ছেলেটার । 7৮৯৯৩ এর পরে সংসারের ওপর আর কোন আসক্তি থাকতে পারে কোন বাপ-মায়ের ? শেষ পর্যস্ত তাই দোকান ঘ্বরটাও বিক্রি করে দেয় বেশী। বেণীর এতে বিপদের মধ্যেও দীনবন্ধু কিন্ত তার ছেলের বিয়ের সময়কার চুক্তির কথা মোটেই ভোলে না। গত তিন বছরের মধ্যে কম করে হলেও অস্তত তিনশবার সে মানা কথাপ্রসংগে চুক্তিমতো সমস্ত দেনা চুকিয়ে দিতে বলেছে বেণীকে। কিন্তু বেঁচে থাকাটাই যেখানে সমস্তা সেখানে দেনা শোধ করার দাবী যে অনর্থক তা দীনবন্ধুর অজান। নয়। তবু জেনেশুনেই যেন সে বৈবাহিককে ছুটো কথা শুনিয়ে আনন্দ পায় । শুধু এই নয়, তার বাবার অক্ষমতার জন্টে স্থমতিকেও কম গঞ্জনা সহ্য করতে হয় না শ্বশুরবাড়িতে । সে সব কথাও ঘুরে কিরে বেণীর কাছে এসে পৌছুয়। বেণী অরি বশোদা মনমরা হয়ে শুধু ছুঃখ করে সেসব শুনে । হ্যাগো একটা কথা শুনেছ, সেদিন নন্দর পিসি গিয়েছিল ওপাড়ায় বেড়াতে । স্ুমতিকেও সে দেখতে গিয়েছিল, ,কিস্ত তাকে দেখেই স্ুমতি নাকি কেঁদে ফেলেছে । কেন কী হয়েছে তার 1?-যশোদার কথ! শেষ না হতেই প্রশ্ন করে বেণী। কী আর হবে? খুব ভালো ঘরে বিয়ে দিয়েছ মেয়েকে, তার ফল । স্মৃতি আসতে চেয়েছিল কয়েকদিনের জন্যে আমাদের দেখতে । তার জন্তে তাকে শুধু শ্বশুরের গালমন্দই শুনতে হয়নি, শাশুড়ির হাতের মারধরও খেতে হয়েছে। তাদের পাওনা কড়ায় গণ্ডায় মিটিয়ে না দেওয়। পর্যস্ত নাকি স্মৃতিকে এমনি অত্যাচার সহা করতেই হবে। --ষশোদার ছু চোখ অশ্রুসজল হয়ে ওঠে এই বলতে বলতে! ৯৯ চি বেণী ভেবেই পায় না কী করবে। তবে পথে পথে ভিক্ষে করতে হলেও সে একবার শেষ চেষ্টা করে দেখবে যে, দীনবন্ধুর দেন৷ মিটিয়ে দিয়ে সে তার মেয়েটাকে গঞ্জনার হাত থেকে রক্ষা করতে পানে কিনা । তার পাপের, তার অক্ষমতার জের ভুগতে হবে তার নিরীহ মেয়েকে, এ কী করে সা করবে সে! রাতারাতি স্বামী-স্ত্রী পরামর্শ করে স্থির করে ফেলে, এগায়ে আর থাকবে না তারা । পাশকুড়ায় মানুষ নেই। যাদের ওপর বেণী খুব বেশি ভরস! করেছিল, বিপদের দিনে তার সেই শ্বশুরবাড়ির লোকদের কাছ থেকেও সে তেম্ন কোন সহানুভূতি পায়নি । কাজেই তার ভুল ভেডেছে। নিঃম্বের সম্বল কোলকাতা । সেখানে গেলে আর কিছু ন৷ হোক তারা ছু জনে ছু মুঠো ভাত খেয়ে বাঁচতে পারবেই। এই আত্মবিশ্বাসের ওপর নির্ভর করে পর দিনই দ্বুম থেকে উঠে অতি গোপনে বেণী তার বসতঘর সহ সমস্ত জমি-জম! বিক্রি করে দেয় তার পাশের গায়ের এক লোকের কাছে। বাজারের দোকান ঘরখানাও সে-ই কিনেছিল বেশীর কাছ থেকে । বেণী বাড়ি ও জমি বিক্রির টাক নিয়ে সেদিনই দীনবন্ধুর বাড়িতে যেয়ে সমস্ত দেনা কড়ায় গণ্ডায় শোধ করে দিয়ে আসে । আসার সময় দীনবন্ধু আর তার স্ত্রীকে শুধু বলে আসে, তার মেয়েটা যেন একটু শান্তিতে থাকতে পারে, এটুকুই তাদের কাছে তার প্রার্থনা ৷ স্থমৃতির "সঙ্গে দেখা করে বেণী শুধু তাকে মনে মনে আশীর্বাদই করেছে, মুখ ফুটে কোন কথ! বলতে পারেনি । টাকা পেয়ে দীনবন্ধু আনন্দিত হয়েছে যেমনি, আশ্চর্যও হয়েছে ঠিক ততোখানি । : কী ব্যাপার, কোথায় পেলো! বেণী একসঙ্গে এতো টাকা, এমনি নানা প্রশ্ন উকি দিয়েছে দীনবন্কুর মনে । বেশীকে তাই জাদর আপাায়নেরও সে চেষ্টা করেছে। । কিন্তু বেণী এ বাড়িতে আর জলগ্রহণও করবে না, এই তার প্রতিজ্ঞ।। কাজেই সে তার কাজ শেষ করেই চলে যায় । কোথায় যায় কেউ তার খোজ রাখে ন!। পরদিনই বেণী আর যশোদ! চলে আসে কোলকাতায় । পূর্ব বাঙলার উদ্ধান্ত্রের মতোই তারাও হাওড়া ষ্টেশনে াশ্রয় নেয়। মতলব, কয়েকদিন থাকবে সেখানে । কোথায়ইবা আর যাবে হঠাৎ করে? কিন্তু মতলব যাই থাক, মন ঘুরে বেড়ায় তাদের মহানগরীর মর্মকেন্দ্রে কোলকাতায় বংশ পরম্পরায় যেখানে বাস করেছে সে জায়গাটা একবার দেখে আসতে ইচ্ছে হয় বেণীর । হাওড়া ক্টেশেনে একরাত কাটিয়ে আর স্থির থকেতে পারে না সে। ভোর হতেই তাদের সামান্য জিনিষপত্র পূর্ব বাঙলার একটি উদ্বান্তব পরিবার-এর উপর দেখা-শুনোর ভার দিয়ে যশোদাকে নিয়ে চিত্তরঞ্জন এভেন্্যুতে এসে উপস্থিত হয় বেণী । পিতৃপুরুষের স্মৃতি-বিজড়িত জায়গাটা খুজে খুজে বার করে সে। একটা নতুন রাস্তা বেরিয়ে গেছে বেণীর পৈতৃক দোকানের চিহ্ন বিলীন করে দিয়ে। যে আড়াই কাঠা জমির ওপর তাদের চালাঘর ছিল, সেখানেও আজ বিরাট চারতলা দালান। বেণী খবর নিয়ে জানে কোলকাতার এই নতুন অঞ্চলটায় এখন প্রতি কাঠা জমির দর দশ হাজার টাকা । বেশীর ঘর ছেড়ে যাবার তো কোন বাধ্যবাধকতাই ছিল না। তার! এখানকার ঘর ছেড়ে দিয়েছিল এক থোকে কিছু ৯৮৬ টাকা পাবার লোভে । কিন্ত মাটি কামড়ে এখানে পড়ে থাকলে তাদের কি আজ এমনি করে পথে ফাড়াতে হতো! এ কোলকাতার মাটিরই মানুষ বেণী আর তার স্ত্রী যশোদা, অথচ এখানে কেউ আজ আর তাদের চেনে না, তাদের কাছেও সবাই অচেনা । সব নতুন নতুন মুখ। অধিকাংশই অবাঙালী । কোলকাতার মানুষেরই আজ কোলকাতায় অজ্ঞাতবাস ! বিরাট চারতল। দালানের দিকে চেয়ে থাকে বেণী আর যশোদ। । তাদের চোখের জল রোধ করতে পারে না তারা । চোখের জল তো৷ নয়, ছুঃখের ঢেউ । ঢেউ-এর পর ঢেউ এসে অভিভূত করে ফেলে বেণশীদের । অন্তরের আগুনকে নেভাতে পারে না সে জল। তা যদি পারতো! এর পরে আরো অনেকদিন সস্ত্রীক বেশীকে এ বিরাট বাড়িটার সামনে মিছিমিছি ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে। সময় সময় নির্বাকভাবে তার! তাকিয়ে রয়েছে বাড়িটার দিকে । শহরের কোথায় কোন্‌ অজ্ঞাত বস্তিতে আশ্রয় খুজে নিয়েছে ওরা কে জানে? ৯১১৯৭ রিলিফ এরা কি মানুষ না মানুষের ছায়া ? সেই ভোর থেকে সুরু হয় এদের মিছিল। শরণার্থাদের মিছিল। সরকারী দাক্ষিণ্যের ছিটেফোট! যদি বা পাওয়া যায়। মদিই বা বেঁচে থাকবার কোন একটা স্থুযোগ করে দেন সরকার । সে আশায় মানুষগুলে! রোজ ভিড় করে। ভিঙ্ষার্থীর বেশে লাইন দিয়ে দাড়িয়ে থাকে এখানে, এই অকল্যাণ্ড হাউসের দরজায় । দেখে দেখে অনেকগুলো মুখ চেনা হয়ে গেছে পরেশ ডাক্তারের ৷ রিলিফকর্মী পরেশ ডাক্তার । গত কয় বছর ধরে বিচিত্র ধরণের ও বিচিত্র মনের নানা মানুষের আনাগোনা তিনি লক্ষা করছেন এখানে | দিনের পর দিন আশাভংগের বেদনা নিয়ে কতো নারী, কতো বালক-বৃদ্ধ ফিরে গেছে এখান থেকে, হয়তো কোন শিবিরে কিংবা! ফুটপাথে, নয়তে৷ গাছের তলায় বেছে নেওয়া কোন নির্দিষ্ট আশ্রয়ে। আবার ভোর হতে না হতেই নতুন আশায় বুক বেঁধে লাইন দিয়ে এসে দাড়িয়েছে তারা এইখানে অকল্যাণ্ড হাউসের দোরগোড়ায় । সরকারী ভবনের কৃপণ অস্তঃপুর থেকে বড়ো সহজে কোন দাক্ষিণ্যর আলো ছড়িয়ে পড়ে না এই ছূরগত কৃপাথাঁদের ওপর। অনেক দিন এ কথা ভেবেছেন পরেশ ডাক্তার । ১১৮ হৃতৈশ্বর্য রিলিফ ভবন এই অকল্যাণ্ড হাউসের মতোই এখানকার প্রার্থী মানুষগুলোও আজ বিগতশ্ী । বাড়িটা নিজেই যেন ভাগ্যবিপর্ষয়ের স্বাক্ষর বহন করছে। নিছকই একটা নাচতঘর ছিল বাড়িটা । লোহা ও কাঠের তৈরি হলেও একট৷ স্পর্ধার প্রকাশ ছিল ভার আত্মপরিচয়ে। শোনা যায় রাত্রির প্রতি পদক্ষেপে শহরের এ এলাকার হাওয়াটাও নাকি ক্রমশই ভারি হয়ে উঠতো । নাম-কৌলীন্যে আজো বাড়িটা ঠিক তেমনি আছে । গায়ের লাল রংটাও নতুন করে লাগানো হয় বছর বছর । সামনের সেই ছোট্ট ফুল বাগিচাটারও তদারক চলছে আগেরই মতো, আর সেই বাগানের শাস্ত ও ভদ্র পরিবেশের মধ্যেই শাসনের রুদ্র বূপেরও পরিচয় বর্তমান। রক্তচক্ষুর দৃষ্টি বিস্তার করে আজে পড়ে রয়েছে পুরোনো কালের ছুটো কামান। কিন্ত তবুও কোথায় যেন তার আভিজাত্যে চিড় ধরেছে । তাই আজ" আভিজাত্যহীন মানুষের মিছিলে অকল্যাণ্ড হাউস বিমুখ বিমর্ষতায় শুধু দাঁড়িয়েই থাকে । সহজে কাউকে কপ। করতে চায় না। এক! এক। ভাবছিলেন পরেশ ডাক্তার। ভাৰ্তে ভাবতে গিয়ে চুকলেন সেই রিলিফ ভবনে । প্রায় রোজই আসতে হয় তাকে এখানে । সাধ্যমতো সাহাধ্যও করেন তিনি উদ্বান্তদের সরকারী দাক্ষিণ্য লাভে । এসেই আজ চোখে পড়লো একজন প্রৌঢ় মহিলাকে । চোখে! মুখে তার বিষঞ্জতার ছাপ । কিন্তু এককালে যে তারও আভিজাত্য ছিল অর্থে ও সম্মানে, তার সবটুকু চিহ্ন এখনে মিলিয়ে যায়নি সেই সকরুণ দৃষ্টি থেকে । আগেও আরো ছু তিন দিন চোখে পড়েছে এই মহিলাকে । ১১৯ পরিচিতা বচলই মনে হয়েছে বার বার । কিন্ত কোন স্ত্রেরই সন্ধান করতে পারেননি ডাক্তার কোথায় কি ভাবে তাদের মধ্যে এই পরিচয় ঘটেছিল । প্রৌঢ়ার দ্রিকে এগিয়ে যায় ডাক্তারের মন। সংকোচ বাধ দেয় প্রথমটায়। কিন্তু সে মুহুর্তের জন্যে । পরিচয়ের কোন প্রমাণ নাই-বা পাওয়া যায় যদি, কী-ই বা এমন ক্ষতি তাতে ? আচ্ছা, আপনি কোথা থেকে এসেছেন বলুন তে৷ ! কার্ড পেয়েছেন কোন ?__প্রৌটার সামনে যেয়ে জিগোস করেন পরেশ ডাক্তার । একাস্ত আস্তরিক ও সহান্ুভূতিপূর্ণ এই প্রশ্নে বাঁচার আশা ঘেন খুঁজে পান মহিলা । সরকার প্রচুর অর্থ ব্যয় করছেন অসহায় উদ্বান্তদের জন্যে এ কথা তিনিও শুনেছেন। কিন্ত তার বিবাহযোগ্যা কন্তা ও শিশুপুত্রকে নিয়ে তিনিও যে সরকারী সাহায্যের অধিকারী এ প্রমাণ তিনি কি করে যে করবেন, কয়দিন ধরে তাই ছিল তার একমাত্র ভাবনা । এবার হয়তো তার একটা সুরাহা হবে, এমনি একটা আশা জাগে তার মনে । আবার আশ্রংকাও হয়। যে ব্যবহার তিনি পেয়ে আসছেন এতোদিন ধরে, আবার যে তাই হবে না কে জানে? ঢাকা থেকে এসেছি আমি আমার মেয়ে আর এই ছেলেটিকে নিয়ে । প্রৌটার কণ্ঠন্বরে সচকিত হয়ে ওঠেন ডাক্তার । ঢাকায় থাকতেন আপনি ? হ্যা ।-_মুখ তুলে উত্তর দেন মহিলা । আর্মীনিটোলার পরেশ ভাক্তারকে চেনেন ? নিশ্চয়ই চিনি, আমরাও তো আর্মানিটোলাতেই ছিলাম প্রায় আট বছর । ১২০ ডাক্তারের মনে আর সংশয় থাকে না কোন। পরিচয়ের স্তরের সন্ধান পেয়েছেন তিনি এতোক্ষণে। পুরোনো দিনের স্মৃতির ভিড় যেন তাকে ঘিরে ধরে । তুমি নন্দা না? এখানে কেন তুমি 1--গলার স্বর ভারি হয়ে উঠে ডাক্তারের, আর কোন' কথাই বলতে পারেন না তিনি । পাশেই দীড়ানো ছোট ছেলে অমল একবার তার মা এবং আর একবার অপরিচিত আগন্তকের মুখের দিকে ফ্যাল্‌ ফ্যাল্‌ করে তাকায়। অমলের চোখে চোখ পড়ে ডাক্তারের ৷ ছেলেটাকে জোর করে কোলে তুলে নিয়ে আদর করেন তিনি। | মহিলা ভালো করে লক্ষ্য করেন ডাক্তারকে । হ্যা, এই তো তিনি! তাকেই তো আজ সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন তার । পরেশবাবু, এতোদিন কী করে ভুলে আছেন আমাদের ? --এই বলতে বলতে অশ্রুসজল হয়ে ওঠে প্রৌঢার ছুটি চোখ । নন্দা, বিশ্বাস করো, তোমার শান্তির জন্যেই তোমাকে ভুলে থাকতে চেষ্টা করছি আমি । কিন্তু তুমি এখানে এমনি বেশে এসে দাড়াবে তাতো আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না। কী হয়েছে তোমার ? কিছুই না।-_ঝর্‌ ঝর করে চোখের জল ঝরে পড়ে নন্দার। আধ ময়লা শাড়ির আচলে চোখ মুছতে মুছতে মুখ ঘুরিয়ে নেন তিনি। অভিমানের কালোছায়া ত্তাকে গ্রাস করে ফেলে । একটু ভেবে, একটু ভয়ে ভয়েই যেন আবার জিগ্যেস করেন ডাক্তার, বল না কি হয়েছে তোমার, স্থধা-ু কোথায় ? সেসব বলে আব্রকী লাভ হবে আমার পরেশবাবু ? কতো লোককে তো বলেছি, কিন্তু গঞ্জনা অপমান ছাড়া কারুর ৯৭১ কাছ থেকেই তো কিছু পাইনি। তাই নতুন করে আমার কথ! কাউকে শোনাতে ভরসা হয় না আর। আমাকেও তুমি তাদেরই মতো একজন বলে ধরে নিয়েছ, নন্দ? তাতে তোমার দোষ নেই কোন । মানুষেরই ব্যবহার তোমার মনকে" বিষিয়ে তুলেছে । কিন্তু আমি যে তাদেরই মতো নই তা' প্রমাণের কোন স্থযোগ তো দিলে না আমায় ! শুনবেন তা হলে, পরেশবাবু! বেশ বলছি সব কথা । এখানে নয়, চলে! গংগার ঘাটে গিয়ে বসা যাক। এই বলে পরেশ ভাক্তার এগিয়ে চলেন নদীর দিকে। নন্দ! দেবী অনুসরণ করেন তার খোকাকে নিয়ে । অনেকগ্লো দৃষ্টি যেন চিলের মত ঠো মারে তাদের ওপর একই সঙ্গে । বেলা পড়ে আসছে । অফিসগুলো সব ছুটি হবার মুখে । এ অফিস সে অফিস থেকে ছু একজন করে লোকজনও বেরিয়ে পড়ছে । সারাদিনের কাজের পর প্রায় অবসন্ন এক আধবুড়ে৷ কেরাণী পান চিবুতে চিবুতে একটু ত্রস্ত পদেই এগিয়ে চলছিলেন হাইকোর্ট ট্রাম ডিপোর দিকে । সঙ্গে তার আর একজন লোক । হয়তো উঁরিই এক তরুণ সহকমী । কৌটো খুলে আর একটা পান নিজের মুখে পুরে দিয়ে ভদ্রলোক তার সংগীকে জিগ্যেস করছিলেন, কি হে, চাই নাকি একটা । ঠিক সেই সময়ই পরেশ ডাক্তার আর নন্দাকে তাদের পাশ কাটিয়ে চলে যেতে দেখে বুড়ো কেরাণী বেচার! খানিকক্ষণ তাকিয়ে থাকেন পিছন ফিরে । নন্দা দেবীই যে ভার লক্ষ্য তা না বল্পেও চলে। পুরোনো রোগ কি সহজে সারে? আহা! ট্রামট! মিস্‌ করে ফেললেন যে! এর পরের ট্রামে উঠতে কি হাংগাম! হবে, বুঝবেন এখন । ৯৯২ এতো "ভাবনা কিসের হে ছোকরা? ছেলে মানুষ সুষ্ঠ করে চলে ধাবে। ভিড়ের জন্তে আমার চিত্ত! নেই কিছু । সংগী যুবক বৃদ্ধের সঙ্গে একটু রদিকতাই করতে চেয়েছিল, কিন্ত তিনি বেশ সরলভাবেই কথাটার মোড় ঘুরিয়ে দিলেন । নদীর পাঁড় ধরে খানিকটা বেড়িয়ে ঠাদপাল ঘাটে গিয়ে বলেন পরেশবাবুরা । ঢাকার বাদামতলীঘাট-সদরঘাটের কথা মনে পড়ে নন্দার। চানাচুরওয়ালা পাশ দিয়ে ডেকে যায়। পরেশবাবু জিগ্যেস করেন তাকে, চীনেবাদাম আছে ? আছে বাবু । দাও চার পয়সার | নন্দাও খাবে নাকি? নেবো আরে। £ না, আমার ভালো লাগে ন! চীনেবাদাম 1-_নন্দা হাত জোড় করে মার্জনা চায়। পাঁচবছর আগে টাইফয়েড অসুখ থেকে উঠে নন্দা দেবী এই পরেশ বাবুরই সঙ্গে প্রায়ই বেড়াতে যেতেন ঢাকার বাদামতলী ঘাটে । খুকুকে নিয়ে বুড়িগংগার তীরে করোনেশন পার্কের লামনে বাঁধানো" ঘাটের টুলের উপর বসে কতো গল্প করেছেন তারা । আজ গংগার এই ঘাটে বসে অতীতের সে সব কথ! মনে পড়ে। খুকুর বয়স তখন এগারো! কি বারো, আজ সে সতেরে। ৷ আজকে পরেশবাবু খোকনকে চীনেবাদাম কিনে দিলেন আদর করে। তখন দিতেন থুকুকে। নদীর পাড়ে বসে এসব ভাবতে ভাবতে অনেকট। যেন শান্তি পান নন্দা। কি, বলছ না যে কিছু £_জিগ্যেস করেন ডাক্তার । কী যে বলবে! ভেবেই পাচ্ছি না। অথচ কতো যে কথা আমার বলার ! হ্যা, আপনার বন্ধুর কথ! জিগ্যেস করছিলেন । ১২৩ পাচ বছর ধরে তার কোন খবরই তো আমি রাখি না, তিনিও আমাদের কোন খোঁজ করেননি আর ।--বলতে বলতে আবার ছল্‌ ছল্‌ হয়ে আসে তার চোখ। আও স্ুধাংশুর মতো 01111191) ছেলে কি হয়ে গেল! [02০10601090 মদের নেশা মানুষের কী সবনাশই না করে! -ছু?খ করেন ডাক্তার । আপনি তো জানেন পরেশবাবু তাকে সংশোধন করার জন্তে কতো লাঞ্ছনা সহ্য করেছি আমি । আপনিও অনেক চেষ্টা করেছেন । সে খণ শোধ করতে পারবে! না কোন দিন । সে সব কথা এখন থাক, নন্দা। তোমরা! কোথায় আছ আর চলছেই বা কি করে, তাই বলো । এখন যে কোথায় আছি তা বলা খুব কঠিন। পিসতৃত দাদাকে আমার ছুঃখের কাহিনী লব খুলে লিখলে তিনিই আমায় নিয়ে আসেন ঢাক! থেকে বছর পাঁচেক আগে। সেখানেই আছ সেই থেকে, না অন্ত কোথাও চলে গেছ ? না, সেখানেই আছি? তবে প্রথম যখন আসি তখন দাদার সংসারও ছিল ছোট, পিসিমাও ছিলেন বেঁচে-__ কোন অস্থ্বিধেই হয়নি । কিন্তু পিসিমার মৃত্যুর পর থেকে বৌদির কতৃত্বে আমাদের সঙ্গে সঙ্গে দাদারও জীবন হয়ে উঠেছে অতিষ্ঠ । কেন, এর কারণ ?--নন্দার কথায় যেন চমকে ওঠেন ডাক্তার | এই তো স্বাভাবিক পরেশ বাবু। তাই ।-_ডাক্তার কেমন যেন গম্ভীর হয়ে যান এই শুনে । পিসতৃত ভাই-এর বো এতো দিন ধরে যে আমাদের ঝামেল। সহা করেছেন তাই তো যথেষ্ট । তাছাড়া চার-পাচটি ছেলে- পুলের ঘর, তার ওপর আমরা তিনটি প্রাণী--দাদার আয়ে কুলিয়ে ওঠাও কষ্ট। ৯১২৪ সে অবশ্ট ভিন্ন কথা ।_এবার অবস্থাটা অনেকখানি বুঝে নেন ডাক্তার । তাই সবদ্দিক বিবেচনা করে মাস ছুই আগে আমিই একদিন গিয়ে বললাম দাদাকে, দাদা, আমাদের জন্তো আর কতো কষ্ট করবে তোমরা ? খুকুকে নিয়েই ঘতো৷ ভাবনা । তানা হলে কোন বড়লোকের বাড়িতে ঝি বা র'ধুনির কাজ করেও হয়তে! ছুটে! পেট চালানো যেতো । যাই হোক, আমাদের জন্তে ভুমি আর ভেবো না। যে করেই হোক, ছুমুঠো ভাত আমি সংগ্রহ করবো । শুধু আশ্রয়টুকু চাই তোমার বাড়িতে । তাতে কি বল্লেন তিনি 1 জানতে চাইলেন পরেশ বাবু । সেদিন আমার এতোগুলো৷ কথার কোন জবাবই দেননি দাদা। মুখ ফুটে কথা বলার মতো অবস্থাও ছিল ন! তার। আমার কথায় তার যে কতো হুংখ হয়েছে তা আমিও বুঝেছিলাম । কিন্তু আমার তো দাদাকে সে কথা বলা ছাড়া কোন উপায় ছিল না আর। তারপর কী হলো তাই বলো! । - শেষ অবধি জানার জন্ট্ে অধীর হয়ে ওঠেন ডাক্তার । * সেই থেকে দাদার বাড়িতেই আর একট! উন্ুন বসেছে আমাদের জন্তে ।-_মুখ নীচু করে নন্দ! বলে । চল্ছে কী করে? খুবই গোপনে একট! ঠিকে বির কাজ করছি ছু মাস ধরে । দাদাও কিছু কিছু সাহায্য করছেন বৌদিকে না জানিয়ে । তাতেই কোন রকমে চলে যাচ্ছে আমাদের হায় ভগবান, ন্ুধাতশুর স্ত্রীর এই অবস্থা ! -অস্তর কেঁপে ওঠে পরেশ বাবুর'। কিন্ত বিয়ের কাজটা হয়তো আর বেশিদিন গোপন রাখা ৯১৫ সম্ভব হবে না পরেশ বাবু ! মেয়েটার যদি কোন একটা গতি হয়ে যেতো এর মাঝে, তা হলে কোন চিস্তাই থাকতে না আমার । আজ একদিকে তার ভাবনা, আর একদিকে দাদার মান-সম্মানের প্রশ্ন । যদি কোন রকমে জানাজানি হয়ে যায় আমার কাজের কথা, তাহলে দাদার আর মুখ থাকবে না, : মেয়েটারও বিয়ে দেওয়া মুক্ষিলের ব্যাপার হয়ে ফ্ীড়াবে। আচ্ছা াড়াও, খুকুর বিয়ের ব্যাপারটা কভোদুর কি করা যায় আমিই দেখছি । দেখ! যাক, সরকারী সাহাষ্য কিছু পাওয়া যায় কি না। জানা-শোনার মধ্যে একটি ভালে ছেলেই খুঁজে পাওয়া যাবে আশ! করছি। অমন টুকটুকে মেয়ের বরের জন্তে আবার ভাবনা ! মেয়ে আর আমার টুকটুকে নেই, পরেশবাবু! সেই কবে দেখেছেন আপনি । তারপর যে কী চেহারা হয়ে গেছে ওর, কল্পনাও করতে পারবেন না। হবে ন!? ফাক পেলেই বাবার জন্যে পালিয়ে পালিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না । ওর বাবার কথা মুহুর্তের জন্যেও ভুলতে পারে না খুকু। দিনের মধ্যে কতোবার প্রশ্ন করবে, ঢাকায় কতো কষ্ট হচ্ছে ওর বাবার এইসব গোলমালের দিনে কতো ভয়ই ন| জানি লাগছে তার, আরো কতো কি? কিন্তু তিনি তো ভাবছেন ন! তার খুকুর কথা একটি বারও ! তা বলো না নন্দা। খুকুর কথা না৷ ভেবেই পারে না সধা-শু। পৃথিবীর সবকিছু সম্পর্কেই তাকে উদাসীন দেখেছি । ভুলেও তাকে বড়ো একটা কারুর নামোচ্চারণ করতে পর্যস্ত শুনিনি। কি্ড কথায় কথায় খুকুর প্রসংগ আলোচনায় ন্নেহ মমতায় ভর! তার কোমল প্রাণের পরিচয় বার বার ধর পড়েছে। ঠিকই বলেছেন পরেশবাবু, এক সময় সে রকমই ছিল! কিন্ত আজ তা অতীত কাহিনী ছাড়া আর কিছুই নয়। ৬, কিন্তু তুমি যাই বলো নন্দা, আজে সে নিশ্চয়ই তোমাদের কাউকেই ভোলেনি, আমি এ কখা জোর করেই বলতে পারি ! ভবে নেশায় মানুষকে আর মানুষ রাখে লা, জান তো? যেদিন শেষ বিদায় নিয়ে এলাম তোমাদের আর্মীনিটোলার বাড়ি থেকে সেদিনের ঘটনা মনে আছে তোমার ? মনে নেই আবার! সেদিন থেকেই তো আমার ওপর চরম নির্যাতন সুরু । সেই লাগ্থনা অবমাননা সহ্য করেও আরো বছর ছুই কাটিয়েছি লেখানে। আর পারিনি । তার পরেই কোলকাতা চলে এলে বুঝি ? হ্যা, অবস্থা চরমে উঠলে দাদাকে জিখে জানাই সব কথা । দেশভাগ হয়ে গেছে তখন । মাতলামি আপনার বন্ধুর আরে! গেছে বেড়ে । কোনদিন বাড়ি ফেরেন, কোনদিন ফেরেন না। আর বাড়ি এসেই স্থুরু করেন তাগুবলীলা৷ ৷ আজে বাজে সব চিস্তা করতে করতে মাথাটাই বিগড়ে গিয়েছিল স্ুুধাং-শুর । আশ্চর্য! পুরুষমান্থষ কেন এতো 901110117)61)621 হবে তা ভেবেই পান না ডাক্তার । অতীত স্বৃতি ঢেউ তোলে তার মনে । নিরুপায় হয়ে তখন চিঠি লিখলে দাদাকে, তই না ?_ প্রশ্ন করে পরেশবাবু । হ্যা, এমনি অবস্থায়ই আমার চিঠি পেয়ে একদিন দাদা হঠাৎ এসে উপস্থিত আমাদের বাড়িতে । কতোরকম করে বোঝাবার ' চেষ্টা করলেন তিনি আপনার বন্ধুকে। কিন্তুকে কার কথা শোনে । একরাত্রি ছিলেন দাদ আমাদের সঙ্গে, তারই মধ্যে আমার ছবিষহ জীবনের পরিচয় তিনি পেয়েছিলেন ! যাক্‌. সে সব পুরোনে! কথা । খুকুর বিয়েটা হয়ে গেলেই অনেকটা দায়মুক্ত হবে তুমি । সরকারী সাহাষাটা পাওয়া ১২9 সম্ভব হবে না পরেশ বাবু! মেয়েটার বদি কোন একটা গতি হয়ে যেতো এর মাঝে, তা হলে কোন চিস্তাই থাকতে না আমার | আজ একদিকে তার ভাবনা, আর একদিকে দাদার মান-সম্মানের প্রন্ন। যদি কোন রকমে জানাজানি হয়ে যায় আমার কাজের কথা, তাহলে দাদার আর মুখ থাকবে না, মেয়েটারও বিয়ে দেওয়! মুক্ষিলের ব্যাপার হয়ে ফাড়াবে । আচ্ছা ঈাড়াও, খুকুর বিয়ের ব্যাপারটা কতোদুর কি করা যায় আমিই দেখছি । দেখা যাক, সরকারী সাহায্য কিছু পাওয়া যায় কি না। জানা-শোনার মধ্যে একটি ভালো ছেলেই খুজে পাওয়া যাবে আশা করছি । অমন টুকটুকে মেয়ের বরের জন্তটে আবার ভাবন! ! মেয়ে আর আমার টুকটুকে নেই, পরেশবাবু! সেই কবে দেখেছেন আপনি । তারপর যে কী চেহার! হয়ে গেছে ওর, কল্পনাও করতে পারবেন না। হবে ন!? ফাক পেলেই বাবার জন্তে পালিয়ে পালিয়ে ফুপিয়ে ফু'পিয়ে কান্না । ওর বাবার কথ! মুহূর্তের জন্যেও ভুলতে পারে না খুকু। দিনের মধ্যে কতোবার প্রশ্ন করবে, ঢাকায় কতো কষ্ট হচ্ছে ওর বাবার, এইসব গোলমালের দিনে কতো ভয়ই না জানি লাগছে তার, আরে! কতো কি? কিন্তু তিনি তো ভাবছেন না তার খুকুর কথ! একটি বারও ! তা বলো না নন্দা। খুকুর কথা না ভেবেই পারে না সুধাংশু। পৃথিবীর সবকিছু সম্পর্কেই তাকে উদাসীন দেখেছি । ভুলেও তাকে বড়ো একটা কারুর নামোচ্চারণ করতে পর্যস্ত শুনিনি । কিন্তু কথায় কথায় খুকুর প্রসংগ আলোচনায় স্েহ মমতায় ভর। তার কোমল প্রাণের পরিচয় বার বার ধর। পড়েছে । ঠিকই বলেছেন পরেশবাবু, এক সময় সে রকমই ছিল৷ কিন্ত আজ তা অতীত কাহিনী ছাড়া আর কিছুই নয়। ৯৬ কিন্তু তুমি ধাই বলো নন্দা, আজে দে নিশ্চয়ই তোমাদের কাউকেই ভোলেনি, আমি এ কথা জোর করেই বলতে পারি । তবে নেশায় মানুষকে আর মানুষ রাখে না, জান তো? যেদিন শেষ বিদায় নিয়ে এলাম তোমাদের আর্সানিটোলার বাড়ি থেকে সেদিনের ঘটনা মনে আছে তোমার ? মনে নেই আবার! সেদিন থেকেই তো আমার ওপর চরম নির্যাতন সুরু । সেই লাঞ্থনা অবমাননা সহা করেও আরো বছর ছুই কাটিয়েছি সেখানে । আর পারিনি । তার পরেই কোলকাতা চলে এলে বৃঝি ? হ্যা, অবস্থা চরমে উঠলে দাদাকে লিখে জানাই সব কথা । দেশভাগ হয়ে গেছে তখন । মাতলামি আপনার বন্ধুর আরো গেছে বেড়ে । কোনদিন বাড়ি ফেরেন, কোনদিন ফেরেন না। আর বাড়ি এসেই সুরু করেন তাগুবলীলা ৷ আজে বাজে সব চিস্তা করতে করতে মাথাটাই বিগড়ে গিয়েছিল ন্থুধাংশুর । আশ্চর্য! পুরুষমানুষ কেন এতো 99111177701718] হবে তা ভেবেই পান না ডাক্তার। অতীত স্মৃতি ঢেউ তোলে তার মনে। নিরুপায় হয়ে তখন চিঠি লিখলে দাদাকে, তই না 1 প্রশ্ন করে পরেশবাবু। হ্যা, এমনি অবস্থায়ই আমার চিঠি পেয়ে একদিন দাদা হঠাৎ এসে উপস্থিত আমাদের বাড়িতে । কতোরকম করে বোঝাবার চেষ্টা করলেন তিনি আপনার বন্ধুকে । কিন্তুকে কার কথ। শোনে । একরাত্রি ছিলেন দাদা আমাদের সঙ্গে, তারই মধ্যে আমার ছুবিষহ জীবনের পরিচয় তিনি পেয়েছিলেন ! যাক্‌ সে সব পুরোনো কথা । খুকুর বিয়েটা হয়ে গেলেই অনেকটা দায়মুক্ত হবে তুমি। সরকারী সাহাষ্যট! পাওয়া ৯১৭ ধাবে বলেই আমি আশ! করি। আমি জানি, অনেকে এ রকম সাহাধ্য পেয়েছেন । , স্তারা তো আর আমার মতো হতভাগিনী নন। খাটি জোর না থাকলে সে সব পাওয়া কঠিন, পাওয়ার চেষ্টা করাও বোকামি । আমি হয়রান হয়ে গেছি পরেশবাবু। আপনার আর সে চেষ্টায় দরকার নেই । কেন, কী হয়েছে? ; কি হয়েছে! শুন্লে অবাক হয়ে যাবেন আপনি । খুকুর ঙ্গস্বন্ধ একট! মোটামুটি স্থির করেই সাহায্যের দরখাস্ত করেছিলাম 'আমি। যে বাড়িতে কাজ করি সে বাড়ির বাবুর কথায় একটু ভরসা পেয়েই দরখাস্ত করেছিলাম । কি হলো তাতে? কী আর হবে? আমার কে আছে যে বড়ো বড়ো অফিসারদের আমার হয়ে যেয়ে ধরাধরি করবে বা যাদের নাম করলে কর্তাদের করুণা দৃষ্টি আকৃষ্ট হতে পারে ? কিন্তু আমি যাদের কথা জানি, ভাদের তো এতো বেগ পেতে হয়নি মেয়ে বিয়ের সাহায্য মঞ্জুর করাতে ! তোমার বেলা এমনি হবার কী কারণ তাতো বুঝতে পারছি না। | দশ-বারে। দিন ধরে সে যে কী হয়রানি তা আরকি বলবো! দরখাস্তটির ওপর 'সইয়ের ঘে কী ঝড় বয়ে গেছে তা ন! দেখলে বিশ্বাসই করতে পারবে না কেউ ।-_নন্দা তার আচল থেকে খুলে দরখাস্তখানা হাতে দেন পরেশবাবুর । সমস্তব্য মোট তেরটি স্বাক্ষর যেন জ্রকুটিকুটিল দৃর্থিতে চেয়ে আছে আবেদনকারিশীর দিকে। আবেদন যে সম্পূর্ণ অগ্রাহ হয়েছে তাও নয়। তন্েঘে অপমানকর সর্ত রয়েছে সাহায্য মঞ্জুরের সঙ্গে তাতে যে-কোন ভদ্র সম্তানের পক্ষে সে দান ৯৮ ধন্তবাদের (1) সঙ্গে প্রত্যাখ্যান কর! ছাড়া গত্যত্ত় থাকতে পায়ে না। কুটির াবলাসা লন _-দরখাস্তধানা উল্টে পাণ্টে পরেশ ভাক্তারও সরকারী বুদ্ধি [ববেচা : বিস্মিত হন এবং ব্যধিতও | যাক, এ পঁচিশ টাকার খয়রাতির জন্তে আর মাথ! না খুঁড়ে ভালোই করেছ নন্দা। আমি কথা! দিচ্ছি, সে সন্বন্ধ যদি তোমার হাতছাড়! হয়ে গিয়েও থাকে তা হলে আমি এমন এক ছেলের সঙ্গে খুকুর বিয়ের ব্যবস্থা করে দেবো যেখানে তোমার একটি কাণাকড়িও খরচ করতে হরে না! সেজন্টে ভেবো না তুমি। কিন্তু ফের কেন তুমি এসেছ এই অকল্যাণ হাউসে, তাই শুনি। আবার এসেছি কেন? আগেই বলেছি, আমি যে পালিয়ে অন্ত একট! বাসায় কাজ করছি সেটা হয়তো! আর বেশিদিন অজান! থাকবে না। জানাজানি হয়ে গেলে দাদার বাপায়ও আমার আর স্থান হবে না। তখন আমি কি করবো ? খুকুর বিয়ের ব্যাপারে সাহায্যের তদ্ধিরে এসে দেখতে পেয়েছি যে, অনেকের ভাগ্যে ফ্রি রেশনের ব্যবস্থ। হয়ে যাচ্ছে * সে আশ। নিয়েই আজ এসেছিলাম । ক্রি রেশনের কথা বল্ছ? তা পাওয়া তো খুব সহজ নয়, নন্দা! সে তো রীতিমতো৷ কঠিন ব্যাপার । তা হলে! _সচকিত হয়ে ওঠেন নন্দাদেবী । বুকটা হর্‌ হর্‌ করে ওঠে তার। নবাগত উদ্বাপ্তদের জন্তে কিছু দিনের ব্যবস্থা! করা হয় বটে, কিন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্যে লক্ষ লক্ষ উদ্বান্তর আহায়ের স্থায়ী টুর রাতকে রানা দিকটাও তো! ভেবে দেখা দয়কার । । পর একী কথা ঘলছেন আপনি, পরেশ বাবু! 'উদধান্থয়। ভারবে সরকারের কথা ! উদ্বান্্দের দায়িত্ব সরকান্গের নয়, তাই বলতে চান আপনি 1 নন্দাদেবীর প্রন্জে ৮৫০৮, অগিঝলক । না, তা মোটেই নয়। আমি শুধু বলছিলাম, উদ্বান্ত পগন্তায় সরকারও যে কিন্প বিব্রত তা আমাদের ভুলে যাওয়! উচিত নয়। তবে একেবারে যাদের কেউ নেই, এমন অসহায়! নারী ও শিশুর ভার অবশ্যই সরকার গ্রহণ কম্সে থাকেন এবং নিশ্চয়ই তা করা উচিত ।-__-নন্দা দেবীর রোষ থেকে এই বলে কোন রকমে আত্মরক্ষা করেন ডাক্তার । সে হিসেবেও কি আমি সরকারের কাছে সাহায্যপ্রার্থা হতে পারি না? তোমার স্বামী বর্তমান। তাই তোমার আবেদন বিবেচিত হবে বলে আমার তো মনে হয় না। পরেশবাবুর কথায় চমকে উঠেন নন্দাদেবী। মুখে আর কথ। ফোটে না তার। নিরাক নিস্তব্ধ পরিবেশ । খোকনের চীনেবাদামের ঠোঙাটাও নিঃশেষ হয়ে এসেছে এতোক্ষণে । এরই মধ্যে হঠাৎ একখান নৌকো থেকে কাম্নার সুর ভেসে আসে। নৌকোখানা যতোই এগিয়ে আসে মায়ের ন্সেহার্ত ক্রন্দনধ্ধনিও ততোই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কর্তা কইতে পারেন, শ্মশান ঘা্টটা কন্দ,র ?₹_ মাঝি কাদতে কাদতে প্রশ্ন করে ডাক্তারকে । বিক্রমপুরের জলামাটির ভাঁষা ডাক্তারের অন্তরকে গভীর- ভাবে স্পর্শ করে, নন্দাদেবীকেও । তাদেরও জন্ম যে বিক্রমপুরের মাটিতেই । কী হয়েছে তোমার 1--ডীক্তার প্রষ্ধ করেন মাঝিকে । উত০৩ ফী আর কমু কর্তা? জীহন ধাঁঢানের ক্সাশান বাড়ি-র, হই-তিনখাঁন নাও দব কিছু জ্ালাইয়া পালাইস্মা আইছিরিঃম এই গানে! পারলাম না কর্তা] বাঁচাতে পারলাম না! আট বছরের ছাইলাটা! দশ-বানে। দিনের নিমোনিতে মারা পড়লো 1--এই কয়টি কথা বলতে বলতে মাঝি একেবাক্েই ঘেন ভেঙে পড়ে। হাতের বৈঠা ফেলে গামছায় ডোখ চেপে কাদতে থাকে সে। ক্রমে ঘাটে এসে নৌকা লাগে। পশ্চিম আকাশে রক্তিমাভ] | সন্ধা নেমেছে। এদিক ওদিক ছু-চারটে তারার ছায়! চিক চিক করে ওঠে গংগার বুকে । তুমি এখন বাড়ি ফিরবে নন্দা? মাঝিকে এখানে একটু ' অপেক্ষা করতে বলে আমি বরং তোমায় পৌছে দিয়ে আসি, কি বল? না, তার কিছু দরকার নেই, পরেশবাবু। আমার তো এ পথ চেনাই হয়ে গেছে। শেয়ালদার ট্রামে উঠে সোজ। চলে যাব একেবারে । কিন্তু এ বেচারাদের অবস্থ৷ দেখে কেমন লাগছে যেন। ঢাকার দিকেই বাড়ি বলে মনে হচ্ছে না ওদের ? বাড়ি কোথায় তোমাদের, মাঝি ?_ নন্দাদেবীর আগ্রহ পূরণে ডাক্তার জিগ্যেস করেন মাঝিকে। বিক্রমপুর তালতলা বাজারের কাছাকাছি বাড়ি আছিল আমাগো, কর্তাবাবু ! বেশ সুখে শান্তিতে আছিলাম বাবু । চলে এলে কেন এই অজানা অচেন1 দেশে ? কী আর করুম কর্তা? ছিয়ান্ন সালের মাঘ-ফান্কুনে ঢাকায় যখন মাইর চলছে তখন পয়সাওলা বাবুরা যে যতো৷ আগে পারছে ততো আগেই পালাইয়৷ পার পাইছে । আমরা গরীব- গরবারা পড়ছি বিপাকে । বর্ধা় খালে-বিলে জল আইলে ৯৩৯ কাতারে কাতায়ে সব লোক নৌকায় আইতে সুরু করছে এই স্বাশে। মাইনে শ্াশানে থাকতে পারে কদ্দিন। আপনিই কন ? এখানে এমেই বা! কি সুবিধে হলো তোমাদের ? না বাবু এইখানে আইয়! আর সোয়াস্তি কই? আগে ধলেশ্বরী-বুড়িগংগায় জাল বাইয়া যেমন ধরছি মাছ, ঢাকা- নারায়ণগঞ্জ শহরে হেই মাছ বিক্রি কইর! তেমনই পাইছি পয়সা । এই কইলকাতা শহরেই কি কম মাছ চালান পাঠাইছি বাবু! আর আইজ আমার কি অবস্থা ! মাছ ধর। নৌকায় হই লাগাইয়া কোন রকমে মাথা গোজবার ঠাই কইরা লইছিলাম তিনটা মাইনষের । একটা মাত্র ছাইলা, তারেও বাচাইতে পারলাম না । এক ফোটা ওষুধও দিতে পারলাম না তার মুখে। যা কিছু সম্বল আছিল খাইয়াই সব শেষ কইরা! ফালাইছি। অখন উপায়? আইচ্ছা কর্তা, শহরে দাহ করতে নাকি টাকা নেয় শ্বশানে ? হ্যা, লাগেইতো কিছু টাকা । আচ্ছা, ভয় নেই তোমার । আমি যাচ্ছি তোমার সঙ্গে । শ্মশানখোল। কদ্দ,র বাবু ?_-ছই চোখ দিয়ে দর্‌ দর্‌ করে তখনও জল পড়ছে মাঝির । দাড়াও । মাঝির সকরুণ বর্ণনায় যেমনি পরেশবাবু বিচলিত, তেমনি নন্দাদেবী। কিন্ত কারুর পক্ষেই দেরি করার উপায় নেই আর । তোমার তো যাবার পয়সা! লাগবে কিছু, নন্দা ! না, ছট! পয়সা এখনও আছে আমার হাতে । তাতেই হয়ে যাবে । একটু ম্লান হাসি হাসেন ভাক্তার। মনিব্যাগট! খুলে একটা এক টাকার নোট বের করে দেন নন্দাকে, আর তাদের ঠিকানাট। টুকে নেন এক টুকরো কাগজে । ৯৯৭ মা, বড্ড খিদে পেয়েছে ।-চার বছরের ছেলে জড়িয়ে ধরে নন্দাকে। পাবে না খিদে? সেই কোন্‌ সকালে কী চারটে খেয়ে বেরিয়েছে, আর এখন সন্ধ্যে! চীনেবাদাম কটি পেয়ে বেশ চুপ করেই ছিল এতোক্ষণ । কিন্তু আর দাড়িয়ে থাকতে পারছে ন। অমল । নন্দাদেবী অমলকে কোলে তুলে নিয়ে বিদায় নমস্কার জানান ডাক্তারকে । পরেশবাবুও প্রতিনমস্কার জানান, আর ছেলেটাকে আদর করেন একটু। নিতাস্ত ব্যথা-করুণ হলেও পরেশ ডাক্তার যেন কেমন একট! শিহরণ অনুভব করেন নন্দার সঙ্গে এই আলাপে । বুকপকেট থেকে সেই টুকরে! কাগজটা তুলে ডাক্তার লাইট পোষ্টের নীচে দাড়িয়ে আর একবার বেশ ভাল করে পড়ে নেন নন্দার নাম আর তার কোলকাতার ঠিকানাটা। অন্ধকারে দৃ্টি আচ্ছন্ন হয়ে আসে। তবু ভাক্তার গ্যাস লাইটের আলোর দূরবীণে আর একবার দেখে নেবার চেষ্টা করেন নন্দাকে। শেষে মাঝির নৌকোয় গিয়ে ওঠেন । কেমন যেন আনমনা হয়ে পড়েছেন ডাক্তার । নৌকোর ভেতরে মরা ছেলেটার বুকের ওপর পড়ে তখনো কাদছে মাঝি-বৌ | ডাক্তার চুপ-চাপ বসেই আছেন গলুইয়ের ওপর । ছু রকমের চিন্তায় করুণ হয়ে উঠেছে তার মন। নৌকোর মতো তার মনও ছুলছে ঢেউয়ে ডেউয়ে। নন্নাদেবী ততোক্ষণে স্রীমে চেপে অনেক দূর চললে গেছেন, হয়তো আধাপথ । কিংবা তারও বেশি । বাবু, কোন্‌ দিক যামু? শ্মশান কন্দুর এইখান থিগা ? মাঝির শুকনো গলার কঠোর প্রশ্নে সচকিত হয়ে ওঠেন ডাকার । ১২2৩ উত্তরে চলো । বেশ খানিকটা যেতে হবে নৌকো! বেয়ে। উত্তরমুখো নৌকো চলে। ক্ষীণ কণ্ঠের চাপা কান্নার সয় ফেলে আস! পিছনের হাওয়ার সংগে ভেলে যায়৷ পরেশ ডাক্তারের কানেও সে শ্বরের রেশ বাজে । কিন্ত তিনি শুনেও যেন শুনতে পান না কিছু। মাঝিও ছু একটা কথা বলতে গিয়ে চুপ করে যায় কোন সত্তর না পেয়ে। উম্মুক্ত আকাশের নীচে অবারিত গংগাবক্ষে পরেশ ডাক্তারের মন যেন তার সমগ্র অতীতের ইতিহাসখানা খুলে ধরেছে ভার সামনে । তিনি সেই ইতিহাস পর্যালোচনায় নিমগ্ন । আর কোনদিকেই কোন রকম খেয়াল নেই তার । জমিদারের ছেলে সুধাংশু রায় পরেশকে কী ভালোই না বাসতেন! তারই টাকায় মিটফোর্ড স্কুলে পড়ার সাধ পূরণ হয়েছে তার, একথা ভূলে যাওয়! সম্ভব নয় পরেশ ডাক্তারের পক্ষে | জমিদারী থেকে তিনশে। করে টাকা আসতে স্ুধাংশুর নামে। তার থেকে মাসে একশো করে বাঁধ ছিল পরেশের জন্যে । ডাক্তার* হয়ে জনসেবার ব্রত গ্রহণ করার সাধু সংকল্পের জন্যে পরেশ মুখোপাধ্যায়কে একজন আদর্শ পুরুষরূপে দাড় করাবার একটা ঝেঁক চেপে গিয়েছিল সুধাংশু রায়ের । আপন ভবিষ্যতের জন্তে পরেশের নিজের যতোটা না ভাবন! ছিল তার চেয়ে ঢের বেশি ছিল ন্ুধাংু রায়ের । মিটফোর্ডে পড়ার সময় কোনদিন কোন অভাব ব! অস্তবিধায় পড়তে হয়নি পরেশকে তার বন্ধুর সতর্ক দৃষ্টির জন্যেই । ডাক্তারী পাশ করে বেরিয়েই জনসেবায় পুরোপুরি আত্ম- নিয়োগ করলেন পরেশবাবু। সংসারের কোন বন্ধনই নেই ডার। নতুন করে সংসার গড়ারও কোন ইচ্ছে বা কল্পনা নেই । রায় কলকাতায় ল, পড়তে চলে গেলে তাদেরই "আর্দাদি- টোলার বাড়িতে থেকে পরেশ ডাক্তার প্রথম নুরু করলেন তার প্র্যাকটিস্‌। প্র্যাকটিস্‌ তো! নামে মাত্র । প্রায় সবটাই বিনে পল়সার কারবার । তা হলেও তিনচার বছরের মধ্যেই ভার নামডাক বেশ ছড়িয়ে পড়ে । শহরময় মুখে মুখে তার কথা । অনেক চিকিৎসা-ব্যবসায়ীরই ঈধ্যার কারণ হয়ে দাড়ায় তার আকশ্মিক জনপ্রিয়তা । এদিকে আইন পড়া শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গেই বড়ে! একটা ষ্টেটের ম্যানেজারী জুটে যায় সুধা রায়ের । ঢাকাতেই স্তার অফিদ। দোনাযর় সোহাগ! আর কি! নিজেদের বাড়িতে থেকে অফিস করা । তার ওপর একেবারে ছোটবেলাকার পরিচিত মহল । সেই বুড়িগংগা, বাদামতলীর ঘাট, করোনেশন পার্ক, পরেশ ডাক্তার ইত্যাদি। পরেশের নামভাকের কথা শুনে স্ুধাংশুর আনন্দের লীমা নেই। সবই ভালো,কিস্ত তবু রায়ের মনে একটা আশংকা, যদি টের পেয়ে যায় সবাই তার ব্যাপার ! পরেশকে অবশ্থি সবই খোলাখুলিভাবে জানিয়ে দিয়েছিলেন তিনি গোড়াতেই। অনেক সংশোধনের চেষ্টাও হয়েছিল পরেশের দিক থেকে । কিন্তু কিছুই ফল হয়নি তাতে । নেশায় অভ্যাস বেড়েই চলেছে, যেমন হয়ে থাকে। ইতিমধ্যে রায়ের বিধবা মাও মারা গেলেন । ডাক্তারও বছর না কাটতেই নতুন আস্তানা পেতেছেন। নতুন ডিসপেন্সান্গী খুলেছেন তিনি আর্মানিটোলা স্কোয়ারের একপাশে । থাকা- খাওয়ার ব্যবস্থাও তার সেখানেই । তবে রায়ের বাড়িতে আসা-যাওয়া বাধা আছে ছু বেলাই। ৯৩৫ * আবৈ। কিছুদিন পরের কথা । ফোলকাতার কলেজ-জীবনের এক বন্ধুর বৌন নন্দা আসেন নৃধাংশুর সংসার-লক্ষ্মী হয়ে। “* ত্বাচ্ছন্দ্যবিলাসে নন্দার দিনগুলো বেশ আনন্দেই কাটে প্রথম প্রীতম । কিন্ত সংসারের প্রধান যিনি সর্ব বিষয়ে তার উদাসীনতা ক্রসশই তার কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। রায় যে নেশা করেন তা বুঝে নিতেও বেশি দেরি হয়নি নন্দার। সে বদ অভ্যাস থেকে স্বামীকে মুক্ত করার জন্টে প্রত্যক্ষ অপ্রত্যক্ষ চাপও বড়ে! কম দেননি তিনি । কিন্তু তাতেও কোন ফলই হয়নি । বরং আগে যা চলতো আড়ালে, খুকুর জন্মের পর থেকে সেই লুকোচুরির বাঁধও যেন ভেঙে গেল। প্রকান্টেই সুরু হলো মাতলামি। এই সমস্ত ঘটনাই পিনেমার ছবির মতো এক এক করে আবার যেন নতুন করে এসে দ্লাড়ায় পরেশ ডাক্তারের মুখোমুখি । স্ুধাশু রায়ের উদারতা ও বন্ধুপ্রীতির কথা যতোই মনে হয়, সবিম্ময় কৃতজ্ঞতাঁয় ততোই ডাক্তারের অস্তর ভরে ওঠে । কিন্তু এতো! বছরের মধ্যেও তার প্রতি রায়ের শেষ দিনের সেই অপমানকর ব্যবহারের কোন সংগত কারণ খুঁজে পান না তিনি । মনে পড়ে, পরম আত্মীয়ের মতো কতো পরিচধায় ও চিকিৎসায় ডাক্তার গুরুতর টাইফয়েড রোগ থেকে নিরাময় করে তুলেছিলেন নন্দাকে। নন্দাকে হয়তো বাঁচানোই যাবে না, এমন আশংকাও পরেশবাবু কয়েকবার প্রকাশ করেছিলেন তার বন্ধুর কাছে। সুধাংশ রায় প্রতিবারই বলেছেন, ভাই আমার তো কিছুই করার নেই এ ব্যাপারে, টাকা পয়সা যা! দরকার তায় জন্তে কিছুই ভাবতে হবে না, কিন্তু যা কিছু করণীয় তার সবই করতে হবে তোমাকেই । হয়েছেও ঠিক তাই । ৯৩৩ স্বামীর উঁ্দাসীন্তকে নির্মমতা বলেই ধরে নিয়েছেন নন্দাদেবী। হৃঃখ করে অনেক সময় স্বৃত্যু কামনা করেছেন তিনি। আবার পরক্ষণেই বলেছেন, জামি সলে খুকুর কি অরস্থা হবে? নন্দাদেবী সেরে ওঠেন বটে, কিন্তু স্বাস্থ্য তার একেবারেই ভেঙে যায়। ডাক্তার প্রস্তাব করেন রায়ের কাছে, নন্দাকে নিয়ে বাইরে কোন ভালো! জায়গায় কিছুদিনের জন্যে ঘুরে আসতে । কিন্ত সে দায়িত্বও রায় নিঃসংকোচেই চাপিয়ে দিতে চান ডাক্তারের ওপর । ও সব ভাই আমার দ্বারা হবে না। ঘোরাঘুরি আমার মোটেই ভালে! লাগে না। তা ছাড়া একদিনের জন্যেও ঢাকা ছেড়ে ষেতে মন চায় না আমার । দরকার মনে কর তো তুমিই ভাই নন্দাকে নিয়ে কিছুদিন ঘুরে এসো না পশ্চিম থেকে !_ রায়ের এই কথাগুলো আজে অন্থুরণিত হয় পরেশ ডাক্তারের কানে। এমনি অগাধ বিশ্বাল ধার বন্ধু সম্পর্কে, কী করে যে তিনি তার সঙ্গে সেদিন অমন ব্যবহার করলেন, “তার রহস্য উদ্ধার কর! সত্যই হ্ষর ৷ মাতলামি বলে ব্যাপারটাকে হয়তো উড়িয়ে দেওয়া চলতো । সেভাবে মনকে বোঝাবার চেষ্টাও করেছেন ডাক্তার । কিন্ত মাতলামি তো ক্ায়ের নতুন নয়। কোনদিন আভাসে ইঙ্গিতেও যা প্রকাশ পায়নি, সেদিন চূড়ান্ত মাতলামির মুহুর্তে রায়ের ছু একটি কথার মধ্যেই ধরা. পড়েছে সন্দেহের শেকড় ভার মনের গভীরে কতোদুর পর্যস্ত বিস্তৃত তাই তারপর থেকে পরেশ ডাক্তার সভার আজীবন অস্তরঙ্গ নুঙ্ধদের সঙ্গে আর যোগাযোগ রক্ষা করা সঙ্গত মনে করেন নি। ৯৩৭ সেদিনের সেই ঘটনা যেমনি আকম্মিক তেমনি অভাবনীয় । তাছাড়া নিতাস্তই সংক্ষিপ্ত । দৃরিকটু বোধে ডাক্তারের অসম্মতির জন্তেই হ্বোক অথবা নন্দার অনিচ্ছ! বা অভিমানের জন্যেই হোক চেঞ্জে যাবার গ্রদংগটা চাপা পড়ে যায়। বুড়িগংগার হাওয়া খেয়েই রায়- গিল্লীর স্বাস্থ্যোদ্ধারের ব্যবস্থা! পাকা হয়। সে ব্যবস্থাও রূপায়িত করার ভার পড়ে ডাক্তারেরহই ওপরে । সেদিন ছিল খুকুর জন্মদিন । ক মায়ের শারীরিক অন্ুস্থতার জন্যে সমারোহ সম্পূর্ণ বন্ধ রাখলেও খুকুর একসেট নতুন পোষাক কেনার কথা ঠিক হয়ে আছে আগে থেকেই । কিন্তু আগের দিন বেরুতে না পারায় সময়মতো পোষাক আনা আর সম্ভব হয়নি । তাই মনটা ভালে! লাগছিল না নন্দার । যাই হোক, জন্মদিনের বিকেল বেলাতেই নতুন নতুন জিনিষপত্র পেয়ে খুকুর মন ভরে ওঠে খুশিতে । খুকুর মায়েরও । পরেশ ডাক্তারের উদ্ভোগেই এসেছে এসব পোষাক পরিচ্ছদ । নতুন পোষাকে ভারি মানিয়েছে কিন্ত খুকুকে । মেয়েকে নিজের হাতি মনের মতে! করে সাজিয়েছে নন্দা। কাজ্ল- লতার রেখায় আলো ঠিকরে পড়ছে খুকুর কালো হরিণ চোখ থেকে । নন্দা চেয়ে চেয়ে দেখেন আর মেয়ের রূপের গর্বে ভেঙে খান্‌ খান হয়ে যান্‌ মনে মনে । থুকুকে নিয়ে সন্ধ্যায় বেড়াতে বেরোন নন্দাদেবী। রোজ- কার মতে! সেদিনও পরেশ ডাক্তারই সংগী। বাদামতলীর ঘাটে অনেকক্ষণ ধরে বেড়ান তারা । হুধাংশু সঙ্গে থাকলে বিশেষ করে সেদিনের সন্ধায় নন্দার আনন্দ যে অনেক বেশি হতো, প্রেশ ডাক্তারেরও তা মনে হয়েছিল । বাড়িতে ফিরতে একটু বেশি রাতই হয়ে গিয়েছিল সেদিন । ৯৬৮ তা হলেও একটু মিপি মুখ না করিয়ে কিছুতেই সেই শুভদিনে ডাক্তারকে ছাড়তে পারেন না নম্দাদেবী । আর এই মির্রিমুখ করার ব্যাপার নিয়েই যতো! গোলমাল । রায়ের শোবার ঘরে ইজি-চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে খবরের কাগজ পড়ছিলেন ডাক্তার। খানিক বাদেই চা আর এক প্লেট খাবার নিয়ে আসেন নন্দাদেবী | উরে বাপ, কে খাবে এতো খাবার 1--বলেই চেয়ার থেকে লাফিয়ে ওঠেন পরেশন্বাবু। প্লেটটার ওপর মুহূর্ত খানেক দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে, এ ছুটে! মিষ্টি খুকুর জন্যেই আর এটা নাও তুমি__এই বলে পরেশবাবু ব। হাতে নন্দার এক হাত ধরে রেখে তার মুখে পুরে দিতে যান একটি সন্দেশ । ঠিক সেই মুহুর্তেই সেই ঘরে সুধা রায়ের নাটকীয় প্রবেশ । ওয়াগ্ডারফুল ! ****'স্কাউন্ড্রেল !1--এই সাদর সম্ভাষণে আপ্যায়িত করে খুকুর জন্মদিন উপলক্ষে কেনা হাতের “ডল"টা নজোরে ছুঁড়ে মারেন রায় বন্ধুকে লক্ষ্য করে। লক্ষ্য ঠিক ছিল না, তাই রক্ষা । ডাক্তার অক্ষতভাবেই দূরে সরে গিয়ে বন্ধুর দিকে তাকিয়ে থাকেন। নিজের মধ্যে আর নিজে নেই স্ুধাংশু, বেশ বুঝতে পারেন ডাক্তার। তাই বন্ধুর তিরস্কারে কোন গুরুত্ব না দিয়ে তা উড়িয়েই দিতে চান তিনি । স্থধাংুর পা হু খানা যেন আর চলতে পারছিল না। তার সমগ্র দেহ-পিণ্ড টলতে টলতে এগিয়ে আসছিল পরেশবাবুর দিকে। আবার পরক্ষণেই তার পা ছটোকে যেন পিছন দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল কোন্‌ এক অদৃশ্য যাহুকর ৷ পক্সুপত্রে জলবিন্দুর মতো অস্থিরতায় টলমল করছিল একটা গোটা ৯৩৭ মানুধ। ভীষণ একট! উত্তেজনার ভাব, কিন্ত কথা ফুটছিল ন। শধাংশুর মুখে । নেশায় আড়ষ্ট তার জিহ্ব!। বন্ধুর এই অবস্থা দেখে ছুঃখ হয় পরেশবাবুর । একটু এগিয়ে গিয়ে তিনি নিজেই হাত ধরে নিযে আঙেন রায়কে, শুইয়ে দেন ফরাম-ঢাকা তক্তপোষে তাকিয়ার ওপর । একটু নড়বারও শক্তি নেই রায়ের, তবু তার মুখ দিয়ে হঠাৎ বেরিয়ে আসে,_স্কাউন্ড্রেল ! ভুল বুঝো না, ভাই ! ডাক্তারের কণ্ঠন্বরে নিজীবি মাতাল রায়বাবু যেন আরে! উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। বড়ে বড়ো চোখে ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে বলেন, গেট আউট ! প্রায় ছর্োধা সে কথ! । তবু আর সা করতে পারেন না পরেশবাবু, অভিমানক্ষুদ হয়ে বেরিয়ে আসেন ঘর থেকে । নন্দা, যাই ।_স্ত্ধাংশু রায়ের আর্মীনিটোলার বাড়ি থেকে শেষবারের মতো বিদায় নেবার সময় পরেশ ডাক্তার সেদিন শুধু এ ছুটি কথাই বলে এসেছিলেন নন্দাকে! গংগার বুকে বিক্রমপুরের এক মাঝির নৌকোয় বসে পরেশবাবু যখন বুড়িগংগার তীরবতাঁ এক বাড়ির একটি অতীত কাহিনীর কথ ভেবে ভেবে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছেন, ট্রামে করে বাড়ি ফেরবার পথে নন্দাদেবীর মনেও তখন চল্ছে ঠিক এঁ একই বিষয়ের তোলপাড় । নাম কি তোমার মাঝি 1--হঠাৎ প্রশ্ন করেন ডাক্তার | বংশীধর । বেশ নামটি তো! আর বেশ কর্তা ! এমনি কথায় কথায় নৌকো ভিড়ে যেয়ে নিমতল ঘাটে । ১৪৬ ভারঙ অনেক আগেই হয়তে| বাদি গিয়ে পৌচেছেন নম্দাদেৰী | বিশেষ করে অসহায়া নারী ও শিশুদের়ই অকলয1গ হাউলে সাহায্য দেওয়া হয়ে থাকে। স্বামী নেই যে না্ীর, পিতৃহ্থীন অভিভাবকহীন যে শিশু সে সাহায্যে তাদেরই অধিকার ।-_ ডাক্তারের এই কথাই হদি ঠিক হয়ে থাকে, তাহলে দোষেরই বাকি আছে তাতে? তাই যদিহয়, সে সাহায্য আমিই বা পাব না কেন? আমার খুকু, আমার অমল-.....আমাদের কে আর আছে এ সংসারে ? সেনেদের বাড়ির ছেলে লোকনাথ প্রায় মাস ছই হলো দেখা করে গেছে । ঢাকায় খবর দেবার জন্যে সে অনেক করে আমাদের ঠিকান৷ সংগ্রহ করেছে। আমাদের বাড়িতে আগুন দেখে সেদিনই রাত্রিতে কোন-রকমে এক কাপড়ে পালিয়ে এসেছে ওরা । শুধু ওরাই নয়, পাড়ার আরও অনেকে । বাড়ি আমাদের পুড়ে ছারখার হয়ে গেছে । উর নাকি কোন খোজই পাওয়! যায়নি। পরে যারা এসেছে তাদের কাছেও নাকি কোন সন্ধান মেলেনি ওঁর । তবুকি অকল্যাণ্ড হাউস থেকে সাহাষ্য পেতে পারি না আমরা? _-সারা রাত ধরে নন্দাদেবীর মনের সমুদ্রে একনি সব চিন্তা তরংগায়িত হতে থাকে । অমল, এ গ্ভাখ বাবা আসছে 1-_ঘুমের ঘোরে চিৎকার করে ওঠে ন্গিপ্ধা। মা তাড়াতাড়ি উঠে বসে হাত বুলিয়ে দেন তার মাথায়। খুকু আবার বিঘোরে ঘ্বুমিযে পড়ে । খুকুরই ভালো! নাম স্সিগ্ধা। ওর বাবারই রাখা নাম । হঠাৎ নিঃসংগ একটা পাখি ডেকে যায়। কোলকাতায় এসে অবধি এমনি ডাক আর কোন দিন শুনেছেন বলে মনে পড়ে না নন্দার। বড় মিষ্টি ভাক। এক! হলেও এক! নয়। আত্মজনের সন্ধান পেয়ে পাখিট! ষেন আনন্দে গান গেকে চলেছে । ২৪ খোঁলা জানালার পথে শেষ ক্বাতের ডাদ চোখে পড়ে নন্দার। ছোট্ট টুকরে। হলেও টাদের দে হাসিতে ফেন কিসের ইংগিত। নভুন সকাল নতুন কোন আশার রার্তা নিয়ে আজবে বুঝি ! পোজ রাস্থিরে কী বকাই না বকে পাগলী মেয়ে কাল বেলার কাজ থেফে ফিয়ে এসে খুকুকে আদর করে বলেন মা। কি হয়েছে, মা? এই যে কালও স্বপ্ন দেখে ডাকছিলি অম্লকে, তোর বাবা এসেছেন বলে ! ভুলেও যিনি একবার তোদের খবর নেন না, তার জন্যে স্বপ্ন দেখা ! দেখো, বাবা নিশ্চয়ই আসবেন আমাদের খোজ নিতে । --খুকুর এই বিশ্বাসের মধ্যে এতোটুকু সন্দেহের অবকাশ নেই। মেয়ের কথার একট! সহজ উত্তর দিয়ে নন্দা চলে যান ঘরের কাজে। পূর্ব রাত্রির সেই ভাবনার সুত্র তার মনকে আবার আলোড়িত করতে সুরু করে। ট্রামে-বাসের ভিড় কিছুটা! কমে আসে মধ্যান্কের অবসানে | তারই স্থমোগ নেন নন্দাদেবী। গংগার অনুরবর্তী ইডেন গার্ডেনের পাশে ইট ও পাথরের তৈরি সেই লাল বা়িটায় এসে উপস্থিত হন তিনি । এদিকে ওদিকে দ্বুরে এপাশে ওপাশে তাকিয়ে কোথাও পাওয়! ঘায় না পরেশ ডাক্তারকে । অন্যান্ত দিনের মতো সেদিনও অমলহ তাঁর একমাত্র সংগী অকল্যাণ্ড হাউসে । এই যে নন্দা, কখন এলে? এবেশে? সন্ত পরিচিত কণ্ঠের লবিন্ময় প্রশ্নে নন্দাদেী মুখ তুলেই দেখেন, গার পামনে ধাড়িয়ে পরেশ ভাজার । কি একটা টুকদ্ষে! কাগজ তার হাতে। ১:৪৭ এ বেশ কেন, জিশ্যেস ধরছেন? র্রিলিখ্ের আপ্গীয়-_ ক্রি রেশনয় আশায় । হয়তো মিঙ্যের আঙুর নেখ্গী হানি এতে । আপনার বন্ধুর ফোন সন্ধানই ফেউ রাখে না। গায় ঢাকার বাড়িঘর ভন্মীভূত। তিনিও আছেন ক্ষি না. ছিঃ নন্দ! !-_তিরক্কারের হরে বাধা দেন ডাক্তার, জবাক দুর্টিতে নন্দার সি'ছুর-ধোয়া সিখি, খালি হাত আর প্দিখানের থান কাপড়ের দিকে তাকিয়ে থাকেন । আগের দিনের আধ-ময়লা শাড়িখানাই আজ এই থান কাপড়ে জ্লপাস্তরিত হয়েছে। লাল পাড়ট! যে জোর করে ছি'ড়ে ফেলা হয়েছে ভা চোখে পড়ে পরেশবাবুর । সঠিক কোন খবর না পেয়ে এ বেশ নিতে পারলে নন্দা ? আশ্চর্য ! ওয়াগ্ডারফুল ! আমি আরে! বেশি আশ্চর্য ! একটা! হূর্বল কণ্ঠের আওয়াজে সচকিত হয়ে ওঠেন পরেশ- বাবু। পিছন ফিরে তাকিয়েই দেখেন কে একজন সাহাধ্য প্রার্থনা করছে হাত বাড়িয়ে। মানুষ নয়, মানুষের জীবন্ত কংকাল। এসব দেখে দেখেই অভ্যস্ত হয়ে গেছেন বলে ভয়ে আতকে ওঠেন নি ডাক্তার । তা নইলে হয়তো দৌড়ে পালাতে হতো । বরং লোকটার ছৃদশার কাহিনী শোনার জণ্তে উৎসুক হয়ে ওঠেন তিনি । গ্িগ্যেস করেন লোকটাফে-__ কি বলছ ? না, আর কিছুই বলার নেই আমার । কিছু সাহাধ্য চাই শুধু । সেই কবে ঢাকা থেকে এসেছি, সেই থেকে এক ফোটা মদ পেটে যায়নি । দাও ন] ভাই, আজ বড্ড খেতে ইচ্ছে করছে । ক্ষীণ স্বরে লোকটি প্রার্থন! জানায় । আহার্ষের জন্টে নয়, মদের জন্তে সাহায্য প্রার্থন! ! ১৪ ভিক্ষা-বৃত্তির এই অভিনবন্ধে অবাক হয়ে হান ভাক্কায় । মন্দাদেবীও নির্বাক বিস্ময়ে চেয়ে থাকেন লোকটির দিকে । কী, চুপ করে রইলে যে! এবারে কষ্ঠম্বর বেশ একটু উচু? কোটরগত ছুটে! চোখের ভেতর থেকে ঘৃণা ও উন্ম! ঠিকরে বেরোয় যেন। অনাহারে জীর্ণ শীর্ণ দেহ, ধূলো-বালি নোংরায় কদাকার লোকটির মাথায় কতোদিন যে তেল জল পড়েনি তার ঠিক নেই । বাইরের চেহারায় সভ্য সমাজের কোন ছাপ ন! থাকলেও আগস্তকের কথাবার্তা কিন্ত বেশ গোছানো ! তাছাড়৷ এর আচরণে কোথায় যেন আত্মজনের আব্বারও বর্তমান । ঠোটে আংগুল ঠেকিয়ে চিস্তার সমুদ্র সস্থন করে সুত্র আবিষ্কারের চেষ্টা করেন পরেশবাবু। আকাশের দিকে ক্ষ্যহীন দৃষ্ি ছড়িয়ে দিয়ে ভাবতে থাকেন তিনি । কী ভাবছ? আমার কাছ থেকে কতো! টাক! নিয়েছ তারই অংক কষছ বুঝি? থাক, তার দরকার নেই কিছু । আর সবইতে! তুমি নিয়েছে। তা নাও। আজ গোটা পাঁচেক টাকা পেশ্রেই আমি খুশি । বড্ড পিপাসা, বুঝলে ডাক্তার ! বড্ড পিপাস! !! এসব কথার কোন উত্তর খুঁজে পান না পরেশবাবু। লোকটা জানলে কী করে যে তিনি ডাক্তার ! তা! ছাড়া আবার ঢাকার কথা, টাকার কথা তুলছে! কেমন একট! আকম্মিক দ্বৃণিবাত্যা খেলে যায় পরেশ ডাক্তারের মাথায় । কেমন যেন সব ভাল গোল পাকিয়ে যায় । বাকব্রাস কর! চুলের ভেতর ডান হাতের আংগুলগুলো ঢুকিয়ে দিয়ে তবু একবার ভাবতে চেষ্টা করেন ডাক্তার ৷ তবে কি নিন্বৃনী ১৪৪ বা বেশ পোষাক তো! খাসা মানিয়েছে কিন্ত 1 এবার নন্দার দিকে চেয়ে একটু মুচকি হেসে বলে আগস্কক। নন্বাদেবী হঠাৎ মৃ্ছিত হয়ে পড়ে যান মাটিতে । কিছুক্ষণ ধরেই তিনি বিশেষ ভাবে লক্ষ্য করছিলেন লোকটিকে । হঠাৎ ভার পা ছটো ষেন আলগা হয়ে গেল মাটি থেকে। ট্যাক্সি ! একট! চলতি ট্যাক্সি পরেশবাবুর কম্পিত কণ্ঠের ডাকে এগিয়ে আসে সঙ্গে সঙ্গে । একটু পরেই আগন্তক সহ সবাইকে নিয়ে ট্যা্সিটা ধুলো উড়িয়ে উধাও হয়ে যায় সেখান থেকে । এবার ছেলের জন্যে মায়ের নয়, মায়ের জন্যে অমলের কানন! ভেসে আসছিল কয়েক সেকেগ্ড ধরে । ১৪৫ দেবে তর যাই হোঁক, ট্রেখ থেকে নেমে খুব বেশি খোঁজাধু'জি করতে হয়নি, এই রক্ষে! ভাছুড়ী মশাই দুশ্চিন্তা থেকে নিষ্কৃতি পেয়ে বস্তির নিশ্বাস ফেলেন যেন। একেবারে নতুন জায়গা। ভার ওপর প্রথম বারেই সপরিবারে চলে আসাটা বোধ হয় ঠিক হয়নি, চলতি ট্রেণে অনেকক্ষণ ধরে এ কথাটাই যেন পেয়ে বসেছিল ভাছুড়ীকে। এরপরে কেউ যদি ষ্টেশনে এসে আগে থেকে উপস্থিত না হয়ে থাকে, তা হলেই তো বিপদ! এমনি সব ছুর্ভাবনার বোঝ। বইতে বইতে পানাগড় ষ্টেশনে এসে গাড়ি থেকে নেমেই তাই চেনামুখের তল্লাস সুরু করে দেন ভাছুড়ী। ভাহুড়ী মশাই এসেছেন, ভাছুড়ী মশাই !-ছু পা এগুতেই একটা ব্যাকুল চিৎকার কানে ভেসে আসে ভাছুড়ীর। এই যে এখানে ।__ পৌটলাপুটলি নিয়ে ভাছ্‌ড়ী সামান্য একটু আসতেই একেবারে প্রায় মুখোমুখি দাড়িয়ে পড়েন রাধারমণ পণ্ডিতের | দেবশালা মাইনর স্কুলের সেকেও পণ্ডিত রাধারমণ সরকার । হেড মাষ্টার হবার সখই ছিলো তার পুরোপুরি । পুরোনো হেড মাষ্টার যে এখানকার চাকরি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন, সে তারই জন্যে। ইন্ফুলের ছাত্্র-ছাত্রীরাও যেমন সবাই তাকে বাঘের মতো ভয় করে, আবার ঠিক তেমনি সবাই তার একান্ত অন্ভুগতও। ১৪৬ কিন্ত হলে কি হবে, তার হেড মাষ্টার হবার আশা কোন দিনই পূর্ণ হবার নয়। ট্রেনিং পাশ না হলে কিছুতেই হেড মাষ্টারি করা চলবে না, এ বিষয়ে সেক্রেটারীর মত অত্যস্ত দৃঢ় এবং নুস্পষ্ট। আর সেক্রেটারীর যুক্তি খণ্ডনের চেষ্টা করার হুঃদাহস কোন দিনই হবে না রাধারমণের | তবে হেড মাষ্টারকে গোড়া থেকে হাত করে রাখতে পারলেই যে তার উদ্দেশ্টা সিদ্ধ হতে পারে এ কথাট! তিনি ভালো! করেই বুঝে নিয়েছেন। তাইতো সুরু থেকেই সেরূপ চেষ্টাই চলছে। আরে কেষ্ট, মাষ্টার মশাইর হাত থেকে পুটলিটা আগে নিয়ে নে। হাদার মতো দাড়িয়ে আছিস কেন? প্রণাম করেছিস? প্রণাম করার কথ| উচ্চারণ করতেই কেষ্টা, পাস্ত, শ্যামল, সোনা এবং আর সবাই একেবারে ধপাস্‌ ধপাস্‌ করে পায়ের ধূলে! নিতে নুরু করে দেয় মাষ্টার মশাইর । ওর! সব দল বেঁধে ষ্টেশনে এসেছে সেকেণ্ড পণ্ডিতের সঙ্গে নতুন হেড মাষ্টারকে সম্বর্ধনা জানাবার জন্যে । ওদের কারুর পরনে গেড়! প্যাণ্ট, কারুর ব! পাজামা, আবার কেউ বা এসেছে ময়লা এক টুকরো কাপড় পরে । ছ-তিন জনের গ্লায়ে নোংর! গেঞ্জি বা ফতুয়া দেখ! গেলেও ছেলেদের অধিকাংশই এসেছে খালি গায়ে এবং তারা প্রায় সবাই কঙ্কালসার | সুদূর পল্লীর এই চেহারা দেখে মুহুর্তের জন্তে জাৎকে ওঠেন ভাছুড়ী। এই তো আমার দেশ, এই তার আসল রূপ! এরই সেবার দায়িত্ব নিতে হবে আমাদের সবাইকে । ত! হলেই এর রূপাস্তর ঘটানে! সম্ভব হবে ।-_নিস্তন্ধ হয়ে ঈাড়িয়ে একটু ভাবেন নতুন হেড মাষ্টার । হ্যারে পাস্ত, ভানু, পাগলা তোরা সবাই এক একটা ১৪৭ করে জিনিষ-পত্র নিয়ে চল এবার । মা-দণির হাত থেকে স্কটাটকেশটা নিয়ে নে কেউ। ছিঃ ছি তোরা এতোগুলো৷ ছেলে থাকতে মা-মণি বোঝা নিয়ে চলবেন ? তোরা দেখছি লব জানোয়ার বনে গেছিস একেবারে ! না, না, ওদের গাল-মন্দ করবেন না, পণ্ডিত মশাই! আর ওদের ওপর কোন বোঝাও চাপাবেন না জোর করে। ওদের এই শরীরে কতোটুকুই বা আর শক্তি আছে! হাতে হাতে যতোট! পারা যায় তা বরং আমরাই নিয়ে নিচ্ছি । আপনি একটা কুলি ডেকে দিন, তাতেই হয়ে যাবে ।- বেশ একটা সহানুভূতির স্থুর বেজে ওঠে ভাছুড়ীর কথায়। নতুন হেড মাষ্টারের সম্সেহ উক্তি ছেলেদের মন খুশিতে ভরে তোলে, কিন্তু তার এই একটি মাত্র কথায়ই রাধারমণ টের পেয়ে ধান যে, একে ঘায়েল করা খুব সহজ হবে না। রাধারমণকে চিনতে ভাহড়ীর একটুও দেরি হয়নি। ঠিক এই পোষাকেই তিনি তাকে দেখেছিলেন তাদের হাওড়ার স্কুলে । দেবশাল। মাইনর স্কুলের সেক্রেটারীর সঙ্গী হয়ে তিনিও গিয়েছিলেন তার সম্বন্ধে খোঁজ-খবর করতে । সেই তেল-চিট্চিট জাম! কাপড় অর্থাৎ হাতকাটা ফতুয়া আর ধুতি আর তালি-সর্বস্ব একজোড়! চটি, রাধারমণ পণ্ডিতের এই পৌষাক-পরিচ্ছদের কথা ভাছুড়ীর ঠিক মনে আছে। তার এই জামা-কাপড়ে কোন ধুলো-বালি ও ময়লাই যে আর নতুন করে কোন রেখাপাত করতে পারে না, একখ৷ সেই এক মা আগেই তার মনে হয়েছিল এবং সে কথা যে নিতান্তই ঠিক তার প্রমাণ তিনি আজও পেলেন প্রথম সাক্ষাতেই । সত্যি সত্যি একেবারে পাকা রঙ হয়ে গেছে রাধারমণের জামকাপড়ের । এর ওপর নতুন করে আর কোন রঙ ছাপ ফেলতে পারে কখনো ? কিছুতেই না। ৯৪৮ একটা কুলিকে ডেকে নিয়ে এসে তান মাথায় যতোটা সম্ভব ধোঝা চাপিয়ে দেন রাধারমণ । তারপর বাকি সব জিনিহ্ পত্তর হাতে হাতে নিয়ে ভার রওনা হলেন গ্রামের দিকে । স্টেশনের বাইরেই পাঁচ সাতখানা গরুর গাড়ি অপেক্ষা করছে যাত্রী নেবার জন্যে । তার মধ্যে ছুখানা দেবশালা জমিদার- বাড়ির । একখানায় হেড মাষ্টার, তার স্ত্রী ও পুত্র কন্যাকে বেডিং ও স্থ্যুটকেশ সহ তুলে দিয়ে আর একখানা গাড়িতে ছেলের দল ও আর সব খুচরে! জিনিষ-পত্তর নিয়ে উঠে পড়লেন রাধারমণ । উচু-নীচু গ্রাম্য রাস্তায় গরুর গাড়ি হেলে-ছুলে এগিয়ে চলে। বিছানো চটের তলাঁকার খড়ের গাদা মচমচ করে ওঠে । অনীতা৷ ভয় পায় । গাড়ি উল্টে যদি পড়ে যায়, এই ভয় । শুধু অনীতাই বা কেন, তার মা-ও ভয়ে ভয়ে শক্ত করে ধরে থাকেন গাড়ির এক ধারে বাঁধা একটা বাশকে। হেড মান্টারেরও গরুর গাড়ি চড়ার এই নতুন অভিজ্ঞতা । তাই মন ছলে ওঠে ভয়ে ভয়ে । কিন্ত মনের ভয় বাইরে প্রকাশ করা চলে না কিছুতেই। তা হলে যে স্ত্রী আর কন্যাকে মোটে সামলানোই যাবে না। ছেলে নস্তর ভয়-ডর নেই, গরুর গাড়িতে চড়ে তার বরং আনন্দই হয়েছে খুব। পিছনের গাড়িতে রাধারমণের নেতৃত্বে ছাত্রদল খুব হৈ- হল্প। করতে করতেই অগ্রসর হতে থাকে । এক এক বার নতুন হেড মাষ্টার কি জয়” ধ্বনি ওঠে ওদের গাড়ি থেকে। আবার এক এক সময় সমবেত কণ্ঠের গানও শোনা যায় । চোখের অন্তরালে থেকেও রাধারমণ এ ভাবে ভাহুড়ীর মনে রেখাপাত করার চেষ্টা করতে থাকেন সুরু থেকেই । দেখতে দেখতে গাড়ি একট! জায়গায় এসে হঠাৎ থেমে যায়। গাড়োয়ানটাকে দেখা গেল, গাড়ির ওপর দাড়িয়ে ১৪ পড়েই সে শালগাছের ডাল-্পালা ভাঙতে গুরু করেছে। প্রথমটায় মনে হয়েছিল, গাড়ি হয়তো গন্তব্যস্থলেই এসে শ্কেছে। কিন্তু নির্জন শালবনের মধ্যে গাড়োয়ানকে এ ভাবে গাছের ডাল ভাঙতে দেখে ভয়ে-ভয়ে নবাগতদের অস্তরাত্মা শুকিয়ে যায় একেবারে । ভাছুড়ী মশাই এক বার পিছনের গাড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলেন । সে গাড়িতে তো আরো ভীষণ ব্যাপার ! সেখানে সবাই মিলে লাফিয়ে লাফিয়ে এক একটা করে ডাল ভাঙছে আর পাতা ছিড়ে ছিড়ে ছড়িয়ে ফেলছে চার দিকে। সকলেই যখন একই রকম কাজে মেতে উঠেছে তখন নিশ্চয়ই এর কোন গুঢ় অর্থ রয়েছে ।-_ভাছুড়ী ভাবেন মনে মনে । গাড়োয়ান। এ কি ব্যাপার তোমাদের বল তো? বাবুজী, এ এক বনদেবতার ঠাই । এখানে শালপাতা দিলে ভুলো" লাগে না। এই বিরাট শালবনে পথ ভূল করে কি কম হয়রাণি হয় লোকের? তার থেকে রেহাই পাবার জন্তেই সবাই এখানে শালপাতা দিয়ে প্রণাম জানায় বনদেবতাকে”। গাঁড়োয়ানের কথায় আশ্বস্ত হন ভাহুড়ী। গাড়িও আবার চলতে স্থরু করে। এ শালবনের কি শেষ নেই? সেই প্প্রায় স্টেশনের গা থেকে আরম্ভ করে এই যে চলছে তো চলছেই । এখনো তো এর শেষ হবার কোন রকমই দেখা যাচ্ছে না। এমনি রনে পথ ভূল হওয়া তো স্বাভাবিক ।-_গাড়োয়ানের সঙ্গে ভাছুড়ীর আলাপ চলে এই নিয়ে। তাইতো বাবু এই মাঝ পথে এসে বনদেবতার কাছে ধরভিক্ষা, যেন ভুলো না লাগে। সেই কোন্‌ কালে দেবতা ১6৫৬ নাকি স্বপন দেখিয়েছিলেন গায়ের জম্দার়কে শালগাঞ্ের ডাল ভেঙে বেদীর ওপর পাতা ছড়িয়ে দিতে । তাহলে এই বনপথে তার আর কোন আপদ-বিপদ ঘটবে না, এমনি আশ্বাস নাকি পেয়েছিলেন জমিদার । সেই থেকেই এই ব্যবস্থা চালু হয়ে আসছে এতো কাল ধরে। জমিদারই এঁ বেদী তৈরি করে দিয়ে গেছেন পথের পাশে । প্রজাদেরকেও অকল্যাখের হাত থেকে রক্ষা করার জন্তে স্বপ্লাদেশ পালনের নিদেশ দিয়ে গেছেন সকলকে । তাই নাকি! তা হলে তে! বেশ ভালোই বলতে হবে জমিদারকে | সে কথা মোটেই মিথ্যে নয় কর্তা! তবে সেই পুরোনো আমলের জমিদারের সঙ্গে এ কালের জমিদারের তুলনা হয় নাকোন। এ পথে কি আগে বেশি লোক একত্র না হয়ে চলার জো ছিল? মেটে" দস্থ্যদের হাতে পড়ে কতো লোকের ঘে আগে মুগডপাত হতো, তার হিসেব-নিকেশ নেই কোন। পথ ভুলিয়ে তার৷ পথিকদের সব লুঠপাট করে নিয়ে যেতো! । খুন করে লাস গুম করে ফেলতো৷ যখন তখন। এক বার জমিদার- কন্তার শ্বশুরালয়ে যাবার পথে জমিদারেরই ছু জন লোক খুন হয়ে যায় “মেটে'দের হাতে। কন্তার সমস্ত গহনাপত্র লুঠ করে নিয়ে যায় তার! তাদের কাছ থেকে । সেবারই নাকি জমিদারের ওপর স্বপ্রাদেশ হয়। তিনি তখন এই শালবনের মধ্যপথে বেদী প্রতিষ্ঠঠ করে কয়েক জন পাহারাদার বসিয়ে দেন সেই বেদীর পবিভ্রতা রক্ষা করার জন্যে । সেই থেকে শালবনের এই পথে চলাচল অনেকটা নিরাপদ হয়েছে ৷ আজকাল আগেকার মতে। পাহারাদারের ব্যবস্থ৷ ন৷ থাকলেও খুনখারাপি আর তেমন বড়ে। একট! ঘটে না। তবু লোকে আমতে-যেতে এ বেদীকে উপবক্ষ্য করে অভ্যাস বশেই শালগাছ ৯৫৯ থেকে ডাল ভাঙতে আর পাত! ছিড়ে ছি'ড়ে ছড়িয়ে ফে্সতে ভূল করে না কখনো । গাড়োয়ানের কথাগুলো এক মনে শুনে যান ভাছুড়ী মশাই। তার কথা থেকে এটুকু স্পষ্ট করেই বুঝে নেন, গায়ের বর্তমান জমিদার তেমন সুবিধার লোক নন। অথচ এই জমিদার-বাড়িতেই নাকি তাদের থাকার ব্যবস্থা করেছেন সেক্রেটারী । জমিদারের সঙ্গে আবার গোলমাল লেগে যাবে না তো ছোট-খাটো ব্যাপার নিয়ে? ভাছুড়ী কেমন যেন একটু ভীতসন্ত্স্ত হয়ে ওঠেন মনে মনে। পুন্রকন্তা ও গৃহিণীকে নতুন জায়গায় একটু সতর্ক হয়ে চলাফেরা এবং কথাবার্তা বলার জন্যে সাবধানও করে দেন আগে থেকেই । খুব কড়া মেজাজী লোক নাকি হে তোমাদের জমিদার ? -_গাড়োয়ানকে নতুন প্রশ্ন জিগ্যেস করেন ভাছুড়ী। কড়া-টিলা বুঝি না কর্তা, অত্যন্ত হিসেবী মানুষ । আধ পয়সা এদিক-ওদিক হলেই তিরিক্কী হয়ে ওঠেন। থধোকা- বাবুর সঙ্গে তো রাত-দিন তাই নিয়েই লেগে আছেন। এদিকে যে জমিদারী লাটে উঠতে বসেছে, আজ হোক; ছ দিন বাঙ্দ হোক, সরকারী আইনে যে সব কেড়ে নেওয়! হবে সেদিকে কি ভাবছেন জানি না। তবে প্রজা- দের নুখ-নৃবিধার জন্যে একটা পয়সা খরচ করতে বুড়ো জমিদারের যেন প্রাণ বেরিয়ে যায়। খোক। জমিদারের অস্তরট! ভারি বড়ে! কর্তা। ভগবান করুন তার জয়-জয়কার হোক ! এর পর আর কোন কথা বাড়ালেন না নতুন হেড মাষ্টার । গাড়োয়ানের কথাবার্তা থেকেই জমিদার বাড়ির ভেতরকার অবস্থা মোটামুটি বুঝে নিয়েছেন তিনি । ক্যাচক্ক্যাচ করতে করতে এগিয়ে চলেছে গরুর গাড়ি । ১৫২ পবাই এক রকম চুপচাপ । একমাত্র গাড়োধানই মাঝে-মাঝে শালবনের নীরবতা ভাঙবার চেষ্টা করে গানের নুর তুলে রাধারমণের গাড়ি এতোক্ষণে বেশ খানিকটা পিছিয়ে পড়েছে । তাহলেও ওদের গাড়ির হৈ-হল্লার শঙ্খ খানিক খানিক ভেসে আসে বাতাসে বাতাসে । এ যে বিরাট একটা ছুর্গের মতো দেখ! যাচ্ছে, ওটা কাদের বাড়ি হে গাড়োয়ান ? এ তো জমিদারবাড়ি, কর্তা! বাড়ি বলতে এ একখানা বাড়ি আশ-পাশের ছুই তিন গাঁষের মধ্যে । আর সবই তো কুঁড়েঘর । পাঁচ মাইলব্যাপী শালবনের শেষ প্রান্ত পেরিয়ে গাড়ি এসে নামে গায়ের পথে । » চাদরটাকে গুছিয়ে এক বার ঝেড়ে নিয়ে কাধে ফেলে নেন ভাছড়ী। হেভমাষ্টার-গিন্সী হেমাংগিনী ও কম্ঠা অনীতাও গাড়ির মধ্যে একটু নড়ে-চড়ে বসে ঠিক হতে থাকেন। হাফপ্যান্ট ও খাকির হাফসার্ট- পর নস্তর তো কোন হাংগামাই নেই । সে সব সময়েই সব কিছুর জন্যে প্রস্তুত । এই অশথতলায় একটু বিশ্রীম করে নিই কর্তা, নরহরিটাও ততক্ষণে এসে পড়বে । আরে! আধ মাইলটেক পথ বাকি। এটুকু এক সঙ্গেই যাওয়া যাবে ।--এই বলে ভাছড়ীর গাড়ির গাড়োয়ান শ্যামসুন্দর গাড়ি থেকে নেমে আসে ছকো আক্ কন্কেটা নিয়ে। গ্রামে পৌছুবার আগে ধূমপান করে একটু চাঙা হয়ে নেবে আর কি। আপনারাও একবারটি ঘ্বুরে ফিরে নিন না কর্তাবাবু ! অনেকক্ষণ তো বসে আছেন একটানা ।- শ্ঠামস্ুন্দর গরু ছটোকে খানিকক্ষণের জন্যে গাড়ি থেকে খুলে দেয়। তারপরে অনেকটা পরামর্শের সুরেই অনুরোধ জানায় হেভ মাষ্টাপনকে। ১৫৩ বেশ তো জায়গাটা । চলো, এ মন্দিয়ের দিকটায় একটু বেড়িয়ে আসা যাক । স্রী আর পুত্রকম্ঠাকে নিয়ে ভাছুড়ী মশাই দেবশালা গ্রামে প্রবেশ-পথে শিবমন্দিরে প্রপামের সুযোগ পেয়ে ধনু মনে করলেন নিজেকে । মন্দির থেকে ফিরে আসতে আসতেই দেখা গেল, নরহরির হাত থেকে হু'কোটা নিয়ে রাধারমণ কষে টানছেন আর ধোয়া ছাড়ছেন ভুর-ভুর করে । ভাছুড়ী মশাইর দিকে চোখ পড়তেই লজ্জায় জিভ কেটে ছু'কোটাকে এক পাশে সরিয়ে ফেলেন সেকেণ্ড পণ্ডিত । এই ষে পণ্ডিত মশাই, আপনারাও চলে এসেছেন এরই মধ্যে। ভালোই হয়েছে।_এর আগে কিছুই যেন দেখতে পাননি এমনি ভাব করে বলেন হেড মাষ্টার । হ্যা, এই তো এলাম । আপনারাও এই অবসরে একটু বেড়িয়ে এলেন বুঝি ? বুড়ে৷ শিবের এ মন্দিরের খুব নাম্ডাক এ অঞ্চলে । শনিবারে শনিবারে খুব ধূমধাম করে পুজো! দিতে আসে আশ-পাশের সব গ্রামের লোকেরা । অনেক রকমের মানত থাকেশ। সেই মানতের পুজো দিয়ে নাকি অনেকেই ফল পেয়েছেন। বুড়ো শিবের মন্দিরে পৃজার্থীর ভিড় ক্রমাগত বেড়েই চলেছে । দেবশালার পুরোনো জমিদারদেরই প্রতিষ্ঠিত এই মন্দির । গায়ের লোকের! জাগ্রত দেবত| বলে মনে করে এই বুড়ো শিঘকে। ও তাই নাকি! তাহলে তো ভালোই হয়েছে দেখছি এখানে নেমে । প্রণামটাও সেরে নিয়েছি। কিন্ত তা নয় হলো, কতোক্ষণ আর দেরি করতে হবে তাই বঙগুন দেখি? দ্িনমানে বাড়িতে যেয়ে উঠতে পারলেই ভালো হতো । আবার একটু গোছগাছ করেও তে! নিতে হুবে। ৯৫৪ তা ধা বলেছেন মাষ্টার মশাই, বেশ ভালে! করে গুছিয়ে না বসলে চলবে কেন? এ তো আর আমরা নষ্ই, একজন হেড মাষ্টার ! রীতিমতে! মানানসই ভাবে জণাকিয়ে বসতে ন। পারলে চলে কখনো? কি বলো মা অনীতা? তবে তার জন্তে লোকজনের কোন অভাব হবে নাঃ কোন অনুবিধাও হবে না। তার ওপর অনীতা মা রয়েছে, আমরাও তো রয়েছি । এর পরে আর ভাবনাটা কি আপনার ? তা ঠিক, তা ঠিক!--এই বলে এ আলোচনায় দাড়ি টানেন হেড মাষ্টার ৷ ও নরহরি, আরে শ্যামনুন্দর ! খুব বিশ্রাম হয়েছে, আর দেরি করিননি। চল্‌ এবার । রাধারমণের ডাকে নিজ-নিজ গাড়িতে গরু জুড়ে দেয় নরহরি আর শ্যামহুন্দর | আন্ন কর্তা, মাকে দিদিমণিকে নিয়ে উঠে পড়ুন তা হলে। আর তো আধা ঘণ্টার ব্যাপার, দেখতে দেখতে চলে যাব । শ্যামনুন্দরের গাড়ি এবারও আগে আগেই চলে । নরহরির গাড়ি অবশ্য আসে ঠিক পিছনে পিছনেই । * সন্ধ্যা হয়ে আসে আসে। পশ্চিম আকাশ জুড়ে আবির ছড়িয়ে দিয়ে তার অস্তরালে ষেন পালিয়ে চলেছেন তৃর্যদেব । হু খানা গাড়িও ছুটে চলেছে পশ্চিম দিকে যেন তৃুর্ধেরই সঙ্গে পাল্ল! দিয়ে । আর তো মাত্র কয়েক মিনিটের পথ। কিন্তু তবু যেন আর তর সয়না । ছু জোড়া গরুকেই লাঠির খোঁচায়-খ্োচায় উত্তেজিত করে তোলে গাড়োয়ানর! আরো জোরে ছুটে চলতে । একটু বিমিয়ে পড়লেই “হট, হট, হট? বিচিত্র-বিকট এই মুখের শবের সঙ্গে সঙ্গে দমাদ্দম লাঠি পড়ে গরুর পিঠে । আর ৯৫৫ লেজ ধরে জোর মোচড় দিতেই ঘোড়ার মতে! লাফিয়ে চলতে সুর করে জোন বলদ । ' এমনি ভাবেই পথের শেষ করে আনে শ্ঠামহন্দর আর নরছলি । গাড়ি ছু খান! জমিদার-বাড়ির সদর দরজায় এসে থামতেই নতুন হেড মাষ্টারকে অভ্যর্থনা জানাতে এগিয়ে আসেন সেক্রেটারী শশধর গাংগুলী ও জমিদার-নন্দন স্থুমস্ত চক্রবর্তী ৷ সেক্রেটারী জমিদারের ভাগিনেয় । নিজে বাতব্যাধিতে পঙ্গু হয়ে পড়ার পর পুরোনো আমলের এই স্ুলটার পরিচালনার ভার ভাগিনেয় শশধরের ওপরই ছেড়ে দিয়েছেন জমিদার । কিন্ত তা হলেও স্কুলের কাজকর্ম প্রায় পৌনে ষোল আনাই চলে জমিদারেরই পরামর্শ মতো, যদিও বাইরের লোকদের ধারশ! ঠিক তার উল্টো । এই যে, আনন আস্থন ভাছুড়ী মশাই ! কোন কষ্ট হয়নি তো পথে ? সেক্রেটারী এই বলে নতুন হেড মাষ্টারকে হাতে ধরে নামান গাড়ি থেকে । তার পর একে একে নেমে আসে অনীতা এবং তার মা । অনীতা হাত জোড় করে নমস্কার জানায় শশধর আর মুমস্তকে । ন্ুমস্ত ভুল করে না তাকে প্রত্যভিবাদন জানাতে । শশধর কিন্তু হেড মাষ্টারকে নিয়েই অত্যধিক ব্যস্ত । অন্য কোন দিকে চোখ দেবার তাঁর অবসর নেই যেন। প্রাসাদোপম বিরাট অষ্টালিক। অতীত জ'াক-জমকের নীরব সাক্ষ্য । ইট-ম্ুরকি খসে খসে পড়ছে সেই প্রাসাদের গ! থেকে । তা আর সারিয়ে নেবার দিকে দৃ্টি নেই কারুর, ক্ষমতাও নেই বোধহয় আর জমিদারের ৷ তা হলেও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে সতর্ক নজর এ বাড়ির বি-চাকর আর মালীদের । বিরাট বাড়িক্ক এক নিরিবিলি কোণে হেড মাষ্টারের ১৫৬ জহ্থে নির্দি্ই অংশে উপস্থিত হয়েই প্রথম প্রথম লকলেরই কেমন যেন একটু ভয়-ভয় লাগে। কিন্ত দে সামস্িক মাত্র । ন্গমস্তর আশ্বালনে অনীতাও যেমন আশ্বস্ত হয়, তেমগি ভার ম1। তবে ভয় কেটে গেলেও এ বাড়ির অস্বাভাবিক নীরবতা সকলকে বিশ্মিত করে। জমিদার, জমিদার-গৃহিপী ও তাদের একমাত্র পুত্র সুমস্ত ছাড়! পরিবারে আর কেউ না থাকলেও বাড়িতে দাস-দাসী এবং অন্যান্য লোকজনের আনাগোনার তো অভাব নেই। কিন্ত তবু যেন এ পুরীতে সব কাঙ্জ কলের পুতুলের মতো! চলে, কারুর মুখে টু" শব্দটি পর্যস্ত নেই। এরূপ নীরবতার অবশ্য যথার্থ কারণও আছে। মে কারণ জান! গেল পরদিন কর্তা বাবু ও গি্নী মায়ের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে । ছেলে সুমস্তের সঙ্গে বৈষয়িক ব্যাপারে তীব্র মতভেদ দেখ দেওয়ায় কর্তা বাবু এক মাত্র পুত্রের মুখ দর্শনেও নারাজ । মানসিক উত্তেজনায় বাতব্যাধিগ্রস্ত জমিদার আরো বেশি পঙ্গু হয়ে পড়েছেন সম্প্রতি । এখন আর ভালে করে কথাও বলতে পারেন না । অবশ্য কথা বলতে বারণও রয়েছে ভাক্তারের। তবু কেউ কাছে এসে ছ দণ্ড বসলে যেন একটু *্মানন্দ বোধ করেন তিনি, কিন্তু স্থমস্তর দর্শন তার কাছে অসহ্য । অবশ্য চোখে একরকম দেখতেই পান না জমিদার! একটি চোখ ভার যৌবনেই নষ্ট হয়েছে যৌনব্যাধির ফলে এবং তারই প্রতিক্রিয়ায় অপর চোখটির দৃষ্টিশক্কিও প্রায় নিঃশেষিত। তবুও তার ঘরে কে আসে যায়, তার কোন কিছুই বুঝতে বাকি থাকে না তার। প্রবল অনুভব শক্তিই তাকে সব বুঝিয়ে দেয়। কে1-পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতেই চমকে উঠে প্রশ্ন করেন জমিদার | আমি ভাছুড়ী । ও, আমাদের নতুন হেড মাষ্টার । আর এর| ! বুধেছি, বেশ, বেশ। পথে কোন কষ্ট হয়নি তো? আয় এখানেও থাকার কোন কষ্ট হচ্ছে নাতো? না, না, মোটেই না। আপনি এ জন্তে একটুও ভাববেন না । আর কথা বলা ঠিক হবে না কর্তাবাবুর সঙ্গে, দূর থেকে ইসারায় জানায় সুমন্ত | আচ্ছা, আজ যাই আমরা । আবার তো আর একটু পরেই স্কুলে যেতে হবে । তাহোক, তবু বন্থন না আব একটু (এটুকু বলেই যেন একটু হাফিয়ে পড়েন জমিদার | বেশ জোরে জোরে নিঃশ্বাস বইতে সুরু করে তার । আজ্রে, আজ প্রথম দিন, তাই একটু বেশি ভাড়া! । বেশ !-_এই বলে জমিদার বিদায় দেন হেড মাষ্টারকে। প্রকাণ্ড একট। হলঘরের মধ্যে পুরোনো কালের বহু বিচিন্ত এক মজবুত পালংকে ছুপ্ধফেননিভ শয্যায় শায়িত জমিদার তারাচরণের মাথায় পুরোনো ঘি মালিশ করছিলেন তখন গৃহলক্্মী সৌদামিনী। ভাছুড়ী মশাই ও তার জ্ী-কম্তার ভুল হয় না তাকেও প্রণাম করতে । কিন্তু তার বেদনা-মলিন মুখখান! দেখে তাদের মনও যেন বিষাদে ভরে ওঠে । দারিত্য-ক্রিষ্ট এই গ্রামাঞ্চলের মাঝখানে অতীত এ্বর্ষের কিছু অংশ এখনে! মজুত আছে এই একটি মাত্র বাড়িতে । তার মধো থেকেও এতো হহখ েখেনিটির আর তারাচরূপই কি সুখী? তা ছলে তার ছু চোখের কোণ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়বে কেন ? ৯৫৮ ভাছড়ীর লক্ষ্য এড়ায়নি জমিদায়ের সেই অঙ্রুয়েখ! । প্রয়োজনের অতিরিক্ত এখর্য যে অভিশাপ, ভারাচয়খ আর সৌদামিনীই তার প্রমাণ । স্বামীর যৌবনের উচ্ছ,ঙ্খলত৷ সৌদামিনী মুখ বুজেই সন্থ করেছেন৷ অত্যধিক পানাসক্তি ও অসিতাঁচারে পঙ্গু স্বামীর সেবা-যত্বেও কুষ্ঠ নেই তার । কিন্তু একমাত্র পুত্রের সঙ্গে পিতার বিচ্ছেদের মর্মদাহে তিনি অর্ধনৃতা হয়ে কোন রকমে বেঁচে আছেন মাত্র । তারাচরণেরই কি কম মনোবেদনা ? জলের মতো! তিনি অর্থের অপচয় করেছেন যৌবনে এবং তাতে ক্ষণিক আনন্দের বিনিময়ে পেয়েছেন রোগ, যন্ত্রণ। ও অস্বান্থ্য । সেই অন্গুতাপে আজ জলে-পুড়ে যাচ্ছে তার সার! অস্তর। অসন্া যাতনায় প্রতি মুহুর্তেই তিনি কামন1 করেন মৃত্যুকে কিন্ত সাত পুরুষের জমিদারীর মোহ কর্তাবাবু কিছুতেই কাটিয়ে উঠতে পারেন না। কী অব্্ণনীয় যে তার আকর্ষণ তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয় তার পক্ষে । আর ত৷ নিয়েই তো একমাত্র সন্তান শুমস্তর সঙ্গে তার বিরোধ, শুধু বিরোধ নয একেবারে মুখ-দেখাদেখি বন্ধা । র্‌ জমিদারী উচ্ছেদ আইন পাশ হয়েছে দেশে । এক এক করে জমিদারী দখল সুর করবেন সরকার, এরূপ ঘোষণাও সম্প্রতি প্রচারিত হয়েছে। সরকারের তরফ থেকে উদ্ভোগ আয়োজনও শুরু হয়ে গেছে ইতিমধ্যে । সকল জমিদারেরই এ নিয়ে সমান হুশ্চিন্ত। । কতোটুকু কি ভাবে রক্ষা! করা যায় সরকারের কবল থেকে ! বসতবাটী সমেত এক শ বিঘে জমি বাস্ত ভিটে হিসেবে রেখে বাকি সমস্ত জমিদারী দেবোত্তর করে দিলেই সরকারের ১৫৪৮ হাত থেকে রেহাই পাওয়া যেতে পারে। এই পরাম্শ দিয়েছেন শরৎ হালদার, স্ুরেন ঘটক, শৈলেন আচার্য প্রভৃতি পাঙ্সিষদবর্গ এবং তারাচরণও অবস্থা! বিপাকে তা-ই একমাজ্ করদীয় বলে ধরে নিয়েছেন। কিন্তু সমস্ত তার ঘোর বিরোধী । জমিদার-পুত্র হলেও নতুন ভাবধারার স্পর্শ লেগেছে নুমন্তর মনে। দেশ আন্ধ আর পরাধীন নয়, বিদেশী শোষণের পথ আক অবরুদ্ধ । জাতির কল্যাণে জাতীয় সরকার যখন জঙগদারীর বিলোপ সাধন প্রয়োজন বলে স্থির করেছেন, ভখন দেবোত্তরের আবরণে সেই জমিদারীকে বাচিয়ে রাখার চেষ্টাকে দেশবাসীকে প্রতারণার নামাস্তর বলেই মনে করে সুমস্ত। এ সে কিছুতেই হতে দেবে না। অথচ পুপুরুষের আত্মার তৃপ্তির জন্তে তাদের স্মৃতিপূত জমিদারী যেমন করেই হোক রক্ষা করতেই হবে, এই হলো! তারাচরণের সংস্কারবদ্ধ ধারণা । এই ছুই মতের মধ্যে কোন মীমাংসার সুত্র খুঁজে পাওয়া মুক্ষিল। তাই উভয় পক্ষের জেদ একটা চরম পরিণতির দিকে এগিয়ে চলছিল । ঠিক এমনি সময়েই রংগমঞ্চে এসে অবতীর্ণ হলেন সপরিবারে নতুন হেড মাষ্টার ভাছুড়ী মশাই । কর্তাবাবু ও কর্তামাকে প্রণাম জানিয়ে ফিরে আসার সময় হঠাৎ কর্তার মাথার দিকের দেয়ালে মহারাণী ভিক্টোরিয়ার বিরাট তৈলচিত্রথানি প্রথমেই চোখে পড়ে অনীতার। সে তার মাকে ডেকে দেখায় সেই ছবিখানি । মা দেখেছো, কী সুন্দর ছবি? ষযেনজীবস্ত বসে আছেন মহারাণী ভিক্রোরিয়। ? বাঃ ভারি চমৎকার তে !--এই বলে মা আর মেয়ে জার জব দেয়ালের বড়ে! বড়ো! তৈলচিত্রগুলোর দিকে তাকাতে ১%* যেয়ে চোখ নামিয়ে আনতে বাধ্য হন সংগে 'সংগেই ! বিচিত্র বিলুশ সব নগ্ন উলংগ নারীযূত্তি দেখে শিউরে ওঠে অনভিজ্ঞ অন্নীতা এবং তার মা-ও। জমিদারের শিল্পবোধ আঘাত হানে তাদের রুচিবোধের ওপর । কিন্তু এ নিয়ে কোন কিছু তো আর মুখ ফুটে বলার উপায় নেই সেখানে? তাই তার! ধীরে ধীরে বৈঠকখানায় যাবার নি"ড়ি ধরে নেমে যান নিচের দিকে। নামতে নামতেও সি*ড়ির ছুপাশের দেয়ালে তেমনি সব নগ্ন ছবিই চোখে পড়ে তাদের । মন তাদের বিষিয়ে ওঠে তাতে । রাধারমণ পণ্ডিতকে বলে দেওয়। ছিল, নতুন হেড মাষ্টার একট! দিন বিশ্রাম নিয়ে স্কুলের কাজে যোগ দেবেন। আর নির্দিষ্ট তারিখের সংগে তার মিলও ছিল। কিন্তু ভাছুড়ী মশাই মনে মনে স্থির করেছেন অন্য রকম । এক দিনও বিলম্ব না করে তিনি আকন্মিক ভাবে স্কুলে উপস্থিত হয়ে দেখতে চান, দেবশালায় সরকার ও জমিদারের সাহায্পুষ্ট মাইনর ইস্কলের শিক্ষাদান কোন্‌ ধারায় চলে। এ বিষয়ে নুমস্ত ভার সহযোগী । ইতিমধ্যে নুমস্ত তাকে জানিয়েছে, তাদের পূর্বপুরুষ জন শোষণের অর্থে জনকল্যাণের জন্তে যে সব প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে গেছেন অর্থাভাবে সেগুলোর অবস্থা আজ শোচনীয় । দেবশাল। পল্লী দাতব্য-চিকিৎসালয়ে বধ বলতে আর কিছু নেই, কাজেই ডাক্তার কম্পাউগ্ডারেরও কাজ নেই বললেই, চলে। গাঁষের প্রকাণ্ড প্রকাণ্ড ছুই দীঘি__সাগরদীঘি আর নগরদীঘি _এখন শুধু নামেই তাদের পূর্ব-গৌরব বহন করে চলেছে। অথচ গ্রামের সাধারণ মানুষের কতো উপকার হতে পারে এদের সংস্কার করলে । ১৬৯ ৯৯ হাত থেকে রেহাই পাওয়া যেতে পারে। এই পরামর্শ দিয়েছেন শরৎ" হালদার, স্থুরেন ঘটক, শৈলেন আচার্য প্রস্ভৃতি পায়িষদবর্গ এবং তারাচরণও অবস্থা বিপাকে তা-ই একমাত্র করবীয় বলে ধরে নিয়েছেন। কিন্ত সুমন্ত ভার ঘোর বিয়োধী ৷ জমিদার-পুত্র হলেও নতুন ভাবধারার স্পর্শ লেগেছে হুদস্তর মনে। দেশ আজ আর পরাধীন নয়, বিদেশী শোষণের পৎ আজ অবরুদ্ধ । জাতির কল্যাণে জাতীয় সরকার যখন জমিদারীর বিলোপ সাধন প্রয়োজন বলে স্থির করেছেন, তখন দেবোত্তরের আবরণে সেই জমিদারীকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টাকে দেশবাসীকে প্রতারণার নামাস্তর বলেই মনে করে হুমস্ত। এ সে কিছুতেই হতে দেবে না। অথচ পূর্বপুরুষের আত্মার তৃপ্তির জন্তে তাদের স্মৃতিপূত জমিদারী যেমন করেই হোক রক্ষা করতেই হবে, এই হলো! তারাচরণের সংস্কারবদ্ধ ধারণ] । এই ছুই মতের মধ্যে কোন মীমাংসার সুত্র খুঁজে পাওয়া মুক্ষিল। তাই উভয় পক্ষের জেদ একটা চরম পরিণতির দিকে এগিয়ে চলছিল । ঠিক এমনি সময়েই রংগমঞ্জে এসে অবতীর্ণ হলেন সপরিবারে নতুন হেড মাষ্টার ভাছুড়ী মশাই । কর্তাবাবু ও কর্তামাকে প্রণাম জানিয়ে ফিরে আসার সময় হঠাৎ কর্তার মাথার দিকের দেয়ালে মহারাণী ভিক্টোরিয়ার বিরাট তৈলচিত্রথানি প্রথমেই চোখে পড়ে অনীতার। সে ভার মাকে ডেকে দেখায় সেই ছবিখানি । মা দেখেছো, কী সুন্দর ছবি? যেনজীবস্ত বসে আছেন মহারাণী ভিক্টোরিয়া ? বাঃ ভারি চমৎকাক্স তো !-এই বলে মা আর মেয়ে জাত লব দেয়ালের বড়ে! বড়ে! ভৈলচিত্রগ্ুলোর দিকে তাকাতে ১৬৩ যেয়ে চোখ নামিঘে আনতে বাধ্য হুন সংগে লংগেই ! বিচিত্র বিসদূশ সব নগ্ন উলংগ নারীমূত্তি দেখে শিউরে ওঠে অনভিজ্ঞ অনীত1 এবং তার মা-ও। জমিদারের শিল্পবোধ আঘাত হানে তাদের রুচিবোধের ওপর । কিন্ত এ নিয়ে কোন কিছু তে৷ আর মুখ ফুটে বলার উপায় নেই সেখানে? তাই তার! ধীরে ধীরে বৈঠকখানায় যাবার সিড়ি ধরে নেমে যান নিচের দিকে । নামতে নামতেও সি*ড়ির হুপাশের দেয়ালে তেমনি সব নগ্ন ছবিই চোখে পড়ে তাদের। মন তাদের বিষিয়ে ওঠে তাতে। রাধারমণ পণ্ডিতকে বলে দেওয়। ছিল, নতুন হেড মাষ্টার একট! দিন বিশ্রাম নিয়ে স্কুলের কাজে যোগ দেবেন। আর নির্দিষ্ট তারিখের সংগে তার মিলও ছিল কিস্ত ভাছুড়ী মশাই মনে মনে স্থির করেছেন অন্ত রকম । এক দিনও বিলম্ব না করে তিনি আকম্মিক ভাবে স্কুলে উপস্থিত হয়ে দেখতে চান, দেবশালায় সরকার ও জমিদারের সাহায্যপুষ্ট মাইনর ইস্কুলের শিক্ষাদীন কোন্‌ ধারায় চলে! এ বিষয়ে সুমন্ত তার সহযোগী । ইতিমধ্যেই সুমন্ত তাকে জানিয়েছে, তাদের পূর্বপুরুষ জন-শোষণের অর্থে জনকল্যাণের জন্যে যে সব প্রতিষ্ঠান স্থ'পন করে গেছেন অর্থাভাবে সেগুলোর অবস্থ।! আজ শোচনীয় । দেবশাল। পল্লী দাতব্য-চিকিৎসালয়ে ওষধ বলতে আর কিছু নেই, কাজেই ভাক্তার কম্পাউগ্ডারেরও কাজ নেই বললেই. চলে। গাঁয়ের প্রকাণ্ড প্রকাণ্ড ছই দীঘি-_-সাগরদীঘি আর নগরদীঘি _এখন শুধু নামেই তাদের পূর্ব-গৌরব বহন করে চলেছে । অথচ গ্রামের সাধারণ মানুষের কতো উপকার হতে পারে এদের সংস্কার করলে । ৯৬৯ ৯৯ এ সবই হুমস্ত হু ঘণ্টা ধরে ঘুরে ঘুরে দেখিয়েছে ভাছুড়ীকে । সহসা স্কুল-বাড়িতে উপস্থিত হয়েই বিস্মিত হয়ে যান হেড মাষ্টার । আজই আরামের শেষ দিন ধরে নিয়ে রাধারমণ পণ্ডিত এবং আর একজন শিক্ষক এক খেজুরপাঁতার চাটাইয়ে শুয়ে পড়ে ঘুমুচ্ছিলেন তখন নাক ডাকিয়ে। তাদের পাশেই জন পনেরে। নগ্নগাত্র ছেলে-মেয়ে ভাল- পাতার চাটাইয়ে বসে গোলমাল করছে! আর একটু দূরে আরে! একটু বেশি বয়সের দশ বার জন ছাত্র-ছাত্রী মাটিতে ঘর একে গুটী খেলছে ছুভাগে গোল হয়ে বসে। আর এক কোণের ঘরে বার-তের বছর বয়সের জন চার ছেলে বেশ গল্প জমিয়েছে বসে বসে। তাদের মাষ্টার মশাই তখনো পর্যন্ত স্কুলেই আঙেন নি। আর আজ তো শেষ দিন, একটু জিরিয়েই নেয়া যাঁক, হয়তো এই ধারণ । শিক্ষকদের হাজিরা খাতায় এঁ দিনই নতুন প্রধান শিক্ষক মশাই তার নাম সই করলেন- শ্রীনীলকমল ভাছুড়ী । মাষ্টার মশাইর। এই দেখে নিশ্চয়ই সবাই চমকে উঠবেন। ছেলেমেয়েদের চার ক্লাসের চারখান। হাজির! খাতীয় তো নাম কম নেই, তবে উপস্থিত এতে কম কেন? হেড মাস্টারের মনে প্রশ্ন জাগে। তিনি অভিভাবকদের উদ্দেস্টে সার! গ্রামে ঢোল পিটিয়ে আহ্বান জানালেন, আবশ্যিক ভাবে তাদের ছেলে-মেয়েদের নিয়মিত বিষ্ভালয়ে পাঠাতে । ছদিন অপেক্ষা করেও দেখলেন । কিন্তু তেমন কোন সাড়াই তে! পাওয়া গেল না গ্রামবাসীদের কাছ থেকে! তাই তার কারণ অনুসন্ধানে লেগে গেলেন ভাছুড়ী মশাই । এ অনুসন্ধানের অভিজ্ঞত! নতুন হেড মাষ্টারের জীবনের এক নতুন শিক্ষা । ৯৬২ দেবশালার গ্রামবাসীদের দারিজ্র্য বর্ণনার ভাষা নেই ভাছুড়ীর। এক ছাত্রীর বিধবা ম! তাকে জানিয়েছেন_-বাবা, নেকাপড়। মেয়েকে শেখাতে আমার অমত নেই । কিন্তু ইন্ফুলে আমি মেয়েটাকে পাঠাই কি করে? দশ বছরের মেয়ে--না আছে একটা জামা, না আছে একখানা কাপড়- ছেঁড়! স্তাত। পরে থাকে। এ ভাবে ঘরে থাকাই দায়। তারপরে খেতেই বা দিব কি? সারা দিন আমি গতর খাটাই- মেয়েটা! ঘর আগলায়। হয়তো! ছু-এক নাদা গোবর কি হু-চারখানা শুকনো ডাল বা ছুমুঠে! শুকনো পাতা জোগায়। তা না হলে যে যা-ও এক-আধ মুঠে| দান। জোগাড় করে আমি আনি তাও সিদ্ধ হবার উপায় থাকে না। প্রায় সব বাড়িরই এ অবস্থা । পরের জমি চাষ করে যা মেলে ভাতে ছ-তিন মাস, বড়ো জোর বছরের ছ মাস কোন রকমে চলে । তাও আবার সবার ভাগ্যে জোটে না। তাদের ভরসা দিন-মজুরী । জুটলে! তে! খেতে পেলো, ন| জুটলো। অনশন। হচ্ছে থাকলেও এর। লেখা-পড়া শেখাবে কি করে ছেলে-মেয়েদের ? একটি ছেলে রোজই টিফিনের সময় সেই €য চলে যায়, আর সে স্কুলে ফিরে আসে না। ভাছুড়ী মশীই সেই ছেলেটির ওপর লক্ষ্য রাখছিলেন কদিন ধরে। কেন সে এমনি করে রোজ স্কুল পালায়? এক দিন তাকে ডেকে সে কথা জিগ্যেস করলে ভয়ে সে কেঁদে ফেলে হেড মাষ্টারের সামনে । তারপর তার অভয় পেয়ে সে খুলে বলে সব কথা। যে ছোট গামছাখানা পরে ছেলেটি স্কুলে আসে তা পরেই নাকি স্নান করতে হয় বাড়ির সবাইকে । তাই বেল! ছটোর মধ্যে বাড়ি চলে যেতে হয় তাকে । সে গেলে তবেই নাকি বাড়ির সকলের নান খাওয় । ৯৬৩ ভাহুড়ী শিউদ্লে ওঠেন দেবশালার মানুষের এমনি সব দারিক্রোের কথ! শুনে । এ অবস্থায়ও সকলকেই জমিদারের খাজন! দিতে হয় ত৷ না হলে লাঞ্ছনার সীমা থাকে না। অনীতা তার বাবার কাছ থেকে এ গাঁয়ের মানুষদের হুঃখছর্শার নানা কাহিনী শোনে। তার মনও ভারাক্রাস্ত হয়ে ওঠে এ সব কথায়। এমন কি কেউ নেই, যে এদের হয়ে ছুটে। কথ! জমিদার ও সরকারকে বলতে পারে? নুমন্তকে তো খুবই সহানুভূতিশীল লোক বলেই মনে হয়। আচ্ছা, তাকে একবার বলে দেখলে হয় ন|?_-অনীতার মনে এমনি সব প্রশ্ন জাগে। আচ্ছ! সুমস্তদা, সার! দেশ জুড়েই তো ছুঃখ-দারিজ্র্য । কিন্তু তোমাদের গায়ের মানুষদের মতো! এতো। ছুঃখী মানুষ তে৷ কোখাও দেখিনি! এদের পাশে এসে দ্াড়াবার কি কেউ নেই এ গায়ে? কেন থাকবে না অনীত। ? তুমিই তে রয়েছ। তুমি ঘেমন ভাবছ তেমনি হয়তো! আরো কেউ কেউ ভাবছে এই সব লাঞ্ছিত মানুষের কথ! । তারা কাধে কাধ মিলিয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে যখন এগিয়ে আসবে, তখন নিশ্চয়ই আর কোন মানুষেরই এমনি অভাব আর লাঞ্ছনা ভোগ করতে হবে না। সে দিন কথায় কথায় স্থমস্তর এ উত্তরে জমিদার-পুত্রের দরদী হৃদয়ের পরিচয় পেয়ে খুবই খুশি হয় অনীতা । তা ছাড়া এও সে লক্ষ্য করেছে, গরীব হলেও তাদের প্রতি সুমস্তর কোনরূপ উপেক্ষার ভাব কখনো দেখ! যায়নি, বরং তাদের নুবিধা-অহ্থবিধার নিত্য খোঁজ-খবর নেওয়া তার যেন একটা কর্তব্যের মধ্যেই দীড়িয়ে গেছে। ভাছড়ী মশাই, তার স্ত্রী এবং অনীত।, সবাই কৃতজ্ঞ এজন্যে সুমস্তর কাছে। ১৬৪ নিত্য দেখা-সাক্ষাৎ ও আলাপ আলোচনার ফলে অনীতার সঙ্গে বেশ একটা ঘনিষ্ঠতাও জন্মে যায় স্থমস্তর । এদিকে আর কারুর নজর না পড়লেও অনীতার মা সুহাসিনীর লক্ষ্য পড়ে সেদিকে । সুহাপসিনী গোপনে এ সম্বন্ধে স্বামীকে একটু ইংগিত দিতে গেলে হেসেই তা উড়িয়ে দেবার চেষ্টা করেন ভাছুড়ী। আরে কী পাগল ! তোমার মেয়ের সংগে ভাব করতে আসবে ওসব রাজা-মহারাজার ছেলে! তোমার মেয়েকে বিয়ে করে পাটরাণী করে নেবে, কী সখ! যাও, আমি তাই বলেছি না কি? কোথায় আমি আরে সাবধান হতে বললাম যাতে কোন কেলেংকারি ন৷ ঘটে, আর ভুমি কি ভেবে নিলে ? স্থহাসিনী বেশ চালাকি করে পাশ কাটিয়ে যান এই ভাবে । অথচ আসলে কিন্ত তার মনের ভাব অন্য রকম । অনীতাকে সত্যিই যদি স্ুমস্তর ভালে! লেগে থাকে এবং সে তাকে বিয়ে করে, মন্দ হয় ন! কিন্তু! এই হলো হৃনিনাস মনের কথা । রর এভাবে আরো কিছু দিন কাটে । তারাচরণের অবস্থ। দ্রিন দিন খারাপের দিকেই যায়। ইদানীং আরে! মুস্কিল হয়েছে কর্তাম! সৌদামিনীও শষা। নিয়েছেন । স্বামী ও পুত্রের মধ্যে যে বিরোধ চলেছে তার কোন মীমাংদা করতে না পেরে ভেবে ভেবে মাথাটাও যেন গুলিয়ে গেছে তার । দাউ-দাউ করে যেন আগুন জ্বলে তার মাথায়। সার! রাত জেগে কাটাতে হয় তাকে, একটুও ঘুম আসে না। যদিই বা কখনো চোখ বুজে আসে, অমনি মস্ত, সুমন্ত চিৎকারে সকলকে ব্যস্ত করে তোলেন তিনি । ১৬৫ সৌদামিনীকে দেখা-শুনো করার ভার নিয়েছেন স্ুহাসিনী নিজে, আর তারাচরণের শুশঙাধার ভার পড়েছে অনীতার ওপর | ঝি-চাকরের সেবায় বিরক্তি বোধ করেন তারাচরণ। সৌদামিনীও অন্ুস্থ হয়ে পড়েছেন শুনে আরে দ্বিগুণ বেড়ে যায় তার অসুস্থতা । হঠাৎ একটা সোরগোল পড়ে যায় জমিদার-বাড়িতে । অনীতার চিৎকারে লোকজন সব জড়ে। হয়ে যায় কর্তাবাবুর ঘরে। কেমন যেন একটা অস্বস্তিতে ছটফট করছেন তারাচরণ। মা অনীতা, তুই কি জানিস স্থুমস্ত কোথায় আছে? আচ্ছ। থাক, তোর বাবাকেই একবার ডেকেদে তো মা! তাকেই ছুটে! কথ! বলে যাই।-_এই বলতে বলতে হাফিয়ে ওঠেন জমিদার। এই যে আমরা ছু জনেই তো এখানে, বলুন ।-_এই বলে সমস্তকে হাত ধরে টেনে নিয়ে তারাচরণের সামনে গিয়ে ভাছুড়ী বমে পড়েন মেঝের ওপর ৷ না, আমার আর কিছু বলার নেই মাষ্টার! অনেক ভেবে দেখলাম, দেবোত্বরের ফাকিতে কোনই লাভ নেই আমার, আমাকে সবটাই ফেলে যেতে হবে। কাজেই তোমাদেরই হাতে তুলে দিয়ে গেলাম সব কিছু, যা ভালো মনে হবে তাই করে৷ তোমরা! । তা কেন বাবা! তুমি যে সম্পত্তি দেবোত্তর করার কথা এতে! কাল ধরে ভেবে আসছো, সে সম্পত্তি দেবোত্তরই করা হবে, তবে সে দেবোত্তর হবে মানুষদেবতার উদ্দেশ্যে-_ মানুষকে ফাকি দেবার জন্যে তথাকথিত পাথরের দেবতার নামে নয়। তারি সুন্দর কথ! কর্তাবাবু, সমস্ত ঠিকই বলেছে। এতে ১৬৬ শুধু আপনার নয়, আপনার যে সব পূর্বপুরুষের কথা গভীর ভাবে আপনি ভেবে আসছেন, তাদের সকলেরই আত্মা তৃপ্ত হবে গণদেবতার জন্যে আপনার সমগ্র সম্পত্তি উৎসর্গ কর] হলে। বেশ তো, তাই করে! তা হলে। তবে যাবার আগে আরো একটা কথা বলে যাই হেন মাষ্টার! আমি জানি, অনীতা মা আমার সুমস্তকে বড্ড ভালবাসে । মান্থুং-দেবতার সেবায় ওদের ছুজনকে মিলিয়ে দাও তুমি । আমার আর সময় নেই, আমি আর তা দেখে যেতে পারলেম না। এই বলে তারাচরণ সেই যে ঘুমিয়ে পড়লেন, সে ঘুম আর তার ভাঙলে না। ১৬৭ উত্তর পুরুষ সাদ! মেঘের দল সাদা পারাবতের সংগে যেন সার বেঁধে উড়ে চলেছে। নন্দিতার মনে যে দুঃখের লেশমাত্র আছে বাইরে থেকে তা টের পাবার কোনো উপায়ই নেই। সবার সংগে হেসে- খেলে কাজ-কর্মে তার দিন কেটে যায়। কখনে৷ তার কালো মুখ চোখে পড়েছে কারুর, একথ| কেউ বলতে পারবে না কোনে দিন। অথচ নানা রকমের কথা শুনতে হয় তাকে অহরহ । সংসারে দশ জন দশ রকমের মানুষ । কিন্তু তাহলে কী হবে, নন্দিতার প্রসংগ কখনো উঠলেই সবাই যেন এক সুরে জটলা সু করে। কাছে পড়লে নন্দিতা মুচকি হেসে পাশ কেটে চলে যায়। মনের আগুন দপ করে জ্বলে উঠলেও হাসি চাপ দিয়ে সে ঢেকে দেয় সে আগুনকে। একমাত্র ছোট ননদ সবিতা বাড়ি থাকলে কেউ সাহস পায় না কোন বাজে কথ! তুলতে। এমনি করে প্রায় পাঁচ-পাচটি বসম্ত চোখের ওপর দিয়ে চলে গেল। সেদিকে আর কারুর খেয়াল থাক না থাক, মণি ঠাকরুণের তা ভুল হবার উপায় নেই। বছর ঘুরে অনিমেষের বিয়ের তারিখ কাছে আসতেই তার আপশোঘের মাত্রাও বাড়তে স্থুরু করে! যে কোন লোককে সামনে পেলেই হলো, ঘ্ুরিয়ে-ফিরিয়ে ইনিয়ে-বিনিয়ে সেই একই ধরণের কথ! বার বার করে বলে তবে শাস্তি! ৯৬৮ নাতির মুখ দেখে যাওয়।, সে বহু ভাগ্যের কল। সে আর আমার অনৃষ্টে নেই। চাঁর কুড়ি বয়েস কাটিয়ে দিয়েও সে সৌভাগ্য খন আর হলো না, তখন আবার কিপের আশ1? ভগবান তো আর চিরকালের জঙন্কে আমায় এ সংসারে পাঠাননি !__এমনি আরো কতো কি বলেন মণি ঠাকরুণ। বিশেষ করে ছেলের বিয়ের তারিখের আগে পিছেই যেন তার মনে এ সব কথা বেশি করে ভিড় জমিয়ে থাকে । স্বন্দরগড়ের জমিদার-বংশ অনিমেষ পর্যস্ত এসেই শেষ হয়ে গেল হয় তো! জমিদারীরও শেষ, বংশেরও শেষ !-_- মণি ঠাঁকরুণ এক|-একা বসে ভাবতে ভাবতে দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলেন একটি । স্ল্মরগড় এখন গংগাগর্ভে। অনিমেষের পিতামহ বেঁচে থাকতেই তারা কোলকাতার অধিবাসী । কিন্তু তবুও স্ুন্দর- গড়ের পরিচয় তারা ছাড়েনি এ অবধি । দেই জমিদারী লাইনে পুর্ণচ্ছেদ পড়তে চলেছে, মণি ঠাকরুণের ছুঃখ না হয়ে পার্ষে তাতে? আত্মীয়-ন্বজন, জানাপরিচিত সকলেরই বিশেষ শ্রদ্ধার ও প্রীতির পাত্র মণি ঠাকরুণ। কিন্তু ইদানীং অবস্থা এমন দাড়িয়েছে ষে, সবাই যেন তাঁকে এড়িয়ে চলারই চেষ্টা করে। একই বিষয় নিয়ে বার বার আলোচনায় কার না অরুচি আসে? মণি ঠাকরুণের কিন্তু এতে একটুও বিরক্তি বোধ নেই। জয় রাধাগোবিন্দ, ভিক্ষে দেবে মা চারটি 1__এই বলে এক ভিখারিণী দোর গোড়ায় এসে উপস্থিত হতেই মণি ঠাকরুণ এসে এক মুষ্টি চা'ল আর একটি পয়সা নিয়ে হাজির সেখানে । তার পরিচিত ভিথারিণীই তো আবার এসেছে ! ১৬৯ কি সো, তোমার গোবিন্দের দয়া তে! হলে! না ! একটু ভালো করে প্রার্থনা জানাও তোমার ঠাকুরের কাছে, আমি যেন নাতির মুখ দেখে যেতে পারি ।__ভিক্ষা দিতে দিতে মণি ঠাকরুণ আকুল আবেদন জানান ভিখারিণীর কাছে। গোয়ালা ছধ দিতে আসে, দেখা হয়ে গেলে সে-ও নিস্তার পায় না মণি ঠাকরুণের হাত থেকে। তার হঃখের হু চারটে কথা শুনে যেতেই হয় তাকে । অনেকগুলে! ছেলে-মেয়ের মা মণি ঠাকরুণ। কিন্তু এক অনিমেষ ছাড়া বড়ো তিন ছেলেই সার বিদায় নিয়েছে স্কুল-কলেজে পড়তে পড়তে । ছোট মেয়ে সবিত! বাদে বাপই বি্কে দিয়ে গেছেন এক এক করে ছয় মেয়েকে । নন্দিতাকেও বধূরূপে তিনিই এনেছেন । কিন্তু পুত্রবধূর সেবাভোগ বেশি দিন তার ভাগ্যে জোটেনি । তিনিও বিদায় নিয়েছেন ছেলেকে বিয়ে দেবার ছ বছরেই মধ্যেই । বিয়ের কথ! উঠলে জ্বলে পুরে ওঠে ছোট মেয়ে সবিতা । কলেজী শিক্ষা শেষ করে সমাজসেবার কাজ নিয়ে মেতে আছে সে। এমনি নানা রকমের ছুঃখে অন্তর ভরে আছে মণি ঠাকরুণের । কিন্ত সব ছুঃখকে যেন ছাপিয়ে উঠেছে তার পৌত্রলাভের ব্যর্থতার ছঃখ। যাই হোক, ঘুরে ফিরে মেয়েরা আসে মায়ের কাছে। তাদের ছেলে-পুলেদের হাসিতে হৈ-হল্লায়ই ভরে থাকে বাড়ি। এমনি অবস্থায় একদিন অনিমেষ মাকে খুশি করার জন্যে বলে, এতে! নাতি-নাতনি থাকতেও তোমার ছুঃখ করার কী আছে মা? সমীরকে, অংশুকে বরং রেখে দাও না তোমার কাছে? নীতাও একটু হাফ ছেড়ে বাঁচবে । চারটে ছেলে মেয়ের হাগাম! সা করা তো বড়ে! কম কথা নয়! ৯৭৩ হ্যা, "ধের স্বাদ ঘোলে মেটে কি-না! মেয়ের ঘরের নাতিকে কাছে এনে রাখলেই যদি সে আনন্দ পাওয়া ঘেতো, সে পুণ্যি লাভ হতো; তা হলে বামুন বিষুঃ সাক্ষী রেখে পরের মেয়েকে ঘরে আনার কী দরকার ছিল আমার? নন্দিতাকে এনেছি তোকে সায়েব সাজাবার জন্তে, না? ছেলের কথায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠেন মণি ঠাকরুণ । অনিমেষ আর কথা না বাড়িয়ে পরে পড়ে। দিল্লী থেকে ছুটিতে বাড়ি এসে মণি ঠাকরুণের নাতি- বাতিকের বাড়াবাড়ি দেখেই অনিমেষ একটু শাস্ত করতে চেয়েছিল মাকে, তাঁর সাধ মেটাবার নতুন পথ বাত্লে দিয়ে। কিন্তু মায়ের কাছ থেকে কড়া উত্তর পেয়ে আর ভরসা পায় না সে কথা বাড়াতে। আরে শুনে যা, ও খোকা ! কোথায় চলে গেলি আবার হুট করে ?_মণি ঠাকরুণ মুহুর্ত না যেতেই আবার ডাকেন ছেলেকে । কেন ডাকছে! মা! মায়ের ডাক শুনে নন্দিতার ঘর থেকে ছুটে আসে অনিমেষ । রর হ্যা রে, তুই তো কোন্‌ হিল্লী-দিল্লী থাকিস । রামেশ্বর- ধনুক্ষোটি ক্দ,র সেখান থেকে বলতে পারিস! সে তো অনেক দূর ম1! তা হোক গে। কাশীধামে বাবা বিশ্বনাথের মন্দিরে এক বার যেয়ে মাথা কুটে আয়। তার পরে এক বার যদি রামেশ্বর-ধন্ুক্ষোটি ঘুরে আসতে পারিস বোমাকে নিয়ে, তা হলে কোটি জন্মের পুণ্যফলে তুই মায়ের মনের সাধ মেটাতে পারবি। সস্তানহীনার সন্তান লাভ ঘটে ধনুক্ষোটির পুণ্য সমুদ্রনানে । এ কি খুব সহজ ব্যাপার মা! কোথায় দিল্লী ভারতবর্ষের ৯1৯ উত্তর প্রান্তের আর রামেশ্বর দক্ষিণ সীমায় । অনেক টাকা- পয়লারও দরকার । আর এতে! উত্তলাই বা! তুমি হয়ে পড়ছো কেন মা? ভাগ্যের ওপর তে! তোমার খুব বিশ্বাস। ভাগ্যে থাকলে নাতির মুখ তুমি নিশ্চয়ই দেখে যাবে। এ কথা তুই ঠিকই বলেছিস খোকা ! ভাগ্যে না থাকলে কিছুতেই কিছু হবে না। আর ভাগ্যে থাকলে আশা পুর্ণ হবেই হবে।-ব্যস্ঃ মণি ঠাকরুণ ছেলের যুক্তি মেনে নেন এই বলে। নীতার সামনেই এ-সব কথাবার্তা হচ্ছিল মা ও ছেলের মধ্যে । একটু দূরেই ছিল শশধর। খুবই আমুদে ও রসিক মানুষ অনিমেষের এই ভগিনীপতি। কখন কাকে কোন্‌ প্রশ্ন করে বসে, সবাই শংকিত থাকে সেই ভয়ে । মা ও ছেলের আলাপ-আলোচনা সবই বেশ মন দিয়েই শুনছিল শশধর। হঠাৎ সে উঠে যায় নন্দিতার ঘরে । আরে কী পাগলামোই না করছে! বৌদি, এতে কি আর মায়ের মনের সাধ মেটে কখনে! ?_ পুষিকে বুকে জড়িয়ে ধরে আদর করতে দেখে নন্দিতাকে ঘায়েল করে শশধর এই প্রশ্গবাণে । নন্দিতার হাত থেকে পুষি যেন আপনা থেকেই পড়ে গিয়ে কোথায় দৌড়ে পালিয়ে যায়। আচ্ছা বৌদি, বলোই না কী তোমাদের রহস্ত ! এর পরে বাচ্চা হলে তাকে তো ভালে ভাবে মান্থুষ করে যাবারও অবসর হবে না। এটা কী করছে! তোমরা ? আর এদিকে মা বেচারা মাথা কুটে মরছেন ছেলের ঘরে ছেলে দেখে যাবার জন্যে । এ প্রশ্ন আমার কাছে কেন?! আপনার দাদাকেই গিয়ে জিগ্যেস করুন না ।--ছোট্র জবাবে নন্দাইকে এড়িয়ে যেতে চায় নন্দিতা । ১৭, আরে কী মুষ্কিল, দাদাকে এ প্রশ্ন কর! চলে না বলেই তো বৌদির শ্রীচরণে এ জিজ্ঞাস! । আয় বড়ে৷ ন! হওয়া পর্যস্ত সংসার বড়ো করার দায্রিত্ব আপনার দাদ| নিতে নারাজ । একগাদা ছেলে-পুলের বাপ- মা হলেই তো হলে! না, যদি তাদের ভালে ভাবে মানুষ করে তোলার ব্যবস্থ। না করা যায়_-আসলে এই হলে! আপনার দাদার কথ! ।--শশধরের গীড়াপীড়িতে রহম্ত ফাস হয়ে যায় নন্দিতার মুখ থেকে । ও এই ব্যাপার ত। হলে! নীতার কাছ থেকেও অবশ্থি এ রকমেরই আভাস পেয়েছি। তবে একট! কথা বৌদি; আমাদের শোচনীয় অবস্থ। দেখেই এরকম সিদ্ধাস্ত করেননি তে! দাদা? আরে ন না, ছিঃ ছিঃ। এ কি বলছেন আপনি 1 নন্দিতার এ উত্তরের পর আর বেশি দূর গড়ায় না এ প্রসংগ । দেড় মাসের ছুটি অনিমেষের প্রায় ফুরিয়ে এলো। নন্দিতার ইচ্ছে আর এক বার সে দিল্লীতে যায় অনিমেষের সংগে। অনিমেষেরও কি অনিচ্ছে? তা নয়। তবে মাইনের ভিত্তিতে যেখানে লোকের মেলামেশ1, বসবাস সেখানে নিয়ে গিয়ে নিজের স্ত্রীকে ছোট করতে মন চায় না অনিমেষের। অনিমেষ ন্তুন কাজে ঢুকেছে আজ প্রায় তিন বছর। ভালে। কাজই বলতে হবে। পারিক সাভিস কমিশনে পরীক্ষা দিয়ে যে পদলাভ ত। খুব সহজসাধ্য ব্যাপার নয়! আর কেন্দ্রীয় সরকারের প্রচার-দপ্তরের এ্যাসিট্যান্ট ইনফরমেশন অফিসারের চাকরিকে এমন তুচ্ছই বা মনে করার কী কারণ থাকতে পারে? তবু জানি কেন এ পদলাভে খুব খুশি হতে পারেনি অনিমেষ । এ কাজকে সে তেমন বড়ো কাজ বলে মনেই 2৭৩ করে না। নন্দিতাকে তাই সে মোটেই নিয়ে যেতে চায়নি দির্লীতে । মায়ের গীড়াপীড়িতে অবশ্য একবার নিয়ে যেতে হয়েছিল তাকে মাস তিনেকের জন্যে । তা! ছাড়া নিজের শরীরও তখন ভার খারাপই যাচ্ছিল। কিন্তু নন্দিত ফিরে আসার মাস ছয় বাদেই মায়ের অন্ধের খবর পেয়ে অনিমেষকেও আবার বাড়ি আসতে হয়েছে। নন্দিতাই সে খবর জানিয়েছিল তাকে । হয়তো মায়ের অস্থখের খবর ছাড়াও আরো বিশেষ কোন কথ। ছিল নন্দিতার সে চিঠিতে । ত। না! হলে এতে৷ বেশি দিনের ছুটি নিয়ে আসবে কেন অনিমেষ? আর মায়েরই বা এমন কি অন্্খ? মা নিজেই জানেন না তার অন্থখের কথা । হষ্টমি ধরা পড়ে যাঁয় নন্দিতার। অনিমেষকে দীর্ঘদিন ছেড়ে থাকতে ভালো লাগে না তার। বদলি নেই তোমাদের কাজে? আছে বৈ কি! শ্ুযোগ পেলেই অন্ত কোথাও যাব । হয় কোলকাতায়, নয় বন্ধে, নয়তে। বা আর কোথাও । কোলকাতায় বদি বদলি হতে পারো, তা হলে তো খুবই ভালে হবে । দেখাই যাক। আগে থেকে তো কিছু বল! যায় ন!। নতুন জায়গায় বদলি হলেই তোমায় নিয়ে যাব সেখানে ।__ নন্দিতাকে এই বলে খুশি করে অনিমেষ । ছুটি শেষ হবার আর মাত্র কয়েকটা দিন বাকি। হঠাৎ সরকারী খামে একট! চিঠি আসে দিলী থেকে । অনিমেষের অফিসের চিঠি । চিঠি পেয়ে অবাক হয়ে যায় অনিমেষ । খুশিও হয়, বিত্রতও বোধ করে সংগে সংগে । এতো! তাড়াহুড়ো! করে নতুন জায়গার দন্তে প্রস্থত হতে হবে সে জন্যে চিস্তা। ৯৭৪ চিন্তার আবার কী আছে এতে! দিলীতে যেতে গেলেও যেমনি তৈরি হতে হবে, মাদ্রাজে যেতেও তাই। উ্যা, ঠিকই বলেছ, আমার আবার কিসের চিস্তা$ সংগে যখন তুমি যাচ্ছ !- নন্দিতার কথার জবাবে অনিমেষ নন্দিতাকে খুশি করে এই বলে। প্রমোশনের কথ! জানিয়ে অনিমেষ মাকে প্রণাম করতেই চমকে ওঠেন মণি ঠাকরুণ। তুই আজই চলি খোকা ? না মা আরে! কিন তো আছি তোমার কাছে। বেশ, এবার তো বড়ো কাজ হলো তোর । এবার তা হলে বৌমাকে নিয়ে যা সংগে করে। তা তুমি যা বলবে, তাই হবে। হ্যা, তাই কর বাবা! সংগে নিয়েই যা। বেশ তো, এ নিয়ে আবার এতো! কথার কী আছে? হবে না কথা? খালি কোলে বৌমা! আর কতে। কাল পড়ে থাকবে আমার কাছে? আমার আর ভালোও লাগে না এ দৃশ্) দেখতে । আমি কি আমার সেব! করার জন্যেই বৌ এনেছি? নাতি-নাতনীর সাধ নেই বুঝি আমার ?__এ প্রসগ যে নিয়ে আসবেন মণি ঠাকরুণ, অনিমেষের তা জানাই ছিল। কাজেই কেটে পড়ার চেষ্টা করে সে। এবার সব গোছগাছ করে নিতে হয় ধীরে ধীরে 1-_এই বলে অনিমেষ চলে যায় নিজের ঘরে। তিন দিন পর সবিতা নিজে গিয়ে দাদাবৌদিকে তুলে দিয়ে আসে মাদ্রাজ মেলে । বৌদিকে ছেড়ে দিতে খুবই মন খারাপ লাগে সবিতার । কিন্তু তাকে নুখখীও দেখতে চায় সে। নিজে তো সে সমাজসেবার নানা কাজ নিয়ে ডুবে থাকে ১৭৫ সার়। দিন। কিন্তু বুড়ী মাকে নিয়ে দিনের পর দিন কাটিয়ে যাওয়া যে..খুব সহজ কথ! নয়, তা বেশ-বুঝতে পারে সবিত!। তই কিছুদিনের জন্যে নন্দিতা যে নতুন জায়গায় যাচ্ছে সে জগতে সবিত|..আনন্দিতই হয় মনে মনে। প্রায় ছদিনের একটান। ট্রেণজানি। বাঙলার শ্ামল কোমল পরিবেশ পেরিয়ে উড়িস্তা ও অন্তর রাজ্যের পর মাদ্রাজ । ছু রাত কাটিয়ে চল্তি ট্রেণ থেকে সকাল বেল সমুদ্রের নীলঘন রূপ দেখে চোখ ভুড়োয় খানিকটা । তারপর মান্্রাজ সেন্ট্রাল ষ্টেশনে নেমে যেন হ্বাফ ছেড়ে বাঁচে নন্দিতা । অনিমেষেরও বেশ ভালে। লাগে । পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ফিটফাট, চার দিক। টযাজি করে আফিস কোয়ার্টারে যাবার পথে নান৷ দ্রষ্টব্যই চোখে পড়ে । অনিম্ষে জিগ্যেস করে করে সব জেনে নেয় ড্রাইভারের কাছ থেকে । ড্রাইভার কুলি সবাই প্রায় ইংরেজিতে কথ! বলতে অভ্যস্ত মা্রাজে। ইংরেজি যেন অনেকটা মাতৃভাষাই ওদের । চলতে চলতেই ড্রাইভার দূর থেকে দেখিয়ে দেয় বিস্তীর্ণ এলাকার ওপর কর্পোরেশন বিল্ডিং মোরে মার্কেট, গীর্জার মতে! দেখতে বিশ্ববিস্ভালয়ের বিভিন্ন ভরনের লাল চূড়ো, ঘোড়দৌড়ের মাঠ এবং আরে! কতো কি! কম্তরী-বিল্ডিং-এর গ। ঘেষেই যায় ট্যাজি। গুরুগম্ভীর বিরাট এক বাড়ি। এইতো বিখ্যাত “হিন্দু পত্রিকার অফিস । এ কাগজের কথ! জানাই ছিল-অনিমেষের । প্রথমেই যোগাযোগ করতে হবে তাকে এ আফিসের সংগে । ৯৭৬ গাছ-পালায় বাগ-বাগিচায় চমৎকার ঘনসবূজ রূপ মাঝাজ শহরের । কোলকাতার সঙ্গে মনে মনে তুলনা করে অনিমেষ! নন্দিতা ও । মাউন্ট রোডের ওপর দিয়ে ট্যাক্সি চল্লেছে। রাজপথের বুকের ওপর ট্রাম লাইন চিরনিদ্রায় অভিভূত । ট্রাম চলা চিরকালের মতো বন্ধ হয়েছে মাদ্রাজ শহরে । মাউণ্ট রোডের ওপরেই অনিমেষের অফিস । অফিস আর কোয়ার্টার একই বাড়িতে । ছায়াঘন বিরাট এক বাগানবাড়ি জুড়ে তার এলাক! ৷ কোয়ার্টারে ঢুকেই নন্দিতা যেন সারা বাগানবাড়ির ওপর তার মনের পাখা মেলে ধরে। কেবল ঘ্বুরে ঘুরে বেড়ায় দে। যখন যেমন মন চাইবে তেমনি ভাবেই ঘুরে বেড়াতে কোন অন্ুবিধেই হবে ন এখানে । যুক্ত পরিবেশ পেয়ে সতেজ সবল হয়ে ওঠে নন্দিতার সমস্ত আকাজ্ষ ৷ দক্ষিণ ভারতে কেন্দ্রীয় সরকারের আঞ্চলিক প্রচার বিভাগীয় অফিসের ভার বুঝে নেয় অনিমেষ । তার পূর্ববতী অফিসার ইয়োরোপ গিয়েছেন বৈদেশিক অভিজ্ঞতা অর্জনৈর জন্তে । সরকারই পাঠিয়েছেন তাকে । ছ মাস থাকতে হবে তাকে বিদেশে । তারই বদলে এ কয়মাস অনিমেষের পরিচালনায় চলবে মাদ্রীজ অফিস। মাত্র তিন বছর গ্যাসিষ্টান্ট ইনফরমেশন অফিসারের কাজ করে গ্যাক্কিং ডেপুটি হয়ে একটা জোনের চার্জ পাওয়া বড়ো কম কথা নয়। এও একট বিশেষ রকমের স্বীকৃতি বৈকি! অনিমেষের জীবনে উন্নতির সোপান খুলে গেল বুঝি ! নন্দিতাও তাই আনন্দে ফেটে পড়ে যেন। মঠ-মন্দিরের দেশ দক্ষিণ-ভারত । প্রাচীন শিল্পকলার অজশ্রতা ছড়িয়ে আছে সর্বত্র । রামায়ণের এক বিরাট অংশ রচিত হয়েছে দাক্ষিণাত্যের নানা রাজোর নানা কাহিনী নিয়ে । মহাভায়তেরও বন্ু প্রপংগের নিদর্শন আজও বর্তমান রয়েছে এ প্রান্তে । এক এক করে দর্শনীয় স্থানগুলে। এক বার অস্তত ঘ্বুরে আসা উচিত--কিছু দিন যেতেই মনে মনে চিস্তা করে অনিমেষ। স্থিরও করে ফেলে । রোববার রোববার এক এক দিকে বেরিয়ে পড়ে তারা স্বামী-স্ত্রী। অনিমেষের সহকারী স্বামীনাথনও সংগে বায় তাদের গাইড হিসেবে । মহাবলীপুরম্‌, পক্ষীতীর্ঘ, কাঞজিভেরম্‌ প্রভৃতি অনেকগুলো প্রসিদ্ধ স্থানই তাদের দেখা হয়ে যায় এই ভাবে। অপূর্ব শিল্পচাতুর্ষে মুগ্ধ হয়ে ফেরে তারা এ সব স্থান থেকে। নানা অবিশ্বাস্ত কাহিনী শুনে আবার বিস্মিতও হতে হয় তাদের পময় সময় । রামেশ্বর-ধন্থুক্ষোটি যাওয়া ঠিক হয়েছে এবার । মায়ের কথ! মনে পড়ে যায় অনিমেষের ৷ প্রথমে কাশী- বিশ্বনাথ দর্শন করে তাঁর পরে নাকি রামেশ্বর-শিব দর্শনের রীতি। কিন্তু পুণ্য লাভ তো! আর উদ্দেশ্য নয় তার, দক্ষিণ- ভারতের প্রত্যক্ষ পরিচয় লাঁভই তার লক্ষ্য । নন্দিতাকে নিয়ে এক এক করে সবই সে দেখবে। চিদ্ান্বরমে নটরাজ মন্দির, শ্রীরঙ্গমের রঙ্গনাথ বিষু্মন্দির, তাঞ্জোরের চোলরাজদের প্রতিষ্ঠিত বৃহদেশ্বর মন্দির ও মারাঠারাজদের সরম্বতী মহাল লাইব্রেরী এবং ভারত-ভূমির শেষ প্রাস্ত কন্ঠাকুমারী ইত্যাদি সবই এ কয় মাসের মধ্যে দেখে যেতে হবে, অনিমেষের তাই ইচ্ছে মাত্রাজের ছ নম্বর ষ্টেশন এগমোর | দক্ষিণ ভারতের তীর্থগামীরা তাদের তীর্থপরিক্রমা সুরু করে সাধারণত এই রেল-স্টেশন থেকেই । ১৭৮ সন্ধ্যায় রওনা হয়ে গল্পে গল্পে অনেক রাত হয়ে বায়। ট্রেণে ভালো ঘুম হয় না অনিমেষের। নন্দিভাকেও সে খ্ুমুতে দিতে চায় না। আর একজনমাত্র বয়স্ক তামিলী ভদ্রলোক তাদের কামরায় । তিনি অনেকক্ষণ আগেই ঘুমিয়ে পড়েছেন । আর না ঘুমুলেই বাকি! অনিমেষ-নন্দিতার কথাবার্তার বিন্দু-বিসর্গও তামিলী ভদ্রলোকের পক্ষে বুঝে ওঠা সম্ভব নয়। তার ওপর ভদ্রলোকের যখন নাসিকাগর্জন নুরু হয়ে গেছে, তখন নানা রকমের হাসি-ঠাট্রায় নন্দিতাকে অস্থির করে তুলতে আর আটকায় না অনিমেষের | হ্যা ভালো কথা, স্বামীনাথন্‌ বলছিলো একেবারে সোজা রামেশ্বরমে চলে যাবার কথা । সন্ধ্যার আগেই মন্দির দেখা শেষ করে আরতি ও দেবদর্শন করা যাবে। তারপর ভোর রাত্রির ট্রেণে ফেরার পথে ধন্ুক্ষোটিতে যাওয়া হবে । তোমার কী মত, বলো। এতে আবার আমার মতামতের কী দরকার পড়লো ? যা ভালে মনে করো তাই করবে ।-_নন্দিতা উত্তর দেয়। তা তো নিশ্চয়ই ৷ তবে মা যে বলে দিয়েছেন, তার কী হবে ? কী আবার বলে দিয়েছেন মা? সেই যে, ধনুক্ষোটিতে জোড়ে সমুদ্রন্নান করে রামেশ্বরে শিবদর্শন করলে সস্তানহীনার সন্তান লাভ ঘটে! এই সহজ নিয়মটুকু পালন করে যদি মায়ের ইচ্ছা পুরণ কর! যায়, মন্দ কি? দেখাই যাক না চেষ্টা করে। ও* খুব যে মাতৃভক্ত একেবারে । মাতৃ-আজ্ঞ। পালনের অপেক্ষায় থাকবার ছেলেই তুমি ।--এই বলতে গিয়ে একগাল হেসে ফেলে মুখ ঘুরিয়ে নেয় নন্দিত । কী বললে ?-ধ্বকৃ করে জলে ওঠে অনিমেষের চোখ ৯৭৯ চুর্টা। নন্দিতার কথায় কেমন একটা অভিনব আনন্দের আকস্মিক উত্তাপ যেন অনুভব করে সে। আর একটু পরিক্ষার করে শুনতে ইচ্ছে হয় তার সে কথা। কী আবার বলবো, তোমার মায়ের ইচ্ছা পুর্ণ করার সমস্ত ব্যবস্থাই তো তুমি করে রেখেছ । কাজেই ধন্ুক্ষোটিতে কাগে সমুদ্রসান করে রামেশ্বর মন্দিরে যাবে, না রামেশ্বরে শিবদর্শন সেরে এসে সমুদ্রন্ীন করবে, তা নিয়ে আর মাথা ঘামাবার দরকার নেই, এ কথাটাই আমি বলছিলাম। নন্দিতার উত্তর শুনে সমস্ত দেহ জুড়ে যেন কেমন একটা বিহ্যৎ খেলে যায় অনিমেষের। নন্দিতাকে জড়িয়ে ধরতে আকুল হয়ে ওঠে তার মন। কিন্তু সংকোচবোধ বাধা দেয়। অপর এক জন যাত্রী রয়েছে যে কামরায় ! আচ্ছা লোক তো তুমি! কিছু জানতে না দিয়ে বেমালুম গোপন করে রেখেছ ব্যাপারটা ? বারে, জানাবার আর তুমি ফুরন্ুৎ দিচ্ছ কোথায়? আর না জেনেই আনন্দে অধীর হয়ে যে রকম ছুটোছুটি করে বেড়াচ্ছ" আগে জেনে ফেললে তোমায় হয়তো ধরে-বেঁধে বরাখাও দায় হতো ।-__নন্দিতার এ কথায় আর হাসি চেপে রাখতে পারে না অনিমেষ । কিন্তু এ হাসি' পর্যস্তই । তার পর আর একটি কথাও মুখ ফুটে বেরোয় না অনিমেষের। অথচ কেমন একটা অন্থৃভূতি তার সমস্ত স্নায়ুগুলিকে যেন সার! রাত্রির মতো অধিকার করে বসে। নন্দিতা কিন্তু ঘুমিয়ে পড়েছে শেষ প্রশ্নোত্তরের কয়েক মিনিটের মধ্যেই । ভোর হবার সংগে সংগেই ষ্টেশনে এসে গাড়ি থামে । অনেকক্ষণের ই্পেজ। পাশের কামর! থেকে স্বামীনাথন্‌ খোঁজ- ১৮৩ খবর নিতে আসে অমিমেধদের । অনিমেষ ডেকে নেয় তাকে নিজেদের কামরায় । তার পর ভেগারের কাছ থেকে এক পট ঢা আর কেক নিয়ে গল্প করতে করতে খায় তিন জনে। প্রোশ্সাম নিয়েও আলোচনা চলে । তবে আলোচদা আর কী, স্বামীনাথনের ব্যবস্থাই পুরোপুরি মেনে নেওয়া । খন্থু- কোটিতে সকাল-সন্ধ্যা ছুটো৷ সময়ের সমুদ্র-ৃশ্যই নাকি দেখার মতো । তবে সময় যখন ততো হাতে নেই, তখন রামেশ্বর- মন্দির দর্শনের পরেই ধন্ুক্ষোটি যাওয়া ভালো, একথা মেনে নিতে হয় অনিমেষকে | ষ্টেশনের পর ষ্টেশন পেরিয়ে ট্রেণ এগিয়ে চলে । সকাল আর মধাহ্ন পেরিয়ে অপরাহ্থে এসে দাড়ায় হূর্যরথ ৷ মণ্ডপম্‌ ষ্টেশনে এসে ট্রেণ থেমে যায়। মনে হয় আর এগুবে না। কোথায় এগুবে? মূল ভূখণ্ডের শেষ এখানে । সামনে সমুদ্র । তবে অদূরেই সমুদ্রবেষ্টিত রামেশ্বর ছীপ। উত্তর-ভারতে পরিচিত নাম রামেশ্বর, দক্ষিণ-ভারতের লোকেরা বলে রামেশ্বরম্‌। সেতুর সাহায্যে যাতায়াত করতে হয় মূল ভূখণ্ড থেকে রামেখ্বরমে । সেতুর নাম পাশ্বান ব্রিজ । ব্রির্জ পার হয়েই পান্ধান ষ্টেশন। খুবই ধীরে ধীরে ট্রেণ চলে এই সেতুর ওপর ৷ ট্রেণ পার হয়ে গেলেই লোহার রেল-লাইন ভাজ করে সরিয়ে রাখতে হয়, সমুদ্রের লোৌণ। জলে মরচে যাতে না ধরতে পারে সেজন্যে । পুরোনো হাওড়া পুলের মতো পুল অনেকটা । পান্থান ব্রিজ পার হবার সময় ট্রেণ থেকে লমুজের দৃশ্য দেখতে দেখতে কেমন যেন আনমনা হয়ে পড়ে অনিমেষ মুগ্ধ-বিন্ময়ে নন্দিতাও চেয়ে থাকে সমুদ্রের দিকে। বিরাট বিরাট পাথরের খণ্ড ফেলে সমুদ্রের তরংগকে ব্যাহত করা হয়েছে সেতুটিকে রক্ষা করার জন্যে । ৯৮১ ' মগ্ডপম্‌ থেকে পান্বান। এই সামাগ্ঠ সমুদ্রপথ পারাপারের জন্যে একালের মানুষকে তার বিপুল বৈজ্ঞানিক বুদ্ধি ও উপাদান সত্বেও কম হয়রান হতে হয়নি! সেই রামায়ণের যুগে শ্রীরামচন্দ্র সীতা উদ্ধারের জন্যে কী করে যে তার লংকা অন্ভিযানে দীর্ঘ সমুদ্রপথ পারাপারের ব্যবস্থা করেছিলেন, সেই অসম্ভব কল্পনাকে মনে করতেই যেন শিউরে ওঠে নন্দিতা । কী সুগভীর পত্বী-প্রেমই না ছিল রামচন্দ্রের ! পরক্ষণেই আবার নন্দিতা ভাবে, তার স্বামীরই বা! পত্বী- প্রেম কম কিসে! পাছে তার আত্মসম্মানে আঘাত লাগে, উপেক্ষা করে বসে কেউ ছোট চাকুরের স্ত্রী বলে, সেজন্তে অনিমেষ বঞ্চিত রেখেছে নিজেকে তার সান্সিধ্য থেকে বছরের পর বছর ধরে। প্রথম স্থুযোগেই দে নিয়ে এসেছে তাকে এই সুদুর সমুদ্র-্বীপে, হয়তো পুরুষের পত্বীপ্রেমের গভীরতা কতো দূর হতে পারে অতীতের নিদর্শন থেকে তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ দেখাবার জন্তেই । আপন চিস্তার যুক্তিজালে এমনি করে নিজের মনকেই আটকে দেয় নন্দিতা । পান্ধান এসেও ট্রেণ অনেকক্ষণ থামে । ঘন নারিকেল- কুঞ্জ চতুর্দিকে । দারির্র্য-লাঞ্িত অতি সরল শাস্ত মানুষ এই হ্বীপবাসীর! | সমুদ্রের কড়ি আর নানা রকমের শংখ বিক্রির ধূম পড়ে যায় ট্রেখের কামরায় কামরায়। গোছ! গোছা ছবিরও বেচাকেনা চলে। দক্ষিণ-ভারতের নানা মন্দিরের ছবি, দেবদেবীর ছবি । নন্দিতাও কিনে নেয় কিছু কিছু। স্বামীনাথনের নিষেধ উপেক্ষা করেই কিনে ফেলে । রামেশ্বর ডাক বাংলোতে এসে উঠতে উঠতে বেলা প্রায় পণচটা বেজে যায়। সংগের সামান্য মালপত্র বাংলোতে নামিয়ে রেখে ফিরতি ঘোড়ার গাড়ি করেই অনিমেষ সদলবলে যাত্রা করে মন্দিরপথে । ৯৮ স্বামীনাথন্‌ পথে বলতে বলতে আসে রামেশ্বর তীর্থের পৌরাণিক কাহিনী । সীতা উদ্ধারে রাবণের আরাধ্য দেবতা মহাদেবের তুটি বিধানের প্রয়োজন অনুভব করেন রামচন্দ্র । হিমালয় পর্বতে পাঠান তিনি মহাবীরকে কণ্টি-পাথরের শিব আনতে । বিলম্ব দেখে নিজেই বালুকা-স্তপের এক শিব-মুত্তি গড়ে নিয়ে পূজে। আরম্ভ করে দিতেই মহাবীর এসে উপস্থিত। অস্তর্যামী শ্রীরামচন্্র ভক্তের মনক্ষোভ বুঝতে পেরে নিদেশ দিলেন, মহাবীর-আনীত বাণেশ্বর শিবের পুজো না হয়ে ভবিষ্যতে আর কখনও তার স্বহস্তনিমিত রামেশ্বর শিবের পুজো হবে ন। এখনো পর্যন্ত সে নিদেশ যথায্থই নাকি পালিত হয়ে আসছে। ঘোড়ার গাড়ি থেকেই অদূরে মন্দির দেখতে পায় অনিমেষ । মন্দিরের সম্মুখবরতা গোপুরম্‌ দেখে তাকেই মন্দির বলে ভুল করে সে। স্বামীনাথন্‌ বুঝিয়ে দেয় তাকে, ওটা মন্দির নয়, মন্দিরের গেট-_তাকেই গোপুরম্‌ বল হয় দক্ষিণ দেশে । প্রায় সব বড়ে৷ বড়ে। মন্দিরের চার দিকেই এমনি একটি করে গোপুরম্‌ মন্দির ভাক্কর্ষে দ্রাবিড়ী বৈশিষ্ট্যের পরিচয় বহন করে আসছে। রামেখর-মন্দিরের চতুর্থ গোপুরম্টি আর সম্পূর্ণ কর! সম্ভব হয়নি হয়তো কোন বিশেষ কারণে । তবু প্রায় চারশ বছর আগে তৈরি এ বিরাট মন্দিরের আঙ্টাদের উদ্দেশ্যে অনিমেষ মাথ| নোয়ায় তাদের শিল্পবোধের কথ স্মরণ করে। যে মন্দির প্রদক্ষিণ করে আসতে সোয়া ঘণ্টারও বেশি সময় প্রয়োজন, সে মন্দিরের কল্পনা যিনি করেছিলেন সেই রামনাদরাজ থিরুমল সেতুপতির টানি অনিমেষের মাথ! আপনা থেকেই নুয়ে আসে। মন্দিরের অভ্যন্তরে দীন বিরাট মেলা । মেলায় ৯৩ মন বসে যায় নন্দিতার । তালপাতার ব্যাগ একট! কিনে ফেলে সে সংগে সংগে । ভারি সুন্দর দেখতে ব্যাগটা । বড়ো বড়ে। কন্ধি, শংখ, বিদুক, মাল! আরো কতো! সব আজেবাজে জিনিষ ফিনে দেখতে দেখতেই ব্যাগটাকে সে ভরে ফেলে। স্বামীনাথন্‌ এষন কি অনিমেষের তাগিদেও যেন জক্ষেপ নেই তার । শুধুমাত্র পুণ্যার্থীদেরই যে ভিড় মন্দিরে ও তার চার পাশে তা নয়, অল্প হলেও বেশ কয়েক জন বিদেশীকেও মন্দির- চত্বরে চোখে পড়েছে অনিমেষের । তাঁদের মধ্যে ছু জনকে সে দেখেছে ফটো! তুলতে । কী গভীর তাদের আগ্রহ ফটো তোলার ! বিদেশীদের ছোট্র আর একটি দল কী ধেন টুকে ট্রকে নিচ্ছে ঘুরে ঘুরে । সমুদ্রতীরে একটু দূরে দীড়িয়ে একজন মাদ্রাজী শিল্পীকে একান্তে একটি স্কেচ আঁকতে দেখে থমকে দাড়ায় অনিমেষ আর নন্দিতা । শিল্প ও সাহিত্যের বনু উপাদান সংগৃহীত হয়ে থাকে এ-সব দেবস্থান থেকে ।--হ্বামীনাথন্‌ বলে ইংরেজিতে । এ সবই যে আমাদের দেশের এঁতিহা, আমাদের মূল পরিচয় । জাতীয় শিল্প ও সাহিত্য এ-সবকে বর্জন করে নয়, ভিত্তি করেই গড়ে উঠবে, তাইতো স্বাভাবিক 1--অনিমেষ উত্তর দেয় । শুধু এই নয় স্তর, ধনু ভূতাত্বিক,নৃতাত্বিক প্রভৃতি বৈজ্ঞানিকও প্রায়ই আসেন এখানে । তাতে আসবেনই । আমাদের দেশের ধর্মস্থানগুলোকে কেবলমাত্র কুসংস্কার ও গৌঁড়ামির কেন্দ্র বলে ধারা মনে কয়েন, তার! ভূল করেন। ভারতবর্ষের প্রধান প্রধান তীর্থ- ক্ষেত্রগুলে। সম্বন্ধে একটু চিস্তা করলেই জানা যাবে ঘে, এ সমস্ত তীর্থের মাহাত্থ্য শুধু ধর্মীয় নয়, তার পিছনে রয়েছে আধো অনেক কারণ। ১৮৪ সব কিছু দেখাশুনে! শেষ করে তারা যখন মন্দির থেকে বেরিয়ে আসে রাত তখন অনেকখানি । মান্রাজী খানায় অসুবিধে হবে অনিমেষদের, এ আশংকা জানায় স্বামীনাথন্‌। না কোন অন্থবিধেই হবে না। সামান্ত কিছু ইভলি, দোসা আর রসমূ হলেই তাদের চলে যাবে। মাদ্রাজী খান! ভালোই লাগে তার কাছে, অনিমেষ বলে স্বামীনাথন্কে। হয়তো সহকারীকে খুশি করার জন্তেই বলে । চালের পিঠে ব! ডালের বড়৷ জাতীয় খাগ্ঠ যে নন্দিতার পছন্দ নয়, সেকথা বেশ ভালো৷ করেই জানে অনিমেষ । কিন্তু কারু সামনে তাদের খাগ্যের প্রতি কোন রকম অশ্রদ্ধ। প্রকাশ করা উচিত নয়, এ কথা সে বুঝিয়ে দিয়েছে নন্দিতাকে। হোটেল থেকে ডাকবাংলোতে খানা আসে । খাওয়া তারা সেরে নেয় সেখানে বসেই। ভোর রাত্রির ট্রেণে পাঙ্থীনে এসে আবার নতুন ট্রেণে উঠে ধন্ুক্ষোটিতে আসে তারা । পান্বান থেকে মাত্র মাইল ষোল পথ। লোকালয়ের চিহনমাত্র নেই ধন্ুক্ষোটিতে । ভারত মহাসাগর আর বংগোপসাগরের সংগমস্থলে অসীম সমুদ্রলোক সম্মুখে আর স্থলভাগ সমস্তটাই যেন শুধু বালুচর । ধনুক্কোটির মাটিতে পা পড়তেই জন্মহ্ঃখিনী সীতার কথা মনে পড়ে যায় নন্দিতার । স্বামীনাথন্‌ বলেছে, এখান থেকে সমুদ্রপথে মাত্র বাইশ- তেইশ মাইল দূরে সিংহল, রাবণ রাজার স্বর্ণলংকা। রামায়ণের যুগে এ দূরত্ব ছিল নাকি অনেক বেশি! কিন্ত একালের এই সামান্ত দূরত্ব ভেদ করে দৃষ্থি পৌছুবে কি সিংহল ত্বীপে? ট্রেণ থেকে নেমেই নন্দিতা তার দৃর্ি প্রসারিত করে ধন্দর বরাবর । ১৮৫ না, কিছুই দেখা যায় না। শুধু জল আর জল! বন্দরে একখানা জাহাজ ফ্ীড়িয়ে। প্রতিদিনই একখানা করে জাহাজ লিংহল-ভারত যাতায়াত করে এখান থেকে । সেই অশোক-কানন কি এখনো আছে, যেখানে সীতাকে নানা রকমের লাঞ্ছনা! সহা করতে হতো রাক্ষমরাজের চেড়ীদের হাতে? কোন্‌ সুদূর অতীতের এক কাহিনীর নায়িকার ব্যথায় অন্তর কেঁদে ওঠে নন্দিতার । ভারতীয় নারীত্বের অবমাননার ঘে প্রতিশোধ নিয়েছিলেন শ্রীরামচন্দ্র ও লঙ্ষমণণ আজকের ভারত-সম্তান পারবে কি তেমনি নারী-লাঞ্চনার প্রতিশোধ নিতে? এ কঠোর জিজ্ঞাস মনে জাগতেই নন্দিতা চমকে ওঠে ৷ সেও তো সম্ভতানবতী ! তেমনি বীর সম্তভানই কামনা করে নন্দিতা ! মা তো ঠিকই বলেছিলেন! জোড় বেঁধে সমুদ্রে অর্ধ্য দানের আর সমুদ্রন্নানের কী ধুম লক্ষ্য করছে! ?-_নন্দিতার দৃষ্টি আকর্ষণ করে অনিমেষ । সম্তান ল্পাভের আশায় রোজ এতো! লোক আসে এখানে স্নান করতে ? সবাই যে মেই একই উদ্দেশ্য নিয়ে আসে ধনুক্ষোটিতে তানয়। তা ছাড়া যারা জোড় বেঁধে শান করছে তারাও সবাই স্বামী-্ত্রী নয় ।-_-্বামীনাথন্‌ উত্তর দেয় নন্দিতার প্রশ্রের । তা হলে? স্বামী-স্ত্রী না হলে কাপড়ের আচলে আচলে বেঁধে এক সংগে ডুব দিচ্ছে সব জোড় হয়ে, তা কী করে হতে পারে? তা হয় স্যর, বহুকাল থেকেই এ রীতি চলতি রয়েছে এখানে । ভারতবর্ষের নান প্রাস্ত থেকে লোক আসে। অনেকের পক্ষে সন্ত্রীক আসা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তবে পুরোহিতের মাধ্যমে কিঞিৎ কাঞ্চন মুল্যে সাময়িক ভাবে ৯ প্রতীক-্ত্রী লাভের ব্যবস্থা থাকায় কাউকেই সস্ত্রীক ধর্মার্জন ব সন্তান প্রার্থনা থেকে বঞ্চিত হতে হয় না! স্বামীনাথনের কাছ থেকে এই অভিনব ব্যবস্থার কথ! শুনে হো! হো করে হেসে ফেলে অনিমেষ । লঙ্জায় মুখ ফিরিয়ে নেয় নন্দিতা । ছিঃ ছিঃ) এ মেয়েগুলোর একটুও সংকোচ নেই পরপুরুষের সংগে গাঁটছড়া বেঁধে একত্রে এই তরংগব্যাকুল সমুক্রে নামতে ? নন্দিতা ধিক্কার দেয় মনে মনে । সমুত্রন্নানে আনন্দ আছে, সেও স্নান করবে । কিন্তু নিজের স্বামীর সংগে হলেও এ ভাবে জোড় বেঁধে স্নান করতে তার শালীনতায় বাধে । কী গে আর দেরি কেন? এসো কাপড়ে কাপড়ে গিট দিয়ে নেমে পড়া যাক্‌। কেন, কোন্‌ ছুঃখে গিট দিতে যাবো? যমজ ছেলের ইচ্ছে বুঝি তোমার ? সর্বনাশ ! রক্ষা! করো ।--নন্দিতার সংগে ইয়াফি করতে গিয়ে আচ্ছা জব্দ হয়ে যায় অনিমেষ । উন্মুক্ত আনন্দময় পরিবেশে সমুদ্রন্নান সেরে ফিরে যাবার পথে অনিমেষের কেবলই মনে হয়, সব সংস্কারই যে সম্পূর্ণ অর্থহীন, সব সময় তা না-ও হতে পারে। কুসংস্কার বর্জনীয় । কিন্তু মানুষকে কোন কামনাসিদ্ধ হতে হলে আনন্দের যে আবেগ প্রয়োজন তা লাভ করার পক্ষে এমন স্থান তো লত্যি ছুল“ভ ! মাদ্রাজে ফিরে এদেই অনিমেষ চিঠি পায় দিল্লী থেকে । তার হেড অফিসের চিঠি । মাদ্রাজে তাকে আরো কিছুকাল চার্জ নিয়ে থাকতে হবে। এ আদেশ পেয়ে খুশিই হয় সে। নন্দিতার অসুস্থতার খবর পেয়ে কোলকাতার বাড়িতে নান! রকম গুঞ্জন ওঠে । ২৮৭ ধন্ুফ্কোর্টিতে জোড় জানে ফল নাহয়ে পানে? রাসেছর শিব মনস্কামনা পুর্ণ করুন আমার ।-_-উঠতে বসতে মণি ঠাকরুণের মুখে সেই একই কথা । আরো কিছুকাল কেটে ধায়। মাদ্রাজ থেকে হঠাৎ তার আঙদে। বাড়িতে হট্টগোল পড়ে যায় নন্দিতার ছেলে হবার খবর পেয়ে। দেখলে তো, বুড়ো মানুষের কথাকে তোমরা আমোলই দিতে চাও না, মণি ঠাকরুণকে পাগল বলে উড়িয়ে দিতে চাও ? এখন সেই পাগলের কথাই তো ঠিক হলো !-_পাশের বাড়ির চপলা মাসি তারের খবর পেয়েই ছুটতে ছুটতে এসে সবিতার সামনে হাত নেড়ে নেড়ে বলতে থাকেন । মণি ঠাকরুণ তখন খুবই অসুস্থ । নাতির খবর পেয়ে তার আনন্দ আর ধরে না। ভুলে যান তিনি তার অন্থখের কথা । পাণ্টা তারে সবিতা তাড়াতাড়ি এক বার আসতে লেখে দাদাকে মায়ের অসুখের খবর জানিয়ে । অনিমেষ যখন সন্ত্রীক ও সপুত্রক বাড়ি আসে, মণি ঠাঁকরুণের তথ্ন শেষ দশা । কিস্ত তাদের আসার সংবাদ পেয়েই তিনি যেন হঠাৎ তাজা হয়ে ওঠেন ক্ষণকালের জন্তে । ওরে, নিয়ে আয় আমার রামেশ্বরকে ! রামেশ্বর ভাকের সংগে সংগে এক ঝলক হাসির ওঁজ্জল্য এসে যেন ঢেকে দিয়ে যায় মণি ঠাকরুণের মৃত্যু-যস্ত্রণার কালিমাকে। তিনি অপলক চোখে চেয়ে থাকেন নন্দিতার কোলের খোকার দিকে । ১৮৮